সুসং দুর্গাপুর গারো পাহাড় ছুয়ে এঁকেবেঁকে কংশ, সোমেশ্বরীসহ অন্যান্য শাখা নদী নিয়ে প্রবাহিত বর্তমান নেত্রকোণা জেলার একটি শহর। নেত্রকোনা জেলা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ বিভাগের একটি প্রশাসনিক এলাকা। এটি বিভিন্ন নদীর জলধারায় পলিযুক্ত মাটি, হাওড় নিয়ে উর্বর একটি জেলা।
নেত্রকোনা জেলার উত্তরে অবস্থিত মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে কিশোরগঞ্জ জেলা, পূর্বে সুনামগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে ময়মনসিংহ জেলা। নেত্রকোনার উর্বর মাটিতে সোনালী ধান ক্ষেত ও হাওড়ের জলের ঢেউয়ে নেচে। এ জেলার অন্যতম বৈশিষ্ট হলও কৃষি। এখানে নানা ধরনের পাখি দেখা যায় যেমন শালিক, ডাহুক, কুড়া ইত্যাদি। এ জেলা দূর্গাপুরের চীনা মাটি, হাওড় ও পাহাড়ের জন্য বিখ্যাত।
শুসং দুর্গাপুর চিনামাটির পাহাড় বিশিষ্ট্য অপরূপ স্থান। দুর্গাপুরের বুক বেয়ে চলে যাওয়া সোমেশ্বরী নদীর ছন্দ বেশ আকর্ষণীয়। ঋতু পালাবদলের সাথে সাথে নদী তার রূপ বদলায়। বর্ষা ছাড়া অন্য ঋতুতে নদীর পাড়ের বালি সূর্যের আলোয় চিকচিক করে। রি নদীর পানি অনেক স্বচ্ছ ও শীতল।
দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে কুল্লাগড়া ইউনিয়নের আড়াপাড়া ও মাইজপাড়া মৌজায় বিজয়পুরের সাদা মাটি অবস্থিত। এই সাদা মাটি বাংলাদেশের মধ্যে প্রকৃতির সম্পদ দিক থেকে অন্যতম বৃহৎ খনিজ অঞ্চল। খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী ১৯৫৭ সালে এই অঞ্চলে সাদামাটির পরিমাণ ধরা হয় ২৪ লক্ষ ৭০ হাজার মেট্রিক টন, যা বাংলাদেশের প্রায় ৩ শত বৎসরের চাহিদা পুরণ করতে পারে। ছোট বড় টিলা-পাহাড় ও সমতল ভূমি জুড়ে প্রায় ১৫.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৬০০ মিটার প্রস্থ এই খনিজ অঞ্চল।
চিনা মাটির প্রাচীন ইতিহাস তেমন জানা না গেলেও ১৯৫৭ সাল থেকে এ মাটি উত্তোলনের কাজ শুরু হয়। ১৯৬০ সালে সর্বপ্রথম কোহিনুর এলুমিনিয়াম ওয়ার্কস নামে একটি প্রতিষ্ঠান এই সাদামাটি উত্তোলনের কাজ শুরু করে। পরে ১৯৭৩ সালে বিসিআইসি সাদামাটি উত্তোলনে যোগ দেয়। প্রায় ৯টি কোম্পানী এই সাদামাটি উত্তোলনের কাজ করেছে। বর্তমানে মাটি উত্তলন কাজ বন্ধ আছে। প্রায় ৩০০ জন শ্রমিক এই মাটি উত্তোলনের সাথে জড়িত ছিল। বিভিন্ন রংয়ের মাটি, পানি ও প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য মনকে বিমোহিত করে। পাহাড়ের কাটা অংশে সাদা, গোলাপী, হলুদ, বেগুনি, খয়েরী, নিলাভ বিভিন্ন রংয়ের রেখা দেখা যায়। পানি ও মাটির পাহাড় পাশাপাশি দেখতে চোখ জুড়িয়ে দেয়। সাদামাটি এলাকা জুড়ে কিছু সাধারন মানুষের বসতি আছে।
দুর্গাপুরের দর্শনীয় স্থান অনেক আছে যেমন গারো পাহাড়, সুসং দুর্গাপুরের জমিদার বাড়ি, বিরিশিরি, সোমেশ্বরী নদী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমী, টংক আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ, সাধু যোসেফের ধর্মপল্লী, হাজং মাতা রাশিমণি স্মৃতিসৌধ, বিজয়পুর – সাদামাটি, টারশিয়ারি পাহাড় ও সীমান্তফাঁড়ি।
অপরিকল্পির ভাবে পাহাড় কাটায় চিনা মাটির পাহাড়ের ক্ষয় বৃদ্ধি হয়েছে। এজন্য বর্তমানে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। এখানের খাবারের পানিতে আয়রনের পরিমাণ বেশি। তাই মানুষ বিশেষ পদ্ধতিতে পানি ছেকে অয়রন মুক্ত করে। সারাদেশ থেকে পর্যটক আসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে। যদিও একটি পর্যন্টন এলাকার যেসব সুবিধা থাকা দরকার সেসবের অভাব আছে এখানে।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।