মাওবাদী নেতা, বাংলাদেশের ময়মনসিংহের বাম রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রিয় ব্যক্তিত্ব কমরেড এম. এ. মতিনের প্রথম মৃত্যুবর্ষিকী এবং বিপ্লবী শ্রমিক আন্দোলন ও ময়মনসিংহ কালিবাড়ী বস্তি আন্দোলনের নেত্রী কমরেড জমিলা খাতুনের স্মরণে ২৪ অক্টোবর, ২০১৪ শুক্রবার বিকেলে কালিবাড়ী চর বস্তি সংলগ্ন পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের বেড়ি বাঁধে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে বক্তাগণ সাম্রাজ্যবাদ–বিস্তারবাদ বিরোধী ভূমিকা জোরদার করার আহ্বান জানান।
প্রয়াত নেতাদের স্মরণে স্মৃতিচারণায় বক্তাগণ বলেন, শ্রেণিসংগ্রামের ভবিষ্যৎ আন্দোলনে কমরেড এম. এ. মতিন ও কমরেড জমিলা খাতুন প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। ময়মনসিংহের চর কালীবাড়ি আন্দোলনের সৃষ্টি এই দুজন কমরেডের লড়াই ও আত্মত্যাগের দিকে তাকালে বর্তমান বামপন্থীদের আন্দোলনের খরা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। জনগণের জীবন যন্ত্রণাকে জড়িয়ে আন্দোলন গড়লে জনগণের অংশগ্রহণ থাকে এবং সেখান থেকেই বেরিয়ে আসেন কমরেড এম. এ. মতিন, কমরেড জমিলা খাতুন ও কমরেড বিকাশ ভৌমিকের মতো নেতাগণ যারা শ্রমিক-কৃষকের মাঝখানে থেকে জনগণের জন্য আজীবন কাজ করে যান।
আলোচনা সভায় কমরেড জমিলা খাতুন সম্পর্কে বক্তাগণ বলেন, জমিলা খাতুন সমাজের প্রান্তিক মানুষদের নির্দ্বিধায় আন্দোলনে নিয়ে আসতে পারতেন। জমিলা খাতুন হয়ে উঠেছিলেন কালিবাড়ির এক লড়াকু সংগ্রামী নারী। তাঁর এই সংগ্রামে অর্থনৈতিক অবস্থান কোনো বাঁধা তৈরি করতে পারেনি। তিনি বাঁধাকে জয় করেছেন তাঁর ভেতরের শক্তি, গণমানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে হৃদয়ে ধারণ করে। জনগণের মুক্তির আকাঙ্খায় যিনি লড়াই করেন, তাঁর অদম্য ইচ্ছাশক্তি জেগে থাকে। জমিলা খাতুন জনগণের ইচ্ছাশক্তির এক মূর্ত প্রতীক ছিলেন।
কমরেড জমিলা খাতুন নারীদের সংগঠিত করেছেন, তিনি নারীনেত্রী ছিলেন। তিনি নারীর মুক্তির জন্য পুরুষের পাশাপাশি থেকে অনবরত লড়াই করেছেন। দারিদ্র্যপীড়িত নারীদের তিনি ছিলেন এক অফুরন্ত অনুপ্রেরণার উৎস। তাঁর সংগ্রাম তাঁকে শিখিয়েছিল সর্বহারার মুক্তি নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই কেবল সম্ভব হতে পারে।
আলোচনা সভার আয়োজন করে শহীদ বিপ্লবী ও দেশপ্রেমিক স্মৃতি সংসদ, ময়মনসিংহ জেলা শাখা। আলোচনা সভাটির উপস্থাপনা ও পরিচালনা করেন নয়া-গণতান্ত্রিক গণমোর্চার নেতা আবু বকর সিদ্দিক রুমেল এবং সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন স্মৃতি সংসদের সংগঠক ও নয়া-গণতান্ত্রিক গণমোর্চার কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য প্রফেসর মাহমুদুল আমিন।
আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদান করেন ময়মনসিংহের চর কালীবাড়ি বস্তি আন্দোলন ও বিভিন্ন বামপন্থী প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। উল্লেখ্য, গত ২০১৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কমরেড এম. এ. মতিন, ২০১৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী কমরেড জমিলা খাতুন এবং গত ১৮ অক্টোবর কমরেড বিকাশ ভৌমিক মারা যান।
আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদান করেন বিপ্লবী শ্রমিক আন্দোলনের জেলা সভাপতি শেখ আবেদ আলী, শহীদ বিপ্লবী ও দেশপ্রেমিক স্মৃতি সংসদের কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য বিজন সম্মানিত, প্রগতিশীল কৃষিবিদ ফোরামের কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য কৃষিবিদ শামসুল হোসেন, কবি শামসুল ফয়েজ, লেখক অনুপ সাদি, নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চার নেতা ফরিদুল ইসলাম ফিরোজ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের জেলা সমন্বয়ক আ.ন.ম. খায়রুল বাশার জাহাঙ্গীর, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক তোফাজ্জল হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের নেতা আবুল কালাম আল আজাদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির নেতা আজহারুল ইসলাম আজাদ, প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী এরশাদুজ্জামান, ছাত্রফ্রন্টের জেলা শাখার নেতা অজিত দাশ, কমরেড এম. এ. মতিনের স্ত্রী মরিয়ম বেগম এবং বিপ্লবী শ্রমিক আন্দোলনের নেত্রী রহিমা বেগম।
সূত্র: প্রেস বিজ্ঞপ্তি
বি দ্রঃ খবরটি প্রথম প্রকাশিত হয়, প্রাণকাকলিতে, ২৪ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।