জনসাধারণের লাইন

সভাপতি মাও সে-তুঙের উদ্ধৃতি

১১. জনসাধারণের লাইন

*** জনগণ, কেবলমাত্র জনগণই হচ্ছেন বিশ্ব-ইতিহাস সৃষ্টির চালিকাশক্তি। যুক্ত সরকার সম্পর্কে (২৪ এপ্রিল, ১৯৪৫)

*** জনসাধারণ হচ্ছে প্রকৃত বীর, কিন্তু আমরা নিজেরা প্রায়ই হচ্ছি শিশুর মতো অজ্ঞ ও উপহাস্য; এটা জানা না থাকলে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করাও অসম্ভব। ‘পল্লীর তথ্যানুসন্ধানের’ ভূমিকা ও ক্রোড়লিপি মার্চ-এপ্রিল, ১৯৪১

*** জনসাধারণের আছে সীমাহীন সৃজনী শক্তি। তাঁরা নিজেদের সংগঠিত করতে পারেন, যেখানে নিজদের শক্তির স্ফূরণ করা সম্ভব সেসব স্থানে ও বিভাগে এগিয়ে যেতে পারেন, উৎপাদনের গভীরে ও ব্যাপ্তিতে এগিয়ে যেতে পারেন এবং নিজেদের জন্য দিনে দিনে অধিকতর কল্যাণময় সম্পদ সৃষ্টি করতে পারেন। ‘অতিরিক্ত শ্রমশক্তি একটা পথ খুঁজে পেলো’ এর ভূমিকালিপি (১৯৫৫)

*** বর্তমানে কৃষক আন্দোলনের উত্থান একটা অত্যন্ত বিরাট সমস্যা। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই চীনের মধ্য, দক্ষিণ এবং উত্তরাঞ্চলের প্রদেশগুলোতে কয়েকশ’ মিলিয়ন কৃষক প্রবল ঝড় ও ঘূর্ণির্বত্যার মতো তীব্র গতি ও প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে জেগে উঠবে, কোনো শক্তি, সে যত প্রবলই হোক না কেন, এটাকে চেপে রাখতে পারবে না। যেসব বেড়াজাল তাঁদের বেঁধে রাখে, সেসব কিছুকেই ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে তারা মুক্তির পথে দ্রুত অগ্রসর হবেন। সমস্ত সাম্রাজ্যবাদী, যুদ্ধবাজ, দুর্নীতিপরায়ণ সরকারী কর্মচারী, স্থানীয় উৎপীড়ক এবং অসৎ ভদ্রলোককে তারা কবরে পুঁতে রাখবেন। সমস্ত বিপ্লবী পার্টি ও দল এবং সমস্ত বিপ্লবী কমরেডকেই তাদের পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে গ্রহণ করা বা বর্জন করা তাদের ইচ্ছা। তাঁদের পুরোভাগে দাঁড়িয়ে তাদের নেতৃত্ব করা? না তাদের পিছনে দাঁড়িয়ে তাদের ভেংচি কেটে সমালোচনা করা? অথবা তাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে তাদের বিরোধিতা করা? এ তিনটার একটাকে বেছে নেবার স্বাধীনতা প্রতিটি চীনা লোকেরই আছে। কিন্তু পরিস্থিতি আপনাকে সত্বরই বেছে নিতে বাধ্য করবে। “হুনান কৃষক আন্দোলনের তদন্তের রিপোর্ট”(মার্চ, ১৯২৭)

*** বর্তমান গ্রামাঞ্চলের সমবায়করণের সামাজিক রূপান্তরের উত্তাল জোয়ার ইতিমধ্যেই কোনো কোনো জায়গায় পৌঁছেছে এবং অচিরেই গোটা দেশের উপর দিয়ে বয়ে যাবে। এ হচ্ছে পঞ্চাশ কোটিরও বেশি পল্লী জনসংখ্যার বিরাটাকারের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী আন্দোলন, এর অত্যন্ত মহান বিশ্ব তাৎপর্য রয়েছে। এই আন্দোলনকে আমাদের সক্রিয়, উৎসাহময় ও সুপরিকল্পিত নেতৃত্ব দিতে হবে এবং বিভিন্ন উপায়ে এটাকে পিছনে টানা উচিত নয়। আন্দোলনের মধ্যে কিছু বিচ্যুতি অপরিহার্য, এটা বুঝা যায় এবং তা শুদ্ধ করাও কঠিন হবে না। আমরা সক্রিয় সাহায্য দিলেই কেডারদের মধ্যে ও কৃষকদের মধ্যে যে ত্রুটি কিংবা ভুল রয়েছে, তা দূর করা বা শুদ্ধ করা যাবে। “কৃষি সমবায়করণের সমস্যা সম্পর্কে” (৩১ জুলাই, ১৯৫৫)

