ভুমিকা: গুচ্ছ ল্যান্টানা (বৈজ্ঞানিক নাম: Lantana camara) হচ্ছে ল্যান্টানা গণের একটি সপুষ্পক গুল্ম। এটিকে দেখতে সুন্দর তবে কুট গন্ধযুক্ত। ভেষজ গুণসম্পন্ন গুল্ম।
গুচ্ছ ল্যান্টানা-এর বর্ণনা:
কণ্টকিত, চিরহরিৎ, আরোহী বা ছড়ানো গুল্ম, ১- ৪ মিটার উঁচু, শাখাপ্রশাখা সাধারণত ক্ষুদ্র বা অস্পষ্টভাবে রোমশ, বড়শি সদৃশ কন্টক দ্বারা স্পষ্টভাবে কন্টকিত। পত্র সরল, প্রতিমুখ-তির্যকপন্ন, ২-১০ × ১.৫-২.৫ সেমি, ডিম্বাকার থেকে ডিম্বাকার-আয়তাকার, গোলাকার-করাত দত্তর, সূক্ষ্মাগ্র থেকে খাটো দীর্ঘাগ্র, কুঞ্চিত, অমসৃণ, পত্রবৃন্ত ৫-১০ মিমি লম্বা।
পুষ্পবিন্যাস কাক্ষিক থেকে শীর্ষক ঘন আম্বেলসদৃশ বা মঞ্জরীদন্ডযুক্ত হেড। পুষ্পযুক্ত হেড আড়াআড়ি ২-৩ সেমি, অধিকাংশ উপরের পত্র কক্ষ থেকে, মঞ্জরীদন্ড অর্ধ-বেলনাকার, প্রসারিত, সংকুচিত পত্র দ্বারা আবৃত, মঞ্জরীপত্র ৫-৭ মিমি প্রশস্ত, বল্লমাকার থেকে রেখাকার, সূক্ষ্মাগ্র থেকে অর্ধ-সূক্ষ্মাগ্র, কদাচিৎ স্বল্প সংখ্যক বৃহত্তরটি বিদ্যমান।
পুষ্প আড়াআড়ি ৫-৮ মিমি, অধিকাংশ হলুদ, লালে পরিণত, পরবর্তীতে রক্ত লাল। বৃতি ২-৩ মিমি লম্বা, হালকা রোমশ। দলমন্ডল নলাকার, নল ৭-১০ (-১২) মিমি লম্বা, রোমশ, সামান্য প্রসারিত এবং মধ্যভাগের উপরে বক্র, ফল ৪-খন্ডিত যা গোলাকার এবং ছড়ানো পাপড়িযুক্ত। ফল বেরীসদৃশ ড্রপ, রোমহীন, ৩-৫ মিমি চওড়া, রসালো, চকচকে গাঢ় সবুজ কিন্তু পাকলে প্রায় – কালো, রোমহীন, ২-বীজী।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২২, ২৮, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৬, • ৩৮, ৪৪, ৬৬ (Kumar and Subramaniam, 1986).
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
পরিত্যক্ত ভূমি, পশুচারণভূমি এবং বাগান। ফুল ও ফল ধারণ সারা বছর বর্ষব্যাপী। বীজ এবং শাখা কলম দ্বারা।
বিস্তৃতি :
উষ্ণমন্ডলীয় আমেরিকার স্বদেশী এবং বিভিন্ন উষ্ণমন্ডলীয় ও অর্ধউষ্ণমন্ডলীয় এলাকায় প্রাকৃতিক। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বিস্তৃত এবং বাগানেও পাওয়া যায়।
গুচ্ছ ল্যান্টানা-এর ব্যবহার:
বিভিন্ন বাগান, প্রতিষ্ঠান এবং অফিস চত্বরে সাধারণত শোভাবর্ধক হিসেবে, কখনো বাগানে বিভিন্ন পুষ্প স্তরের চারিদিকে জীবন্ত বেড়া দেয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়। পাতার সিদ্ধ ক্বাথ ধনুষ্টংকার, ম্যালেরিয়া এবং গেঁটে-বাতে ব্যবহৃত হয়। উদ্বায়ী তেল কেরিমেন, আইসো-কেরিমেন এবং মাইক্রামেন বহন করে। কুইনাইন সদৃশ অ্যলকালয়েড ‘ল্যান্টানিন’ নিষ্কাশন করা হয়েছে যা মাংস পেশীর নিয়ন্ত্রণহীন ব্যথারোধী। ইহা এক ধরনের উপাদান বহন করে যা গরু এবং ছাগলের চামড়ার রোগ নির্ধারণ ক্ষমতাযুক্ত, চামড়া শক্ত, স্ফীত, ছেড়া এবং ব্যাথার কারণ।
জাতিতাত্ত্বিক ব্যবহার:
কখনো ইহা বাংলাদেশে জীবন্ত বেড়া দেয়ার কাজে বিশেষত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চত্বরের বাগানে ব্যবহৃত হয়। শ্রীলংকায় মূলের পাউডার দুধের সাথে মিশ্রিত করে শিশুদের কোমলকারক এবং পেটের ব্যথায় ব্যবহৃত হয়।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১০ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) গুচ্ছ ল্যান্টানা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে এটি আশংকা মুক্ত (lc) হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে গুচ্ছ ল্যান্টানা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এটি সংরক্ষণের পদক্ষেপ গ্রহণ নিষ্প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র:
১. বি এম রিজিয়া খাতুন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৪৭০-৪৭১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Kayser Ahmad
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।