নয়া গণতন্ত্র বা নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব (ইংরেজি New democracy বা New Democratic Revolution) হচ্ছে কমরেড মাও সেতুংয়ের চিন্তার উপরে ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত একটি মতবাদ। ১৯১৭ সালের মহান অক্টোবর বিপ্লবের পরবর্তীকালে চীনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে তিনি ১৯৪০ সালের জানুয়ারিতে নয়া গণতন্ত্র সম্পর্কে শিরোনামের লেখায় এই তত্ত্ব ও বিপ্লবের রূপরেখা প্রদান করেন। নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব মাও সেতুংয়ের তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক নীতি আদর্শ অবলম্বন করেই গড়ে ওঠে যা পরবর্তীকালে তা বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন এলাকায় একই ন্যায্যতায় অভিযোজিত হয়। চীন বিপ্লবকে সফল করে তোলার ক্ষেত্রে এবং পরবর্তী পর্যায়ে মহত্তর চীনা সমাজ গঠনের লক্ষ্যে মাও সেতুং সাম্রাজ্যবাদ দ্বারা অত্যাচারিত একটি আধা-ঔপনিবেশিক আধা-সামন্তবাদী দেশে মার্কসীয় লেনিনীয় তত্ত্ব ও অনুশীলনের আলোকে আমাদের সামনে হাজির করেন “নয়া গণতন্ত্র”।
নয়া গণতন্ত্র এই বিতর্কটি চালায় যে চীনের গণতন্ত্র একটি সুনির্দিষ্ট আলাদা পথ গ্রহণ করবে। নয়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে নয়া-গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। এটি ‘একদিকে যেমনি, ইউরোপ আমেরিকার বুর্জোয়া একনায়কত্বাধীন পুঁজিবাদী প্রজাতন্ত্র থেকে স্বতন্ত্র, যা হচ্ছে পুরনো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র এবং ইতিমধ্যেই যা সেকেলে হয়ে গেছে; অন্যদিকে তেমনি তা সোভিয়েত ধরনের সর্বহারা-একনায়কত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র থেকেও স্বতন্ত্র’ হবে। অর্থাৎ এটি পাশ্চাত্যের উদারনৈতিক পুঁজিবাদী এবং সংসদীয় একনায়কত্ব এবং পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েত ধরনের প্রলেতারিয় একনায়কত্ব থেকে আলাদা হবে। চৈনিক মডেলের এই গণতন্ত্র এক নব্য ঢঙের বাস্তবভিত্তিক মার্কসীয় গণতন্ত্র। চীন দেশের মাটির মতো করে, চীন দেশের জাতীয় রূপ মেনেই এই গণতন্ত্রের বুনিয়াদ গড়ে উঠেছে, চীনের এক বিশেষীকৃত ঐতিহাসিক পরিস্থিতির চাহিদা থেকেই এর জন্ম ও বিস্তার।
নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব অনুসারে বিপ্লবের চেহারা হবে দ্বিমাত্রিক, অর্থাৎ এটি মোট দুটি বিপ্লবকে ধারাবাহিকভাবে সম্পন্ন করবে। চীন বিপ্লবের ঐতিহাসিক ধারাকে মাও দুইটি পর্বে ভাগ করেন, ‘প্রথমে গণতান্ত্রিক বিপ্লব এবং তারপরে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব’। মাও সেতুং লিখেছেন,
“চীনের বিপ্লবকে অবশ্যই দুই পর্বে ভাগ করা যায়। প্রথম পর্বের কাজ হলো – সমাজের এই ঔপনিবেশিক, আধা–ঔপনিবেশিক ও আধা–সামন্ততান্ত্রিক রূপকে একটা স্বাধীন, গণতান্ত্রিক সমাজে পরিবর্তিত করা; দ্বিতীয় পর্বের কাজ হলো – বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।” (নয়া–গণতন্ত্র সম্পর্কে, জানুয়ারি ১৯৪০)
এই নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব বুর্জোয়াশ্রেণির নেতৃত্বে পরিচালিত হবে না, এবং পুঁজিবাদী সমাজ ও বুর্জোয়া একনায়কত্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তুলবে না। অধিকন্তু এই বিপ্লব এক নতুন ধরনের বিপ্লব যা সর্বহারাশ্রেণির নেতৃত্বে পরিচালিত হবে এবং যার লক্ষ্য হচ্ছে বিপ্লবের প্রথম পর্যায়ে এক নয়া-গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা এবং সমস্ত বিপ্লবী শ্রেণির যুক্ত একনায়কত্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। সুতরাং এই বিপ্লব আবার সমাজতন্ত্রের বিকাশের আরো বিস্তৃত পথ পরিষ্কার করবে। তাই, এই ধরনের বিপ্লব অনিবার্যরূপে ‘সর্বহারাশ্রেণির সমাজতান্ত্রিক বিশ্ববিপ্লবের অংশে পরিণত হয়’। মাও সেতুং লিখেছেন,
