পরিবার প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এর নানা কাজ ও দায়িত্ব পালন করতে হয়। ক্রিয়াবাদী functionalim সমাজ বৈজ্ঞানিক প্যারাডাইম Paradigm পরিবারের কার্যাবলীকে সুনির্দিষ্টভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এ মতের সাথে ভিন্ন মত পোষণ করে অনেক সমাজবিজ্ঞানীরা পরিবারের অপরিহার্য কার্য রয়েছে বলে মনে করেন না। ক্রিয়াবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবারের কার্যাবলি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়। পিটার মার্ডক Peter Murdock ২৫০ টি সমাজ বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন সব সমাজেই পরিবার চারটি মূল কাজ করে থাকে। এগুলো হচ্ছে যৌনতামূলক, প্রজননমূলক, অর্থনৈতিক এবং শিক্ষামূলক।
পরিবারের কার্যাবলি ঠিক কি কি এ নিয়ে সমাজবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। তবে সাধারণত: অধিকাংশ সমাজবিজ্ঞানী মনে করেন পরিবারের কাজগুলো হচ্ছে যৌন নিয়ন্ত্রণ ও প্রজনন, শিশুর যত্ন ও সামাজিকীকরণ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, ঘনিষ্ঠতা ও সাহচর্য, সামাজিক স্তরবিন্যাস ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণ প্রভৃতি।
পরিবারের কার্যাবলী Functions of Family
যৌন নিয়ন্ত্রণ ও প্রজনন Regulation of Sex and Reproduction যৌনাচারের উপর প্রত্যেক সমাজই কিছু নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে থাকে। যদিও সমগ্র বিশ্বের ৭০ শতাংশ সমাজ কিছু পরিমানে যৌন স্বাধীনতা অনুমোদন করে, তবুও তারা কদাচিৎ অবৈধ জন্মকে গ্রহণ করে থাকে। স্পষ্টতই বিবাহ একটি প্রধান প্রতিষ্ঠান যা যৌনতাকে নিয়ন্ত্রণ এবং বৈধ জন্মকে উৎসাহিত করে থাকে।
শিশুর যত্ন ও সামাজিকীকরণ The Care and Socialization of Children
প্রাণীজগতে মানব শিশু হচ্ছে সবচেয়ে অসহায়। স্বনির্ভর হতে তারা সর্বাধিক সময় নিয়ে থাকে। শিশুর যত্ন ও তাদের সামাজিকীকরণে পরিবার প্রাথমিকভাবে দায়িত্ব পালন করে। ইসরাইলী কিব্বুটজ Kibbutz একমাত্র ব্যতিক্রম যেখানে সমগ্র সম্প্রদায় শিশুর যত্ন ও সামাজিকীকরণে দায়িত্ব পালন করে থাকে।
সমাজবিজ্ঞানী ট্যালকট পার্সনসের মতে পরিবার প্রাথমিক সামাজিকীকরণের দায়িত্ব পালন করে থাকে। প্রাথমিক সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার দু’টি অংশ রয়েছে- সংস্কৃতির আত্তীকরণ ও অস্মিতার বিন্যাস Structuring of the Personality.
সমাজের মূল্যবোধ ও শ্রেয়োবোধ ব্যক্তির মধ্যে সঞ্চালন হয় পরিবারের মাধ্যমে। পরিবার ব্যতীত সামাজিকীকরণ সম্ভব নয় এবং সামাজিকীকরণ ব্যতীত সমাজের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব নয়। সমাজের সদস্য হিসাবে বাবা এবং মা শিশুর কাছে আচরণের আদর্শ। এই আদর্শ আত্তীকরণ করতে পারে শিশু নিরাপত্তা, আবেগ, ভালবাসার পরিসরে। পরিবার স্নেহ-মধুর পরিবেশের ভিতর দিয়ে সামাজিক মূল্যবোধে শিশুকে দীক্ষিত করে তোলে এবং তার অস্মিতার Personality যথাযথ বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে। পার্সনস্-এর মতে পরিবার হচ্ছে অস্মিতা ‘তৈরির কারখানা’।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা Economic Co-operaton
প্রাক-শিল্পায়িত সমাজে পরিবার উৎপাদন ও ভোগের ক্ষেত্রে একক হিসাবে কাজ করেছিল। শিল্পায়িত সমাজে পরিবার এখনও ভোগের একক হিসাবে কাজ করছে। এটি বলতে বোঝায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের বাইরে অর্থনৈতিক কার্যক্রম থেকে উপার্জিত অর্থ পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী ব্যয়িত হয়।
ঘনিষ্ঠতা ও সাহচর্য Intimacy and Companionship
