খ্রিষ্টধর্ম বা খ্রিস্টধর্ম বা খৃস্টধর্ম (ইংরেজি: Christianity) হচ্ছে পৃথিবীর প্রচলিত প্রধান ধর্মসমূহের একটি। যিশু খ্রিষ্টের উপদেশ এবং তাঁর মূল অনুসারীদের নতুন বাইবেল বা নিউ টেস্টামেন্টে রক্ষিত কাহিনী ও কথামৃত হচ্ছে খ্রিষ্টধর্মের ভিত্তি। যিশুকে দেয়া উপাধি ‘খ্রিস্ট’ থেকে খ্রিস্টধর্মের নামকরণ করা হয়েছে। খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করেন যে যিশু হচ্ছেন ঈশ্বরের পুত্র।
খ্রিষ্টান ধর্মের উদ্ভব ঘটে পূর্ব রোমান-সাম্রাজ্যে নির্যাতিত দাস এবং দরিদ্র মানুষের মধ্যে। রোমান সম্রাটদের দ্বারা দাসদের বিদ্রোহ পর্যুদস্ত হওয়ায় দাস এবং দরিদ্রের মধ্যে হতাশার সঞ্চার হয়। কিন্তু হতাশার মধ্যে তারা এই বিশ্বাসও পোষণ করতে থাকে, কোনো এক উদ্ধারকারী মর্তে আগমন করে সকল অত্যাচার থেকে তাদের মুক্ত করবে। এমন পরিস্থিতিতে যিশু অত্যাচারিত মানুষের ত্রাতা হিসাবে আবির্ভূত হন বলে এই ধর্মের অনুসারীগণ বিশ্বাস পোষণ করেন।
এরূপ কাহিনী আছে যে, জুযিয়ার রোমান শাসক পন্টিয়াস পাইলেট ক্রুশে বিদ্ধ করে যিশুকে হত্যা করে। কিন্তু যিশু মৃত্যুর পরে পুনরায় সশরীরে পুনরুত্থিত হন এবং স্বর্গে আরোহন করেন। নির্যাতিতের কাছে অপর ধর্মসমূহের ন্যায় খ্রিষ্ট ধর্মেরও এই আশ্বাস যে, যারা সততার সঙ্গে দুঃখ কষ্ট ভোগ করেও জীবনযাপন করবে স্বর্গে তাদের সুখ লাভ হবে। অপরাপর অনেক ধর্মের ন্যায় খ্রিষ্ট ধর্মের মধ্যেও অনুসারীদের জাতি, অঞ্চল এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রভৃতির ভিত্তিতে মতামতের পার্থক্য সৃষ্টি হয়ে থাকে। এর ফলে কালক্রমে খ্রিষ্টান ধর্ম তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ক্যাথলিক ধর্ম, পূর্বাঞ্চলের মৌলবাদী খ্রিষ্টান ধর্ম এবং সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে ষোড়শ শতকে ইউরোপের মার্টিন লুথারের নেতৃত্বে সংগঠিত প্রটেস্ট্যান্ট ধর্ম।
তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; ৫ম মুদ্রণ জানুয়ারি, ২০১২; পৃষ্ঠা ১১১।
দ্রষ্টব্য: প্রটেস্ট্যান্টবাদ ও মার্টিন লুথার
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।