রাম ভেন্ডি বাংলাদেশে জন্মানো উপকারী বীরুৎ

রাম ভেন্ডি

বৈজ্ঞানিক নাম: Hibiscus surattensis L. Sp. P1.: 696 (1753). সমনাম: জানা নেই। Wild Sour, Shrub Althea. ইংরেজি নাম: স্থানীয় নাম: রাম ভেন্ডি।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস 
জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms অবিন্যাসিত: Edicots অবিন্যাসিত: Rosids বর্গ: Malvales পরিবার: Malvaceae গণ: Hibiscus প্রজাতির নাম: Hibiscus surattensis.

ভূমিকা: রাম ভেন্ডি (বৈজ্ঞানিক নাম: Hibiscus surattensis) হচ্ছে ম্যালভেসিয়া পরিবারের হিবিসকাস গণের এক প্রকারের বিরুৎ। এই প্রজাতিটি দক্ষিণ এশিয়ায় জন্মায়।

রাম ভেন্ডি-এর বর্ণনা :

রাম ভেন্ডি নরম কান্ডবিশিষ্ট বর্ষজীবী বীরুৎ। এরা উচ্চতায় ৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। প্রথমে ঋজু পরে লতানো হয়। এদের কান্ড, পত্রবৃন্ত, পুষ্পবৃত্তি কা এবং পত্রশিরা নরম সাধারণ রোম এবং নিম্নদিকে বাঁকানো কন্টকাবৃত।

পাতা ৩-৯ সেমি লম্বা বৃন্তযুক্ত, কন্টকময়, মসৃণবৎ, ফলক ৩-৮ × ৪-১২ সেমি, নিচের পাতা ডিম্বাকার থেকে বর্তুলাকার অথবা করতলাকারে ৩- খন্ডকবিশিষ্ট, উপরের পাতা ৩-৫টি করতল খন্ডে বিভক্ত, অগভীরভাবে হৃৎপিণ্ডাকার থেকে কর্তিতাগ্র, ৫-৭ শিরাল, খন্ডগুলো রৈখিক থেকে ভল্লাকার, তীক্ষ্ণ থেকে দীর্ঘাগ্র, ক্রকচ, মাঝখানের খন্ডটির গোড়া সরু, উভয়পৃষ্ঠ বিক্ষিপ্তভাবে সাধারণ এবং তারকাকৃতি রোমাবৃত, শিরাগুলোর তলদেশ বেশী রোমশ অথবা মসৃণবৎ, প্রতি জোড়ার উপপত্র পত্রাকার, ১০-২০ × ৬-১০ মিমি, ডিম্বাকার অথবা অর্ধচন্দ্রাকৃতির, গোড়া উপাঙ্গবিশিষ্ট, তীক্ষ্ণ, সভঙ্গ-দন্তর, উভয়পৃষ্ঠ বিক্ষিপ্তভাবে রোমশ অথবা মসৃণ, কিনারা লম্বা রোমযুক্ত।

পুষ্প একক, কাক্ষিক। পুষ্পবৃত্তিকা ৩-১২ মিমি লম্বা, পুষ্প থেকে ৫-১২ মিমি নিচে সন্ধিত। উপবৃতির খন্ড ১০টি, প্রতিটি খন্ডক ১২-২০ × ২-৩ মিমি, ছড়ানো, রৈখিক থেকে দীর্ঘায়ত, শীর্ষ চমসাকার, উপবৃত্তাকার থেকে ডিম্বাকার-দীর্ঘায়ত, শীর্ষ তীক্ষ্ণ, ৫-৭ × ২-৫ মিমি, একটি ঋজু, রৈখিক থেকে ভল্লাকার, ১০-১৫ × ০.৫-১.০ মিমি উপাঙ্গবিশিষ্ট, খন্ডাংশ এবং উপাঙ্গ উভয়ই নরম এবং সরল রোমাবৃত, এবং কিছু খর্বাকৃতির নিম্নদিকে বক্র কন্টকযুক্ত, কিনারা অমসৃণ।

বৃতি স্থায়ী, ঘন্টাকার, গভীরভাবে খন্ডিত, খন্ডগুলো ১০-২৫ × ৫-১০ মিমি, ফলে সংযুক্ত অবস্থায় ৩০ × ১৫ মিমি পর্যন্ত বৃদ্ধিশীল, ডিম্বাকার, দীর্ঘাগ্র, ৩-শিরাল, বহিঃপৃষ্ঠ কন্টকময় রোম এবং নিম্নমুখি বক্র কন্টকবিশিষ্ট, অন্তঃপৃষ্ঠ মসৃণ। দলমন্ডল একটি রক্তবেগুনি বর্ণের কেন্দ্রবিশিষ্ট হলুদ, পাপড়ি ৩-৫ × ১.৫- ৩.০ সেমি, বিডিম্বাকার, শীর্ষ গোলাকৃতি, বহি:পৃষ্ঠে কিনারা বিক্ষিপ্তভাবে ক্ষুদ্রাকার সরল রোম এবং তারকাকৃতি রোমাবৃত।