*** জনসাধারণের মধ্যে নিহিত রয়েছে খুবই বিরাট সমাজতান্ত্রিক সক্রিয়তা। বিপ্লবী যুগেও যারা শুধু পুরনো গতানুগতিকতাকে অনুসরণ করে চলতে সক্ষম, তারা এই সক্রিয়তাকে একেবারেই দেখতে পান না। তারা অন্ধ, তাঁদের সামনে সবকিছুই অন্ধকার। এমনকি, কখনও কখনও তারা এত দূর যান যে, ভুল নির্ভুল নিয়ে তালগোল পাকিয়ে, দিনকে রাত করে বসেন। এই ধরনের লোক আমরা কি কম দেখেছি? যারা শুধু পুরনো গতানুগতিকতা অনুসারে চলেন, তারা সর্বদাই জনগণের সক্রিয়তাকে ছোট করে দেখেন। নতুন একটা কিছু ঘটলে, তারা সব সময়েই তাকে অগ্রাহ্য করেন, প্রথমে তারা বিরোধিতা করতে ছুটে আসেন এবং পরে পরাজয় মেনে নেন, একটু আত্মসমালোচনাও করেন। কিন্তু দ্বিতীয় বার আবার একটা কিছু নতুন দেখা দিলে, সেই পুরনো ধারাতেই তারা আবার নতুন করে চলেন। নতুন সব কিছুর ব্যাপারেই তারা এই রীতি অনুসরণ করেন। এ ধরনের লোকেরা সব সময়েই নিষ্ক্রিয়, জরুরী মুহূর্তে তারা সর্বদাই নিশ্চল হয়ে পড়ে থাকেন এবং এক পা চলতে গেলেও প্রথমে তাঁদের পিঠে ধাক্কা মারতে হয়। “এই থানা দুবছরেই সমবায়ের পথে গেছে-এর ভূমিকালিপি” (১৯৫৫)

*** কুড়ি বছরের বেশি কাল ধরে আমাদের পার্টি প্রতিদিন জনসাধারণের মধ্যে কাজ করছে, বিগত দশ বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিদিনই জনসাধারণের লাইন সম্পর্কে বলছে। আমরা সব সময়েই এই মন্তব্য করে আসছি যে, বিপ্লবকে অবশ্যই নির্ভর করতে হবে জনসাধারণের উপর, নির্ভর করতে হবে কাজে সকলের হাত লাগানোর উপর, শুধুমাত্র অল্পসংখ্যক লোকের উপর নির্ভর করে হুকুমজারী করার আমরা বিরোধিতা করি। কিন্তু কোনো কোনো কমরেডের কাজকর্মে এখনও জনসধারণের লাইন পুরোপুরি পালিত হচ্ছে না, এখনও তারা শুধু অল্পসংখ্যক লোকের উপর নির্ভর করে নিঃসঙ্গভাবে কাজ করেন। এর একটা কারণ হচ্ছে এই যে, যা কিছুই তারা করুন না কেন, তাদের দ্বারা পরিচালিত লোকের কাছে তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা করতে তারা সর্বদা অনিচ্ছুক এবং পরিচালিত লোকের সক্রিয়তাকে ও সৃজনী শক্তিকে স্ফুরণের সুযোগ দিতে তাঁরা জানেন না। নিজের দিক থেকে তাঁরাও চান, যাতে প্রত্যেকেই কাজে হাত লাগান, কিন্তু কি করতে হবে এবং কেমন করে তা করতে হবে, সে বিষয়ে অন্যান্য সবাইকে তারা কিছুই জানতে দেন না, এইভাবে সবাই কেমন করে কাজে যোগ দিতে পারেন এবং কেমন করে কাজ ভালভাবে সম্পন্ন করতে পারেন? এই সমস্যা মীমাংসা করতে গেলে, মূলত অবশ্যই মতাদর্শের ক্ষেত্রে জনসাধারণের লাইন সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে বহু বাস্তব পদ্ধতিও কমরেডদেরকে অবশ্যই শেখাতে হবে। “শানসী-সুইউয়ান দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকীয় দপ্তরের কর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তা” (২ এপ্রিল, ১৯৪৮)

