নিতাই নদী (ইংরেজি Nitai River) বাংলাদেশ ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পশ্চিম গারো পাহাড় জেলা এবং দক্ষিণ গারো পাহাড় জেলা এবং বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া উপজেলা এবং নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহমান। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা পাউবো কর্তৃক নিতাই নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর পূর্বাঞ্চলের নদী নং ৪৬। নদীটির বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৬ কিলোমিটার, গড় প্রশস্ততা ৭৪ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।[১] নদীটি ঘোষগাঁও এলাকায় প্রস্থ ৯০ মিটার।[২]
নিতাই নদী অববাহিকার আয়তন ৩৮১ বর্গকিলোমিটার।[৩] উল্লেখ করা যেতে পারে যে, তুরা পাহাড় থেকে উৎপন্ন সবকটি নদীর এলাকা কংস নদের অববাহিকা। চিল্লাখালী, ভােগাই, নিতাই, রংখাই, বরুনা, দারং, সুন্দা, সরি, মৃগী, মরিচি, গুর্গ, থালং, মরা ভােগাই, গাঙ্গিনা, মেমং, দরসা, ডাবুয়া, ঘুমিরা, বনেরাখালী, রামখালী, সাতারখালী ইত্যাদি নদী এই কংস নদী অববাহিকার কয়েকটি নদী[৪]।
মৌসুমি প্রকৃতির নদীটিতে জোয়ারভাটার প্রভাব নেই। এবং সাধারণত বর্ষা হলে বন্যা হয়। জানুয়ারি হতে মার্চ মাস অবধি এই প্রবাহ কমে যায়। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়। তখন প্রবাহের আনুমানিক পরিমাণ দাঁড়ায় ২৫.৫৬ ঘনমিটার/সেকেন্ড। এই নদীর তীরে ঘোষগাঁও বাজার এবং কলসিন্দুর বাজার গড়ে উঠেছে।[৫]

উৎপত্তি ও প্রবাহ: নিতাই নদী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের নকরেক জাতীয় উদ্যানের পার্বত্য অঞ্চল হতে উৎপত্তি লাভ করেছে। নদীটির মূল জলধারা উৎসারিত হয় জাতীয় উদ্যানের বনভূমি থেকে। পাহাড়ি বনের অনেকগুলো ছড়া একসাথে মিলিত হয়ে চকপট অঞ্চলে একটি প্রবাহের সৃষ্টি করে। নদীটি মেঘালয়ের পশ্চিম গারো পাহাড় জেলা এবং দক্ষিণ গারো পাহাড় জেলা অতিক্রম করে বাংলাদেশ সীমান্তে এসে পৌঁছেছে এবং বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া উপজেলার ঘোষগাঁও ইউনিয়নের অন্তর্গত শিববাড়ি নামক স্থান দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর এই নদীর জলধারা একই জেলা ও উপজেলার গামারিতলা ইউনিয়নের কলমসিন্দুর পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে দুটি ধারায় বিভাজিত হয়ে পোড়া কান্দুয়ালিয়া ইউনিয়নে পুনরায় মিলিত হয়েছে এবং নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়ন পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে ভোগাই কংস নদীতে পতিত হয়েছে।
অন্যান্য তথ্য: নিতাই নদীতে সারাবছর পানির প্রবাহ থাকে। বংশীপুর নামক স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক রাবার ড্যামের মাধ্যমে এ নদীর পানি সংরক্ষণ করা হয় এবং শুষ্ক মৌসুমে এই পানি সেচকাজে ব্যবহার করা হয়। আবার কলমসিন্দুরবাজারের কাছে মরা নিতাই নামক শাখাটির মুখে স্লুইসগেট দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বর্তমানে এই শাখাটি সেচনালা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এজন্য নদীটির পানি প্রবাহের গড় পরিমাণ অতীতের তুলনায় অনেক কমে গেছে। বর্ষাকালে নদীতে পাহাড়ি ঢল প্রবাহের কারণে আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। এ কারণে তখন নদীর অববাহিকা প্লাবনভূমিতে পরিণত হয়। প্রকৃতিগতভাবে নদীটি ভাঙনপ্রবণ। এই নদীর তীরে অবস্থিত কলমসিন্দুরবাজার ও ঘোষগাঁওবাজার। নদীতে সোমেশ্বরী প্রকল্প চালু রয়েছে এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ গ্রোয়েন বাঁধ আছে ১৮০ মিটার।[৬]
তথ্যসূত্র:
১. মানিক, মোহাম্মদ রাজ্জাক, বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি, কথাপ্রকাশ, ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ঢাকা, পৃ: ২০১-২০২।
২. ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ২৪৩-২৪৪।
৩. ড. অশোক বিশ্বাস, পূর্বোক্ত।
৪. ম ইনামুল হক, বাংলাদেশের নদনদী, অনুশীলন, ঢাকা, প্রথম সংস্করণ, জুলাই ২০১৭, পৃষ্ঠা ৫৩।
৫. ড. অশোক বিশ্বাস, পূর্বোক্ত।
৬. মানিক, মোহাম্মদ রাজ্জাক, পূর্বোক্ত।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।