রাজনৈতিক চিন্তার ইতিহাস (ইংরেজি: History of political thought) প্রাচীন দাস যুগ থেকেই বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসের সংগে বিরাজমান এবং এভাবেই মানুষের রাজনৈতিক চিন্তার ইতিহাস সামন্তবাদী যুগ পেরিয়ে নবজাগরণের মাধ্যমে পুঁজিবাদ পর্যন্ত প্রসারিত। আলোকায়নের যুগে রাজনৈতিক সত্তা স্ব-শাসন ও রাজতন্ত্রের মৌলিক ব্যবস্থা থেকে শিল্পায়িত ও আধুনিক পুঁজিবাদী যুগের বিদ্যমান জটিল গণতান্ত্রিক ও সাম্যবাদী ব্যবস্থায় বিস্তৃত হয়। সমান্তরালভাবে, রাজনৈতিক ব্যবস্থা অস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত বসতিপ্রান্ত-ধরনের সীমানা থেকে আজকের রাষ্ট্রীয় নির্দিষ্ট সীমাতে প্রসারিত হয়েছে। রাজনৈতিক চিন্তার ইতিহাস প্রায়শই দর্শনের ইতিহাসের সাথে আবৃত হয়ে (overlap) যায়।
রাষ্ট্র কি, রাষ্ট্রের উদ্ভব কিভাবে ঘটেছে, ব্যক্তির সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক কি, রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের পার্থক্যের ভিত্তি কি, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে সম্পর্ক, রাষ্ট্র এবং সরকারের পার্থক্য, সরকারের প্রকারভেদ প্রভৃতি রাষ্ট্রীয় সমস্যার আলোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় চিন্তা বা রাষ্ট্রবিজ্ঞান জ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে রূপলাভ করেছে।[১]
মানবজাতির প্রতিটি দেশ বা অঞ্চলেই রাষ্ট্র সম্পর্কিত সমস্যার উপর সেই অঞ্চলের চিন্তাবিদগণ ইতিহাসের আদিকাল থেকে চিন্তা করে এসেছেন। এরূপ অনুমান করা স্বাভাবিক যে রাষ্ট্রমাত্রের সাংগঠনিক একক মানুষ হলেও এবং তার সমস্যা মূলত ব্যক্তির সঙ্গে সমষ্টির সম্পর্কের সমস্যা হলেও এই সমস্যার প্রকাশ সব অঞ্চলে সর্বকালে একইভাবে ঘটে নি। মৌলিক ঐক্যের মধ্যেও অঞ্চল থেকে অঞ্চলে সমস্যা এবং সমস্যার সমাধানমূলক চিন্তার পার্থক্য বর্তমানের ন্যায় অতীতেও ছিল।
মানব সভ্যতাকে আজকাল সাধারণত পাশ্চাত্য এবং প্রাচ্য বা এশিয়া এবং ইউরোপীয় সভ্যতা হিসাবে চিহ্নিত করা যায়। এ বিভাগের কৃত্রিমতা অনস্বীকার্য। কিন্তু এরূপ বিভাগের মূলে যে কিছু পার্থক্য রয়েছে তাও সত্য। সমাজ ও রাষ্ট্রের বিকাশের প্রকৃষ্ট গবেষণা তুলনামূলকভাবে ইউরোপে এশিয়ার চেয়ে অধিক হয়েছে। ফলে এশিয়ার এবং আফ্রিকার মানুষের রাষ্ট্রীয় সত্তার বিকাশ এবং এশিয়া আফ্রিকার চিন্তাবিদদের রাষ্ট্রীয় চিন্তার পরিচয় এখনও প্রধানত অনুদঘাটিত এবং অজ্ঞাত। সে কারণে রাষ্ট্রীয় চিন্তার বা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিকাশের ইতিহাস বলতে সাধারণত ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহ এবং সে অঞ্চলের চিন্তাবিদদের চিন্তার বিবর্তন এবং ইতিহাস বুঝায়।
প্রাচীন রাজনৈতিক চিন্তার ইতিহাস
