রায়মঙ্গল নদী বা রাইমঙ্গল নদী (ইংরেজি: Raimangal River) বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য ৬২ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ২২৬৫ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক রায়মঙ্গল নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৮৩।[১]
প্রবাহ:রায়মঙ্গল নদীটি সুন্দরবনের কাছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার সীমান্ত ঘেঁষে প্রবাহিত হয়েছে। হিঙ্গলগঞ্জের কাছে ইছামতি নদী কয়েকটি জলধারায় বিভক্ত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রায়মঙ্গল নদী, বিদ্যাধরী নদী, ঝিলা নদী, কালিন্দী নদী এবং যমুনা নদী। সুন্দরবনের উপকূল জুড়ে এই নদীগুলো প্রশাখা বিস্তার করেছে। নদীটি সুন্দরবনের অভ্যন্তরস্থ নৌচলাচল পথ হিসেবে নদীটি ব্যবহৃত হয়। নদীটি উপকূলীয় জোয়ার ভাঁটার নদী।[২]
রায়মঙ্গল হচ্ছে শ্যামনগর ও সুন্দরবনের পশ্চিমদিকের সবচেয়ে বড় নদী। পদ্মার সাথে এ নদীও সংযুক্ত। মাথাভাঙ্গা নদী ভৈরব অতিক্রম করে দক্ষিণ দিকে কৃষ্ণগঞ্জের নিকট চুর্ণী নাম ধারন করে তার একটি শাখা পূর্ব দিকে বের হয়েছে। এ নদীর নাম হচ্ছে ইছামতি। ইছামতি বনগ্রাম রেল স্টেশনের পূর্ব দিক দিয়ে গোবরডাঙ্গার দক্ষিণে গিয়ে বিখ্যাত যমুনা নদীর সাথে মিশেছে। ভাগীরথী হতে বাঘের খাল নামক স্থানে এই যমুনা নদীর উৎপত্তিস্থল। যমুনা নদী ধীরক্রমে চৌবেড়িয়া ও গোবরডাঙ্গা ঘুরে অবশেষে চারাঘাটের নিকট ইছামতির সাথে মিলিত হয়েছে। ইছামতি সোজা দক্ষিণমুখী হয়ে বসিরহাট, টাকী, দেবহাটা, শ্রীপুর, ও কালিগঞ্জ হয়ে ঐতিহাসিক যশোর বাঈশ্বরীপুরে মিশেছে। এখানেই রাজা প্রতাপাদিত্যের প্রসিদ্ধ যশোর রাজ্যের রাজধানী ছিল। বসন্তপুর হতে ইছামতি-কালিন্দী নাম গ্রহণ করেছে। পূর্বে এটি একটি খালের মত ছিল। পরে কালিন্দী নদীর প্রবাহ বৃদ্ধি পেতে থাকে। সাহেবখালী কাকশিয়ালী খাল খননের পর কালিন্দী বেগবতী হয়ে সুন্দরবনের মধ্যে প্রবেশ করে রায়মঙ্গল নাম ধারন করে। এ নদী বর্তমানে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সীমা নির্দেশ করে। দেশবিভাগের পর রায়মঙ্গলের তীরে সীমান্ত পুলিশ ও শুল্ক বিভাগের অফিস স্থাপিত হয়েছে। রায়মঙ্গল ক্রমাগত উগ্র মূর্তি ধারন করে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। রায়মঙ্গল নদী ও মাদারবাড়ীর চরের উত্তর দিক হতে নদী পশ্চিম-দক্ষিণমুখী হয়ে হরিণ ভাঙ্গা নাম ধারন করে সাগরগর্ভে বিলীন হয়েছে। মাদারবাড়ীর চর প্রথমে ভারতের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরে উহা বাংলাদেশ ভুক্ত হয়েছে।[৩]
তথ্যসূত্র:
১. মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক, বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি, কথাপ্রকাশ, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, পৃষ্ঠা ৭১, ISBN 984-70120-0436-4.
২. বাংলা উইকিপিডিয়া
৩. নামহীন, “শ্যামনগর উপজেলার নদনদী”, উপজেলা তথ্য বাতায়ন, তারিখহীন, http://shyamnagar.satkhira.gov.bd/site/page/bc5fb4d1-1c4a-11e7-8f57-286ed488c766/নদ-নদী, সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন, ২০১৮।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।