মাথাভাঙ্গা নদী বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী

মাথাভাঙ্গা নদী (ইংরেজি: Mathavanga River) বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটি বাংলাদেশের কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলা এবং পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এই নদীটির দৈর্ঘ্য ১২১ কিলোমিটার, প্রস্থ ২৯ মিটার এবং দর্শনার নিকট গভীরতা ১০ মিটার। নদী অববাহিকার আয়তন ৫০০ বর্গকিলোমিটার। সাধারণত এই নদীর তীর উপচে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বন্যা হয় না। নদীটি জোয়ার-ভাটার প্রভাবমুক্ত। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা পাউবো কর্তৃক মাথাভাঙ্গা নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৭৬।[১]

১৯৭১ সালেও উপজেলার দর্শনা পয়েন্টে মাথাভাঙ্গা পানিপ্রবাহের সর্বোচ্চ রেকড ছিল ১২ হাজার ৯০০ কিউসেক। মাথাভাঙ্গা নদীর উৎপত্তি মুর্শিদাবাদ জেলার জলাঙ্গির উৎস থেকে আনুমানিক ১৬ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে পদ্মা নদী হতে। তবে সেচ বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম উইলকক্রের মতে, মাথাভাঙ্গা সেচের জন্য কাটা খাল ছাড়া কিছুই নয়[২] 

মাথাভাঙ্গা নদীর প্রবাহ

প্রবাহ: পানি উন্নয়ন বোর্ড এটিকে কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নে প্রবহমান পদ্মা নদী থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে বলে উল্লেখ করেছে। এরপর নদীটি চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার হাওলি ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে ইছামতি-কালিন্দি নদীতে পতিত হয়েছে। এ নদীর প্রবাহ মৌসুমি প্রকৃতির, শুষ্ক মৌসুমে নদীটি পদ্মা নদী থেকে পানির জোগান পায় না।

অন্যান্য তথ্য: মাথাভাঙ্গা নদীটি জোয়ার ভাটার প্রভাবে প্রভাবিত এবং নদীটি বন্যাপ্রবণ। নদীর অববাহিকায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্প রয়েছে। রয়েছে তবে নদীটিতে কোনো ব্যারাজ বা রেগুলেটর নেই, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধও নেই। নদীর তীরে নুদাপাড়া গোডাউন, হাবোয়ালিয়া হাট, মুন্সিগঞ্জ হাট ও চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা অবস্থিত।

অর্থনীতি: কলকাতার শিয়ালদহ থেকে কুষ্টিয়া পর্যন্ত রেললাইন আরম্ভ হবার পূর্ব পর্যন্ত, অর্থাৎ ১৮৬২ সাল পর্যন্ত মাথাভাঙ্গা নদীপথেই কলকাতার সঙ্গে কুষ্টিয়া অঞ্চলের যোগাযোগের চালু ছিল। সেইসময় একমাত্র নদীপথ ছিলো এটি যার বাহন ছিল নৌকা। কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুর, এবং পাবনা অঞ্চলের সব নীলকররা এই মাথাভাঙ্গা নদীপথেই সংগৃহীত নীল কলকাতায় পাঠাত। মাথাভাঙ্গা নদী তার নাব্যতা হারাতে থাকে ব্রিটিশ আমলেই। এখনকার এই নদীটি অজস্র কারণে তার বেশির ভাগই নাব্যতা হারিয়ে ফেলেছে। পদ্মার পলি জমে ধীরে ধীরে মাথাভাঙ্গর দুই দিক ভরাট হয়ে গেছে। আগের মতো নৌকায় যাতায়াত হয় না, তাই সময়ের বিবর্তনে নৌকার ব্যাবহার কমেছে। মাঝিমাল্লাগণ তাঁদের পেশা বদলে ফেলেছেঙ। নেই মাছ ধরা তোড়জোড় কারণ পানি নেই আগের মতো, কমেছে মাছ, বেড়েছে বালির পরিমাণ।[৩]

আরো পড়ুন:  নাগর নদী বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আন্তঃসীমান্ত নদী

তথ্যসূত্র:  

১. মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক, বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি, কথাপ্রকাশ, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, পৃষ্ঠা ৬৬-৬৭, ISBN 984-70120-0436-4.

২. নামহীন, “মাথাভাঙ্গা নদী কেন্দ্রীক চুয়াডাঙ্গার দৈনন্দিন জনজীবন” জাতীয় তথ্য বাতায়ন, চুয়াডাঙ্গা জেলা, তারিখহীন, http://www.chuadanga.gov.bd/site/top_banner/cdb685c5-1c3a-11e7-8f57-286ed488c766/মাথাভাঙ্গা-নদী-কেন্দ্রীক-চুয়াডাঙ্গার-দৈনন্দিন-জনজীবন- 

৩. মোমিনুল ইসলাম, গাংনী (মেহেরপুর) সংবাদদাতা, “গাংনীর মাথাভাঙ্গা নদী এখন মৃতপ্রায়দৈনিক ভোরের ডাক, ১৬ মে ২০১৬, http://bhorer-dak.com/2016/05/16/47272.php.

Leave a Comment

error: Content is protected !!