অধ্যবসায় ও মিতব্যয়িতার সঙ্গে দেশ গঠন

সভাপতি মাও সে-তুঙের উদ্ধৃতি
২০. অধ্যবসায় ও মিতব্যয়িতার সঙ্গে দেশ গঠন

*** সমস্ত কেডার ও জনগণ সর্বদাই যেন স্মরণ রাখেন যে, আমাদের দেশ একটা বিরাট সমাজতান্ত্রিক দেশ, কিন্তু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পশ্চাৎপদ ও দরিদ্র; এটা একটা বিরাট দ্বন্দ্ব। আমাদের দেশকে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করে গড়ে তোলার জন্য কয়েক দশকের কঠোর সংগ্রামের প্রয়োজন, এর মধ্যে রয়েছে কঠোর মিতব্যয়ের প্রয়াস এবং অপচয়ের বিরোধিতা করার প্রয়াস, অর্থাৎ অধ্যবসায় ও মিতব্যয়িতার সঙ্গে দেশ গঠন করার নীতি অনসুরণ করা। “জনগণের ভেতরকার দ্বন্দ্বের সঠিক মীমাংসার সমস্যা সম্পর্কে” (২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৭)

*** কারখানা ও দোকান, সমস্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কার্য, সমবায় কার্য ও অন্যান্য কার্য অধ্যবসায় ও মিতব্যয়িতার সঙ্গে পরিচালনা করতে হবে; যে কোনো কাজেই অধ্যবসায় ও মিতব্যয়িতার নীতি পালন করা উচিত। এটাই হচ্ছে মিতব্যয়ের নীতি, মিতব্যয় হচ্ছে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির অন্যতম মৌলিক নীতি। চীন হচেছ একটা বিরাট দেশ, কিন্তু এখনও খুব দরিদ্র, চীনকে সমৃদ্ধ করতে কয়েক দশক লাগবে। কয়েক দশক পরেও অধ্যবসায় ও মিতব্যয়িতার নীতি পালন করা প্রয়োজন, কিন্তু আগত কয়েক দশকে, বর্তমানের কয়েকটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সময়ে, বিশেষ করে অধ্যবসায় ও মিতব্যয়িতার সপক্ষে প্রচার করা এবং মিতব্যয়ের প্রতি মনোযোগ দেওয়া দরকার। “অধ্যবসায় ও মিতব্যয়িতার সঙ্গে সমবায় সমিতির চালনা-এর ভূমিকালিপি” (১৯৫৫)

*** যে কোনো স্থানেই হোক না কেন, জনশক্তি ও বস্তুসম্পদকে অত্যন্ত কদর করতে হবে। সাময়িক স্বার্থের জন্য অপব্যয় ও অপচয় করা কোনোক্রমেই চলবে না। যে কোনো স্থানে কার্যারম্ভের প্রথম বছর থেকেই ধরে নিতে হবে যে, কাজটা ভবিষ্যতে বহু বছর চলবে, দীর্ঘকাল ধরে আমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে, পাল্টা আক্রমণ চালাতে হবে এবং শত্রু বিতাড়িত করার পরে গঠন কাজ শুরু করতে হবে। একদিকে কোনো মতেই অপব্যয়ী ও অপচয়ী হওয়া উচিত নয়, অপরদিকে সক্রিয়ভাবে উৎপাদন বাড়ানো উচিত। অতীতে কোনো কোনো জায়গায় লোকজন দূরদৃষ্টি গ্রহণ করেননি, জনশক্তি ও বস্তুসম্পদের মিতব্যয়ে মযোযোগ দেননি, উৎপাদনের সম্প্রসারণে অবহেলা করেছেন, ফলে বিরাট লোকসান ভোগ করেছেন। এই শিক্ষার দিকে এখন অবশ্যই মনোযোগ দিতে হবে। “অর্থনৈতিক কার্য চালনা শিখে নিতে হবে” (১০ জানুয়ারী, ১৯৪৫)