পৃথিবীর সমস্ত সাম্রাজ্যবাদী শক্তিই আমাদের শত্রু। চীন যদি স্বাধীনতালাভ করতে চায়, তবে সে কোনমতেই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সর্বহারা শ্রেণীর সাহায্য থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে না। অর্থাৎ সোভিয়েত ইউনিয়নের সাহায্য থেকে আমরা নিজেদের বিচ্ছিন্ন করতে পারি না; জাপান এবং ব্রিটেন,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালীর সর্বহারাশ্রেণী তাদের নিজ নিজ দেশে পুঁজিবাদ-বিরোধী সংগ্রাম পরিচালনা করে তার মাধ্যমে আমাদেরকে যে সাহায্য করে থাকে, তা থেকে আমরা আমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করতে পারি না। যদিও এ কথা আমরা বলতে পারি না যে, জাপান এবং ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালী-এইসব দেশে অথবা এগুলির দু-একটিতে বিপ্লব জয়যুক্ত হবার পরেই কেবল চীনে বিপ্লব জয়যুক্ত হবে, তবু এ কথা নিঃসন্দেহে বলা চলে যে, আমরা ঐ সমস্ত দেশের সর্বহারাশ্রেণীর অতিরিক্ত সহযোগিতা ছাড়া জয়লাভ করতে পারব না। সোভিয়েত ইউনিয়নের সাহায়তা সম্পর্কে এ কথা বিশেষভাবে সত্য।[১]
মাও সেতুং দেখেছিলেন, চীনের সমাজ ছিলো এক ‘ঔপনিবেশিক, আধা-ঔপনিবেশিক ও আধা-সামন্ততান্ত্রিক’ ব্যবস্থার সমাজ। প্রভুত্বকারী উপাদান হিসেবে এই ধরনের সমাজের রাজনীতি ও অর্থনীতি হচ্ছে ‘ঔপনিবেশিক, আধা-ঔপনিবেশিক ও আধা-সামন্ততান্ত্রিক; আর তাদের প্রতিফলন হিসেবে প্রভুত্বকারী সংস্কৃতিও হলো ‘ঔপনিবেশিক, আধা-ঔপনিবেশিক এবং আধা-সামন্ততান্ত্রিক।’ ১৯৪০-এর দশকের সেই সমাজকে প্রগতির ঢঙে আমূল পাল্টে ফেলে মাও চীনা অর্থনীতি সমাজ রাজনীতি সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এক নতুন উত্তাল প্রবাহ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। এই নতুন বৈপ্লবিক প্রবাহের নামকরণ করেছিলেন “নয়া গণতন্ত্র”। চীন বিপ্লবের ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে মাও বলেন, ‘চীনা জাতির নতুন রাজনীতি নয়া গণতন্ত্রের রাজনীতি; তার নতুন অর্থনীতি নয়া গণতন্ত্রের অর্থনীতি এবং নতুন সংস্কৃতি নয়া গণতন্ত্রের সংস্কৃতি’।
মাও সেতুংয়ের নয়া গণতন্ত্রের আর একটি অন্যতম অনন্য লক্ষ্য ছিলো সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদকে আমূল নস্যাৎ করা, এবং এই লক্ষ্য পূরণের লক্ষ্যে মাও সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদবিরোধী ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের উপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি উল্লেখ করেন, যে সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদী শক্তিগুলোকে উৎখাত করতে জনগণকে নেতৃত্ব দিতে পারবে, সেই জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে; কারণ জনগণের মারাত্মক শত্রু হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদী শক্তি, বিশেষ করে সাম্রাজ্যবাদ’। এই মহান লক্ষ্যে তিনি চীনের সর্বহারাশ্রেণি, কৃষক, বুদ্ধিজীবী ও অন্যান্য পাতি-বুর্জোয়া শ্রেণির সমন্বিত জোটবদ্ধ ঐক্যকে বড় করে দেখেছিলেন এবং জাতীয় বুর্জোয়াশ্রেণির সাথে ঐক্যবদ্ধতা গড়েছিলেন। “জাতীয়” কথাটিকে তিনি বিশেষ অর্থে ব্যবহার করেছিলেন এবং এই জাতীয় বুর্জোয়াদের মধ্যে তিনি সাম্রাজ্যবাদের দালাল মুৎসুদ্দি ‘প্রতিবিপ্লবী ও দেশদ্রোহীদের’ অন্তর্ভুক্ত