আরো পড়ুন:  বিপ্লবী বীরত্ব

*** চব্বিশ বছরের অভিজ্ঞতা আমাদেরকে শেখায় যে, সমস্ত সঠিক কর্তব্য, সঠিক নীতি ও কর্মরীতি অবশ্যই নির্দিষ্ট স্থান ও কালের জনসাধারণের দাবী-দাওয়ার উপযোগী এবং জনসাধারণের সঙ্গে সংযুক্ত; সমস্ত ভুল কর্তব্য, ভুল নীতি ও কর্মরীতিই নির্দিষ্ট স্থান ও কালের জনসাধারণের দাবী-দাওয়ার উপযোগী নয় বরং জনসাধারণ থেকে বিচ্ছিন্ন। গোঁড়ামিবাদ, অভিজ্ঞতাবাদ, হুকুমবাদ, লেজুড়বাদ, সংকীর্ণতাবাদ, আমলাতন্ত্রবাদ এবং কাজকর্মে দাম্ভিক মনোভাব প্রভৃতি ব্যাধিগুলো নিশ্চিতভাবেই খারাপ এবং অসহ্য, যদি কেউ এ ধরনের ব্যাধিতে আক্রান্ত থাকে, তবে তাকে অবশ্যই এসব ব্যাধি সারাতে হবে, কারণ এগুলো জনসাধারণের থেকে বিচ্ছিন্ন। “যুক্ত সরকার সম্পর্কে” (২৪ এপ্রিল, ১৯৪৫)

*** নিজেকে জনসাধারণের সঙ্গে সংযুক্ত করতে গেলে, জনসাধারণের প্রয়োজন ও ইচ্ছা অনুসারে কাজ করতেই হবে। জনসাধারণের জন্য যেসব কাজ করা হয়, সে সবেরই শুরু হওয়া উচিত জনসাধারণের প্রয়োজন থেকে, কোনো ব্যক্তি বিশেষের শুভেচ্ছা থেকে নয়। অনেক সময়ে বাস্তব ক্ষেত্রে যদিও জনসাধারণের কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন, কিন্তু নিজের দিকে থেকে তারা এখনও সেই প্রয়োজন সম্পর্কে সচেতন নন এবং সেই পরিবর্তন সাধনের জন্য এখনও তারা দৃঢ় সংকল্প বা ইচ্ছুক নন, এই অবস্থায় আমাদের ধৈর্যের সঙ্গে অপেক্ষা করতে হবে; যখন আমাদের কাজের ভেতর দিয়ে অধিকাংশ জনসাধারণ এই প্রয়োজন সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠবেন এবং পরিবর্তন সাধানের জন্য দৃঢ় সংকল্প ও ইচ্ছুক হয়ে উঠবেন, কেবলমাত্র তখনই আমরা এই ধরনের পরিবর্তন সাধন করবো, অন্যথায় আমরা জনসাধারণের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বো। জনসাধারণ সচেতন ও ইচ্ছুক না হলে, যে কোনো কাজ, যাতে জনসাধারণের অংশগ্রহণ প্রয়োজন, তা নিছক আনুষ্ঠানিকতা মাত্র হয়ে উঠবে এবং ব্যর্থ হবে।… এখানে দুটি নীতি রয়েছে— একটা হচ্ছে জনসাধারণের বাস্তব প্রয়োজন, আমরা যাকে তাদের প্রয়োজন বলে কল্পনা করি, সে ধরনের প্রয়োজন নয়; আর অন্যটা হচ্ছে জনসাধারণের নিজস্ব ইচ্ছা, জনসাধারণ নিজেরাই তাঁদের মনস্থির করবেন, তাঁদের হয়ে আমরা যে তাঁদের মনস্থির করবো, তা নয়। “সাংস্কৃতিক কর্মে যুক্তফ্রন্ট” (৩০ অক্টোবর, ১৯৪৪)

