তিরনই নদী বা তিরোই নদী বা তীরনই নদী (পঞ্চগড়) (ইংরেজি: Tirnai River) হচ্ছে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পঞ্চগড় জেলার তেতুলিয়া উপজেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৪ কিলোমিটার, প্রস্থ ১৫ মিটার এবং প্রকৃতি সর্পিলাকার। নদীটিতে জোয়ার ভাঁটার প্রভাব থাকে না। তিরনই নদী মূলত মহানন্দা নদীর উপনদী যা মহানন্দার বাম তীরে এসে মিলিত হয়েছে।[১] বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক তীরনই নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৫৫।
প্রবাহ: তিরনই নদী পঞ্চগড় জেলার তেতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে একই উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নদীটি মহানন্দা নদীতে পড়েছে। নদীটি প্রবাহপথে ধাইজান, সিপাইপাড়া, তিরনই গ্রাম পেরিয়ে জাতীয় মহাসড়ক ৫ অতিক্রম করে তিরনই গ্রামে প্রবাহিত মহানন্দা নদীতে পতিত হয়েছে। এই নদীটি প্রবাহপথে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা এবং তিরনইহাট ইউনিয়ন অতিক্রম করেছে।
তিরনই নদীতে সারা বছর পানি প্রবাহ থাকে না, তবে বর্ষা মৌসুমে যথেষ্ট পানি প্রবাহিত হয়। নদীটি বন্যাপ্রবণ বা ভাঙনপ্রবণ নয় এবং শুকনো মৌসুমে নদীটি শুকিয়ে যায়। শুকনো মৌসুমে উজানে নদীটি শুকিয়ে গেলে নদীর কিছু এলাকাজুড়ে ধান চাষ করা হয়। পলির প্রভাবে এ নদী ক্রমান্বয়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে এবং পূর্বের তুলনায় এই নদীর প্রবহমানতা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে।
এই নদীর তীরে তিরনইহাট এবং তিরনই হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। এই নদী অববাহিকায় তিরনই-রামচণ্ডি-তুলাশিয়া সেচ প্রকল্প আছে। তবে নদীতে কোনো রেগুলেটর নেই বা কোনো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নেই। বাংলাদেশের জাতীয় মহাসড়ক ৫ এই নদীর উপর দিয়ে তিরনই গ্রামে অতিক্রম করেছে। এই নদীর উপর সাতটি ছোট ছোট ব্রিজ এবং জাতীয় সড়ক ৫ এর উপর একটি সেতু আছে।
আলোকচিত্রের ইতিহাস: পঞ্চগড়ের তিরনই অঞ্চলের গুগল আর্থের এই নদীর মোহনার এই স্ক্রিনশটটি গ্রহণ করেছেন অনুপ সাদি ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে।
তথ্যসূত্র
১. ম ইনামুল হক, বাংলাদেশের নদনদী, অনুশীলন ঢাকা, জুলাই ২০১৭, পৃষ্ঠা ৪৫।
২. মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক (ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। “উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী”। বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি (প্রথম সংস্করণ)। ঢাকা: কথাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ১২৪-১২৫। আইএসবিএন 984-70120-0436-4।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।