প্রতিষ্ঠান বা অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ব্যক্তির আচরণ পরিচালনাকারী সমাজতত্ত্বের প্রত্যয়

প্রতিষ্ঠান বা অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠান (ইংরেজি: Institution) মুলত সমাজতত্ত্বের একটি প্রত্যয়। বিভিন্ন অর্থে এই ধারনাটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে “স্থিতিশীল, মূল্যবান, আচরণের পুনরাবৃত্তিমূলক নমুনা” বা সামাজিক শৃঙ্খলার প্রক্রিয়া। প্রতিষ্ঠানগুলো একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে একগুচ্ছ ব্যক্তির আচরণ পরিচালনা করে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাধারণত সামাজিক উদ্দেশ্যের সঙ্গে চিহ্নিত করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলি জীবিত আচরণ পরিচালনাকারী নিয়মকানুনসমূহের মধ্যস্থতা করার মাধ্যমে  ব্যক্তি এবং উদ্দেশ্যকে অতিক্রম করে যায়।  

অক্সফোর্ড অভিধানে (OLD) প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত আইন, প্রথা, প্রচলন, ব্যবহার, সংগঠন অথবা লােকের রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক জীবনের উপাদান; নিয়ামক বিধিনিষেধ অথবা জনজীবনে অনুসৃত নানান প্রচলন কিংবা সভ্যতার কাঙিক্ষত বস্তু। সাধারণভাবে প্রত্যয়টির বিষয় হলো সামাজিক আচার-ব্যবহার যার পিছনে থাকে সুপ্রতিষ্ঠিত, সর্বজনগ্রাহ্য, সহজে নির্ণেয় এবং স্থায়ী কতকগুলি রীতিনীতি, মূল্যবােধ এবং সামাজিক অনুশাসন। সমাজতাত্ত্বিকেরা অনেক সময়ে সামাজিক আচার-ব্যবহারের পরিবর্তে রীতিনীতি, মূল্যবােধ ইত্যাদির উপর গুরুত্ব দেন বেশি।

অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠানসমূহকে মােটামুটি পাঁচভাবে দেখা হয়; রাজনৈতিক ক্ষমতা, অধিকার ইত্যাদির আলােচনা-সুত্রে), অর্থনৈতিক: উৎপাদন-সম্পর্ক নির্ধারণের নিরিখে), সাংস্কৃতিক (শিক্ষা, বিনােদন, অবসরযাপন প্রসঙ্গে), আমলাতান্ত্রিক (জনপরিষেবা অর্থে), জ্ঞাতি সম্পর্ক (kinship—অর্থাৎ পরিবার, আত্মীয়-পরিজন ইত্যাদি বিবেচনাকালে) এবং সমাজতাত্ত্বিক (বিবাহ, পরিবার ইত্যাদি সুত্রে)। অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠানের কোনও বিধিবদ্ধ প্রকৃতি কিংবা ক্রিয়াকলাপ থাকে না। তবে তার স্তরবিন্যাস দেখা যায়। সেগুলি সমাজজীবনের এক একটি ধারাকে নিয়ন্ত্রণ করে। সমাজ-সংগঠনের নানাবিধ রকমফের অনুযায়ী সমাজতাত্ত্বিকেরা অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠান প্রত্যয়টিকে শিথিলভাবে ব্যবহার করেন।

তথ্যসূত্র:

১. গঙ্গোপাধ্যায়, সৌরেন্দ্রমোহন. রাজনীতির অভিধান, আনন্দ পাবলিশার্স প্রা. লি. কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ, জুলাই ২০১৩, পৃষ্ঠা ১৭-১৮।

Leave a Comment

error: Content is protected !!