এঙ্গেলস সমীপে মার্কস

লণ্ডন, ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৮৫৭

… তোমার ‘ফৌজ’ চমৎকার হয়েছে। শুধু এর আয়তন দেখে আমার মাথায় যেন বজ্রাঘাত হলো। কারণ, এতখানি পরিশ্রম করা তোমার পক্ষে খুব ক্ষতিকর। যদি জানতাম যে রাত্রি জেগে কাজ করতে শুরু করবে, তাহলে বরং ব্যাপারটা চুলোয় দিতেই রাজী হতাম।

উৎপাদন-শক্তি ও সমাজ-সম্পর্কের সংযোগ সম্পর্কিত আমাদের ধারণার নির্ভুলতা ফৌজের ইতিহাস থেকে যত স্পষ্ট হয়ে ওঠে আর কিছু থেকে তত নয়। সাধারণভাবে, অর্থনৈতিক বিকাশের দিক থেকে ফৌজ গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, ফৌজের মধ্যেই প্রাচীনেরা সর্বপ্রথম একটি পুরোপুরি মজুরি-ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। অনুরূপভবে, রোমকদের মধ্যে peculium castrense ছিল প্রথম আইনী রূপ, যাতে অস্থাবর সম্পত্তিতে পরিবারের পিতা ছাড়া অন্যদের অধিকারও স্বীকৃত হয়! Fabri কর্পোরেশানের মধ্যে গিল্ড ব্যবস্থাও প্রথম দেখা দেয়। এখানেও দেখি যন্ত্রপাতির প্রথম ব্যাপক ব্যবহার। এমনকি ধাতুর বিশেষ মূল্য এবং মুদ্রারূপে তাদের ব্যবহারের ভিত্তিটার গুরুত্ব গোড়াতে সম্ভবত ছিল সামরিক — গ্রিম্মের প্রস্তরযুগ শেষ হবামাত্রই। একটি শাখার মধ্যে শ্রমবিভাগও সর্বপ্রথম ফৌজেই ঘটে। বুর্জোয়া সমাজের রূপগুলির সমগ্র ইতিহাসটি এখানে আশ্চর্য স্পষ্টরূপে প্রতিবিম্বিত হয়ে আছে। যদি কোনোদিন সময় পাও, তবে এই দিক থেকে সমস্যাটা নিয়ে কাজ করো।

আমার মতে তোমার বিবরণীতে মাত্র এই কয়টি বিষয় বাদ পড়েছে : ১) প্রথম আসল ভাড়াটিয়া সৈন্যদের বৃহদাকারে  ও তৎক্ষণাৎ আবির্ভাব কার্থিজীয়দের মধ্যে (আমাদের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্যে কার্থিজীয় ফৌজ সম্পর্কে বার্লিনের এক ভদ্রলোকের লেখা একখানি বই পড়ে দেখব। বইখানির কথা আমি সম্প্রতি জানতে পেরেছি)। ২) পঞ্চদশ শতকে এবং ষষ্ঠদশ শতকের প্রথম দিকে ইতালিতে ফৌজ ব্যবস্থার বিকাশ। রণকৌশলগত ধূর্ততা সেখানেই বেরিয়েছিল। কনডোটিয়েররা পরস্পরের সঙ্গে কীভাবে লড়াই করত মেকিয়াভেলি তাঁর ফ্লোরেন্সের ইতিহাসে তার যে বর্ণনা দিয়েছেন (জিনিসটা তোমার জন্যে নকল করে পাঠাব) তা অত্যন্ত কৌতুককর। (না, যখন ব্রাইটনে তোমার সঙ্গে দেখা করতে যাব – কবে? – তখন মেকিয়াভেলির বইখানি সঙ্গে করে নিয়ে যাব! তাঁর ফ্লোরেন্সের ইতিহাস এক অপূর্ব সৃষ্টি।) এবং সর্বশেষে ৩) এশীয় সামরিক ব্যবস্থা, যা প্রথমে পারসিকদের মধ্যে এবং পরে নানাভাবে পরিবর্তিত আকারে মোগল, তুর্কি ইত্যাদির মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে…

আরো পড়ুন:  গোথা কর্মসূচির সমালোচনা - জার্মান শ্রমিক পার্টির কর্মসূচির ওপর পার্শ্বটিকা

তথ্যসূত্র ও টিকা:

১. ফৌজী শিবিরের সম্পত্তি। – সম্পাঃ
২. ফৌজের সঙ্গে সংযুক্ত কারুশিল্পীরা। – সম্পাঃ
৩. হতে পারে উল্লেখ করা হচ্ছে W. Botticher. Geschichte der Carthager, Berlin, 1827. (ডব্লিউ বেটিখের, ‘কার্থিজ-এর ইতিহাস’ বার্লিন, ১৮২৭)। বইখানা মূলত কার্থিজ-এর যুদ্ধ-ইতিহাস প্রসঙ্গে।
৪. কনডোটিয়েররা (Condottiere) চোদ্দ এবং পনের শতকে ইতালিতে ভাড়াটে সৈন্যদের সর্দাররা।
৫. ১৯১৩ সালে, স্টুটগার্টে ‘Der Briefwechsel zwischen F. Engels und K. Marx’ বইয়ের ২ খণ্ডে প্রকাশিত। শ্রুতলিপির পাঠ অনুসারে মুদ্রিত জার্মান থেকে ইংরেজী অনুবাদের ভাষান্তর

Leave a Comment

error: Content is protected !!