পানকৌড়ি পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়েছে বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার কুলিক নদীর পাশের কেউটান গ্রাম। এই গ্রামে বসবাস করছে কয়েক শত পানকৌড়ি পাখি। উক্ত উপজেলার রানীশংকৈল-কাঁঠালডাঙ্গী সড়কে পাশে আছে কয়েকটি শিমুল গাছ। সেই গাছগুলোর ডালে ডালে অবস্থান করে এসব পানকৌড়ি পাখি। এছাড়াও অন্যান্য নানা প্রজাতির পাখিরাও যোগ দেয়, ফলে পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো জায়গা।
উক্ত কেউটান গ্রামের বাসিন্দা এবং একটি শিমুল গাছের মালিক যাদব রায়ের কাছ থেকে জানা যায়,২০০৮ সালের দিকে এক অগ্রাহায়ণ মাসের বিকেলে চার-পাঁচটি পাখি গাছটির ডালে এসে বসে। পরের দিন আরও কয়েকটি পাখি আসে। এর কিছুদিন পর পাখিতে পাখিতে ভরে যায় গোটা গাছ। পাখিগুলোর অধিকাংশই পানকৌড়ি। এভাবেই প্রতিবছর বাড়তে থাকে পাখির আসা যাওয়া। প্রতিদিন সকাল হলেই পাখিগুলো খাদ্য সংগ্রহের জন্য চলে যায় দুরদুরান্তে। আবার ফিরে আসে সন্ধ্যায়। বর্তমানে পাশে আরও দুটি গাছে নতুনভাবে বাস শুরু করেছে। গ্রামের মানুষের কাছ থেকে জানা যায় মোট তিনটি গাছে দেখা যায় এদের।
পাখিগুলোর বেশিরভাগ পানকৌড়ি হওয়ায় গাছের নিচে পড়ে থাকতে দেখা যায় নানা প্রজাতির মাছ। সেগুলো পচে দুর্গন্ধ ছড়ায়। দুর্গন্ধে বিরক্তি আসত বিধায় প্রথম প্রথম পাখিগুলোকে তাড়িয়ে দিত গ্রামবাসী। তার পরও পাখিগুলো দল বেঁধে পুনরায় ফিরে আসত এই গাছে। একপর্যায়ে পাখিগুলোর প্রতি গ্রামবাসীর মায়া জন্মে যায়। ২০১০ সালের পর আর গ্রামের কেউ পাখি তাড়ায় না।
পানকৌড়ি পাখিগুলোকে বিভিন্ন উপজেলা থেকে দেখতে আসে দর্শনার্থীরা। এখন অনেকগুলো গাছে এত পাখি দেখে আকৃষ্ট হন পথচারীরাও। কেউটান গ্রামের পাকা রাস্তার দু’পাশে আরো আছে কিছু মান্দার বা পারিজাত গাছ। শিমুল আর মান্দার গাছগুলোতে বসন্তকালে লাল ফুলে ভোরে ওঠে; লাল বর্ণে পথ বিছিয়ে যায়। সেই দৃশ্যকে বাড়িয়ে দেয় পাখিদের দৃশ্য। সূর্যের উজ্জ্বল আলোর সাথে গাছ আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। শিমুল গাছসহ পাশের বাঁশবাগান ও গাছের তলার মাটি পাখির বিষ্ঠার কারণে সাদা হয়ে থাকে সবসময়। রাস্তা চলতে যেকোনো ব্যক্তির নজর আটকে যাবে এই গাছ। নতুন বা পুরনো যে কেউ তাকিয়ে থাকবে কয়েক সেকেন্ড। বসন্তে এলে সেই সৌন্দর্য দ্বিগুণ হয়ে যায়, লাল ফুলের সাথে পুরো গাছে শত শত পানকৌড়ি।
দিনের আলো ফুটার সাথে সাথে পাখিরা খাবার খুঁজতে আশেপাশে যায় সন্ধ্যার পূর্বেই আবার হাজির হয় গাছে। কিন্তু সারাদিন সেখানে কিছু পাখি দেখা যায়। সারা বছর ওই শিমুল গাছে বিভিন্ন প্রজাতির কোনো না কোনো পাখি থাকে। তবে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি পাখি আসে।
শিমুল গাছটির ১০০ গজ দূরে আছে একটি চায়ের দোকান যার মালিক চরণ দাস। তার কাছ থেকে জানা যায় যে, কেউ পাখি শিকারের জন্য এলে তাঁরাই এখন এলাকার লোক নিয়ে প্রতিরোধ করেন। গ্রামের মানুষেরাই পাখিগুলোর দিকে খেয়াল রাখে। গ্রাম বা বাইরের কেউ কোনো প্রকার বিরক্ত করে না তাদের। এভাবেই গড়ে উঠেছে কেউটান গ্রামে পাখির নিরাপদ আবাস।
তথ্যসূত্র:
১. মজিবর রহমান খান, দৈনিক প্রথম আলো, ১২ জানুয়ারি, ২০১৩; শেষ পর্যন্ত পাখির নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠল গাছটি, ইউআরএল http://archive.prothom-alo.com/detail/date/2013-01-12/news/320729
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।