করেননি। তিনি ‘প্রতিবিপ্লবী ও দেশদ্রোহীদের’ উপর সমস্ত বিপ্লবী শ্রেণির একনায়কত্ব আরোপের জন্য নয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েমের পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের স্তরে সমস্ত বিপ্লবী শ্রেণির ঐক্যজোটকে ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করেন। এক্ষেত্রে যুক্তফ্রন্ট, সশস্ত্র সংগ্রাম আর পার্টি গঠন হচ্ছে বিপ্লবী স্তরের তিন শক্তিমন্ত্র। সর্বহারাশ্রেণি, কৃষক, পাতি-বুর্জোয়া শ্রেণি এবং জাতীয় বুর্জোয়াশ্রেণির চতুর্মাত্রিক শ্রেণিকেন্দ্রিক বিপ্লবী একনায়কত্ব, সরকারের শাসনপ্রণালী হচ্ছে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা এবং প্রতিক্রিয়াশীল দেশদ্রোহী ও প্রতিবিপ্লবীদের জন্য দমনমূলক ব্যবস্থা–এই চারের সমাহারে মাও নয়া গণতান্ত্রিক চীনা প্রজাতন্ত্র নির্মাণ করেছিলেন।
নয়া গণতন্ত্রের প্রেক্ষাপটে নেতৃত্বের প্রশ্ন বড় হয়ে উঠে। এই বিপ্লব পুরনো বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের মতো বুর্জোয়া-পরিচালিত নয়। বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের ‘লক্ষ্য ছিলো এক পুঁজিবাদী সমাজ ও বুর্জোয়া একনায়কত্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তোলা’। তিনি উল্লেখ করেন ‘এই ধরনের বিশ্ববিপ্লবের যুগ অনেক আগে গত হয়েছে। ১৯১৪ সালে যখন প্রথম সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বযুদ্ধ বেধে উঠলো, আরো বিশেষ করে ১৯১৭ সালে যখন রুশ অক্টোবর বিপ্লব সংঘটিত হলো তখনই ঐ যুগের সমাপ্তি ঘটেছে।’ ফলে চীনা বিপ্লবের প্রথম পর্যায় ‘চীনা বুর্জোয়া একনায়কত্বের অধীনে পুঁজিবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা করা নয়–তা হতেও পারে না’। চীনা বিপ্লব হবে ‘চীনা সর্বহারাশ্রেণির নেতৃত্বে পরিচালিত চীনের সমস্ত বিপ্লবী শ্রেণির যুক্ত একনায়কত্বের অধীনে নয়া গণতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা। তার পর বিপ্লবকে অগ্রসর করে দ্বিতীয় পর্যায়ে, যে পর্যায়ে চীনে সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা হবে।’ মার্কস বলেছেন শ্রমিকশ্রেণির মুক্তির কাজ শ্রমিকশ্রেণির নিজস্ব কাজ। এই নিজস্ব কাজকেই মাও সেতুং উল্লেখ করেছেন যে ‘এই দায়িত্ব সর্বহারাদের স্কন্ধে এসে পড়তে বাধ্য’। লেনিন বলেছেন,
একথা ভাবলে সমূহ ভুল হবে যে, গণতন্ত্রের সংগ্রাম বুঝি সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব থেকে প্রলেতারিয়েতকে বিচ্যুত করবে, সে বিপ্লবকে চাপা দেবে, ছায়াচ্ছন্ন করবে, ইত্যাদি। উল্টে বরং, পরিপূর্ণ গণতন্ত্র কার্যকর না করে যেমন বিজয়ী সমাজতন্ত্র অসম্ভব, তেমনি গণতন্ত্রের জন্য সর্বাঙ্গীন, সুসঙ্গত ও বৈপ্লবিক সংগ্রাম না চালিয়ে প্রলেতারিয়েতের পক্ষে বুর্জোয়ার ওপর বিজয়লাভের প্রস্তুতিও সম্ভব নয়।[২]
নয়া গণতন্ত্র শুধু নতুন ধরনের রাজনীতির কথাই বলে না, এটি তার পাশাপাশি নতুন ধরনের অর্থনীতিকেও প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এই নতুন প্রজাতন্ত্রে বড় ব্যাংক, বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের মালিকানাধীন থাকবে।… সর্বহারাশ্রেণির নেতৃত্বে পরিচালিত নয়া-গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অর্থনীতি সমাজতান্ত্রিক চরিত্রসম্পন্ন হবে। এবং এটাই হবে সমগ্র জাতীয় অর্থনীতির পরিচালক শক্তি। কিন্তু এই প্রজাতন্ত্র অন্যান্য ধরনের পুঁজিবাদী ব্যক্তিগত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করবে না, এবং যে পুঁজিবাদী উৎপাদন “জনগণের জীবনযাত্রার ওপর আধিপত্য” করতে পারে বা–তার বিকাশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করবে না।[১]
