নয়াগাঙ বা খাসিয়ামারা নদী বাংলাদেশ ও মেঘালয়ের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী

নয়াগাঙ বা খাসিয়ামারা নদী (ইংরেজি: Nayagang River) বাংলাদেশ ও মেঘালয়ের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের দক্ষিণ পশ্চিম খাসি জেলা এবং বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার একটি নদী। নদীটির বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটার, গড় প্রশস্ততা ৩৮ মিটার এবং প্রকৃতি সর্পিলাকার। এই নদীর অববাহিকার আয়তন ৩০ বর্গকিলোমিটার। নদীটির সর্বোচ্চ গভীরতা ৫ মিটার, এই গভীরতা উরুরগাঁও থেকে পরিমাপকৃত। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা পাউবো কর্তৃক নয়াগাঙ নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ৪৪। মৌসুমি প্রকৃতির এই নদীতে ১২ মাস পানিপ্রবাহ থাকে না। ফেব্রুয়ারিতে কম প্রবাহ থাকে, তখন প্রবাহের পরিমাণ ১ ঘনমিটার/সেকেন্ড হয়। কিন্তু জুলাই-আগস্টে এই পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ৫০০ ঘসেন্টিমিটার/সেকেন্ড পৌঁছায়। নদীটিতে জোয়ার ভাটার প্রভাব নেই। এই নদীর তীরে টেংরাটিলা অবস্থিত।

প্রবাহ: নয়াগাঙ নদীটি মেঘালয়ের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় হতে উৎপত্তি হয়ে দক্ষিণমুখে প্রবাহিত হয়ে সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। অতঃপর নদীটি দক্ষিণ দোয়ারাবাজার ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে সুরমা নদীতে পতিত হয়েছে। খরস্রোতা নদীটিতে বর্ষাকালে যখন পাহাড়ি ঢল প্রবাহিত হয় তখন মুহূর্তেই এর গতিপথের সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। কথিত রয়েছে, কোনো এক পাহাড়ি ঢলে অনেক খাসিয়া প্রাণ হারিয়ে এই নদীতে ভেসে গিয়েছিল। তখন থেকেই এটি খাসিয়ামারা নদী নামে পরিচিতি লাভ করে। লক্ষ্মীপুর এলাকায় নদীটি ভাঙন প্রবণ। তবে এই ভাঙন প্রবণতা টিলাগাঁও এলাকায় অনেক বেশি মাত্রায় পরিলক্ষিত হয়। এই নদীর প্রবাহ এবং প্রশস্ততা পূর্বের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেলেও এর গভীরতা অনেক হ্রাস পেয়েছে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে নদীর অববাহিকা মারাত্মক ভাবে প্লাবিত হয়। প্রায় ১৮০০০ হেক্টর কৃষিজমির সেচ সুবিধা প্রবর্তনের উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালে দোয়ারাবাজার উপজেলার বালিজুরি মৌজায় এই নদীর উপর একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে।

অন্যান্য তথ্য: নয়া গাঙ বা খাসিয়ামারা নদীটি জোয়ারভাটা প্রভাবিত নয় এবং নদীটি বন্যাপ্রবণ। নদীর অববাহিকায় বাংলাদেশ অংশে কোনো প্রকল্প নেই এবং কোনো ব্যারাজ বা রেগুলেটর নেই। নদীটিতে কোনো বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নেই। এই নদীর পাড়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বাজার হলো টেংরাটিলা।

আরো পড়ুন:  সুরমা নদী বাংলাদেশ ও আসামের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী

তথ্যসূত্র:

১. মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক, বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি, কথাপ্রকাশ, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, পৃষ্ঠা ২০০-২০১, ISBN 984-70120-0436-4.

২. ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ২৩৮-২৩৯। 

Leave a Comment

error: Content is protected !!