উন্মাদনামা কাব্যগ্রন্থ

উন্মাদনামা

প্রজ্ঞা প্রকাশন, ঢাকা

প্রথম প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর, ২০০৬
দ্বিতীয় মুদ্রণ: ১১ জানুয়ারি, ২০০৭
তৃতীয় মুদ্রণ: ১১ মার্চ, ২০০৭

ই-বই সংস্করণঃ ১৪ আগস্ট, ২০১৩

কম্পোজ ও প্রচ্ছদ: অনুপ সাদি

উৎসর্গ

১৯৪৭
সালে বাংলা
ভাগের ফলে যে সব
মানুষ নিঃস্ব রিক্ত সহায় সম্বলহীন হয়ে
দুই বাংলাতেই অবর্ণনীয়
দুঃখ কষ্টে নিপতিত
হয়েছেন
তাদের
এবং
বাঙলা
ভাগের যন্ত্রণায়
সর্বাপেক্ষা দগ্ধ বাঙলা
চলচ্চিত্রের সর্বশ্রেষ্ঠ পরিচালক
ঋত্বিক ঘটকে
মহান স্মৃতির
উদ্দেশ্যে

সূচিপত্র

০১. মানুষ মানুষ আর মানুষ বা আধুনিক মানুষের ধারাবাহিক গল্প বা উন্মাদনামা
০২. চা, ইলেকশন এবং ইতিহাস
০৩. পুরুষালী নেতা ও ভাতার
০৪. আমরা গণশত্রু পেয়ে গেছি
০৫. দল ও পরাধীনতার ধারাবাহিকতা
০৬. মানব সম্পদের স্বপদে দাঁড়ানো
০৭. বিপন্ন জনগণের ইতিহাস
০৮. আমরা কী?
০৯. মাওবাদ ও জনগনের আমরা
১০. বেদখল হয়েছে স্বদেশ কিংবা আঁখিও সে গোল্লি মারে নাচ
১১. পরমাণু ও সাম্প্রদায়িক বোমা
১২. মৃত্যুকুপের মাঝে বাঁচার ধুর্ততা
১৩. গর্ততত্ত্ব ও সংগ্রাম
১৪.গেরুয়া গরুর দাসত্ব
১৫. কিছু রক্ত এখনো বিদ্রোহী
১৬. শ্রমিকের বেদনা গীত
১৭. আধুনিক নেতাদের পচনক্রিয়া

ই-বই সংস্করণের ভূমিকা

“উন্মাদনামা” বা “আধুনিক মানুষের ধারাবাহিক গল্প” লেখা হয়েছিল এমন সময়ে যখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে শ্রমিক-কৃষকের মুক্তির স্বপ্নগুলো হারিয়ে যাচ্ছিল। সেই বিধ্বস্ত সময়ে কৃষকেরা লড়াইয়ে নেমেছিল নিজেদের ফসলি জমি ধ্বংস করা এক উন্মুক্ত কয়লাখনির বিরুদ্ধে। আর আমার সেই সময়টিতে মনে পড়ছিল ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনাবলি এবং সেগুলোকে একই মলাটে ধরে রাখার ইচ্ছা। এমন একটি বই লেখার চেষ্টা যেখানে বর্তমান ও অতীত একই সাথে গাদাগাদি করে অবস্থান করবে। অতীত আর বর্তমান পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হবে এবং সেই যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসবে আগামীর শোষণহীন সমাজাকাঙ্ক্ষী জনগণের ইতিহাস। ফলে এই বইটিতে নানা রকমের অনেক চরিত্র এসেছে যাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেয়া দরকার ছিল তথ্যসূত্র ও টীকা আকারে। সেটি এ মুহূর্তে করা না গেলেও ভবিষ্যতে করার ইচ্ছা রইলো।

বাঙলার রূপ বিভিন্ন সময় পালটে গেছে রাজনৈতিক ও প্রাকৃতিকভাবে। এখানে ধরা থাকলো মূলত রাজনৈতিক রূপটি, যদিও প্রকৃতি কিছুটা এসেছে। রাজনৈতিক রূপের পালাবদলে জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও তাদের বাস্তবায়নে সাম্রাজ্যবাদ পুঁজিবাদের বাধাকে অতিক্রম করতে গিয়ে জনগণের শক্তি ও সীমাবদ্ধতাকে আমার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি। কবিতার বই ইতিহাসের বই নয়, তদুপরি আমি চেষ্টা করেছি ইতিহাসকে বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে ধরতে এবং সেটি অবশ্যই জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়ে। আমি সর্বদাই গণশত্রুদের উৎখাত কামনা করি এবং তাদেরকে পরাজিত করার জন্য আমৃত্যু চেষ্টা করে যেতে চাই। সেই উদ্দেশ্যেই এই কবিতাগ্রন্থটি লেখা হয়েছে। এখানে কাউকে কোনো ব্যক্তিগত আঘাতের জন্য কিছু লেখা হয়নি। পশ্চাৎপদ প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক নেতাদের কারনেই আজো বাংলাদেশের জনগণ নিপীড়িত। সেই নিপীড়িত জনগণের পক্ষে এই কবিতাগ্রন্থটির নায়ক চিৎকার করে গেছে। তাঁর সেই চিৎকার আপনাদের কাছে ভাল লাগলেই আমার শ্রম সার্থক।

কবিতাগ্রন্থটি লেখা হয়েছিল অক্টোবর, ২০০৫ সালে। ডিসেম্বর, ২০০৫ থেকে মার্চ, ২০০৬ এর ভেতর ফটোকপি করে বের করা হয়েছিল মোট ৮০ কপি। সেই কপিগুলো নানাজনকে দেয়া হয়েছিল এবং টক-ঝাল-মিষ্টি মন্তব্য আমার কানে মাঝেমাঝেই এসেছে। সেই সময়ে একটি আলোচনা রণজিৎ সরকার করেছিলেন যেটি এখানে পরিশিষ্ট আকারে দেয়া হলো। আশা করি সব মিলিয়ে জনগণের আগামি দিনগুলো সুন্দর হবে।  

এই ভূমিকাটি ছাড়া কবিতাগ্রন্থটির প্রায় সর্বত্রই বানান সহজিকরণের একটা চেষ্টা ছিল। আশা করি পাঠকগণ সেটিকে স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করবেন।   

অনুপ সাদি
১৪ আগস্ট, ২০১৩;
চৌরঙ্গী মোড়, ময়মনসিংহ।

রাজনীতি বিষয়ে অনুপ সাদির একটি সাক্ষাতকার দেখুন

মানুষ মানুষ আর মানুষ
অথবা
আধুনিক মানুষের ধারাবাহিক গল্প
অথবা
উন্মাদনামা

উন্মাদনামা

ছোটো শহরের এক কোণে বাড়ি, ঝকঝকে শহরের ঘরে বিজলি আলো
শহরতলীর এক প্রান্তে মাঠে শিশুরা ফুটবল খেলছে,
মাঠের পূব পাশে উদোম গায়ে এক লোক,
তখন ওরকম দু’একজন গভীর মনোযোগী লোক পাওয়া যেত,
বাচাল নেতাদের মতো
কখনো বর্ণনা করে, কখনো বক্তৃতার ঢংয়ে বলে যাচ্ছে ধারাবাহিক গল্প গাথাগুলো,
সময়টা ছিলো ২০০৫ সালের শীতকাল,

সে বলেছিল—

আমার দাদিরা ছড়া কাটে দেশি
আর বিদেশি কাকে খায় দুগ্ধবতি গাভীর কচি দুধের সর
ছেলেরা সারারাত তরুণীদের সাথে পাড়াময় মাস্তি করার স্বপ্ন দেখে;
মিথ্যার পটকা ফোটায় অন্দরমহলের আকাশে বাতাসে;

চাচা বা ভায়েরা আমার, একবার চোখ তুলে তাকান
এইবার শুধু এইবার হামাক ভোট দেন,
এইবারই সবচাইতে আধুনিক ভোট চাচা ভোটিং মেশিন ইত্যাদি …
ইত্যাদি… এইরকম আরো …

আমার চাচুরা আর চাচিদের গল্প আরো বেশি বিদঘুটে;

কিছু মানুষ বুদ্ধি-বিবেকহীন
কুঁড়ে ঘর তাদের অশেষ সম্বল, ঘরে তাদের অফুরন্ত সুখ
যাদেরকে তোমরা কেউ কেউ চেনো, অপরিচিত রাস্তায় দেখো,
তাদের হাতে ছাতা, কোমরে গামছা, প্রতীকী চাদর গায়ে
লুংগিতে গ্রামীণ ছবি, দুহাতে গৃহপালিত পশুর দড়ি
আরো বেশি মানুষ বিবেক সম্পন্ন
বেশ কিছু মানুষ অজানা অজস্র নাম, অচেনা মাথা,
কেউ কেউ শহর রাস্তায় দিন কাটায়
তারা শুধু ছিছি করা ভুলে গেছে
আমরা আশায় আছি,
আমরা নিরাশ নই,
বিয়েতে জাকজমক সম্রাটের পোষাকে তারা
বিশেষ বিশেষ গল্পের হরিণ বা হরিণী নয়
তারা গণনার মানুষ আদমশুমারির দিনে ওএমআর ফরম পূরণ
কোন ধর্মী, কি করেন, কার সাথে ফিবছর মেলামেশা
আরও কতশত নিয়ম আর বিধি
আচরণ বিচরণ সাহেবেরা রাখেন খবর;

একচোট হাসল কেউ, একহাত নিল কেউ,
কেউ মরলো পিতলের বীচি খেয়ে;
আমাদের সত্যিকার চাচারা পরনে দেশি লুংগি, তাদের সন্তানেরা জিনসের প্যান্ট
ব্যবসায় দারুণ দাও মারা, দিনাজপুরে জন্মায় বোম্বাই লিচু
মুম্বাই যায় দিনাজপুরি শালী আর সবরি কলা
মুম্বাইর রাস্তায় ছাই লাগবে ছাই, কালা সাবান
মুম্বাই শহর দেখতে আছে, দেখতে বড় বাহার আছে
আমাদের ছাগু-ছাগিরা চমতকার দেহ নাচায় মুম্বাই শহরে। তাই নিয়ে কত কত খবর,
শোনেন ভায়েরা আমার, এইবারই সবচাইতে আধুনিক ভোট
এসে গেছে গোটা দেশে ভারত মাতার সুবাদে টাটা সাহেব শিশ্ন নিয়ে,
লালন তোমার ছেউড়িয়ায় এখন প্রিন্স পুঁজিবাদ;
জমাও জন্মাও টাকা,
গর্তের মধ্যে জন্মাও তেল মধু আর সুন্দরী;
এখন আমার বাঙলায়
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়
ঢাকার পল্টনের রাস্তায়
আমরা যেন শুয়োপোকা তেলাপোকা ছারপোকা উইপোকা,
ছুঁচো আর ইঁদুর আর চামচিকার মতো কথা বলি,

গণশত্রুরা গামলা আমলা আর তেল ভালোবাসে
তাই তারা শোষণের কল ঘুরিয়ে অস্ত্রের নাচন ভালোবাসে,
ইপিআর পুলিশ সেপাই বিএসএফ তিন বাহিনী
ফনাতন্ত্র বিষ দূষণ প্রাচ্যের পুরনো স্বৈরাচার,
বেজন্মা বেইমানরা মীরজাফরের বন্ধু
দাঙ্গাবাজ, মতলববাজ, ভাঙল তেলের শিশি, ভাঙো বাঙলা,
গুলি চালা।

আধুরা পাবলিকেরা শুয়োরের মতো ঘেঁচু খোঁজে আর দিন দিন বাঁচে,
সৌন্দর্য সাবান নিরমা বা উপনিবেশিক সাবান জনসন চেনে না
ড. জনসন বা শেকসপিয়র চেনে না
ঐগুলারে গুতা মেরে পার করে দে,
এপাশ থেকে ওপাশ,
মার ঠেলা সীমান্ত পার হেঁই মারো মারো ঠেলা নয়া দেশ দুই জাতি,
ঠেলা মারো হিন্দুস্তান, ঠেলা মারো ফাঁকিস্তান
বুঝলা দোস্ত সন্ত্রাসীগো দিন শ্যাষ, মিলিটারি শাসন হা হা কী ফকফকা;
চান্দের লাহান দ্যাশ আহা হা হা … …

চা, ইলেকশন এবং ইতিহাস

তোমরা জানো কী ইতিহাস কই থামবো?

কড়া আগুনে পোড়ালে ইতিহাস হয় খাঁটি
অপদার্থ শুধু দুই বাঙলার উচ্চবিত্তের মাটি
ছাগলেরা সব চোরা চোখে চৌদ্দ পায়ে হাঁটি
বুঝলেন কাকা কী দেখলেন, বাঙলাদেশ বাঙলা বাঙালি
বংগভবনে দেখেন কাঁকড়ার সংগে কাস্তের মিতালি
সময়টা কাকা একাত্তরের আগে বা পরে
চলেন আর একটু জোরে
ঠেলা দেন কমরেড, আর একটু জোরে ঠেলা দেন
এইতো আসিল কচুখেতে বিপ্লব!
এটাইতো আসলি বিপ্লব!!

