ভূমিকা: দারুচিনি (বৈজ্ঞানিক নাম: Cinnamomum verum, ইংরেজি নাম: Cinnamon, True Cinnamon.) হচ্ছে পার্বত্য অঞ্চলে জন্মানো ভেষজ বৃক্ষ। অনেকে বাড়ির বাগানে লাগায়।
দারুচিনি-এর বর্ণনা:
মাঝারি ধরণের চিরহরিৎ বৃক্ষ, সকল অঙ্গই মসৃণ। পত্র চর্মবৎ, প্রতিমুখ বা প্রায় প্রতিমুখ, কদাচিৎ একান্তর, ডিম্বাকার, ডিম্বাকার-বল্লমাকার, অর্ধ-সূক্ষ্মাগ্র বা খাটো দীর্ঘা, উপরে পৃষ্ঠ উজ্জ্বল, নিম্নপৃষ্ঠ সামান্য ফ্যাকাশে, গোড়া সূক্ষ্মাগ্র বা গোলাকার, ৩ অথবা ৫-শিরা বিশিষ্ট, মধ্যভাগে সূক্ষ্ম জালিকাকারে শিরাবিন্যস্ত, পত্রবৃন্ত ১.৩-২.৫ সেমি লম্বা, উপরিভাগে চ্যাপ্টা।
আরো পড়ুন: দারুচিনি বা দারচিনি খাওয়ার নানা ভেষজ উপকারিতা
পুষ্পমঞ্জরী শিথীল প্যানিকেল, শীর্ষীয়, অনেক পুষ্পবিশিষ্ট, রেশমি রোমশ, সাধারণতঃ পত্র অপেক্ষা দীর্ঘতর, মঞ্জরীদও লম্বা, প্রায়শই গুচ্ছাকার, পুষ্পবৃন্তিকা দৈর্ঘ্যে পুষ্পের সমান। পুষ্পপুট ৫ থেকে ৬ মিমি লম্বা, নল ২.৫ মিমি লম্বা, খণ্ড উভয় পার্শ্বে রোমশ, আয়তাকার বা বিডিম্বাকার, সচরাচর স্থূলা, কর্তিতভাবে ৬-খণ্ডিত।
ফল ১.৩ থেকে ১.৭ সেমি লম্বা, আয়তাকার বা ডিম্বাকার-আয়তাকার, সূক্ষ্মভাবে আংশিক বক্র ও নমনীয়, শুষ্ক বা সামান্য রসালো, গাঢ় রক্তবেগুনি, বর্ধিত, ঘন্টাকার পুষ্পপুট দ্বারা আবৃত, প্রায় প্রস্থে ৮ মিমি। ফুল ও ফল ধারণ সময় জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ২৪ (Kumar and Subramaniam, 1986)
দারুচিনি-এর বিস্তৃতি:
ভারত, মালয় পেনিনসুলা, মায়ানমার ও শ্রীলঙ্কা। মালয় দীপপুঞ্জ ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে চাষ করা হয়। এই গাছের বংশ বিস্তার হয় বীজ ও কলমের মাধ্যমে। বাংলাদেশে ইহা পার্বত্য জেলাগুলোতে আবাদ করা হয় এবং অন্যত্র বাগানে লাগানো হয়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
বাকল থেকে বাণিজ্যিক দারুচিনি উৎপন্ন হয়, মূলের বাকল কপূর উৎপন্ন করে। গাছের কাষ্ঠ থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ উদ্বায়ী তৈল উৎপন্ন হয়। পাতা থেকে পাতন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাদামি বর্ণের আঠালো জাতীয় উদ্বায়ী তৈল তৈরী হয় যার গন্ধ লবঙ্গ-সদৃশ এবং লবঙ্গ তৈল নামে বিক্রয় করা হয় (Watt, 1889)। বাকল সুগন্ধিময়, সংকোচক, উদ্দীপক বায়ুনাশক এবং বমি বন্ধকরণে উপকারী (Chopra et al., 1956)। ইহা পেট ফাপা, অন্ত্র সংক্রান্ত সমস্যা, ডায়রিয়া ও মাসিকের সময় অত্যধিক স্রাবের ফলে সৃষ্ট যন্ত্রণায় উপকারী এবং ইহা উদ্দীপক হিসেবে অধিক মাত্রায় জ্বরে অন্যান্য ঔষধের সাথে খেতে দেয়া হয় (Watt, 1889)।
দারুচিনি-এর জাতিতাত্বিক ব্যবহার:
দারুচিনির চূর্ণ ২০টি দানার ডোজ হিসেবে আমাশয়ের জন্য উত্তম ঔষধ। বাকল চূর্ণ করে পানির সাথে মিশিয়ে প্রস্তুতকৃত ক্বাথ তীব্র মাথা ব্যথা ও স্নায়ুর ব্যথায় কপালের এক পার্শ্বে লাগানো হয় (Watt, 1999)।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৮ষ্ঠ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) দারুচিনি প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে দারুচিনি সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই তবে যবের ব্যাপক চাষাবাদ প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র:
১. এম কে মিয়া (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ৩৪৬-৩৪৭। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Lviatour
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।