মধ্যযুগীয় দর্শন (ইংরেজি: Medieval Philosophy): খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতকে রোম সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। চতুর্দশ-পঞ্চদশ শতকের দিকে ইউরোপে পুঁজিবাদী অর্থনীতিক ব্যবস্থার প্রাথমিক রূপ আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করে। এই দুই পর্যায়ের মধ্যবর্তী এক হাজার বছর ইউরোপের দেশসমূহে দর্শনের যে বিকাশ ঘটে, তাকে ইউরোপীয় দর্শনের ইতিহাসে সাধারণত মধ্যযুগীয় দর্শন বলে আখ্যায়িত করা হয়।
প্রাচীন গ্রিস ও রোমের দাসভিত্তিক সমাজে প্রাচীন ইউরোপীয় দর্শনের বিকাশ ঘটেছিল। প্রাচীন এই দাস সমাজের ধ্বংসের ফলে প্রাচীন দর্শনেরও অবক্ষয় ঘটে। রোম সভ্যতার পতনের পরে ইউরোপের জমিভিত্তিক সামন্ততান্ত্রিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। সামন্তবাদী অর্থনীতির পরিপোষক ভাবধারারূপে খ্রিষ্টীয় ধর্ম সামন্তবাদী অর্থনীতির সহযোগী শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্রমান্বয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে একদিকে খ্রিষ্টীয় ধর্মের যাজকতন্ত্র সুসংগঠিত রূপ নিতে থাকে, অপরদিকে সামন্তবাদী ভূম্যাধিকারীদের বশীভূত করে রাষ্ট্রপতি বা রাজতন্ত্র সুদৃঢ় হতে থাকে।
সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে পরিণামে খ্রিষ্টধর্মের যাজকতন্ত্র এবং রাজতন্ত্রের মধ্যে শক্তির দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই দ্বন্দ্বে যাজকতন্ত্র যেমন নিজেদের ঐশ্বরিক শক্তির একমাত্র প্রতিভূ বলে দাবি করে এবং রাজাকে যাজকতন্ত্রের অধীনস্থ বলে মনে করে, তেমনি অপরদিকে রাজা নিজেকে ঈশ্বরের প্রতিভূ হিসাবে দাবি করে রাষ্ট্রীয় এবং ধর্মীয় উভয় ক্ষেত্রে তার শাসনাধিকার প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস পায়। এই দ্বন্দ্বের প্রতিফলন দর্শনের ক্ষেত্রেও দেখা যায়। দর্শনের মূল বিষয় হয়ে দাঁড়ায় ধর্মীয় প্রশ্নের ব্যাখ্যা। এই ব্যাখ্যার দ্বারা দর্শন হয় ধর্মীয় পোপ নয়তো রাষ্ট্রীয় রাজার দাবিকে সমর্থন করে। প্রাচীন দর্শনের মধ্যে বাস্তবমুখীনতা এবং বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসার যে পরিচয় ছিল, মধ্যযুগে তা হারিয়ে যায় ।
দ্বাদশ শতাব্দীতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে জেহাদের উপলক্ষে পাশ্চাত্যের সঙ্গে প্রাচ্যের যোগাযোগ ঘটে এবং গ্রিক-দর্শনের আরবীয় অনুবাদের সঙ্গে ইউরোপীয় দার্শনিকদের পরিচয় ঘটে। এর পূর্ব পর্যন্ত ইউরোপের কাছে প্রাচীন গ্রিক-দর্শন একরূপ অজ্ঞাত ছিল।
মধ্যযুগের ধর্মীয় পরিমণ্ডলের দার্শনিকদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন চতুর্থ পঞ্চম শতকের আফ্রিকার অধিবাসী ধর্মযাজক সেন্ট অগাস্টিন, দ্বাদশ শতকের আবেলার্ড, ত্রয়োদশ শতকের সেন্ট আলবার্ট, টমাস একুনাস, ডানস স্কোটাস, রোজার বেকন এবং দ্বাদশ শতকের স্পেনের মুসলিম দার্শনিক ইবনে রুশদ (যিনি ইউরোপে আভারস নামে পরিচিত)।
তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ২৮৪।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে”, “ফুলকির জন্য অপেক্ষা”। যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ” এবং যুগ্মভাবে রচিত বই “নেত্রকোণা জেলা চরিতকোষ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।