ইতিহাস চলছে, শ্রমিক চলছে, শ্রমিক লিখছে ইতিহাস

আর রুগ্ন বই লিখছে কতিপয় আধুনিক লেখক নাকি খেলক
কাটো গাছ লেখ বই,
অষ্টাদশ আঙুলে অষ্টাদশির আঙুল চেটে লেখ,
হি হি হি, নায়ক সাহেবকে খেলক সাহেব মেরে ফেললেন
এতে আমাদের ছিঁচকে পাঠিকাকুল কষ্টে কেঁদে জল ফেললেন নরোম কোলে,
সেই জল হতে জন্মালো দুধে ভাতে ডুবে থাকা পুঁজিপতি

ছাগল মার্কায় ভোট দিন
কাপে কাপে দুধ নিন
ঠোঁটে ঠোঁটে চা নিন
চা বেচার শুভদিন

এই চা একদিন মঙ্গলগ্রহের ইলেকশনে কাজে লাগবে
এ-আমার বাস্তবতা নয় দৃঢ় স্বপ্ন
এই চা খুঁজে পাবে এর্ন্টাকটিকার গুহার মাঝে
ফলন্ত ধানের গন্ধে জীবনানন্দীয় মিনি কাপ চা
পানে ব্যস্ত থাকবে কর্মর্কতা কর্মচারি ঝি চাকর আমলা চাখোর

পুরুষালী নেতা ও ভাতার

মন্ত্রীসাব কহেন কোটি কোটি টাকা দেন,
এখন আর অল্পেতে পোষায় না,
যত পারেন দেন, ডাল ভাত খাবো,
প্রতিদিন মাছ গোস্ত ভালো লাগে না,

মন্ত্রিসাব পাব্লিকরে জিগাইলেন ‘কী করেন?’
— গান করি আর সঙসারধর্ম পালন করি।

কতো দায়িত্ব মন্ত্রিমিয়ার
বাড়ির পাশের কোলকাতা,
পকেটের কোকাকোলা, বক্ষের খাঁজ সবই তার চায়
নেত্রি শুধু মাঝদুপুরে ভাত ঘুম দেয়, উচ্চ লোভী ঘুম!

আমাদের মেয়েদের মাথার চুলে বিলি কাটে এখন হিংসুটে সময়
আমরা তাই মেয়েদের বলি,
এতো আদরের কী আছে বাছা,
খাবিদাবি কলকলাবি সঙসারধর্ম পালন করবি।

আমাদের পাড়াগাঁয়ে বিবাহিত নারীদের গল্প একটু আলাদা
তাদের বউমা আর শ্বাশুড়িরা একান্তে খুব লোভী,
হায়রে লোভ একটা সঙসারের আংশিক ননী চুরি করে
খেয়ে ফেলার লোভ,
প্রতিদিন বৌমাদের সংগে কাজিয়া আর কাজিয়া,
মধ্যবিলাসী বিনি পয়সার নাটক।

কেউ হয়ত ফোড়ন কাটলেন,
‘বুঝলেন তো দাদা, এসবই পিতৃটন্ত্র’।

কে ধোয় কাপড় আর কে টেরি কাটে
কার সিঁথি সিঁদুরহীন কে ছাদে হাঁটে?

বুঝলি প্রফুল্ল[১] ভাতার না থাকলে নারীজীবন অসার্থক
যতই তুই কর পরোপকার; নারীত্ব আর মাতৃত্ব বুঝবি
পুরুষের সোনার স্পর্শে, তোর সারা অঙ্গে ঝিলিক দেবে[২] কতো কী!

টিকা

১. প্রফুল্ল হচ্ছে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেবী চৌধুরানী উপন্যাসের নায়িকা যে বিয়ের পরে স্বামীর পা টিপে আর বাসন মেজে জীবন পার করে।
২. ১৯৮১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কপালকুণ্ডলা চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত একটি গানে বলা হয় ‘পুরুষ যে তোর পরশপাথর তোকেই ছুঁয়েছে, ও মেয়ে তুই বদলে যাবি, নিজের চোখেই দেখতে পাবি, সব কিছু তোর সোনা হয়েছে’। গানটিকে পরে এ্যালবামে বের করে গণশত্রুদের প্রতিষ্ঠান সারেগামা

আমরা গণশত্রু পেয়ে গেছি

আমাদের সেলিব্রেটিরা দোলনার মতো স্বপ্নে দোলে
রাজনীতি আর স্বাধীনতাহীন শরীরে যোগাযোগ রাখে এপাশে ওপাশে;
কী চমতকার বেচাকেনা
অবারিত দরজা
পাসপোর্ট ভিসা লাগবে না পন্যের,
বিশ্ব বানিজ্য সংস্থা বা অর্থ তহবিলে
বেচে দাও
বৌ
বন্ধু
তেল
নুন
আর সকাল
বিকাল
রাত্রি
নীল আকাশ
নদী
আর কাশফুল।

বুকের মধ্যে রাখো বইয়ের ছোট্ট পাতা
অজস্র চুম্বন;

কিনে আনো স্রেফ শেয়ার বাজারের দলিল
শেয়ার কেনো শেয়ার বেচো
ব্যবসা করো নারীপাচারের
গোলামির দালালির,
ব্যবসা করো চলমান ট্রেনের বগির
বেচো মা ও মামানীকে, সংগে বেচো মাতৃভুমিকে।

একুশ শতকের শুন্য দশকের মন্ত্রি
পন্য বিনিময়ে কিংবা গোপনে বেচলো তেল গ্যাস বিদ্যুত বন্দর।
সে এলো, দেখলো, জয় করলো,
শাদাঁত দিয়ে খুবলে খেলো।
চাইলো বহুজাতিক গাড়ি ‘আমি একটি গুড কার চাইছিলাম,
এইটা কি আমার অপরাধ

আর একজন কহিলো ‘উই আর লুকিঙ কর শত্রুজ
অন্যজন প্রাইভেট সেক্রেটারিকে নির্দেশ দিলো,
গাড়িটায় করে কিছু ভালো রক্ষিতা নিয়ে এসো হে
রসালো আর দোলায়মান
যারা
নাচের ছন্দে ছন্দে
শীৎকার
দিতে
জানে’।[১]

বিকেল ফুরিয়ে রাত্রি গড়ালো
মন্ত্রিসাব ঘুরে ঘুরে দেখলেন
নেড়ে চেড়ে বুঝলেন
আহা কী সুন্দর পাছা
একেবারে নতুন মাল
খাসা চিজ
কখনো এরকম পাওয়া যাবে না
আলো আঁধারে
দুলতে দুলতে
কামসূত্রে কামরসে
ডুবে থাকা যাবে
যাও ওষুধ নিয়ে এসো
শক্তি চাই অফুরন্ত
বাঙলা আমার অফুরন্ত তেজি ঘোড়া;
ঘোড়া হয়ে উড়ে চলা পতনের ধারা।

আর
বেমানান সময়ে
আমরা দেশবাসিকে চীৎকার করে বোঝাচ্ছিলাম
আমরা গণশত্রু পেয়ে গেছি’।

টিকা: ১. একুশ শতকের শূন্য দশক জুড়ে বাংলাদেশে যে ঝড় বয়ে যায় তাতে এসব উদ্ধৃতি মন্ত্রীদের মুখে মশকরাযুক্ত ও খুব স্বাভাবিক ছিল। হাজার হাজার মানুষ হত্যা করে তারা সংসদে দাঁড়িয়ে অতীতের ধারাবাহিক দাম্ভিকতা দেখাত।

দল ও পরাধীনতার ধারাবাহিকতা

মানুষগুলো বদলে গেল স্বার্থপরতায়[১]  
রাজনীতি উচ্ছন্নে গেল কার কুচেষ্টায়
কষ্ট করে কে আর দীপ জ্বেলে যায় মাঝপথে?
তার চেয়ে সহজ পথ সংখ্যাগরিষ্ঠতার নেশা, পুঁজির পাশাখেলা,
অংকে যত দূরেই থাক গণতন্ত্র আর দেহবিক্রির সূত্র
সব ছাত্রই মুখস্ত কর, হাতে নাও ব্যালট কাগজ,
সিল মারো সারারাত গোপনে গোপনে
খবর শুনছেন—আধুনিক রাজনীতি প্যাকেজ প্রোগাম; —

আমরা চাই বা নাচাই
কিছু একটা ঘটে গেল গোটা মহাদেশে
লাল ঠেকানোর সতর্কতা……………….

— তুমি কোন দলের?
— সাদা
— করো কী?
— কোন্দল
— আপনি কোন দলের?
— কালো
— করেন কী?
— কোন্দল
— তুই কোন দলের?
— আমি আমার দলের, আমার নিজস্ব একটা হ্যাচারি আছে,
ওখানে পোনা উৎপাদিত হয় বাম, ডান, ধর্ম, ডাকাত, সন্ত্রাসি, ধান্দাবাজ, ধাপ্পাবাজ
যা চাইবেন তাই পাবেন
যোগাযোগ বিভিন্ন শাখায়;

আর এটা হলো বাঙলাদেশ,
এখানে পৃথিবীর সব মতবাদ বেঁচে থাকে
মরে ভুত হওয়া ধারনাও শক্তি সঞ্চয় করে।

কয়েকজন ছোকরা গুনতে থাকে
কার আকাশে কতো পাখি
কার আঘাতে কোন সকালে মহাবীরের উল্টে পড়ে চেয়ার
ভোর হোলো রাত্রি খোলো
তোর জন্যে আগামিতে আসছে সাধুবাদ
হাতে নে আমাদের হাত
এই হাতে পাবি তুই প্রাচীন ভারতের ধূলিকণা
কালের আয়নায় দেখা স্নিগ্ধ আলো কণা
আসছে আগামিতে পাখির ঠোঁটে ফুল
গোপন সাধনা
নীল জল …………..

আমার নীলপরি
পরে নীল শাড়ি
তার এখন সময় কাটে
চিরচেনা বাড়ি।

বন্ধু আমার ঝড় এলে হারিয়ে ফেলে নাও
অন্য মাঝি সাঁতরে বাঁচায় বৃষ্টি ঝড়ের দিনে
দুরের বন্ধু হত্যাকান্ডে জড়িয়ে পড়ে প্রতিশোধ চিনে
অপরিচিত ডাকাতের পরিত্যক্ত ঘরে শোনায় নির্মম সত্য
‘কেউ মারা যায় না কখনো’
ইতিহাস সজীব সমুদ্রের মতোই
সমুদ্র সজীব পাহাড়ের তীর।

১৯৪৭ ও ১৭৫৭ একই নদীর দুই তীর
একটি মেয়ে বিক্রি হলো
কিনলো উমিচাঁদ[২] , গায়ে লর্ড ক্লাইভের[৩] পোশাক
সেই বিক্রিত তরুণীটির হাতে ধর্মগ্রন্থ
সে কী মানুষ নাকি পন্য
সে কী বর্নবাদী নাকি ইঁচড়ে পাকা
সে কী ঘোড়ার ডিম নাকি অস্তিত্ববাদি
সে কী ছেঁড়া টাকা নাকি হাতপাখা
তার পার্শ্ববর্তিনিরা কী মানুষ নাকি তেলাপোকা
নাকি তারা নাওমি ক্যাম্পবেল[৪] বা ক্লিওপেট্রা[৫]

অথবা তারা মানুষ আর মানুষ আর পিঁপড়া ………

টিকা:

১. টমাস হবসকে দিয়ে পুঁজিপতিরা বলিয়ে নিয়েছিল, মানুষ হচ্ছে লোভী, নোংরা, পিশাচ।
২. নবাবী আমলে আফিম ও শোরার ব্যাবসায়ি উমিচাঁদ ছিল ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের সহায়তাকারী শয়তান
৩. লর্ড ক্লাইভ হচ্ছে আধুনিক ব্রিটিশ বর্বরতার প্রতীক এক সাম্রাজ্যবাদী গণহত্যাকারী খুনি।
৪. নাওমি ক্যাম্পবেল (জন্ম: ২২শে মে ১৯৭০) একজন বিখ্যাত ব্রিটিশ ফ্যাশন মডেল, অভিনেত্রী, গায়িকা ও পুঁজি পূজারি।  
৫. ক্লিওপেট্রা (৬৯ – ১২ আগস্ট, ৩০ খ্রিস্টপূর্ব) প্রাচীন মিশরের দাস মালিক এবং দাস মালিকদের রাণী, স্বাধীনতা ও জনগণের শত্রু।

মানব সম্পদের স্বপদে দাঁড়ানো

এলো বানী, অমৃতবচন
মানব সম্পদে রূপান্তর করুন
মানব হবে সম্পদ
মানুষ হবে সম্পত্তি
জবাই করো মানুষ
কিডনি, লিভার, হার্ট, কর্নিয়া করো রপ্তানি
মানব হইল সম্পদ, কী হে,

মানুষ হইল টাকা তাই শহর ঢাকা
টাকায় ঢাকা ঢাকা, ঢাকা আর টাকা

হায়রে মানবজমিন মানব সম্পদ
এমন সোনার জমিন দুইখানা পদ
এমন সোনার শরীর জ্যান্ত আপদ
বিশাল মানবজমিন মানবসম্পদ,
সুষ্ঠু ব্যবহার করো অনুভুতি আর অনুভব
শিল্প সহজে ফোটে মানবজমিনে।