*** আমাদের কংগ্রেসের উচিত, সমগ্র পার্টিকে, সতর্ক হতে এবং কর্মের প্রত্যেক শাখায় প্রত্যেক কমরেড যাতে জনসাধারণের থেকে বিচ্ছিন্ন না হন, সে দিকে লক্ষ্য রাখতে আহ্বান জানানো। জনসাধারণকে গভীরভাবে ভালবাসতে এবং জনসাধারণের কথা যত্নের সঙ্গে শুনতে; যেখানেই তিনি যান, সেখানেই জনসাধারণের সঙ্গে নিজেকে এক করে মিশিয়ে ফেলতে, জনসাধারণের উপর দাঁড়ানো নয় বরং তাদের মধ্যে নিজেকে নিমগ্ন করতে; জনসাধারণের চেতনার মান অনুসারে তাদের চেতনাকে জাগরিত ও উন্নত করতে এবং জনসাধারণের আন্তরিক স্ব-ইচ্ছার নীতিতে তাদেরকে ক্রমে ক্রমে সংগঠিত হতে সাহায্য করতে এবং নির্দিষ্ট স্থান ও কালের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্য অবস্থার দ্বারা অনুমোদিত সমস্ত প্রয়োজনীয় সংগ্রাম ধাপে ধাপে চালনার জন্য সাহায্য করতে প্রত্যেক কমরেডকে শিক্ষাদান করা উচিত। “যুক্ত সরকার সম্পর্কে” (২৪ এপ্রিল, ১৯৪৫)

আরো পড়ুন:  আমলাতন্ত্রের বিশটি প্রকাশ

*** যখন জনসাধারণ সচেতন হননি, তখন যদি আমরা আক্রমণ চালাতে চাই, তা হবে হঠকারিতাবাদ। যদি আমরা জনসাধারণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যে কোনো কাজ করার জন্য তাদেরকে পরিচালিত করতে জেদ করি, তাহলে আমরা নিশ্চয়ই ব্যর্থ হবো। জনসাধারণ যখন এগিয়ে যেতে দাবি জানান, তখন যদি আমরা এগিয়ে না যাই, তাহলে তা হবে দক্ষিণপন্থী সুবিধাবাদ। “শানসী-সুইউয়ান দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকীয় দপ্তরের কর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তা” (২ এপ্রিল, ১৯৪৮)

*** যে কোনো কাজে হুকুমবাদ হচ্ছে ভুল, কারণ তা জনসাধারণের চেতনার মান ডিঙ্গিয়ে যায় এবং জনসাধারণের স্ব-ইচ্ছার নীতি লঙ্ঘন করে, তা হচ্ছে তাড়াহুড়াবাদের ব্যাধি। আমাদের কমরেডরা যেন এমন মনে না করেন যে, তাঁরা নিজেরা যা বুঝেন, তা সবই ব্যাপক জনসাধারণও তাঁদের মতো বুঝেন। জনসাধারণ এটা বোঝেন কি না এবং কার্যকরী করতে ইচ্ছুক কি না, এসব জানতে পারা যায় শুধু জনসাধারণের মধ্যে গিয়ে সে বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে। এমনি করলে, আমরা হুকুমবাদকে এড়াতে পারি। যে কোনো কাজে, লেজুড়বাদও হচ্ছে ভুল, কারণ এটা জনসাধারণের চেতনার মানের চাইতে পশ্চাৎপদ এবং তাতে জনসাধারণকে পরিচালিত করে এগিয়ে নেবার নীতিও লঙ্ঘন করা হয়, এটা হচ্ছে ঢিলেমী-ব্যাধি। আমাদের কমরেডরা অবশ্যই যেন মনে না করেন যে, তাঁরা নিজেরা যা এখনও বুঝেন না, জনসাধারণও তা বুঝেন না। অনেক সময়েই, ব্যাপক জনসাধারণ আমাদের ছাড়িয়ে এগিয়ে চলেন এবং আরও এক পা বাড়াতে অত্যন্ত আগ্রহশীল থাকেন, আমাদের কমরেডরা ব্যাপক জনসাধারণের পরিচালক হতে পারেন না, কিন্তু কোনো কোনো পশ্চাৎপদ ব্যক্তির মতামতের প্রতিফলন করেন এবং এই ধরনের পশ্চাৎপদ ব্যক্তিদের মতামতকে ভুল করে ব্যাপক জনসাধারণের মতামত বলে মনে করেন, ফলে তারা পশ্চাৎপদ ব্যক্তিদের লেজুড় হয়ে পড়েন। “যুক্ত সরকার সম্পর্কে” (২৪ এপ্রিল, ১৯৪৫)

*** জনসাধারণের ভেতর থেকে মতামত সংগ্রহ করে কেন্দ্রীভূত করা, আবার তা জনসাধারণের কাছে নিয়ে গিয়ে কার্যকরী করা, যাতে করে নেতৃত্বের নির্ভুল মত গড়ে তোলা যায়, এটাই হচ্ছে নেতৃত্বের মৌলিক পদ্ধতি। “নেতৃত্বের পদ্ধতি সম্পর্কে কতিপয় সমস্যা” (১ জুন, ১৯৪৩)