আরো পড়ুন:  কেডার

*** কৃষি উৎপাদন ও শহরে-নগরে শিল্প উৎপাদনের দ্রুত পুনরুদ্ধার ও বিকাশ সাধনের উদ্দেশ্যে, সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার বিলোপ করার সংগ্রামে সমস্ত উৎপাদন উপকরণ ও সমস্ত জীবিকার উপায় যা ব্যবহার করা যায়, তা সর্বাধিক পরিমাণে সংরক্ষণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে অবশ্যই মনোযোগ দিতে হবে, আর যে কোনো লোক তা নষ্ট ও অপচয় করে, তার বিরুদ্ধে এবং বেপরোয়য়া পান-ভোজের বিরুদ্ধে দৃঢ় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, মিতব্যয়ের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। “শানসী-সুইউয়ান মুক্ত এলাকার কেডার সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণ” (১ এপ্রিল, ১৯৪৮)

*** আর্থিক খরচের ব্যাপারে মিতব্যয়ের নীতি অনুসরণ করা উচিত। সমস্ত সরকারি কর্মীদের কাছে এটা পরিষ্কার করে দিতে হবে যে, দুর্নীতি ও অপচয় অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ। দুর্নীতি ও অপচয়বিরোধী সংগ্রামে ইতিমধ্যেই কিছু ফল পাওয়া গেছে, পরে আরও চেষ্টা করা প্রয়োজন। যুদ্ধের জন্য, বিপ্লবী কার্যের জন্য এবং অর্থনৈতিক গঠন কার্যের জন্য প্রতিটি পয়সা বাঁচানোই হচ্ছে আমাদের হিসাবরক্ষণ ব্যবস্থার নীতি। “আমাদের অর্থনৈতিক নীতি” (২৩ জানুয়ারী, ১৯৩৪)

*** জনসাধারণের সঙ্গে একত্রে সুখদুঃখের ভাগ নেবার অনিচ্ছা এবং ব্যক্তিগত খ্যাতি ও লাভের জন্য মাথা ঘামানোর একটা বিপদজনক ঝোঁক সম্প্রতি আমাদের কর্মীদের অনেকের মধ্যে গজিয়ে উঠেছে, এটা খুবই খারাপ। উৎপাদন বৃদ্ধি ও মিতব্যয়ের আন্দোলনে আমাদের সংস্থাগুলোকে সহজতর করা এবং কেডারদেরকে নিম্নতর স্তরে প্রেরণ করা, যাতে বেশ কিছু সংখ্যক কেডার উৎপাদন কাজে ফিরে যেতে পারেন, এটা হচ্ছে এই ধরনের বিপদজনক ঝোক দূর করার একটা উপায়। “জনগণের ভেতরকার দ্বন্দ্বের সঠিক মীমাংসার সমস্যা সম্পর্কে” (২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৭)

*** নিজের ভরণপোষণের জন্য সৈন্যবাহিনীর উৎপাদন, জীবনযাত্রাকে উন্নত ও জনগণের বোঝা হালকা করেছে, এইভাবে সৈন্যবাহিনীকে সম্প্রসারিত করা সম্ভব হয়েছে, শুধু তাই নয়, তাছাড়া এটা অবিলম্বে অনেক পার্শ্বদ্রব্যও এনেছে। সেগুলো হচ্ছে:

(১) অফিসার ও সৈনিকদের মধ্যকার সম্পর্কের উন্নতি। অফিসার ও সৈনিকরা এক সঙ্গে উৎপাদন ও পরিশ্রম করে ভ্রাতৃসুলভ হয়ে উঠেছেন।

(২) শ্রমআগ্রহ দৃঢ়তর করা।… নিজেদের ভরণপোষণের জন উৎপাদন শুরুর পর থেকে শ্রমআগ্রহ দৃঢ় হয়েছে এবং ভবঘুরে নিষ্কমণ্যতা দূর করা গেছে।

(৩) শৃঙ্খলা দৃঢ়তর করা। উৎপাদনের কাজে শ্রমশৃঙ্খলা অনুসরণ করা হয়; এটা যুদ্ধের শৃঙ্খলা ও সৈন্য জীবনের শৃঙ্খলাকে শিথিল করেনি বরং এগুলোকে দৃঢ়তর করেছে।