সাঁতারে জিতেছো তোমরা পুরস্কার প্রথম
ডুব সাঁতারে আমার ভালোবাসা,
কীসে পা বাড়াও, পা কেটে যাবে
স্বৈরতান্তিক সাঁতার আর গনতান্ত্রিক পা।

আমি মোমবাতির আলোয় দেখি পাড়াময় নাচ ও মুখোশ
ঘর ও সঙসার ও ধর্ম
এই আমার দরিদ্র গ্রাম, দরিদ্র শহর
মানুষ ভালোবাসে আমার শহর
তারা নৃত্যে ছন্দে ভালোবাসে গোপন শহর আমার ছোট প্রেমিকা
দু’ তীরের শহরের মানুষের যোগাযোগ নদী গঙ্গাবুড়ি

আমার মানুষ পরস্পর প্রতিদ্বন্দি আর সহযোগি
আর সাংগঠনিকভাবে রঙ-তামাশা-ঠাট্টায়
পোড়াবাড়িকে রঙিন করে
ইতিহাস ও হাহাকারের ভার্স্কয বানায় আগাছা কেটে
এবং ঐতিহ্যগত বাঙালি আঞ্চলিকতার পিরামিড গড়ে নিজেদের কপালে,
সার্থকতা খোঁজে শুধু সন্তানের মাঝে
ধিক্কার দেয় কিন্তু কর্মি হতে ভীত
স্বাধীনতা চায়
কিন্তু দায়িত্ব নেবে না।

আমার মতো কতিপয় বেয়াড়া তরুণ
শুধু শ্রমিক আর কৃষকের ধুধু হৃদয়ে ঝড় বৃষ্টি বন্যার কলরোল আনতে ব্যস্ত
রাজশাহী ও ঢাকা শহরে আজ আবহাওয়া বড়ই অস্থির,
আজকের আরো বিশেষ বিশেষ খবর
গ্রামে গ্রামে আলোড়ন উঠেছে,
শহরে নতুন পতাকা উড়ছে,
পুরোনো পতাকা নামছে,
নড়ছে মায়ের আঙুল, পায়ের পাতা, জামার হাতা; —

আমি তুমি তোমরা বাঙলার পথে পথে ঘুরলাম
মানুষ খুঁজলাম
সেই মানুষ যারা একদা সঙগ্রামি
এবং এখনো এই দুই হাজার ছয় কী সাত কী দশ সালেও
ভেঙে যাওয়া কন্ঠে প্রতিবাদের গান গায়
বসে যাওয়া গলায় শোনায় মানুষের কবিতা
সেইসব মানুষের, যারা অসুস্থ ও রুগ্ন
ক্লান্ত, পীড়িত, ব্যথিত, ক্ষুধার্ত অথচ
চেতনায় বলিয়ান, কথার সাবলিল স্বপ্নে পরিপূর্ণ
যারা রাস্তার বিষাক্ত বিষ্ঠাটুকু সরিয়ে লড়তে জানে,
যারা জঙ্গলের আগাছা সরিয়ে কাঁঠালচাপা, কদমমহুয়ার বাগান বানায়

তারা আমার কালের স্বৈররাষ্ট্রনীতিকে পাল্টানো মানুষ
তারা অলসতা ও রান্নাঘর ছেড়ে এসেছে
তোমার উঠানে ভোরে ডেকেছে ‘এসো বন্ধু এসো’
গল্প শোনো বাজারের খুদে বিক্রেতাটির
যে বাজারে সবজি ফল বেচে বা কেনে
সন্ধায় আলো জ্বালায়
আশা করে আলো পাবে
আশায় থাকে আলোকিত হবে তার সন্তানেরা
হাগবে মুতবে টয়লেটে, ঝরনায় করবে গোসল, পত্রিকা পড়বে,
টিভি দেখবে, কবিতা আবৃত্তি করবে, সিনেমা দেখবে
কিন্তু সন্তানেরা পিতার স্বপ্নের কবর খুঁড়ে
মধ্যযুগের ধর্মীয় ছড়া কাটে, মিলিটারি সাজে
সময়টা ফাঁকিস্তানী আর পরবর্তী কাল।।

দেখছস কেমন তাগড়া জোয়ান
মর্দে মুমিন মুসলমান;
পাবলিক ঠিক রাখতে হলে উর্দি সৈন্য আর পুরুষাঙ্গ দরকার,
কহিলেন আধুনিক ষাঁড়।

মগজে গোবর কিংবা দাসত্ব যাই থাকুক
হ্যাঁ স্যার, ইয়েস স্যার, জি স্যার, স্যার, স্যার,
ভৃত্য চেয়ার হতে দাঁড়িয়ে মুখে ফেনা তুলছেন
হ্যাঁ স্যার ইয়েস স্যার,
মহাজন সমীপে ভৃত্যের দাসত্ব
হায়রে এশিয়া ভরত ও বাঙলা
সাধারন উপমানুষ ইন্দোএশিয়ার
শাসিত মানুষে পূর্ণ গোলক
সাড়ে তিনশো কোটি ভৃত্য,
কেনা ভৃত্য নয় শক্তি দিয়ে বশ করা
চিন্তাকে পাল্টিয়ে উপনিবেশবাদ আর সাম্রাজ্যবাদ দিয়ে
চেতনাকে গুড়িয়ে আচরন পাল্টিয়ে
সেবাদাস সেবাদাসি বানিয়ে;

হাঁতির দাঁত প্যারিসে
জোসেফ কনরাড[১] তোমার ইউরো আমিরিকা
আইভরি কোস্ট হতে হাতিই ধ্বংস করে দিলে, শুধু নামটুকু রেখে

কার রক্তে গড়া এশিয়া আফ্রিকা লাতিন আমেরিকা?
হো চি মিন, ফ্রানজ ফানঁ[২]; আর লক্ষ লক্ষ শ্রমিক।।

দুর্বলতা শক্তিমত্তা, ঢোলের শব্দ, বাজে কবিতা
বাস্তব ছবি;
দেখুন ঘটমান গ্যাসচেম্বার পুরো বাঙলায়
ট্যাবলেট, ক্যাপসুল বা ভেষজ গাছে কী শেষ রক্ষা হয়
প্রত্যেক পাতি বুর্জোয়ার ঘরে ঘরে কঙ্কাল মাতৃমুর্তি আর ব্যক্তিবাদ;
আঁকো দুর্বলতা, খোঁজো শক্তিমত্তা, শোনো ঢোলের শব্দ,
লেখ না বাজে কবিতা, বানাও বাস্তব ছবি
একথা কহিছেন আগামীকালের কবি
এসব ভেবেছেন ভবিষ্যতের কবি।

টিকা:

১. জোসেফ কনরাড (৩রা ডিসেম্বর, ১৮৫৭ – ৩রা আগস্ট, ১৯২৪) একজন ইংরেজি ভাষার ঔপন্যাসিক ও ছোট গল্পকার, যিনি অন্ধকার আর পশুত্বকে কথাসাহিত্যে ফুটিয়ে তুলেছেন।
২. ফ্রানজ ফানঁ (২০ জুলাই ১৯২৫ – ৬ ডিসেম্বর ১৯৬১) ছিলেন রাজনৈতিক বিপ্লবী, উপনিবেশের সমালোচক।

বিপন্ন জনগণের ইতিহাস

নিজে বাঁচলে সবার বাঁচা হবে
কবার বাঁচলে দেশ বেঁচে যাবে?
কার বাড়িতে সব বিদেশি পাখি
বিদেশি গাছে ভরছে চার আঁখি
নিজে বাঁচা যায় না—তবু বাঁচা
নিজের বাড়ি নিজের দেশে খাঁচা
সন্তানাদি বাঁচার ক্ষীণ আশা
আশা বাঁচে গভীর পোড়া বুকে
আশা বাঁচে স্তালিনও[১] বাঁচে।

এসো তুমি, ফিরে এসো আমার পাড়াগাঁয়
একুশ শতকে কে শ্রীচৈতন্যের[২] কাছে প্রেম কিনতে যায়?

তবু সকাল শিল্পনগরিতে
আগুনঝড়ে ওড়ে তোমার হৃদয় হতে আমার রিক্ত হাতে
শ্রমিক ঘোরে যন্ত্র ঘোরে সাথে;
প্রেম দিয়ে কী শ্রমিকতন্ত্র,
আমার ঘরে আনবে আজিকে ভালোবাসার তরুণ মন্ত্র
প্রেম কী ওড়ে বাঙলাদেশের আকাশে শহরে?

প্রেম পাবি তুই কার কাছে
মুক্তি পাবি কোন ময়দানে
কে তোমাকে শোনায় কবিতা
গল্পে জাগায় কে
ঘুম পাড়ানি মাসিপিসি জাগবে আবার কবে
কে তোমার টুঁটি চেপে ধরে
কার আক্রমনে কেবা মরে
কোন পথে গেলে মতাদর্শ পাওয়া যায়?
ওখানে প্রজাপতির মতো আমরা যেতে চাই।

দেখছেন, এক নেতা বহুদিন থেকে বোঝাচ্ছেন
গান গল্প, কথায় ও ঈশারায়, ব্যর্থতা ও কান্নায়,
শোনাচ্ছেন প্রজন্মের বাঁকঘোরা,
কেন জনগণ ইতিহাস ও নিজেদের নিয়মিত পোড়ায় জাগায়,
কেন তারা প্রতিবাদীকে মহত মনে করে,
কেন কেউ কেউ
মৃত্যুর সিদ্ধান্ত নেয়
কেন দেশে দেশে কোন্দল ও যুদ্ধ
নিজেদের তৈরি রাষ্ট্রকে ভাঙতে কেন এতো রক্ত যায়,
একটি রাষ্ট্র ১৫ টুকরো হলেও কেন ৫ জনও মরে না?

উড়ে এসে কেন দখল হলো অনেক জায়গা
আফ্রিকার জ্যামিতিক মানচিত্র আমাদের উপরে চাপিয়ে দিলো
সেইসব সভ্যেরা
আর আমাদের নেতারা
হিঙসা বিদ্বেষ লোভ ও নকলে গিয়ে
নিজেদের ভুলে গেল
জনগনের উপরে পড়ে রইল নিজেদের লাশ
আর আমাদের স্বাধীনতা শব্দটি কী অর্থ প্রকাশ করে তা
শক্তিধরটির কার্যালয়ের সামনের বিপন্ন বিষন্ন মানুষটির
চোখে চোখ রাখলে টের পাওয়া যাবে।

টিকা:

১. জোসেফ স্তালিন (১৮ ডিসেম্বর ১৮৭৮ – ৫ মার্চ ১৯৫৩) হচ্ছেন মানবেতিহাসের মহত্তম সাম্যবাদী নেতা ও বিপ্লবী। সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্র নির্মাণের প্রধান ভূমিকা পালনকারী।
২. শ্রীচৈতন্য (১৮ ফেব্রুয়ারী, ১৪৮৬ – ১৪ জুন, ১৫৩৪) বাঙালি সংস্কারক এবং সামন্তীয় বাংলার প্রেমধর্মের প্রচারক, হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালান।

আমরা কী?

আমরা কী অপরাধী

আমরা কী অ্যাডাম আর ইভের মতো পতিত
আমরা কী ইউরো আমিরিকানদের মতো পতিত
আমরা কী মধ্যপ্রাচ্যীয়দের মতো পতিত
আমরা কী পচাগলা রক্তাক্ত ইতিহাসের মতো পতিত
আমরা কী পাশবিকতার কাছে পরাজিত ও পতিত
আমরা কী সগোত্রের মাংস পছন্দ করি
আমরা কী আঞ্চলিকতাবাদি
আমরা কী দাস না দাসমালিক
আমরা কী শ্রমিক না শ্রমিক শোষক
আমরা শ্রেণিহীন মানুষ না শ্রেণি বৈষম্যভিত্তিক প্রেমিক
আমরা কী ব্যাঙের ছাতা না কলুর বলদ না কলম না সিজোফ্রেনিয়া রোগি
আমরা কী সংস্কারপন্থি না প্রাচীনপন্থি না বিপ্লবি না প্রতিবিপ্লবি
আমরা কী সুবিধাবাদি না ধান্দাবাদি না ধান্দামুলক বস্তুবাদি?