ইউরোপীয় রাষ্ট্রচিন্তার প্রথম এবং উন্নতধরনের সূত্রপাত ঘটে প্রাচীন গ্রিক নগর রাষ্ট্রে এবং গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস, প্লেটো এবং এ্যরিস্টটলের চিন্তাধারার মধ্যে। প্রধানত ভৌগলিক কারণে গ্রিসে বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বয়ংসম্পূর্ণ নগররাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। এই সমস্ত নগর রাষ্ট্রের মধ্যে এথেন্স এবং স্পার্টা ছিল যথাক্রমে রাজনীতিক চিন্তা এবং গণতন্ত্রের বিকাশ এবং সামরিক শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনের জন্য বিশিষ্ট। এথেন্সের সক্রেটিস এবং বিশেষ করে প্লেটো যখন রাষ্ট্রীয় সমস্যার উপর তাঁদের মতামত ব্যক্ত করেন তখন এথেন্সের গণতন্ত্রের গৌরব ও সমৃদ্ধি বিনষ্ট প্রায়। স্পার্টার সঙ্গে দীর্ঘ যুদ্ধের ফলে এথেন্স নানা রাজনৈতিক সংকটে আবিষ্ট। দাসের শোষনের ভিত্তিতে যে সভ্যতা সমৃদ্ধি লাভ করেছিল সে সভ্যতা খ্রিষ্টপূর্ব ৪র্থ শতক থেকেই ন্যায়, অন্যায়, আনুগত্য, বিদ্রোহ, ব্যক্তির অধিকার ও ক্ষমতা, গুণ ও দাবি প্রভৃতি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে আরম্ভ করেছে।
প্লেটো এবং এরিস্টটল উভয় দার্শনিক এথেন্সের সেরা জ্ঞানীদের প্রধান ছিলেন। তাঁরা তাঁদের রচনাসমূহের মধ্যে সংকটগ্রস্থ এথেন্স তথা গ্রিক নগর রাষ্ট্রের পুরাতন রাষ্ট্রীয় আদর্শকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস পান। তাঁরা উভয়ে দাসপ্রথাকে সমর্থন করেছেন এবং গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার বিরোধিতা করেছেন। প্লেটো তাঁর ‘রিপাবলিক’ গ্রন্থে যে আদর্শ রাষ্ট্রের পরিকল্পনা রচনা করেছেন তাতে একদল বিশেষভাবে শিক্ষিত ও দক্ষ শাসক বা দার্শনিককে রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী করা হয়েছে। প্লেটো রাষ্ট্রের নাগরিকদের যোগ্যতার ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে উল্লেখ করেন যে, ন্যায় মানে হচ্ছে যার যে দায়িত্ব তার সে দায়িত্ব পালন করা। এ্যরিস্টটল প্লেটোর চেয়ে অধিক বাস্তববাদী ছিলেন। তিনি কোনো আদর্শ রাষ্ট্রের কল্পনা করার বদলে বাস্তব অবস্থা বিশ্লেষণ করে সরকারের প্রকারভেদ করে প্রত্যেক প্রকার সরকারই কেমন করে স্থায়ীত্ব বজায় রাখতে পারে তার পথ নির্দেশ করেন।
এ্যারিস্টটলের ‘পলিটিক্স’ গ্রন্থে রাষ্ট্রের প্রকৃতি, উদ্ভব, রাষ্ট্রের অন্তর্গত শ্রেণীসমূহের বিশ্লেষণ, সরকারের প্রকারভেদ, কার্যকর রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক শর্ত এবং রাষ্ট্রের মধ্যে অসন্তোষ ও বিদ্রোহের কারণ এবং তার নিবারণের উপায়ের সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক আলোচনা ও সংজ্ঞাদানের চেষ্টা রয়েছে। এদিক থেকে এই গ্রন্থকে রাষ্ট্রীয় সমস্যার অন্যতম আদি বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ বলে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু প্লেটো এ্যরিস্টটলের রাষ্ট্রীয় আলোচনার সুসংবদ্ধতা সত্ত্বেও একথা সত্য যে, তাঁদের পক্ষে ক্ষয়প্রাপ্ত গ্রিক নগর রাষ্ট্রকে নতুন জীবন দান করা সম্ভব হয় নি।
কিছুকালের মধ্যে সম্রাট আলেকজান্ডারের আক্রমণ এবং পরবর্তীতে রোম সাম্রাজ্যের অভ্যুত্থানে গ্রিক নগর রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্য বিলুপ্ত হয়ে যায়। রোম নগরী প্রাচীন নগর রাষ্ট্রের ক্ষুদ্র সীমানায় সীমাবদ্ধ না থেকে কালক্রমে প্রাচীন ইতিহাসের বৃহত্তম সাম্রাজ্যের আকার গ্রহণ করে। ব্যক্তির সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্কের তাত্ত্বিক আলোচনার চেয়ে সাম্রাজ্যের সুষ্ঠ শাসনই রোমের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রধান সমস্যা ছিল। এর ফলে ইতিহাসে রোমের অবদান সূক্ষ্মচিন্তা ও দর্শনের চেয়ে এক-কেন্দ্রিক শাসনের প্রয়োজনীয় আইন কানুন রচনা ও ব্যাখ্যা দান এবং সামরিক বাহিনী চলাচলের সড়ক নির্মাণেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