*** আমাদের পার্টির সমস্ত বাস্তব কাজকর্মে সমস্ত নির্ভুল নেতৃত্ব অপরিহার্যভাবেই হচ্ছে— জনসাধারণের থেকে আসা এবং জনসাধারণের মধ্যে যাওয়া। এর অর্থ হচ্ছে, জনসাধারণের মতামত (ইতস্তত ছড়ানো ও অব্যবস্থিত) সংগ্রহ করে কেন্দ্রীভূত করা (গবেষণার মাধ্যমে তাদের কেন্দ্রীভূত ও সুব্যবস্থিত মতে রূপান্তরিত করা), তারপর, তা নিয়ে জনসাধারণের কাছে গিয়ে প্রচার করা ও ব্যাখ্যা করা, এই মত জনসাধারণের নিজস্ব মতে পরিণত করা, যাতে জনসাধারণ এই মতকে কার্যকরী করেন, কাজে পরিণত করেন এবং এইভাবে জনসাধারণের কার্যক্রিয়ার ভেতর দিয়েই এই মত ভুল কি নির্ভুল তা যাচাই করে নেওয়া। পুনর্বার জনসাধারণের মতামত সংগ্রহ করে কেন্দ্রীভূত করা এবং জনসাধারণের কাছে নিয়ে গিয়ে তা কার্যকরী করা। আর এমনি চলে বারবার, চলে সমাপ্তিহীন ঘূর্ণাবর্ত, ফলে প্রতিবারই এই মত হয়ে উঠে আরও বেশি নির্ভুল, আরও বেশি প্রাণবন্ত এবং আরও বেশি সমৃদ্ধ। এই হচ্ছে মার্কসবাদের জ্ঞানতত্ত্ব।

*** আমাদের উচিত জনসাধারণের ভেতরে যাওয়া, জনসাধারণের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা, তাদের অভিজ্ঞতার সারসংকলন করে উত্তম ও সুব্যবস্থিত নীতি ও পদ্ধতিতে পরিণত করা, তারপর আবার জনসাধারণের মধ্যে গিয়ে এগুলো বুঝানো (প্রচার করা) এবং এই নীতি ও পদ্ধতিকে কার্যকরী করার জন্য তাদেরকে আহ্বান করা, তাদের সমস্যার সমাধান করা, যাতে করে তারা মুক্তি ও কল্যাণ লাভ করেন। “সংগঠিত হোন” (২৯ নভেম্বর, ১৯৪৩)

*** আমাদের কোনো কোনো স্থানের নেতৃস্থানীয় সংস্থায় এমন লোক রয়েছেন, যাঁরা মনে করেন যে, পার্টির নীতি শুধুমাত্র পরিচালকেরা জানলেই যথেষ্ট, জনসাধারণকে জানাবার কোনো প্রয়োজন নেই। কেন আমাদের কিছু কিছু কাজ ভালভাবে সম্পন্ন হয় না— এটা তার অন্যতম মৌলিক কারণ। “শানসী-সুইউয়ান দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকীয় দপ্তরের কর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তা” (২ এপ্রিল, ১৯৪৮)

আরো পড়ুন:  নারী

*** যে কোনো গণআন্দোলনেই, সক্রিয় সমর্থক, বিরোধী এবং নিরপেক্ষদের সংখ্যার উপরে আমাদেরকে অবশ্যই মৌলিক তদন্ত এবং মৌলিক বিশ্লেষণ চালাতে হবে। আত্মমুখী ও ভিত্তিহীনভাবে সমস্যা স্থির করা উচিত নয়। “পার্টি কমিটির কর্মপদ্ধতি” (১৩ মার্চ, ১৯৪৯)

*** যে কোনো স্থানের জনসাধারণই সাধারণত তিন ভাগে বিভক্ত, অপেক্ষাকৃত সক্রিয়, মধ্যবর্তী এবং অপেক্ষাকৃত পশ্চাৎপদ। তাই, অল্পসংখ্যক সক্রিয় ব্যক্তিদেরকে নেতৃত্বের মেরুদণ্ড হিসেবে ঐক্যবদ্ধ করতে পরিচালকদের অবশ্যই নিপুণ হতে হবে, এই ধরনের মেরুদণ্ডের উপর নির্ভর করেই মধ্যবর্তী ব্যক্তিদের উন্নত করতে হবে, পশ্চাৎপদ ব্যক্তিদেরকে তাদের নিজেদের পক্ষে টেনে আনতে হবে। “নেতৃত্বের পদ্ধতি সম্পর্কে কতিপয় সমস্যা” (১ জুন, ১৯৪৩)