আমরা নিজেরা নিজেদের চিনতে পারি না
কারণ আমরা নিজেদের মানুষ মনে করি
ভাবখানা এমন মানুষ এসব কিছুর বাইরে
দৈর্ঘ প্রস্থ উচ্চতাবিহীন কিছু শুন্যতা
যাদের পাওয়া যায় না যথা তথা,
তাদের ধরতে সিনেমার যুদ্ধবাজ নায়ক বা নায়িকা লাগে;

তবে
তাদের কিছু সহজ ও সহজাত বৈশিষ্ট আছেঃ
কথা বলে উচ্চ স্বরে, লিখে রাখে সামান্যই
তারা সংক্ষিপ্ত আক্রমনাত্মক ও নঞর্থক রোগি,
তারা পরস্পরমুখি ট্রেন ভ্রমন পছন্দ করে
যেসব ট্রেন উৎসমুখে
বারবার ফিরে আসে
তারা সুন্দর হাসতে পারে, কটাক্ষ ও দাঁতমাজন, স্বাদু জল ও
কেনাবেচাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে;
আপনারা তাদের কথা প্রচুর শুনেছেন
তারা আমাদেরই লোক
যদিও আমাদের নির্দেশ মতো পুরোটা চলে না,
তবে তারা বেশিরভাগ সময়ই দলের পক্ষেই কাজ করেন
পথসভার ফেরিঅলাগিরি, দলীয় পত্রিকায় কুৎসালিখন
কর্মক্ষেত্রে পেজকী লাগানো এবং অনিয়মিত বিতর্কে নিয়মিত যোগদান।

চিন্তায় যদিও দুর্বল তদুপরি সেইসব লোকের মাঝ হতেই
আমাদের নায়ক ও নায়িকারা বের হলেন
সৃষ্টির আনন্দে মেতে উঠলেন
আঁকলেন তীব্র ও সতেজ অনুভুতিতে
দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া পোড়া দিনগুলোর
মূর্ত কিছু ছবি,
নায়ক অমিত তেজে শহরে হাঁটছেন
নায়িকা নৃত্যরত স্টেনগান গায়িকা
আমরা কয়েকজন পোস্টারে লেপ্টে দিলাম বুকপিঠ,
সটান হয়ে দাঁড়ালাম
আমরা আগামী শতকের জীবন্ত ভাস্কর্য।

পাঁচ দশক পর আমরা বুঝলাম
সব রসুনের একই গোয়া, সব বুর্জোয়ার একই কোয়া
সব শোয়ালের একই হুয়া।

কে বোঝাবে হায়রে জনসমষ্টি
তাদের আকাঙ্খার পরে হঠাত পাওয়া বৃষ্টি,
শ্লোগান শুনো বন্ধু ইনকিলাব জিন্দাবাদ, আজাদ হিন্দ জিন্দাবাদ
প্রাণ দাও স্বর্গ নাও;
সেই স্বর্গ ২০০৫ সালেও এলো না;
অভাগীর ছেঁড়া শাড়ি প্রদান করে বিশ্বব্যাংক
অভাগী প্রতিদিন প্রতিরাতে বিক্রি হয়ে যায়

মাওবাদ ও জনগনের আমরা

মাও,
তোমার দেশে গিয়ে ব্যাঙ খাওয়া হয়নি আমাদের
আমরা মারা গেছি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে,
একদিন যারা আমাদেরকে চিনে গিয়ে ব্যাঙ খাওয়ার শ্লোগান দিতো[১]
সেই সব মহাভণ্ডেরা এখন তোমার দেশবাসির গুও সানন্দে ভক্ষণ করে,
নিয়মিত বেইজিং সাংহাইয়ে শপিং সারে;
লুটের টাকায় গুলশানে উপশহর গড়ে
আমরা ১৫ বা ২৫ বা ৩৫ কোটি মানুষকে একত্রিত করতে পারিনি
তুমি ৬০ কোটির জন্য একই বৃন্তে শত ফুল ফুটিয়েছিলে
তোমার অজস্র কাজ ছিলো, জনসভা, পথসভা, দলীয় সভা,
সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের বাধা দুর করা
সংস্কৃতিকে মেরুদন্ডের উপরে দাঁড় করানো
ক্ষুদ্র কবিতাগুলোকে গোপন পাথরে লিখে রাখা,
অনুশীলনকে শিল্পে রূপান্তর,
কথাকে গান, গানকে বিপ্লব, বিপ্লবকে কবিতা,
কবিতাকে রাজনীতি,
রাজনীতিকে যুদ্ধ,
যুদ্ধকে শান্তিতে পাল্টানো।

শ্রেণি হতে উদ্ভুত আচরনকে পরির্বতনের লড়াইয়ে
তুমি প্রথম যুক্তি বুদ্ধি ও দ্বন্দ্বের মাধ্যমে
বুঝতে চেয়েছিলে এবং উল্টোদিকে আমরা
কী হতে কী করতে গিয়ে এখন চোরাবালি ও কাদায় নিজেরাই ডুবেছি বারবার
দল ভেঙে গোত্র, গোত্র ভেঙে বর্গ, বর্গ ভেঙে গোষ্ঠি, গোষ্ঠি ভেঙে ব্যক্তিতে
রূপান্তরিত হয়েছি অথচ পুরোনো একগুঁয়েমি এখনো ছাড়িনি
আমরা বালুর বাঁধ তৈরি করেছিলাম এবং
শক্তিমানের স্রোতে নিশ্চিহ্ন হয়েছিলাম।

তদুপরি
কেউ কেউ এখনো আছে যারা
তোমার মতো গান গায় এবং কব্জির ব্যথাটুকু সারানোর চেষ্টা করে
আর তাদের কেউবা ড্রাইভার,
চালাতে থাকে জীবিত ও মৃত সব যানবাহন
রক্তাক্ত পরিবহন, পরিবার, সমাজ, রাজনীতি
লিখে রাখে খসড়া কিছু দিনলিপি, নিজেদের ইতিহাস
তাদের সংগে কতিপয় নতুন মানুষের ভাবনা আসে।

যানবাহনের চালকেরা প্রথমে গ্রহণ করতে নিমরাজি থাকে
চালক বন্ধুগন পথ খুঁজে পায়,
তৈরি পথ আর রিক্ত পথ
আর কাটায় পূর্ণ জীবন পরম্পরা
শান্তি কোথায় খুঁজতে গিয়ে বোঝা যায় সংগঠনের মূল্য,
বোঝা যায় নিজেদের মাঠ, শ্লোগান, গান
আর আমাদের অজস্র কথার সংগে
জনগণের একাত্মতা,
সাম্যস্তম্ভ।

টিকা

১. ‘হো হো মাও মাও চিনে যাও ব্যাঙ খাও’ ছিলো স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের শত্রুদের শ্লোগান। বঙ্গ অঞ্চলের জনগণকে যে কয়েকটি দল দাস হিসেবে শত শত বছর নিপীড়ন ও শোষণ করতে চায়, তারা ১৯৬০-১৯৭০’র দশকগুলোতে এই শ্লোগান দিত।

বেদখল হয়েছে স্বদেশ কিংবা আঁখিও সে গোল্লি মারে নাচ

চালক
একটি হাসপাতাল খুলছে মানুষ নয়, লোহা লক্কড়ের
তার যন্ত্রাংশ মূল্য দিয়েই কিনতে হয়,
সে কিছু যাত্রীকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছায়, ভাড়া নেয়, কথা বলে,
দুএকজন যাত্রীদের জীবন বাঁচাতে
নিজেকে একটু-আধটু বিলিয়ে দেয়,
যাত্রীরা গন্তব্যে যায়; —
কিন্তু চালকেরা পৌঁছে না সঠিক ঠিকানায়;

অভিজ্ঞ জনচালকেরা মিলিয়ে যায় সর্বংসহা পৃথিবীর কোলে
আদর ও আদরস্য ভঙ্গিমায় পৃথিবী বুকে টেনে নেয়
সেই সব যাত্রীবাহী মানুষ,
প্রমাণ করে তাদের জীবন কতো সাধারণ ছিলো,
আনন্দে হৈ হুল্লোড়ে সন্ধেবেলা তারা নাচে গানে বা ঝগড়ায় কাটায়,
পুরো অভাবী জীবনে আনন্দের কলতান;
তাদের কথাতে ছন্দ, গানে ছন্দ, নৃত্যে ছন্দ, মুখের ভাষায় মধু,
কষ্টকর জীবনে আদি রসের সংগে সকাল দুপুরের সখ্যতা,
সন্ধাকালে
আমরা গেলে
খুশি মনে চিত্ত মেলে
দেয় খুলে
মুক্ত দ্বার।

প্রান্তের থেকে আরো দূরে,
কাজিয়া লাগলে
খিস্তি খেউরই মূল বিনোদন
পাড়ার সকল লোক
ঝগড়া দর্শক,
আর সব শালা ঘুর ঘুর করে মক্ষীরানির চারধারে,
যদিও প্রত্যেক পুরুষের ঘরে পাওয়া যেতো সেবাদাসি,
যারা অন্ধ হলে হাসে হাসি
সংসার পেলেই মহাখুশি
এই তো প্রান্তিক পরিবারের ব্যঙ্গচিত্র!

অন্যদিকে আছে আরেক শ্রেণি
যারা ভদ্রবেশে ১ ফুট পানিতে ৩ দিন সাঁতার কাটে
দিন কাটায় হোটেলে বা ফ্লাটে
অভাব আর অভিযোগ, বেঁচে থাকাই সুখ,
অবিরত স্বপ্নবিলাসি,
প্রকৃতির সান্নিধ্যে বছরে একবার সমুদ্র বিলাস,
অথবা একদিন নাটক সরনিতে কবিতা শোনা,
অথবা কাউকে না বলে ছুটি কাটানো লুকিয়ে,
লুকোচুরি খেলে কেউ বাতাস ভবনে।

মুক্তির পথে লড়ে যেতে খুজেঁ বের করতে হয় কতো কী?

খোঁজো মনের মানুষ, খোঁজো মাঠ, ধূলিকণা, পুরোনো পুস্তক,
দেহরক্ষী ও তার হাতে পুজনীয় শক্ত বাঁশের লাঠি,
তিনি আমাদের রক্ষাকর্তা রাজকীয় ব্রুটাল ফুলিস
আমলাদের দেশরক্ষার একমাত্র হাতিয়ার,
আকাশ মাটি জল তারা রাখিবে মুক্ত
আমাদের সেনাবাহিনী, দেশরক্ষার দায়িত্বে,
১৯৪৭ থেকে ষাটটি বছর
শেষকালে বিক্রি হলো পাউন্ডে ডলারে,
আমলারা গামলার মতো ভুঁড়িতে শুভ সব গিলে খেল,
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দালাল এইসব বড়কর্তা সচিব,
বিদেশি পণ্যের ব্যবহারে বড় খুশি; —
রঙ ফর্সাকারি কৃম, স্তন ঠিক রাখার আধুনিক কলা কৌশল,
কামদন্ডের মলম, যৌনতার পত্রিকা
মেডোনার[১] টসটসে শরীর এবং
ছেচল্লিশে বিয়োনোর জন্য উদগ্রীব
ভারতীয় ভেষজ চিকিৎসা গ্রহণ
‘মা হবো বউ হবো’;
এসব ছাপিয়ে কয়েকজন অভিশপ্ত ভারতীয় নর ও নারীর
আঁখিও সে গোল্লি মারে নাচ আর গান আর এ আর রহমান
আর ফার্মের ষাঁড়ের
মতো গোঁয়ার গোবিন্দ[২] আর আবেদনময়ী বিপাশা ঠসা[৩]
আর বাঙলার তরুণ তরুণীরা নীল ছবিতে বিনীল
লুঙ্গি শাড়ি না পরেই ডুবসাতাঁর।

আমাদের আরেক আমলা কাজিয়া পছন্দ করত
লোক দেখানো ছেঁড়া গেঞ্জি আমদানি করত ভাঙা স্যুটকেসে,
আরেক দল আমলা তিনমাসি গাভী আর ব্লাক বেঙ্গল ছাগী পালত,
বাঙলার মাটি ব্যবহার করবে আমিরিকার জঙ্গি ঘাঁটি;
তারা পাঁচ বছরে কতো কী লেখে, অর্থভিক্ষা,
অর্থলোপাট, অনর্থক আইন, হত্যা আইন;
দখলে নাও নদী মাঠ আকাশ বাতাস আর সমস্ত সম্পদ,
বিশেষ দখল আইন, শত্রু আইন, বিশ চারশ ধারা,
আমাদের জাতীয় অর্থভিক্ষুক আর তসবিঅলা রাণী আর
সুন্দরী মহারাণী;
আহা হা কী চমৎকার
আমাগো দ্যাশে কোনো অভাব নাই, কী সোন্দর নেতানেত্রি
আহা হা কী চমৎকার চা খাওয়ায় মফিজ আবুল ও কুদ্দুসদের
ভোট চায়, ভোট লয়;
গণতন্ত্র দিবার চায়;
স্বাধীনতা দিবার চায়!!