(৪) সৈন্যবাহিনী ও জনগণের মধ্যকার সম্পর্কের উন্নতি। সৈন্যবাহিনীর নিজেদের গৃহস্থালি থাকলে জনসাধারণের সম্পত্তির উপর অবৈধ হস্তক্ষেপ কদাচিৎ ঘটে অথবা আদৌ ঘটে না। উৎপাদনের কাজে সৈন্যবাহিনী ও জনগণ শ্রম বিনিময় করে পরস্পরকে সাহায্য করেন, ফলে তাদের মধ্যকার মৈত্রী সম্পর্ক আরও দৃঢ়তর হয়।

(৫) সরকারের সম্বন্ধে সৈন্যবাহিনীতে অসন্তোষ কমে গেছে এবং দুইয়ের মধ্যকার সম্পর্ক ভালো হয়েছে।

(৬) জনগণের মহান উৎপাদন আন্দোলনের প্রেরণা। সৈন্যবাহিনী একবার উৎপাদনে লেগে গেলে সরকারি অফিস সংস্থাগুলোর উৎপাদনের কাজ করার প্রয়োজনীয়তা আরও সুস্পষ্ট হয়ে উঠে এবং তারা আরও বেশি সক্রিয়ভাবে কাজ করে; সমগ্র জনগণের সর্বজনীন উৎপাদন বৃদ্ধির আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা স্বভাবতই আরও স্পষ্ট হয়ে উঠে, আরও বেশি উদ্যমের সঙ্গে একে চালিয়ে নেওয়া হয়। “নিজেদের ভরণপোষণের জন্য সৈন্যবাহিনীর উৎপাদন সম্পর্কে এবং রীতির শুদ্ধিকরণ ও উৎপাদনের দুটি মহান আন্দোলনের গুরুত্ব সম্পর্কে” (২৭ এপ্রিল, ১৯৪৫)

*** কেউ কেউ বলেন, সৈন্যবাহিনী উৎপাদনের কাজে যোগ দিলে সে যুদ্ধ করতে ও ট্রেনিং নিতে পারবে না; অফিস সংস্থাগুলো উৎপাদন করলে তারাও নিজস্ব কাজ করতে অক্ষম হয়ে পড়বে। এ কথা ভুল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সীমান্ত এলাকার সৈন্যবাহিনী বিরাট পরিমাণের উৎপাদনের কাজ হাতে নিয়ে নিজেদের খাদ্য ও পোশাক পরিচ্ছদ প্রচুর পরিমাণে যোগাড় করেছিল, আবার সঙ্গে সঙ্গে সৈন্যদের ট্রেনিং চালিয়েছে এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পড়াশুনা চালিয়েছে। এসব আগের থেকে অধিক সাফল্য অর্জন করেছে, সৈন্যবাহিনীর ভেতরকার এবং সৈন্যবাহিনী ও জনগণের মধ্যকার ঐক্যও আগের থেকে আরও দৃঢ়তর হয়েছে। ফ্রন্ট এলাকায়, গত বছর বিরাটাকারের উৎপাদন আন্দোলন চালানো হয়েছিল, আর গত বছর যুদ্ধেও বিরাট সাফল্য অর্জিত হয়েছিল এবং ব্যাপকভাবে সৈন্যদের ট্রেনিং আন্দোলন শুরু হয়েছিল। উৎপাদনের কারণে অফিস সংস্থাগুলোর কর্মচারীদের জীবনের মান আরও উন্নত হয়েছে এবং আরও নিশ্চিন্ত মনে, আরও ফলপ্রসূভাবে তারা কাজ করেছেন। সীমান্ত ও ফ্রন্ট এলাকা, উভয় স্থানেই এই অবস্থা। “অর্থনৈতিক কার্য চালনা শিখে নিতে হবে” (১০ জানুয়ারি, ১৯৪৫)

আরো পড়ুন:  গণ যুদ্ধ

Leave a Comment

error: Content is protected !!