দিনাজপুরের সিংড়া জাতীয় উদ্যানে বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা ১২টি হিমালয়ী গৃধিনী শকুনকে (Himalayan Griffon) সেবা পরিচর্যা দিয়ে দিনাজপুরে অবমুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে পরিবেশের পরম বন্ধু শকুন আমাদের দেশ থেকে প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। শকুন বিলুপ্তির কারণ হিসেবে সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদী প্রকৃতি ও পরিবেশ বিরোধী ইউরোপীয়-মার্কিন বিশ্বব্যবস্থা দায়ী বলে মত দিয়েছেন গবেষকগণ। পুঁজিবাদী ব্যবসায়ী ও ওষুধ প্রস্তুতকারী গণবিরোধী কোম্পানিগুলো মানবজাতিসহ প্রকৃতিকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে অনবরত কাজ করে চলেছে। তারাই গবাদিপশুর চিকিৎসায় ব্যাথানাশক ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ ব্যবহারে শকুন বিলুপ্তির পথে। ওই ওষুধ দেয়া পশুর মৃতদেহ ভক্ষণ করলে কিডনি নষ্ট হয়ে শকুন মারা যায়।
হিমালয়ী গৃধিনী শকুন বাংলাদেশের মহাবিপন্ন পাখি। এই ১২ টি শকুন ২০১৭-২০১৮ সালে মাইগ্রেশন করার সময় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়।আহত শকুনগুলো শকুন রেস্কিউ সেন্টারে রেখে চিকিৎসা ও পরিচর্যা শেষে সুস্থ করে মুক্ত করা হয়। বন বিভাগ ও আইইউসিএনের যৌথ প্রযোজনায় কাজটি করা হয়। অনুষ্ঠানে আরো জানানো হয়। ২০১৪ ও ২০১৭ মাঝামাঝি ৫৬ টি হিমালয়ী গৃধিনী শকুন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। এছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির শকুনের নিরাপদ এলাকা নিশ্চিত করণ ও শকুন সংরক্ষণে সচেতনা বৃদ্ধিমুলক কর্মসূচীর আওতায় সেখানে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল শনিবার।
মানুষের একসময় খারাপ ধারণা ছিল প্রকৃতি’র ঝাড়ুদার এই শকুন সম্পর্কে। শকুনকে অশুভ এমনকি মৃত্যুর প্রতীক হিসেবেও কল্পনা করা হতো। কিন্তু পাখি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শকুন অশুভতো নয়, বরং মৃত পশু খেয়ে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে
শকুন এক প্রকার পাখি যারা মৃত প্রাণির মাংস খেয়ে থাকে। পাখিগুলো তীক্ষ্ম দৃষ্টির অধিকারী শিকারি পাখি বিশেষ। সারা বিশ্বে প্রায় ২৩ প্রজাতির শকুন দেখা যায়। এর মধ্যে ছয় প্রজাতির শকুন আমাদের দেশে রয়েছে। চার প্রজাতি স্থায়ী আর দুই প্রজাতি পরিযায়ী। শকুন বা বাংলা শকুন ছাড়াও এতে আছে রাজ শকুন, গ্রীফন শকুন বা ইউরেশীয় শকুন হিমালয়ী শকুন, সরুঠোঁট শকুন, কালা শকুন ও ধলা শকুন।
তিন প্রজাতির শকুন এক সময় স্থায়ীভাবে বসবাস করত। এর মধ্যে এক প্রজাতি ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্তির পথে দেশি প্রজাতির বাংলা শকুনও। শকুন অধিকাংশই বিপন্নপ্রায়। বইয়ে পড়লেও অনেকে বাস্তবে দেখেনি শকুন। বাস্তবে শকুন দেখে বেশ আপ্লুত এ প্রজন্মের শিক্ষার্থরা। তাই এই শকুন দেখতে এখন ভীড় করছে মানুষ।
বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা শকুনকে সুস্থ করার জন্য দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় সিংড়া জাতীয় উদ্যানে গড়ে তোলা হয়েছে শকুন পরিচর্যা কেন্দ্র। বন বিভাগ ও আইইউসিএন-এর উদ্যোগে এখানেই আড়াই মাসের পরিচর্যায় সুস্থ করা হয়েছে ১২টি শকুনকে। শনিবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে শকুনগুলোকে অবমুক্ত করা হয় সাতশত একরের এই বিশাল বনভুমিতে।
অবমুক্ত করার পর শকুনের নিরাপদ এলাকা নিশ্চিত করা ও শকুন সংরক্ষণে সচেতনা বাড়াতে আয়োজন করা হয় একটি আলোচনা সভা। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, বন বিভাগের বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল, ঢাকা’র বন সংরক্ষক মো. জাহেদুল কবির, আইইউসিএন-এর রিপ্রেজেনটেটিভ রাকিউবুল আমিন, পাখি বিশারদ ইনাম আল হকসহ অন্যরা। আইইউসিএন বাংলাদেশ এবং বন বিভাগের উদ্যোগে এ আলোচনা সভায় বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশাজীবীর মানুষ অংশ নেয়।
প্রকৃতির ঝাড়ুদার খ্যাত শকুন নানাবিধ কারণে হারিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশের পরম বন্ধু এই শকুন টিকিয়ে রাখতে সরকারের যেমন দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন জনসচেতনতার। এমনটাই আশা করেছেন পরিবেশ প্রেমিরা।