টিকা

১. পপ কুইন মেডোনা নাচে গানে ভরপুর পুরুষতান্ত্রিক ডানা কাটা পরী। মেডোনা পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী দুনিয়ার শরীর প্রদর্শক এক নারী যাদেরকে শিল্পী হিসেবে পুঁজির ধামাধরারা প্রচার করেছে।
২. গোবিন্দ হচ্ছে একটা ষাঁড়, যাকে দেখতে মানুষের মতো, এদের অভিনয় ভারতে পুরুষতন্ত্র ও পুঁজিবাদকে শক্তিশালী করেছে।
৩. বিপাশা বসু হচ্ছে আরো অনেক অভিনেত্রীর মতোই নির্বোধ শরীরঅলা এক মহিলা, যে যৌনতাকে ব্যবসায় কাজে লাগিয়েছিল।

পরমাণু ও সাম্প্রদায়িক বোমা

কে দেয় কাকে আছাড়
কার ঘরে কটা উত্তরাধুনিক ষাঁড়?
মানুষ মরে গেলে এককালে ভুত হতো
পৌরাণিক প্রেতাত্মারা এখন টিভিতে অশ্লীল,
সেলিব্রেটিরা অতীতের শান্তিতে বুঁদ!
জুতাপেটা খেয়ে তারা মর্দে মুমিন ছিল
বেহায়া খাঁর আমলে।

ফাঁকিস্তান মুর্দাবাদ বলে বহু নেতা মাল পোয়া মিষ্টি খেল
হিন্দুস্তা হামারা, ধর্মভীরু পাব্লিক,
তাই কমরেড, এই আর একটু ঠেলা দিন,
ধর্মনিরপেক্ষ দেশ বানাইতে আরেকটু ঠেলুন।

ডাইনে বাঁয়ে জোড়া লাগিয়ে হরি শিং স্বাধীন
করতে পারেন না কাশ্মীর, আজাদ কাশ্মীর জিন্দাবাদ,
কাশ্মীরি আর মনিপুরি জনতা খুঁজছেন স্বাধীনতার মতো উকুন
স্বদেশের রাষ্ট্রপতি আর প্রধানমন্ত্রির পশ্চাতের ফুটোয়,
নেতারা দিচ্ছেন আশ্বাস,
ভাইসব, তোমরা হচ্ছো গিয়ে আজাদী মানুষ,
স্বাধীনভাবে নুনু নাচাও,
পুঁজিবাদি পণ্য ঐশ্বর্য রায়কে কল্পনা করো;
কী সোন্দর,
নিজের ধর্মকে ফকফকা ভেবে মারো লাফ,
আহা হা, কী লাফায় দেশের মানুষ,
ভরতমাতা জিন্দাবাদ, ফাঁকিস্তা জিন্দাবাদ,
বাঁচতে হলে অস্ত্র চাই, ঘাস খেয়েও অস্ত্র চাই,
হিন্দুস্তা ফাঁকিস্তার পরমাণু বোম চাই,
মারহাবা মারহাবা, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ,
পরমাণু বোম জিন্দাবাদ, গান্ধিবোমা জিন্দাবাদ।

কিনতে হবে ফরাসি পারফিউম, ফরাসি জংগি বিমান;
মাগার শরীরেও জমেছে মেদ,
আহা হা হা কী সোন্দর নিতম্ব ভরতীয় মরদ ও মাগীর
কী সোন্দর ইন্দিরার উরু
পরমাণু বোমার মতো ইন্দিরার দুই উরু।

এক কবি বক্তৃতা কপচাচ্ছেন
কীসের এতো অমিল
সব মরদেই ভালোবাসার ভান করে,
সব দাসমালিকই অভিনয়ে মহান;
তারা টাকা হাতে নিয়ে খুঁজেছিল হেরেম ও উপপত্নি
খোজা পাহারাদারের ইতিহাস লেখে যারা,
তারা আকাশে চুমু খেতো,
কপালে আঘাতের চিহ্ন,
দুজন পালাল দেশ ছেড়ে,
জংগলে আশ্রয় নিলো, শিকারীর বেশ,
গোত্র আর সন্তানবৃদ্ধির ফল এসে গেল পশু পালনে;
ডাকাতি শুরু করল পাশের গ্রামে
অস্ত্র আর অস্ত্রগুদাম, যুদ্ধবিদ্যা, যোদ্ধাবাহিনী ও অস্ত্রে পারদর্শিতা।
পাশের বা দূরের গ্রামগুলোতে আক্রমণ, হরিলুট,
দ্বিদলীয় ভাগ বাটোয়ারা, শক্তি ও খনিজ সম্পদে;
সবই বিলাস, ভোগ আর ক্ষমতার খেল।

আর কয়েকজন অধিকার অধিকার সমতা স্বাধীনতা বলে লড়ে গেল
যুগ যুগান্তরে।

এবং শত শত সুবিধাবাদি বক্তব্য রাখছেন
রাজা আসছেন রাজা আসছেন
সবাই আকাশের দিকে হা করে তাকাও
রাজা তোমাদের মুখে থুথু ফেলবেন
আর যাদের অসুখ করেছে তারা
রাজার থুথুমিশ্রিত পানিপড়া খাও
তেল পড়া মাখো, সব অসুখ বন্দ হো যায়েগা।
বাচ্চা লোক লাগাও তালিয়া।

রাজা কহিলেন ‘হাগবো’
জমিদার পুরোহিত আমলারা
রাজার পশ্চাতের ফুটোয় একটি কৌটা ধরলেন,
পরিত্যক্ত কৌটা ভর্তি সম্পদ শুটকি বানিয়ে সংরক্ষণ করা হবে।
সুবিধাভোগীরা শ্লোগান ধরলো মারহাবা রাজা, জিন্দাবাদ রাজা;
রাজা কহিলেন, আমিই সর্বশ্রেষ্ঠ শুটকি দিলাম পুটকি দিয়ে
আর কোনো রাজা এইরকম দিতে পারবে না,
আজ থেকে গোটা পৃথিবী শুটকি পূর্ণ হলো।

দুর্গন্ধে পূর্ণ থাকল সমস্ত সামন্ত আর পুঁজির কলঙ্কিত যুগ।

মৃত্যুকুপের মাঝে বাঁচার ধুর্ততা

বাঙলাদেশের গ্রামে এলো
আঠারো বছরের কিশোর, জগতের দুঃসহ[১] বোঝা কাঁধে নেবে।
আর সুবিধাবাদীরা হ্যাচারি খুলছে অনেক,
প্রতিবাদ ও বামপন্থার হ্যাচারি, প্রতিবাদে আয় প্রচুর,
বৈঠকখানায় চর্চা করে ধান্দামুলক বস্তুবাদ,
কতো টাকা আয় হলো গোপনে ডলার ব্যবসা করে,
কতো টাকা আয় হলো শেয়ারে সফল লগ্নি করে।
জীবনতো একটাই বাকিসব কিছু হচ্ছে ফাঁকা
শ্রেণিভিত্তিক সমাজে গরিবী সরিয়ে কামাই করো টাকা।

তাই আমরা ৫১তম ছোট যমুনা পেরিয়ে
জাতীয় বাজেট, জমা খরচ, ভুল হিসাব ঠিক করে লিখলাম;
তোমাদের জীবন নিয়ে কবিতা লিখবো বলে খাতা কলম কিনেছি
কবিতাকে সংগে নিয়ে রাস্তায় নেমেছি;
অথচ আমাদের সামনে ছিলো ঋষি বা সন্ত বা গান্ধী ভাসানীর মতো পীর,
আমরা এগোতে পারিনি,
প্রেমিকার সংগে দেখা হলে দৌড়ে পালাতে পারিনি;
রামসাগর বা দুর্গাসাগরের তীরের অমূল্য
সম্পদ কেড়ে নিয়ে গেছে বিত্তবান পুরুষেরা,
নিঃস্ব আমরা প্রেমিকাকে বাঁচাতে পারিনি ভূমিদাসী শ্রমদাসীর কবল থেকে।

সকালে রুটি ভালবাসি
বাসে চড়ে শহরে যাওয়া,
লোকাল ট্রেনে চড়ে ভিক্ষেতে,
এ দুটোই দশ বছরের প্রেম,
নতুন মুঠোফোনে তোমার সংগে গল্পে সারারাত,
ভুলে যাওয়া প্রথম পরিচয়ের গল্প,
প্রেমিকার ঘরে কিছুক্ষণ দুবাহুর বিহ্বলতার গন্ধে ভীত।

তারও ছয়মাস পরে রটে গেলো যৌন হয়রানির অভিযোগ,
সাংবাদিকের ছোটাছুটি, খবরের কাগজের টানা হেঁচড়া
কেমন কেমন মাংস মাংস গন্ধ
দুটি পুলিশ ও তদন্তকারি
আজেবাজে প্রশ্নোত্তর পর্ব,
হালকা ঘুমের শেষে টেলিফোনের বেজে ওঠা,
গানের সংগে অদ্ভুত মিল প্রেমিকার দেহের ও পায়ের,
ভালোবাসার জন্যে ১০৮টা নীল পদ্ম
কুটিকুটি করে ছেঁড়া,
নাটুকে সর্ম্পক ধ্বংসের টানাপোড়েনে ভুগে শেষ হলো,
আইন প্রনেতারাও নাটক দেখে,
যদিও একদা তারাই ছিল নাটকের বিষয়;
কী নয়া নেতা, কীভাবে উঠে এলে, কীভাবে ভোট পেলে
উত্তরে নেতা বললেন ‘ওই যে দেখছেন হাজতখানা,
ওইখানে বহুবার যাতায়াত ছিলো তো
তাই আমি এখন মানুষের গান গাই’।

সাম্রাজ্যবাদীরা যখন পুঁজিপতির বন্ধু তখন
এই গল্পকথকের বন্ধু জলফড়িঙ, ঘাসফড়িঙ, কালো পিঁপড়ে,
মাঠের মজুর, করাতশ্রমিক, হাতুড়ি বাটালিঅলা, নির্মাণ শ্রমিক,
জেলের ছেঁড়া জাল, মাছরাঙার ঠোঁট আর শিকলপরা মনুমেন্ট;
সেইসব প্রাণী ও বস্তুর সংগে ঘুমিয়ে
আমি জেনেছি সবাই কথা বলে, জানায় অভিজ্ঞতা;
আমার কেওকারাডঙ, গারো পাহাড়, মহাস্থানের ধূলিকণা,
আমাকে বলে চালাও সাইকেল, চালাও গল্প।

আর আমি দেখলাম
হাতে মুখে বুকে খোসপাঁচড়াঅলা শেষ মোগল সম্রাট
বাহাদুর শাহ জাফর পার্বতীপুর জংশনে ছদ্মবেশে
ইংরেজদের হাত থেকে পালাচ্ছেন আর পরিকল্পনা করছেন
কীভাবে বাঁচবেন এই তীব্র জোস্নালোকিত রাতে,
তিনি মুখে করুনভাব ফুটিয়ে আমার চোখে তাকিয়ে
দুটি টাকা চাইলেন,
আমি তাকে মাফ করে দিতে বললাম যেনো
আমি একুশ শতকের শেষ অপরাধী;
তুমি পালাবে কোথায়, তুমি যেই হও
বনসাই বা বটবৃক্ষ;
তোমাকে আমরা ঠিক ঠিক মধ্যরাতে চিনে নিতে চাই,
তুমি ফালতু এখন, অথচ হৃদয়ে ছিলো সমগ্র ভরত সমগ্র মানুষ,
তোমার বন্ধু কুড়ি শতকে পরিপূর্ণ স্বামী ও সাঙসারিক
ভালোবাসায় ঋদ্ধ ভোরে একাকি লাঙল কাঁধে মাঠে যেত;
শিশুটি মাঠে নিয়ে গেছে বাবার খাবার, জগ হাতে
তোমার বন্ধু গান গেয়েছে ওকি গাড়িয়াল ভাই বা
সারাজীবন বাইলাম নৌকা নদীর ঘাটে পইড়া;
আর বিশ শতকে তোমার আরেক বন্ধু বব ডিলান
রেল স্টেশনের পর স্টেশন করেছে ভ্রমণ টিকেটবিহীন
গেয়েছে গান ‘আগামি বিশ্ব ডাকছে এ মানচিত্র বারবার কাঁপছে’
লিখেছে গান আসছে আসছে বৃষ্টি আসছে বৃষ্টি তোলপাড়,
তোমার বন্ধু জেলা শহরে গিয়ে প্রথম সিনেমা দেখেছিলো
গ্রামের যাত্রাপালা ও অশ্লীল নাচ—কিংবা কবিগান
সেসব বহু আগের কথা, এখন তারা টিভি আর সিডি ডিভিডি
কী মজা, জুলিয়া বা জুলিয়েটরা সখিনা রহিমাদের
সরালো গ্রাম থেকে, ইংরেজি সিনেমায় আধুনিকতা,
ইংরেজি গানের ছন্দ ফিরে এলো হিন্দি গানে আর
প্রভুত্ব এলো, এলো খবরদারি
এলো হাসির টিভি চ্যানেল, হাসলে হার্টের আয়ু বাড়ে কী না,
শুধু মানুষের আয়ু বাড়ে না;
হাসে আর হাসে আর হাসে
আর বারুদ বাসায় রাখে
যে কোনো সময় আগুন জ্বালাতে হতে পারে;
সে আগুন জ্বলছে না হাজারো আহ্বানেও,
তথাপি আগুনের সংগে বেগুনের মিল ভর্তায়,
বাংলাদেশের সেনাবাহিনি কৃষকের বউয়ের আচার ভর্তা চেনে না
তারা লেফট রাইট বোঝে,
ডানে টাইট করে নিজেদের;
তারা ডানপন্থি সেনাবাহিনী,
বিচারহীন মৃত্যু; —ক্রসফায়ার, হার্ট এ্যাটাক, এনকাউন্টার
দেখে কে আর ভয় পায়;
মারো, মানুষ মারা আর মুরগি মারা একই কথা;
ছয় মাসে ৬০০ জন, সামরিক অসামরিক ট্রাইবুনালে আরো হাজার দেড়েক;
প্লেগাক্রান্ত ইঁদুরের মতো তারা মারা যাবে,
আসবে না প্রেমিকারা কোনোদিন বাঁচাতে তাদের
ইন্দিরাও মারলো নকশালদের
বাকশালীরাও মারলো নকশালদের;
বাড়েনি সমাজবাদ ধর্মনিরপেক্ষতা,
বেড়েছে ধর্ম ব্যবসা;
ইলেকশনের আগে তসবি টুপি মাজার পুজা
পথ বানাও শুধু আর একবার ভোট চাই
দশবার পাঁচবার নয়, হাজার হাজারবার
দল দুটি নানা ছলে জনগণকে ভেজে খেলো
শুধু একজন পরদেশির পচা সাহায্য দেখিয়ে বললো
‘বাঙাল বাল খাতা হ্যায়’
আর হিসাব করলো কতদিন বন্দি কাটলো
তিন খাতা চারখাতায়;
এ-বাঙলায় সমস্ত বাঙালির
রাজনীতি কীভাবে হলো ভুলে ভরা নীতি
নীতিবিদ্যা শেখাও কাদের শেষরাতে,
কামসূত্র সব শিশুদের হাতে,
বুঝলে তো গুটু গুটু বাবু এইডস আর মূল্যবোধ চলে না এক সাথে
যদিও অস্ত্রশিক্ষা চলে বিশ্ববিপনিবিতানে।