এই অর্থনীতি গ্রামাঞ্চলে সামন্তবাদী সম্পর্ক বিলুপ্ত করবার এবং জমিকে কৃষকদের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করবার জন্য কতকগুলো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। “কৃষকের হাতে জমি” নীতির ভিত্তিতে নানা ধরনের সমবায় অর্থনীতিতে সমাজতান্ত্রিক উপাদানও থাকবে। ‘নয়া গণতন্ত্রের রাজনীতি আসলে হচ্ছে কৃষককে ক্ষমতাদান করা’।
নয়া গণতন্ত্রের আর একটি মূল লক্ষ্য হিসেবে মাও উল্লেখ করেছেন যে ‘চীন দেশ কখনোই ইউরোপ ও আমেরিকার ধাঁচের পুঁজিবাদী সমাজ গঠন করবে না অথবা পুরনো আধা-সামন্ততান্ত্রিক সমাজকে টিকিয়ে রাখবে না’। অর্থাৎ, নয়া গণতন্ত্র পুঁজিবাদের পরিবর্তে আধা-উপনিবেশবাদ বিরোধী, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ও আধা-সামন্তবাদ বিরোধী এক নতুন ধরনের সমাজতন্ত্র অভিমুখী গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক কাঠামো নির্মাণ করবে।
নয়া গণতন্ত্র এক নতুন ধরনের গণমুখী সমাজতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে চায়। পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদ জনগণের ভেতরে প্রতিক্রিয়াশীল সংস্কৃতির নৈরাজ্য কায়েম করতে চায়। সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদের কলুষতা ও দূষণ থেকে জনসাধারণের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে রক্ষা করা হচ্ছে জনগণের কাজ। নয়া গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশে পুরনো সংস্কৃতির সামন্তবাদী আবর্জনা পরিত্যাগ করতে হবে এবং এই সংস্কৃতির গণতান্ত্রিক উপাদান আত্মসাৎ করতে হবে। এই সংস্কৃতি কোনো ধ্যানধারণাই অন্ধভাবে গ্রহণ করবে না। ‘এক কথায়, নয়া গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি হলো সর্বহারাশ্রেণির নেতৃত্বাধীন জনসাধারণের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ও সামন্তবাদ বিরোধী সংস্কৃতি’। এই সংস্কৃতিকে মাও সেতুং বলেছেন ‘বিপ্লবী জাতীয় সংস্কৃতি’। এই সংস্কৃতি অন্যান্য সমস্ত জাতির সমাজতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও নয়া গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সাথে যুক্ত, তাদের সাথে পারস্পরিক আদান প্রদান ও বিকাশের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে এবং তাদের সাথে একসঙ্গে গড়ে তোলে দুনিয়ার নতুন সংস্কৃতি। আর বিপ্লবী সংস্কৃতি জনসাধারণের হাতে শক্তিশালী বিপ্লবী হাতিয়ার। জনসংখ্যার শতকরা ৯০ জনেরও বেশি যে মেহনতি শ্রমিক-কৃষক জনসাধারণ, তাঁরাই এই বিপ্লবী সংস্কৃতির অফুরন্ত উৎস।[৪]
তথ্যসূত্র ও টিকাঃ
১. … মাও সেতুং [ নয়া গণতন্ত্র প্রসঙ্গে : ৭. বুর্জোয়া একনায়কত্বের তত্ব খন্ডন, জানুয়ারি ১৯৪০ ]
২. ভি আই লেনিন থিসিস : সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ও জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার, থিসিস ২ : সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ও গণতন্ত্রের সংগ্রাম, ১৯১৬ সালে প্রকাশিত
৩ মাও সেতুঙ, নয়া গণতন্ত্র সম্পর্কে, জানুয়ারি, ১৯৪০, চারটি প্রবন্ধ একত্রে, বিদেশী ভাষা প্রকাশনালয়, পিকিং, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৯৭৭, পৃষ্ঠা ২১
৪. এই প্রবন্ধে একটি উদ্ধৃতি চিহ্নের ভেতরে উল্লেখিত শব্দ বা বাক্যাংশগুলো মাও সেতুং-এর পূর্বোক্ত ‘নয়া গণতন্ত্র সম্পর্কে’ পৃষ্ঠা ৪-৬৫ থেকে নেয়া হয়েছে।
রচনাকাল: ১৯ অক্টোবর, ২০১৬
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।