মহানন্দা নদী বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের আন্তঃসীমান্ত নদী

মহানন্দা নদী (ইংরেজি: Mahananda River) বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। উত্তরবঙ্গে গঙ্গার গুরুত্বপূর্ণ উপনদী হলো মহানন্দা। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৬০ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৪৬০ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। নদীটিতে জোয়ার ভাঁটার প্রভাব থাকে না। মহানন্দা নদী মূলত পদ্মা নদীর উপনদী যা পদ্মা নদীর বাম তীরে এসে পতিত হয়েছে।

প্রবাহ: মহানন্দা নদী দার্জিলিং জেলার ২০৬০ মিটার উঁচু মহালিদ্রাম পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রায় ৩৭৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে রাজশাহীর গোদাগাড়িঘাটে পদ্মায় মিশেছে। প্রায় ২৫,০৪৩ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত মহানন্দা অববাহিকার ২৫ শতাংশ এলাকা পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত। বালাসন, মেচি, পূর্ব ও পশ্চিম কানহাই, পানার, নাগর, টাঙ্গন ও পুনর্ভবা মহানন্দার উপনদী।

উৎস থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার পার্বত্য পথ পেরিয়ে মহানন্দা শিলিগুড়ির কাছে সমভূমিতে নেমে এসেছে। শিলিগুড়ির চার কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বালাসন এবং পরে রূপাধারের কাছে মেচি মহানন্দায় মিশেছে। বিহারের বাগডোবে মহানন্দা দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে। পশ্চিমের শাখাটি ফুলহার নামে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে মালদহের মানিকচকে গঙ্গায় মিশেছে, অন্য ধারাটি বারসই নামে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বয়ে গেছে। এই দুটি শাখার মধ্যে ফুলহার বৃহত্তর এবং বর্তমানে মোট পানি প্রবাহের প্রায় ৭৫ শতাংশই ফুলহার বহন করে। বারসই দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে সুবর্ণপুরে আবার পরস্পরের সঙ্গে মিশে গেছে। যুগিয়ামারে নাগর বারসইতে মিশেছে। এখান থেকে নদীটি আবার মহানন্দা নামে উত্তর দিনাজপুর ও মালদহ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এই পথেই মহানন্দায় মিশেছে টাঙ্গন, পুনর্ভবা ও কুলিকের স্রোত।

বিহারের বাগডোবে মহানন্দা থেকে ফুলহারের জন্ম খুব প্রাচীন নয়। রেনেল-এর মানচিত্রে দেখা যায়, হরিশ্চন্দ্রপুরে মহানন্দা থেকে একটি শাখা বেরিয়ে হামাতপুরে গঙ্গায় মিশেছে। আরো লক্ষণীয়, রেনেল থেকে হান্টার সব মানচিত্রেই দেখা যায় মহানন্দা চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মায় মিশেছে। পরে এই মিলনস্থলটি দক্ষিণ-পূর্বে গোদাগাড়িঘাটে সরে যায়। মালদহে মহানন্দার গতিপথ অনেক বদলে গেছে। স্বরূপগঞ্জের দক্ষিণে মহানন্দার একটি পরিত্যক্ত খাতকে এখন মরা মহানন্দা বলা হয়। একই ভাবে বদলে গেছে পুনর্ভবার গতিপথ। অতীতে তিস্তার শাখা হিসেবে পুনর্ভবা নবাবগঞ্জে মহানন্দায় মিশত। এখন সেই মিলনস্থলটি সরে গেছে ভারত বাংলাদেশ-সীমান্তের কাছে।[১]

আরো পড়ুন:  কাসালং নদী বাংলাদেশ ও মিজোরামের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী

আলোকচিত্রের ইতিহাস: পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে সূর্য সেন সেতু থেকে তোলা মহানন্দা নদীর প্রবাহপথের এই আলোকচিত্রটি গ্রহণ করেছেন অনুপ সাদি ২০ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে।

তথ্যসূত্র:

১. কল্যাণ রুদ্র, বাংলার নদীকথা, সাহিত্য সংসদ, প্রথম প্রকাশ দ্বিতীয় মুদ্রণ, জানুয়ারি ২০১০, কলকাতা, পৃষ্ঠা ৭৭।

২. হানিফ শেখ, ড. মো. আবু (ফেব্রুয়ারি ২০১৬)। “উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় নদ-নদী”। বাংলাদেশের নদ-নদী ও নদী তীরবর্তী জনপদ (প্রথম সংস্করণ)। ঢাকা: অবসর প্রকাশনা সংস্থা। পৃষ্ঠা ৭৭-৭৮। আইএসবিএন 978-9848797518।

Leave a Comment

error: Content is protected !!