দুর্বল করো না কাউকে
শক্তি দাও দ্রুত পায়ে দৌড়ানোর, দুর্বলকে বাঁচার
শক্তি হোক শক্তি হোক জয় হোক জনগণের
বিজয় দেখতে গিয়ে আবার ভাঙন দেখা
শহরে হাঁটতে গিয়ে পথ না পাওয়া অসীম রাত
স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলে ডানা ঝাপটানো
হায়রে খাঁচা, আবার অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ে মারা,
আবার মুক্তিযুদ্ধ আবার পতন;
পতনকে পাঠাবে কোথায়, নেই তো উত্থান,
শ্রমিক চাইলে সুবিধা দেখে বাক্য গঠন করা যেত,
আমার মনের মতো করে লেখা হতো ক্রিয়াপদ;
ভাষাকে করলে সহজ সবাই এগিয়ে যায়;
উন্মত্তকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যায় লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা
সৃষ্টির নেশায় বিভোর সমাজশিল্পী
সেই একেঁছিল নীচতা হীনতা আর
উঠে দাঁড়াবার প্রবণতা।

টিকা

১. আঠারো বছর বয়স কি দুঃসহ হচ্ছে সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা, আঠারোতে নেমে আসবে দেশে আগুনের হলকা, এরকম কামনা বাস্তবে হামাগুড়ি দিচ্ছে আজো।

গর্ততত্ত্ব ও সংগ্রাম 

বাঙলার বিচিত্র মানুষের কষ্টকর দিনগুলো আর অট্টহাসির
রাতগুলো উচ্ছল আনন্দে কাটছিল;
কিশোর বয়সে প্রথম নাটকে অভিনয়;
বাঙলা ভাগ, মাকে দ্বিখন্ডিত করা,
যৌবনে অভিনয় বাঙলা ভাগ,
সম্পত্তিকে খন্ডিত করা,
হরিলুট আর এলো ভোট;—যুক্তফ্রন্ট
অর্থহীন নিঃস্ব মানুষ একটি গাছ পেল
যা দাসযুগের ধর্মীয় বাতাসে
লাফাতে লাফাতে সামন্তযুগ অতিক্রম করে
ফ্যাসিযুগের সংগে বাতাস খেলো সমুদ্র তীরে।

মহাশক্তিধরটি জানালো
এক সময় পৃথিবীর সবাই অমার পদতলে
তখন মহাসুখ পাবে মধ্যপ্রাচ্যের রাজারা
তাদের হাজার তিনেক হারেম, তার বংশধরের
প্রায় একশত তিরিশটি কন্যা আর উনচল্লিশটি পুত্র সমেত
এক পিশাচ রাজা মারা গেল, তার জন্য তিন দিনের রাষ্ট্রিয় শোক …
ড্রয়িংরুমে আভিজাত্যের প্রতীক রয়েল বেংগল টাইগারের মুখোশ
যদিও বাঘগুলো বিলুপ্তপ্রায় রাজার মতো।

এসে গেছে টাকার যুগ, বিদেশি ডলারের যুগ
বিদেশি গাছের ব্যবসা রমরমা
তাই দেশি হরিতকি গাব কড়ইয়ের বদলে
এসে গেছে ইপিল ইপিল, ইউক্যালিপটাস, রেইনট্রি
ইত্যাকার সাম্রাজ্যবাদী গাছ;
হারালো শালিক দোয়েল মাছরাঙা
এলো বিদেশি কুকুর, ডগ স্কোয়াড
আর স্বদেশি ঠাকুরের অবস্থা ভালো নয়,
ভুশি পেয়েই খুশি দেশি দালালেরা
তাদের মাঝে ইয়েস বস, জ্বি হুযুর;
এক টুকরো তেনা কেনা হবে তাই কমিটি গঠন চাই
অজস্র কমিটি; —বিক্রেতা কমিটি, ক্রেতা কমিটি,
জনসমীক্ষা তদন্ত কমিটি এবং
সম্ভাব্যতা যাচাই সংক্রান্ত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সংসদীয় কমিটি;
পুঁজিপতি কহিলেন ‘বুঝেছ বাবু সবই চক্রান্ত আর ষড়যন্ত্র
তাই তেলের আর জলের দাম বেড়ে যাচ্ছে
অথচ আমরা চেষ্টা করছি এশিয়া আর আফ্রিকাকে নগর বানাতে,
শুধু এই সমাজতন্ত্রি চরমপন্থিদের একটু সামলান,
গোটা মহাদেশ এশিয়া আফ্রিকাকে ফকফকা করে দেব’

আমরা বুঝলাম
সমাজতন্ত্রিরা জ্বালাতন না করলেই
ইয়াংকিরা গোটা দরিদ্র বিশ্বকে ঝলমলে আলোয় মুড়তো,
কারন তারা টেন্ডার পেয়েছে গণতন্ত্র রপ্তানির
শুধু একটি কপিকল বাতাসে নড়ছে
আর হাওয়া নাড়ু খাচ্ছে শ্রমিক-কৃষক।

লাগলো গৃহযুদ্ধ লাগাও গৃহযুদ্ধ
সময়টা ১৮৮৬; আফ্রিকাকে টুকরো করা হলো বার্লিনে
অক্ষাংশ আর দ্রাঘিমাংশে;
সময়টা ১৯৯০-৯১ অনেক রাষ্ট্র ভেঙে পড়লো,
ভালোবাসাই সকল ক্ষমতার উৎস, সূর্য নয়
এবং একদা মানুষই সূর্য তৈরি করেছিলো
এবং ভাষা জগতে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালি
এবং সেই ভাষার গাঁথুনির মতো তোমার পুরুট ভালোবাসা;
সেই প্রেমও পাল্টে গেলো,
দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধারা পালালো কোথায়,
দস্যুরা নদী খাল বিল অরণ্য দখল করলো,
মার্কিন বশংবদ শান্তিরক্ষী বাহিনী দারুণ বেতন পাচ্ছে,
আর কোকাকোলা খাচ্ছে, জিলেট রেজারে গালের বাল কাটছে।
বোমা ও স্টেনগান হাতে নিয়ে গোত্রযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধাদের
উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ছে,
তারা লুটতরাজে সাহায্য করছে বহুজাতিক কোম্পানির;
সোনা রূপা হীরা কয়লা তেল কাঁধে করে পাঠাচ্ছে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে,
কোন দেশের সম্পদে ফুলে ফাঁপে
ইউরো আমিরিকার শেয়ার বাজার, জাতীয় বাজেট,
অথচ এই ইউরোপ একদা প্রগতির পথে হাঁটত
আর এখন আগ্রাসনের স্বার্থে একত্রিত একক মুদ্রা ইউরো,
গরিবের সুন্দরি মেয়েকে নিয়ে এলো স্বর্গ সুখে,
তার চেয়ে যদি জিজ্ঞেস করো পৃথিবীটা কীসের মতো
নিশ্চিন্তে—বলতে পারি পৃথিবীটা গর্তের মতো,
তাতে শক্তিহীনকে ফেলে দাও;
গর্তে সে বেঁচে রবে,
নামতার মতো করে শেখাও
গর্তই পরম ধর্ম, গর্তই স্বর্গ।
তারা গর্তে খুশিতে বাকবাকুম নাচবে।

দুর্বলেরা নিজেদের বাঁচিয়ে রাখে
অফুরন্ত শক্তিতে; জীবনের শক্তিই সবচেয়ে বেশি,
যদিও ব্যবসা বা অসুখে মাথাগুলো নিশ্চিহ্ন,
সেই দুর্বলতা থেকে কিছু মানুষ আসছে যারা ভাইরাসের মতো স্থির নয়
যারা গ্রাম শহর নগরে হেঁটে চলে কান্তিহীন
তারা ফুলের সুঘ্রাণে জাগে
তারা মিত্র এবং বিপ্লবের সর্ম্পক বোঝার চেষ্টা করে,
তারা কেলেংকারি ও দুষ্কৃতিকারির নিশ্বাসে কষ্ট পায়,
তারা নিজের হাতগুলো চুলকাতে পছন্দ করে
তারা লেখার সময় ভুল বানানে লিখতে পছন্দ করে
তারা সব কিছুকে শ্রমিকের মনের মতো করে করতে চায়
তারা একদা মানুষ ছিলো আর এখন শ্রমিক
তারা ভাতের থালাকে মাথার বালিশ বানিয়ে ঘুমায়
তারা রাত দুটায় মৃদুকণ্ঠে স্টেশনে গান গায়
তারা হঠাত রাতে রাস্তার পাশে প্রস্রাব করে,
আবার গলা মেলায় গানে,
হাই তোলে, ঢোক গেলে, মিনিট দশেক ঝিমায়,
মিনিট দুয়েক সংসার সন্তানের কথা ভাবে;
মনে পড়ে ছোটোবেলার বনজাম গাছটির কথা
বান্ধবী আর বন্ধুদের কথা, গ্রামের কথা; —
গ্রাম এখন পৌরসভা, এখন সাঁই সাঁই করে মোটর চলে
পাশের রাস্তা দিয়ে অথচ ১৯৩২ সালে ওই গাঁয়ে
গাঁধি চরকার দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছেন নেংটি পরে ভঙ ধরে;
পাবলিক চেঁচাচ্ছে ভণ্ডবাবা জিন্দাবাদ মারহাবা জিন্দাবাদ,
ওই গাঁ হতেই নেহেরু নির্দেশ দিলো নেতাজিকে মেরে ফেলবার
ওই গাঁয়েই মুজিব হেঁটেছেন প্রথমে ডানদিকে পরে বামদিকে
এবং শেষে উষ্টা খেয়ে পড়ে গেছেন রাস্তায়
ধীরে ধীরে বছরে বছরে তাজউদ্দীন আর জনগন
আর সিরাজ সিকদার আর তাহেরদের বিপদ বাড়লো আর
আয়োডিন অভাবি মঙার মানুষেরা ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকলো
যেনো প্রাচীনকালের পাথুরে মুর্তি সব, ঠোঁট নাড়ায় আর বলে
‘হে সাম্রাজ্যপতি, হে শাহেন শাহর বংশধরগন
কার্তিক মাসে কিছু উচ্ছিষ্টের ব্যবস্থা করো আমাদের জন্য,
হামরা বাঁচি থাকবার চাই’।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় অভাবে স্বভাবে তারা বড়ই সরল
আর বেঁচে থাকতে পারলেই ধন্য,
পুঁজিবাদী বিশ্বের মধ্যবিত্ত মানুষেরা ফার্মের গরুর মতো
মহাসুখে মহাখুশি, হো হো করে হাসে বেশি,
শিহরিত ও পুলকিত তারা জটিলতা এড়িয়ে
আরামদায়ক শীততাপনিয়ন্ত্রিত ঘরের সোফায় ঘুমায়,
অনুশীলন বা যুগান্তর দলের নাম তারা কোনোদিন শুনবে না;
আমেরিকা জিন্দাবাদ বলে নাচবে আর শুনবে
গান ‘মেহেদি লাগাকে রাখ না’
তাদের পিতামহ প্রপিতামহ নতুন কলের ধোঁয়ায় মিলিয়ে যাবে
এইসব নেহেরুর বংশধরেরা
নদী তীরে হাওয়া খেতে যাবে আর
দিল্লির হাওয়া নাড়ু নিজের দখলে রাখবে যে কোনো মূল্যে,
আহা হা কী নরম নাড়ু,
চরম আনন্দে তারা নাড়ুভোগে মত্ত থাকবে,
কমলার মতো ত্বক ছড়িয়ে তারা হাওয়া নাড়ুর কোয়া খাবে।
সেইসব রক্তের সময়েও দুচারজন নামহীন মানুষ
শ্রেণি আর শ্রোণির সর্ম্পক বোঝাতে চেষ্টা করে,
হাতে অস্ত্র থাকুক আর নাই থাকুক
কয়েকটি কিশোর শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টায়
আত্মত্যাগ ও স্বাধীনতাকে সমার্থক করে,
টাকাকে শক্তির উৎস মনে না করে তারা কবিতার সংগে
রাজনীতির মিলঅমিল খোঁজে;
কার শক্তি বেশি বুর্জোয়ার না প্রলেতারিয়েতের
স্বাধীনতা আগে না ভোট আগে,
কচ্ছপ আগে না খরগোশ আগে না মুরগি আগে না প্রধানমন্ত্রি আগে
ইত্যাদি তর্ক শুরু হয়,
শুধু ভালো মন্দ মিলিয়ে ইতিহাসের শিক্ষা,
নাকি সংগ্রাম ও সমঝোতার;
ভালো লোকের ইতিহাস,
সেই যে আঠারো শতকেই শেষ হলো, আর এলো না,
কারণ তার পরে আর ভালো মন্দের ইতিহাস নেই
এরপর ইতিহাস সুবিধাবাদ ও সংগ্রামের
কারণ ততোদিনে উৎপাদনের নতুন উপকরণ এসে গেছে
এসেছে নতুন পথ