রোম সাম্রাজ্যের পতনের পরে ইউরোপে যে দীর্ঘ পর্যায়ের সূত্রপাত ঘটে তাকে সামন্তবাদী মধ্যযুগ বলে অভিহিত করা হয়। এই পর্যায়ে খ্রিষ্টধর্মের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে এবং পরবর্তীকালে রোমের পোপের নেতৃত্বে এক বৃহৎ যাজক সাম্রাজ্যের সৃষ্টি হয়। এই যাজকতন্ত্র কেবল পারলৌকিক নয়, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকেও নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়াস পায়। সামন্ততন্ত্র যতদিন ইউরোপের প্রধান অর্থনীতিক ব্যবস্থা ছিল ততদিন খ্রিষ্টীয় যাজকতন্ত্র এবং সামন্ততন্ত্র সম্মিলিতভাবে স্বাধীন জাতীয় রাষ্ট্রের এবং কেন্দ্রীভূত শাসন ব্যবস্থার বিকাশে বাধা দান করতে থাকে। মধ্যযুগে রাষ্ট্রীয় চিন্তার প্রধান প্রশ্ন ছিল: পোপ বড় না রাজা বড়? এই প্রশ্নে যাজক সম্প্রদায়ভুক্ত চিন্তাবিদ সেন্ট বার্নার্ড, সেলিসবারি জন এবং সেন্ট টমাস এ্যকুইনাস রাজার বিরুদ্ধে ধর্ম তথা পোপের পক্ষ অবলম্বন করে পোপের সর্বাধিক ক্ষমতার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন।
পুঁজিবাদী যুগে রাজনৈতিক চিন্তার ইতিহাস
যন্ত্রশিল্প এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতির বিকাশ, ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধে ইসলামের সঙ্গে ইউরোপের পরিচয় এবং এর ফলে প্লেটো এ্যরিস্টটলের রচনার আরবি অনুবাদের ইউরোপ আগমন, ক্রুসেডে পোপের নেতৃত্বের দুর্বলতা প্রকাশ ইত্যাদি ঐতিহাসিক কারণে পোপের ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে এবং রাজার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ধর্মান্ধ যাজক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে রাজার ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এককালে সমাজের বিকাশের ন্যায় প্রয়োজনীয় এবং প্রগতিশীল ছিল। ম্যাকিয়াভেলি (১৪৬৯-১৫২৭) বোদিন (১৫৩০-১৫৯৬) এবং হবস (১৫৮৮-১৬৭৯) রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে রাজা বা শাসকের সার্বভৌম ক্ষমতার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
সপ্তদশ এবং অষ্টাদশ শতকে ইউরোপে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধিকতর বিকাশ লাভ করে। এই সময়ের প্রধান চিন্তাবিদ এবং দার্শনিকদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন ইংল্যান্ডের বেনথাম (১৭৪৮-১৮৩২), জন লক (১৬৩২-১৭০৪) এবং বার্ক (১৭২০-১৭৯৭) ও ফরাসি দেশের রুশো (১৭১২-১৭৭৮) মন্টেসক্যূ (১৬৮৯-১৭৫৫)। লক এবং রুশো উভয়ই রাষ্ট্রের উদ্ভব ব্যাখ্যার জন্য সামাজিক চুক্তির উল্লেখ করেন। হবসও সামাজিক চুক্তির উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু সামাজিক চুক্তির যে ব্যাখ্যা হবস দেন তা যেমন লক ও রুশোর ব্যাখ্যার পৃথক, তেমনি আবার লক ও রুশোর ব্যাখ্যাও অভিন্ন নয়। হবস সামাজিক চুক্তির ব্যাখ্যা দ্বারা রাজা বা শাসকের একচ্ছত্র ক্ষমতার প্রয়োজনীয়তা প্রমাণের চেষ্টা করেছেন। লকের