আরো পড়ুন:  সিনামোমান গণের প্রজাতিগুলোর বৈশিষ্ট্য

পুংকেশরীয় স্তম্ভ ১-২ সেমি লম্বা, পরাগধানীবাহক সর্বত্র বিস্তৃত, পুংদন্ডগুলো ১.৫-২.০ মিমি লম্বা। গর্ভাশয় ৫-প্রকোষ্ঠীয়, প্রতি প্রকোষ্ঠে ডিম্বকগুলো ২ সারিতে সজ্জিত, গর্ভদন্ড ৫-বাহুবিশিষ্ট, প্রতিটি বাহু ২.০-২.৫ সেমি লম্বা, গর্ভমুণ্ড চাকতিসম, মখমলীয়।

ফল ক্যাপসিউল, দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থে ১.০-১.৫ সেমি, নিরেট ডিস্বাকার, শীর্ষ তীক্ষ্ণ, খাটো ও ভোঁতা, উজ্জ্বল সাদা বা হলুদাভ রোমাবৃত। বীজ তামাটে কালো, প্রতি প্রকোষ্ঠে ৫ বা ততোধিক, প্রতিটি বীজ ৩-৪ মিমি মোটা, বৃক্কাকার, পৃষ্ঠ আঁচিলযুক্ত এবং শল্ক তুল্য সাদা বর্ধিতাঙ্গবিশিষ্ট।

ক্রোমোসোম সংখ্যা : 2n = ৩৬, ৭২ (Fedorov, 1969).

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:

ঝোপঝাড়, এবং মৌসুমি বনভূমির পাহাড়ের ঢালে। বিস্তীর্ণ মাঠ এবং বনায়নে, আবাসস্থলের পাশের পরিত্যক্ত জায়গা এবং উপকুলীয় আবাস বালিয়াড়িতেও জন্মে। ফুল ও ফল ফুটে সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মাস।  এটি একপ্রকার বর্ষজীবী উদ্ভিদ এবং বর্ষাকালে ইহার বীজ থেকে প্রাকৃতিকভাবে জন্মায়।

বিস্তৃতি :

রাম ভেন্ডি দক্ষিণ আফ্রিকা, এশিয়া, শ্রীলংকা, এবং অস্ট্রেলিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। বাংলাদেশে ইহা সর্বত্র পাওয়া যায়।

রাম ভেন্ডি-এর ব্যবহার:

ইহার কান্ড থেকে এক প্রকার শক্ত ও উন্নতমানের তন্ত্র পাওয়া যায়। ইহার পাতা অম্লীয় এবং কখনও কখনও কাঁচা অবস্থায় সালাদ হিসেবে খাওয়া হয়। ইহার পাতার নির্যাস গনোরিয়া এবং অন্যান্য জ্বালা-পোড়ায় বাহ্যিকভাবে অথবা ইনজেকশনের মাধ্যমে ব্রবহৃত হয় (Kirtikar et al., 1935). ইউরোপে ইহা শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবে বাগানের পুকুরের ধারে লাগানো হয়।

জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোতে শুষ্ক পাতার চূর্ণ ক্ষত নিরাময়ে এবং কেনিয়াতে উদ্ভিদ ভষ্ম কাটা স্থানে, এবং উদ্ভিদটি পানিতে ফুটিয়ে বের করা ক্বাথ জলবসন্তের ফলে সৃষ্ট ক্ষত নিরাময়ে ব্যবহৃত হয় (Grubben and Denton, 2004).

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের  ০৯ ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০ রাম ভেন্ডি প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের এটি ঝুঁকি মুক্ত। বাংলাদেশে রাম ভেন্ডি সংরক্ষণের কোন প্রয়োজন নেই। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে বর্তমানে কোন সংরক্ষণ পদ্ধতি অবলম্বনের প্রয়োজন নেই।   

আরো পড়ুন:  অ্যাঞ্জেলিকা গণের নানা প্রজাতির বিবরণ ও গুণাগুণ

তথ্যসূত্র ও টিকা:

১. এম মতিয়ূর রহমান (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ০৯ম, পৃষ্ঠা ৪৬-৪৭। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি flowersofindia.net থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Prashant Awale

Leave a Comment

error: Content is protected !!