গেরুয়া গরুর দাসত্ব

আমাদের বাড়ির এক লেজহীন বানর জিগাইল ‘আমি জানতে চাই’
অথচ সক্রেতিসের কথার সাথে মোরগের কথা
কোনোদিনই মিলবে না,
কারণ ভাষাই পরম প্রেম ভাষাই প্রতীক
তোমাকে ভেবেছে যারা সবাই লিখেছে ভাষা
ভাষাই সবার বেড়ে রাজদুলালি
ভাষাই সর্বশ্রেষ্ঠ সর্ব শক্তিশালি
ভাষাই তোমাকে ডাকে অভিজ্ঞতার ঘরে
ভাষাই তোমাকে নেয় রাতদুপুরে
ভাষাই শোনায় রাজপথের গল্প
সিটি বাজানো হকারের বিকল্প
তাঁর যৌনানুভুতি, অন্যান্য ব্যর্থ অনুভুতি।

খুঁড়িয়ে হাঁটা ভিক্ষুক, হাবা শিরোমনি মুর্খ
কুঞ্চিত কেশাগ্রে প্লেটোর প্রেতাত্মা খুঁজে কিছুই পাবে না,
সে বোঝেনি মীরকাশিম দিল্লি শহরে কী কারণে ভিক্ষা করে,
শরৎচন্দ্র কেন রেঙ্গুনে স্বদেশির মঙ্গলচিন্তায় ব্যস্ত,
এইসব সাধারনের তেমন শক্তি থাকে না পুঁজির পোদ্দারিতে;
একালে কেবল শ্রমশক্তি বিক্রি করা যায়,
শ্রমদাসরা শক্তি পাবে তখনই যখন
কোনো রাজা ভাববাদি সিজোফ্রেনিয়ায় ভুগবে না
কিংবা বলবে না আহা কী সুন্দর দিন কাটাইতাম
দাসমালিকের আমলে
আর জনগন বলবে না ‘কী মজা
নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে অন্যের পদতলে
’,
আর এখন চিন্তা ও দায়িত্ব বেড়ে গেছে
এর চেয়ে অনেক সহজ মাথার উপরে ছাতা পেলে
রক্ষা করেন বস, আপনেই প্রাচীন ঈশ্বর’।

আমরা কয়েকজন হাসতে পারি, হাসাতে পারি
কাঁদতে বা কথা বলতে বা গান গাইতে পারি
অভিজ্ঞতাকে লিখতে, সঠিক কাজে ব্যস্ত থাকতে পারি
নতুন একটি কবিতার বই তোমাদের হাতে দিতে পারি।

হাঁটতে বের হয়ে আমি দেখেছি
ভারতের মধ্যবিত্ত মানুষ এখন দুধে আলতা রঙে সাজতে বেরোয়
বিউটি পারলারে যায়, এদিক ওদিক তাকায়,
র্স্মাট তরুন তরুনিরা টিশার্ট মিনি স্কার্ট পরে
স্বস্বাধীনতায় ইটিশপিটিশ করে,
তারা গরুর গাড়ির বদলে হাওয়ার গাড়িতে চড়ে,
গরু পূজা করে,
অনুষ্ঠানে বেলুন ওড়ায়, টিভি ক্যামেরায় মুখ দেখে
এই তরুনিরা পুঁজি ও যুদ্ধের সংগে পাল্লা দিয়ে
নিজেদের নিতম্ব, স্তন ও উরুকে সঠিক মাপে তৈরি করে,
এই তরুনেরা মাথাগুলোকে মোটা করে,
তৃপ্তির ঢেকুরের সংগে বের করে কার্বন মনোক্সাইড,
নিজের দম্ভে বিভোর, দখল করে আঞ্চলিক পুকুর নদী, সামুদ্রিক সম্পদ,
তারা হয়ে যায় প্রচলিত গেরুয়াসংঘী মানুষ,
তীব্রভাবে হারিয়ে যায়,
এইসব মধ্যবিত্ত তরুন তরুনিরা
নিজেদের পাছার ভার টানতে পারে না।

কিছু রক্ত এখনো বিদ্রোহী

আমরা শ্রমিককে মজুরি দিয়ে বোঝাতে চাই
ঘুম এলেও কবিতা লেখা যায়,
এবং কবিতা জীবনের অধিক গুরুত্ব বহন করে,
হারানো দিন ফুটিয়ে তোলে
নিপীড়িতের অসংগতি, ক্ষমতাহীনের উপর অবিচার
নাটকে প্রদর্শিত রাষ্ট্রীয় নিষ্ঠুরতা,
তের হাত লাঠি দিয়ে অভাবীকে নাচানো,
গানের মাধ্যমে মানুষের মাঝখানে ফিরে যাওয়া শ্রমিক,
জীবনকে পাল্টাতে গিয়ে যারা নিজেদের বদলে যাওয়া,
কিছু রক্ত এখনো বিদ্রোহী
ইত্যাকার সবকিছু কবিতায় চলে;

প্রগতির বারুদ কার জ্বালানোর কথা, আর কে এখন জ্বালায়?
হলদে পাড়ার একটি বাড়িকে সাজানো হলো লাল রঙে
খাপ না খাওয়া রঙ, পছন্দের পরিবর্তন কতো দ্রুত; —
যেন উল্কার গতি,
একজন বিজ্ঞানীর পছন্দ সত্য,
সেই সত্য রঙ প্রথমে একজনই চিনতে পারে,
ক্রমাগত সেই রঙ সবার বুকে রঙ ছড়ায়
নিয়ে যায় প্রিয় মাটির কাছে;
ওখানে অপেক্ষা করছে আমাদের শিল্পনগরী,
আধুনিকতার কোলাহল, শালিকের ডানা,
সাময়িক ব্যস্ততা, সময়ের শেষ সংকট,
আরও পথ বাকি কমরেড, ওই দুরে আমার স্বদেশ,
দুপারেই আমার দেশ আমার বাঙলা।

তোমাদের চোখে যে স্বপ্ন খেলা করে তা
ভালবাসা ও ঘৃনার মাঝে একটি সেতু বাঁধে,
সেই সেতুর নিচে আমরা লাফাবো, সাঁতরাবো,
অথবা আত্মহত্যা করবো অথবা দাঁড়াবো নিজ শক্তিতে;
টেকনাফ হতে তেতুলিয়ায়, এশিয়া হতে আফ্রিকায়
একটি কথাই শোনা যায়
আমরা আসছি, সমস্ত রাষ্ট্রীয় গোলামি খেদিয়ে
আমরা রক্ষা করবো আমার শ্রমিক আমার কৃষক,
বাঁচাবো আমার সোঁদা মাটি গন্ধ,
তুমিই আমাদের প্রথম ঝলকিত প্রেমের গন্তব্য,
আমরা পৌঁছাবোই তোমার মুক্তির বন্দরে।

শ্রমিকের বেদনা গীত

রাষ্ট্রের কর্তা নই, আমরা আছি গৃহকর্তা,
খবরদারি মাতব্বরি সব ঘরের মধ্যেই,
ফেমেলি, পোলাপান, ঝগড়া,
গালাগাল যে শিল্প তা আমাদের গ্রামে এলে দেখবেন;
এখন নজর টাকার উপর,
স্বপ্নে হলেও দেখি সদর দরজায় দারোয়ান,
ব্যক্তিগত গাড়ির মধ্যে খেলনা পুতুল,
ঘোরানো সিঁড়ি, আকাশে আলোকিত গ্রহ, আমাদের নগর,
পরিশ্রম, দৈনন্দিন ঘাম, নাইট ডিউটি, ওভারটাইম,
মনে নয়, দেহেই বেশি ক্লান্তি,
বাদল দিনে হিন্দি গানে,
পত্রিকা, টিভিতে খবর আসে প্রতিদিন আমার অফিসে,
ছোটোবেলার চড় থাপ্পড়, সন্তানের জন্য কান্না, চম্পা বকুলের গন্ধ,
শিশুর ওষুধ, মায়ের শাড়ি,
ছোটোখাটো চুরি, খুঁজে পাওয়া স্কুলের ঘর
পাখির গানে স্মৃতি দেখা,
বিড়ির সংগে বন্ধুত্ব, সিগ্রেট প্রত্যাশি,
স্বপ্ন এবং কয়লাখনি,
কবে ঘরবাড়ি সব উধাও হলো নদী ভাঙনে,
ঘরবাড়ি নিলো সরকার, ক্ষতিপুরণবিহীন;
পুরোনো ঘাট কোথায় হারিয়েছে, কে আর জল আনতে যায়,
রাধারা সব বোতলে বোতলে মিনারেল ওয়াটার খায়
এখন মালখালাসকারি জল আনে কার্ভাড ভ্যানে
পাইপে জল আসে শহরে,
মূল্য দিয়ে কিনতে হয় বোতলে খাবার পানি।

আমার অন্য বন্ধুরা হাঁটে মাঠে ঘাটে সমুদ্রবন্দরে
ওইখানে তারা মাল খালাসকারি
ভাবনা আর চাহিদা অনেক কম তাই এই বেশ ভালো থাকা
মজুরি বাড়লে ভালো হত;
অনেক দিন ভালো ঘুমাইনি,
আমার সমবয়সি বন্ধুরা উপশহরে কাজ করে
টিভি সিনেমা দেখে, ভাত খায়, সিটি মেরে গান গায়
মেয়েরা বড় হয়, বিয়ে দেয়,
মা হয়, মায়েরা বুড়ায়,
বুড়া-বুড়ির যত্নআত্তি পথ্য, মেলা কষ্ট,
আপনার লগে বিড়ি আছে, ধরাইতাম,
মেলা গল্প, পরে শুনবেন, সব অভাবের গল্প একই রকম,
বাঁচার নিয়মে ফুর্তি, মাঝে মাঝে পালাইতে মন চায়,
পাখির মতো ছোট্ট মেয়েটা চিড়িয়াখানায় যেতে চায়,
ওর হাতি খুব পছন্দ, ও মানুষজন অপছন্দ করে।

বুঝলেন নিজে ভাল হলে বিপদ বেশি,
অন্যকেও ভাল করা লাগে,
নীতি চাই, মাইর দিয়া খুব কম কাজই হয়,
তদুপরি শক্তি প্রদর্শন এক বিশাল ফ্যাক্টর,
আমার প্রথম টার্গেট শিশুরা সুন্দর হবে,
ওরা ভুলপথে যাবে না,
দাস ক্যাপিটাল, মানে শোষণবিহীন দুনিয়া, কার্ল মার্কস,

পৃথিবীর সারা শরীরে ব্যথা,
মলম দেবে কে,
কষ্টের কাজ পৃথিবীকে মাথায় বহন,
তার চেয়ে ভালো হয় এটিকে কোনো ভাগাড়ে ফেলে দিলে।

মাটি কাটার জটিল কাজে শ্রমিকের জীবন অন্তহীন,
সত্যকে মাটির গভীরে পাওয়া যায় না,
পোড়া সত্য পোড়া মাটিতেই থাকে,
অর্ধসত্য মিথ্যাবাদির ঘরে ইট বালু পাথরের সংগে মিশে যায়
রিক্সাঅলা, ফেরিঅলার জীবনের অর্থ এবং
আলকাতরা জ্বালিয়ে হয় নতুন শহর,
পুড়ে যায় দেহের স্বাদ,
আমার পড়শি চাকার গতি বাড়াতে ব্যস্ত মানুষ
অথচ তাদের জীবনের চাকা ঘোরে না,
গতিহীন আরো অনেকের সাথে আমরা থেমে যাই,
শুধু বাড়ে উপরতলার লিফটের গতি,
উপরে বিশাল ছাদ, নিচে আমি চিহ্নহীন
চিহ্ন রাখি ভালোবাসার,
মৃৎশিল্প গড়ে কেউ, ফুল রাখে কেউ ফুলদানিতে,
হাতে হাত রেখে কয়েকজন হলো শক্তিশালি,
প্রতিবাদি হতে গিয়ে কেউ হলো সুবিধাভোগি,
কেউ আদম ব্যবসার দালাল,
দাদাগিরি চোরাচালানি নারী পাচারকারি,
আজকাল মেপে মেপে দেহ বিক্রি হয় গজ ও ফিতায়,
বিক্রি হয় হৃদপিন্ড, পাপড় ভাজা, নতুন মিস্ত্রি,
কে বেশি ভাত খায়; — আধুনিক দাস না গৃহের দাসি
কে বলে আরাম নাই, আরো আরাম চাই;
কে জিগায়, কোথায় চলেছো বাজান।
উত্তরে কে বলে আশা নগরে আশা কেনা যায় কেজি দরে
কে ভাবে, কীভাবে হবে শ্রমদাসের অবস্থার উন্নতি।

এখন তাই শহরের সবাই শক্ত পাথরে খোদাই করে লেখে
দুই সম্রাজ্ঞীর নাম।
উৎপাদন প্রক্রিয়ায়
আগামির মানুষেরা গণতান্ত্রিক হবে কী হবে না এই নিয়ে বক্তৃতা,
পত্রিকা বিক্রি লাল অক্ষরে,
শেষকালে ঝাড়ুমিছিল,
একটা ছেঁড়া টাকা বা ভাঙা কয়েন,
শেষমেষ দাদা, সাদা কাগজে মাতলামি,
রাষ্ট্রপ্রধান, রাষ্ট্রধর্ম, হিন্দু ট্রেন, মুসলমান বাস, পাদ্রী রাষ্ট্র
এইসব নিয়ে কবিতা!