মতে, সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে ব্যক্তিক অধিকার রক্ষার দায়িত্ব শাসকের উপর অর্পিত হলেও শাসক সার্বভৌম কোনো ক্ষমতা নয়। রুশো লকের এই গণতান্ত্রিক ভাবকে সম্প্রসারিত করে তাঁর সামাজিক চুক্তির ব্যাখ্যায় বলেন যে, চুক্তির মাধ্যমে জনসাধারণ যদি তাদের নিজ নিজ ক্ষমতা কারোর নিকট অর্পণ করে থাকে তবে সে কোনো ব্যক্তিক শাসক নয়। সে হচ্ছে জনসাধারণেরই ‘সাধারণ ইচ্ছা’। জনসাধারণ ইচ্ছে করেই সাধারণ ইচ্ছার নিকট ব্যক্তিগত অধিকারকে অর্পণ করেছে। অর্থাৎ ব্যক্তি যেমন আর স্বাধীন শাসক হিসাবে কার্যকর থাকবে না (প্রাকৃতিক অবস্থায় সে যেরূপ ছিল) তেমনি আবার কোনো স্বৈরতান্ত্রিক ব্যক্তিক শাসকেরও সে অধীন হবে না। সে তার এবং অপর সবার মিলিত সাধারণ ইচ্ছার দ্বারা শাসিত হবে। কাজেই রাষ্ট্রে সরকার জনসাধারণের সাধারণ ইচ্ছার প্রতীক, জনসাধারণ থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো স্বাধীন সত্তা নয়। তার মানে, সরকার যখন জনসাধারণকে শাসন করে না, জনসাধারণই শাসন করে তখন কোনো ভিন্ন শাসক জনসাধারণকে শাসন করে না, জনসাধারণই জনসাধারণকে শাসন করে। যে ব্যক্তি তার শাসক অধিকার চুক্তির মাধ্যমে ত্যাগ করেছিল সেই আবার সাধারণ ইচ্ছার একক হিসাবে নিজেকে শাসন করার অধিকার লাভ করে। মন্টেসক্যূ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ঐতিহাসিক পদ্ধতির প্রবর্তক বলে খ্যাত।
ঊনবিংশ শতকে কার্ল মার্কস এবং এঙ্গেলস রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অর্থনীতিক ভিত্তি বিশ্লেষণ করে এবং অর্থনীতিকে রাষ্ট্রনীতির মূল ব্যাখ্যা করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে নতুন চিন্তার যোগান দেন। হেগেলের দ্বন্দ্বমূলক ঐতিহাসিক পদ্ধতিকে বাস্তব সমাজের বিকাশের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে মার্কস এবং এঙ্গেলস দ্বন্ধমূলক ঐতিহাসিক বস্তুবাদ প্রতিষ্ঠা করেন। এই পর্যায় থেকে পুঁজিবাদী চিন্তাবিদগণও রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কে নতুনভাবে ভাবতে শুরু করেন। পুঁজিবাদের বিকাশ, তাঁর আভ্যন্তরীণ বিরোধ ও সংকট, নতুন শক্তি হিসেবে শ্রমিক শ্রেণীর জাগরণ ইত্যাদি চিন্তাবিদ মাত্রকেই একথা স্বীকারে বাধ্য যে, বর্তমান রাষ্ট্রের ভূমিকা আর সুবিধাভোগী সংকীর্ণ কোনো শ্রেণীর ব্যক্তিগত অধিকার রক্ষা নয়-রাষ্ট্রের ভূমিকা আজ রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, ধর্মীয়, সাংষ্কৃতিক সর্বপ্রকার সুবিধাকে বৃহত্তর, এমনকি সমস্ত জনসংখ্যার উপর তার শ্রেণী বা আর্থিক উপার্জনগত যোগ্যতা অযোগ্যতা নির্বিশেষে বিস্তারিত করে দেওয়া।
বর্তমানে রাষ্ট্র সমাজব্যবস্থার দিক থেকে দুই শ্রেণীতে-পুঁজিবাদী এবং সমাজতান্ত্রিক। এই দুই শ্রেণীর রাষ্ট্রের আর্থিক বুনিয়োদ একেবারে পৃথক বলে উভয় শ্রেণীর রাষ্ট্রীয় সংগঠন অর্থাৎ তার সরকার, আইনসভা, রাজনীতিক দল, ব্যক্তিক অধিকার, রাষ্ট্রের ক্ষমতা ইত্যাকার সমগ্র রাষ্ট্রীয় প্রশ্নই ভিন্ন প্রকারের। একই মাপকাঠি দিয়ে এদের উভয়কে পরিমাপ করা চলে না। সে বিচারে উভয়ের সমস্যার যথার্থ অনুধাবন অসম্ভব হয়ে পড়ে।
তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ৩১৫-৩১৭।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।
I want to join.