*** পার্টির নীতিকে জনসাধারণের কার্যকলাপে রূপায়িত করতে নিপুণ হওয়া, আমাদের প্রত্যেকটি আন্দোলন ও প্রত্যেকটি সংগ্রামকে যাতে শুধু নেতৃস্থানীয় কেডাররাই নয়, বরং ব্যাপক জনসাধারণও বুঝতে ও আয়ত্ত করতে পারেন সেজন্য চেষ্টা করতে নিপুণ হওয়া, এটাই হচ্ছে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী নেতৃত্বের একটা কৌশল। আমাদের কর্মে আমরা ভুল করি বা না করি, তার সীমারেখাও এটা নির্ধারণ করে। “শানসী-সুইউয়ান দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকীয় দপ্তরের কর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তা” (২ এপ্রিল, ১৯৪৮)

*** যদি শুধুমাত্র নেতৃত্ব-মেরুদণ্ডের সক্রিয়তা থাকে এবং তা ব্যাপক জনসাধারণের সক্রিয়তার সঙ্গে সংযুক্ত না হয়, তাহলে সে সক্রিয়তা হয়ে উঠবে অল্পসংখ্যক লোকের নিষ্ফল প্রয়াস। পক্ষান্তরে, যদি কেবলমাত্র ব্যাপক জনসাধারণের সক্রিয়তা থাকে এবং তাঁদের এই সক্রিয়তাকে যথাযথভাবে সংগঠিত করার জন্য যদি না একটি বলিষ্ঠ নেতৃত্ব-মেরুদণ্ড থাকে, তাহলে জনসাধারণের সক্রিয়তা দীর্ঘ দিন টিকে থাকতে পারে না, সঠিক পথে এগিয়ে যেতে পারে না এবং উচ্চস্তরে উন্নীত হতে পারে না। “নেতৃত্বের পদ্ধতি সম্পর্কে কতিপয় সমস্যা” (১ জুন, ১৯৪৩)

*** জনসাধারণের উৎপাদন, জনসাধারণের স্বার্থ, জনসাধারণের অভিজ্ঞতা ও মনোভাব— এই সবের দিকে নেতৃস্থানীয় কেডারদের অবশ্যই সতত মনোযোগ দিতে হবে। “পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ও সামরিক কমিটির প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থাগুলোর উৎপাদন প্রদর্শনী উপলক্ষে অভিলেখন, ইয়েনান, ‘মুক্তি দৈনিক’” (২৪ নভেম্বর, ১৯৪৩)

*** ভূমি ও শ্রম সমস্যা থেকে শুরু করে জ্বালানী, চাল, রান্নার তেল ও লবনের সমস্যা পর্যন্ত জনসাধারণের জীবনের প্রতিটি সমস্যার প্রতি আমাদের গভীর মনোযোগ দিতে হবে।… জনসাধারণের জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত এ ধরনের সমস্ত সমস্যাকেই আমাদের আলোচ্য বিষয়ে স্থান দিতে হবে। সেগুলোকে আলোচনা করতে হবে, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে, কার্যকরী করতে এবং তার ফলাফলের উপর পরীক্ষা করতে হবে। ব্যাপক জনসাধারণকে আমাদের বুঝানো উচিত যে, আমরা তাদের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করি এবং তাঁদের সঙ্গে আমরা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এই সমস্ত বিষয় থেকে আমাদের উত্থাপিত উচ্চতর কর্তব্যকে, বিপ্লবী যুদ্ধের কর্তব্যকে যেন তাদের বুঝানো হয়, যাতে করে তারা বিপ্লবকে সমর্থন করেন এবং সারা দেশে ছড়িয়ে দেন, আমাদের রাজনৈতিক আবেদনে সাড়া দেন। এবং বিপ্লবের জয়লাভের জন্য শেষ পর্যন্ত লড়াই করেন। “জনসাধারণের জীবনযাত্রার যত্ন নিন, কর্মপদ্ধতির প্রতি মনোযোগ দিন” (২৭ জানুয়ারী, ১৯৩৪)

Leave a Comment

error: Content is protected !!