দাদা, কবির কী দোষ,
স্নেহ আর চর্বি, তেল আর পিচ্ছিল বিপ্লবের
পার্থক্য কবি কতটুকু আর বোঝে,
কুলি আর বেলির প্রেম,
শেলির কবিতা আর গীতবিতানের গান,
জলে ডোবা নদী,
পানি খায় পানকৌড়ি সকাল থেকে সন্ধা অবধি,
ডুবে কোনো ক্লান্তি নাই,
মাথার খুলিতে মগজ নাই,
আর একবার সামলালেই
সব ঠিক হয়ে যাবে,
ভরসা চাই ভরসা দাও, সুযোগ আর সম্ভাবনা
তাহলেই এসে যাবে নতুন কবিতা
নতুন বিপ্লব

আধুনিক নেতাদের পচনক্রিয়া

নেতারা আকৃষ্ট করেছে আলোর মতো,
তার কাছে ছুটে গেছে অনেকেই,
যেমন যায় ছোট পোকা আগুনের কাছে মৃত্যুর সাথে সখ্যতার জন্য,
আপেক্ষিক জীবনের হিসেবে কতোটুকু ভুল হলে
মৃত নক্ষত্রের আলো দেখা যায়,
যে নেতা এখনো আছে আমাদের অনুভবে,
যে বাড়েনি ভোরের আলোর মতো,
যে মিশেছে জনতার সাথে,
যে চিহ্ন রেখে চলে গেছে নিজের গন্তব্যে,
সেই তাকে আমি দেখতে চাই
হাজারো মানুষের ভিড়ে;
তিনি একক মোহনায়
এক মোড়ে এক রাস্তার মালিক।

আর আমি আর আমরা গঙ্গা ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় হাঁটি,
দেখি নীল গাই, শালিক, চিত্রল হরিণ,
কয়েকটি বাঘ খেলছে ভোরবেলা তৃনভুমিতে,
মাঘের শীতে এক ঘাটে বাঘে-মহিষে বন্ধুত্বের জল খাওয়া,
দুরে অনেক দুরে মাইকে শ্লোগান শুনছি,
বিপ্লব মহাকালীন হোক
এবং নদী তীরে হাঁটতে হাঁটতে দেখলাম
বাপুজি নেংটি খুলে বসেছেন গঙ্গার তীরে,
আর এক বিশালদেহী দৈত্য বলছে,
‘ছাড়ুন বাপুজি ছাড়ুন পেট উজাড় করে ছাড়ুন’,
কিন্তু বাপুজি পারছেন না, প্রচুর কোষ্ঠকাঠিন্য
অনেক কষ্টে বায়ুর গর্জন ছাড়লেন
দৈত্যের মেজাজ বিগড়ে গরম
ধমকালেন ছাড় বেটা ছাড়, তোর পুরো ভরতের উপর ছাড়,
তিনি ধমক খেয়ে আবার বায়ু ছাড়লেন,
এবার আরো রেগে ধমকের সংগে দৈত্য বললো,
শুয়োরের বাচ্চা ছাড়, ভারত জননীর উপরে ছাড়,
সাত বোনের উপরে ছাড়, গঙ্গা জলে ছাড়,
দিল্লি, আগ্রা, তাজমহল, গ্রন্থ, বন্দর;
সবকিছুর উপরে ছাড়,
বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ, অরবিন্দর উপরে ছাড়,
তেত্রিশ কোটি সন্তানের উপরে ছাড়,
দেখলাম ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বাপুজি একটু কালো পিণ্ড ছাড়লেন,
দৈত্য আবার ধমকালো, ঢ্যামনার পুত, ছাড়
তোর বাপ নেহেরুকে ডেকে এনে সর্বভারতের উপর ছাড়,
বাপুজি ডাকামাত্রই নেহেরু এসে
পুরো গঙ্গায় হড়হড় ভড়ভড় করে পুরো নদী বোঝাই করলেন,
আর বাপুজি, নেহেরুজীর দেখাদেখি এলেন
আরো অনেক নির্বাচিত অনির্বাচিত ছাড়নবীরেরা,
পাকিস্তানী বাঙলাদেশি জানোয়ারেলরা;
গঙ্গা নদী ও তীর পূর্ণ করলেন,
এরপর তারা যমুনা ইরাবতী, সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র, সুরমা,
সর্বত্র সব নদীর তীরে প্রফুল্লচিত্তে ছাড়তে থাকলেন,
গোটা ভারতে কর্মযজ্ঞ শুরু হলো
রাজধানীগুলোতে সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় খোলা হলো
সে বস্তু রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল
সে বস্তু ভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্প
গবেষক ও বিজ্ঞানিতে গোটা দেশ ছেয়ে গেলো
পত্রিকায় সেটির কেলেঙ্কারি নিয়ে খবর বের হতে থাকল
ওই বিষয়ক বক্তৃতা বিবৃতি প্রবন্ধ সেমিনার হাততালি ইত্যাদি হলো,
অনেক মন্ত্রি ওটিকে প্রণাম করা শুরু করলো
ওটির সামনে দাঁড়িয়ে অনেকে অনুতাপ অনুশোচনায়
মুখ কাচুমাচু করে চোখ দুটো নামিয়ে রাখলো,
সেটি ভক্তি বিষয়ক উপাসনালয় খোলার জন্য
কতিপয় বেয়াড়া ছোকরা দুএকদিন শ্লোগান দিলো
সেটি রপ্তানি আমদানি ইত্যাদিতে জনতা কর্মমুখর হলো
আই এম এফ বিশ্বব্যাংক বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ দিলো,
প্রকল্প পরির্দশনের জন্য বিদেশিদের আনাগোনা বাড়লো
ওটি বিষয়ক বিশাল বিশাল বই ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, জার্মান ভাষায়
লেখা হতে থাকলো
বিদেশি গবেষকরা
গবেষনণায় নিত্য নতুন প্রক্রিয়া উদ্ভাবিত করলো,
কালো লাল নীল সবুজ হলুদ তৈলাক্ত নরম শক্ত জলীয় পাতলা
ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের বর্জ প্রক্রিয়াজাত হতে থাকলো।
মুতের দামও বাড়লো
গ্যাসের দাম বাড়লো
ফলে এসবে ভেজাল দেয়া শুরু হলো

২০০১ সালে নতুন মন্ত্রি গোয়ায় পাইপ লাগিয়ে গ্যাস রপ্তানী করতে চাইলো,
ফলে নতুন শতকে খাঁটি বর্জ ও বায়োগ্যাস পাওয়া খুব কঠিন হলো।
আমরা নিরাশ হলাম না

আমরা আশা ছাড়লাম না

আমরা কতিপয় লোক সঠিক নতুন বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায়
আবাদের জন্য উদগ্রিব হলাম
মনে হচ্ছে ধীরে ধীরে অবস্থা পাল্টাতে পারে
আমরা দুএকজন অবস্থার হেরফের ঘটানোর জন্য নড়াচড়া শুরু করলাম,
কিন্তু মাঝে মধ্যেই অতীত এসে ভিড় করে, হতাশা ভিড় করে,
নেতাজির প্রেতাত্মারা ফিসফিস করে।

সুবিধাভোগিরা ধ্বংস করতে চায়;
শীতকালে একদিন ফুটবল খেলা দেখতে গেলাম
আমরা সাহস পেলাম একটি গরুর খেলা দেখে,
আহা, কী চমৎকার গরু, কী তার শক্তি, কী চমৎকার তার গোবর,
এরকম চমৎকার গরুরই দরকার খেলোয়াড় হিসেবে,
আমরা মুগ্ধ বিমুগ্ধ,
আহা হা কী আনন্দদায়ক ও মর্যাদাকর দৃশ্য
দেশের ভুলুন্ঠিত মান এরকম গরুই পারে ফেরাতে
খেলা শুরু হলো সীমান্তের সর্বত্র
আহা হা কী দারুণ আক্রমণ বিপক্ষ দলকে;
এই প্রথম দেখলাম গরু ব্যাজ পরছে, সেনানির পোশাক পরছে,
বাহবা মারহাবা এরকম যোদ্ধা গরুইতো চাই,
যুদ্ধংদেহি খোলায়াড় উপযোগি দি অক্স
কী চমৎকার লেজ, লেজের মাথায় একগোছা শক্ত চুল,
কী আনন্দদায়ক ফিতা কাটার ভংগি,
আহা কী চমৎকার! বিপক্ষের খেলোয়াড়দের সাথে হ্যান্ডশেক করে
পাশে বলদেরা হাততালি দিচ্ছে,
ষাঁড়েরা খুশিতে গদ গদ, গাভীরা আনন্দনৃত্য করছে,
বাছুরেরা লেজ উঠিয়ে লাফাচ্ছে,
আহা ওইতো জাতীয় সঙ্গীত বাজলো, কী মোহনীয় সুর
খেলা বন্দ।
জিতে গেলো গরুর টিম,
মারহাবা মারহাবা, সকলেই খুশি
পুরষ্কার বিতরণ শেষ, সুখবর সুখবর সুখবর,
ফুটবল খেলায় বিজয়িরা বিজয় উৎসব পালন করবেন,
অদ্য বিকেলে উপস্থিত থাকুন স্টেডিয়ামে।

আমরা পাড়া প্রতিবেশিরা সেন্ডেল, কোদাল ঝাড়ু হাতে
মাঠে উপস্থিত হলাম,
উপস্থিত হলেন মহামান্য শাহজাদা শাহজাদী পীরজাদা পীরজাদীরা,
তারা বিস্তর বক্তৃতা করলেন হাত পা ছুঁড়ে
মাথাহীন মানুষদের সামনে,
শ্লোগান শুরু হলো মরণবাদ জিন্দাবাদ,
সাঁই সাঁই করে আকাশে হেলিকপ্টার উড়ছিলো,
পাতি নেতাদের বক্তৃতার পর
মূল নেতা বক্তৃতা শুরু করলেন
আজ যে শাহান শাহ এখানে উপস্থিত
তিনি ক্ষমতায় এলে আর কোনো মাগীর ভাতার দরকার হবে না,
আমাদের শাহজাদা ক্ষমতায় এলে আর কোনো ভাতারের মাগীর দরকার হবে না
আমাদের শাহজাদা বহুত রসালো আর তৈলাক্ত,
হের ফুঁ দেয়া পানিপড়া খাইলে সব মাগীরা গাভীন হয়ে যায়,
আর মরদেরা পোলাপানের বাপ,
আর শোন হারামজাদারা, তোরা আর একবার ভোট দে,
এইবার ভোট দিলেই নদী দিয়া আর বালু পাথর আসবে না,
কেবল সোনা রূপা আসবে,
এইবার ভোটে জিতলেই চুতরা গাছে কলা ধরবে, ধুতরা গাছে ডাব
মাকাল গাছে মূলা ধরবে, ভেন্না গাছে গাব
তোরা ভোট দিলেই আমাদের শাহ সুলতানজাদা সব ফকফকা করে দেবে,
আর গত সরকারের সময় কষ্টে যাদের পুটকি দিয়া
এখনো ধুয়া বের হইতেছে তাদের গোয়ায় ভাপা পিঠা
সিদ্ধ কইরা বিদেশে রপ্তানি করা হইবো আমরা ক্ষমতায় আইলে,
সবাই আমাগো জানের জান কলিজার আধখান হইবা,
এই বইলা শেষ করলাম
সবাই আমাগো শাহজাদা শাহজাদীদের কুর্নিশ কর, মরণবাদ জিন্দাবাদ।
(চতুর্দিকে অফুরন্ত হাততালি)

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই গ্রন্থের সতেরটি কবিতা অনলাইনে রোদ্দুরে ডট কমে ২ আগস্ট ২০২০ থেকে ৯ আগস্ট ২০২০ তারিখের ভেতরে আলাদা আলাদা পোস্ট আকারে প্রকাশ করা হয়। রোদ্দুরেতে প্রকাশের সময় কিছুটা সম্পাদনা করা হয়। ক্ষেত্র বিশেষে দুএকটি শব্দ বদলে ফেলা হয়। রোদ্দুরে ডট কম থেকেই লেখাটি বর্তমানে ফুলকিবাজ ডট কমে পাঠকদের সুবিধার্থে একত্রে একটি পোস্টে প্রকাশ করা হচ্ছে।

আরো পড়ুন

কবিতায় ব্যবহৃত পেইন্টিংটি Mrs Caudle’s curtain lectures বই থেকে গৃহীত। প্রথমে পাঞ্চ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। পেইন্টিঙটি একেছেন রিচার্ড ডয়েল (১৮২৪-১৮৮৩)।

Leave a Comment

error: Content is protected !!