ঘনিষ্ঠতা ও মুখোমুখি সংযোগের ক্ষেত্রে সদস্যদের জন্য পরিবার হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। স্বাস্থ্যকর পারিবারিক সম্পর্ক স্নেহময় সাহচর্য, ভালবাসা, নিরাপত্তা, মর্যাদা-জ্ঞান ও কল্যাণ সৃষ্টি করে।
সামাজিক স্তরবিন্যাস ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণ Maintenance of Social Stratification System
স্তরবিন্যাস ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণে পরিবার একটি অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ। উচ্চ ও মধ্য শ্রেণীর পরিবারগুলো তাদের পুত্র-কন্যাদের মর্যাদা status, সম্পত্তি এবং শিক্ষা প্রদান করে এবং স্তরবিন্যাস ব্যবস্থায় তাদের অবস্থান ও অবস্থার উন্নয়নে অবদান রাখে।
পরিবারের নারীবাদী ধারণা
নারীবাদীরা মনে করেন পরিবার একটি পিতৃতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান যা পুরুষদের শোষণের হাতিয়ার। পরিবারের মাধ্যমে পরিবার প্রধান নারীদের উপর প্রভূত্ব করে থাকে এবং তাদের শ্রম ভোগ করে। নারীরা প্রতিবাদী হলেও, বিকল্প সুযোগ-সুবিধার অভাবে পিতৃতান্ত্রিক পারিবারিক কাঠামো থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না অথবা একে ভাঙ্গতে পারে না।
ক্রিয়াবাদী এবং নারীবাদীদের বক্তব্য বাস্তবতার চাইতে ভাবাদর্শের দ্বারা অনেক বেশি প্রভাবিত। পরিবার সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে থাকে। কিন্তু একই সাথে পরিবার পুরুষতন্ত্রের মূল্যবোধ এবং আচরণকে লালন করে। কিন্তু ক্রমশ: পরিবারের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসছে। পরিবারের কাজের ক্ষেত্রেও আসছে পরিবর্তন। অনেকে এমন আশংকা করেছেন যে, ভবিষ্যতে পরিবার বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তবে ইদানিং রবার্ট চেষ্টার Robert Chester দাবী করেছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বৃটেনে পরিবারের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলোর কোন পরিবর্তন ঘটেনি।
পরিবার একই সাথে পরিবর্তনশীল ও স্থিতিশীল একটি প্রতিষ্ঠান। পরিবার নিয়ে যে ‘যুদ্ধ’ চলছে তাতে তথ্যের চাইতে ভাবাদর্শকে অনেক বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। পরিবারের স্থিতিশীলতা ও পরিবর্তনকে বোঝার জন্য প্রয়োজন আরো বেশি নিরাসক্ত দৃষ্টিভঙ্গি এবং উপাত্ত।
যৌনাচারের উপর প্রত্যেক সমাজই কিছু নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে থাকে। এ ক্ষেত্রে বিবাহ একটি প্রধান প্রতিষ্ঠান যা যৌনতাকে নিয়ন্ত্রণ এবং বৈধ জন্মকে উৎসাহিত করে। শিশুর যত্ন ও তাদের সামাজিকীকরণে পরিবার প্রাথমিকভাবে দায়িত্ব পালন করে। সমাজের মূল্যবোধ ও শ্রেয়োবোধ ব্যক্তির মধ্যে সঞ্চালিত হয় পরিবারের মাধ্যমে।
পরিবার ব্যতীত সামাজিকীকরণ সম্ভব নয় এবং সামাজিকীকরণ ব্যতীত সমাজের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব নয়। প্রাক-শিল্পায়িত সমাজের ন্যায় এখনও শিল্পায়িত সমাজে পরিবার ভোগের একক হিসাবে কাজ করছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের বাইরে অর্থনৈতিক কার্যক্রম থেকে উপার্জিত অর্থ চাহিদা অনুযায়ী ব্যয়িত হয়। ঘনিষ্ঠতা ও মুখোমুখি সংযোগের ক্ষেত্রে সদস্যদের জন্য পরিবার হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
স্তরবিন্যাস ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণেও পরিবার গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পরিবারগুলো তাদের পুত্র-কন্যাদের মর্যাদা, সম্পত্তি এবং শিক্ষা প্রদান করে এবং স্তরবিন্যাস ব্যবস্থায় তাদের অবস্থান ও উন্নয়নে অবদান রাখে।
[বি. দ্র: নিবন্ধে ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া। আলোকচিত্রীর নাম: Demmarcos ]
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।