স্বর্ণ ঝিন্টি বা কান্তা-জান্তি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশের ভেষজ গুল্ম গুল্ম by Dolon Prova - February 2, 2021April 3, 20210 LikeShareTweetPinLinkedIn গুল্মস্বর্ণ ঝিন্টিবৈজ্ঞানিক নাম: Barleria prionitis L., Sp. Pl.: 636 (1753). সমনাম: Barleria flava Jacq. (1781). ইংরেজি নাম: Porcupine flower. স্থানীয় নাম: স্বর্ণ ঝিন্টি, কান্তা-জান্তি, কাটসেরিয়া, কুরেণটেক। ভূমিকা: স্বর্ণ ঝিন্টি বাড়ির বাগানের সৌন্দর্যের জন্য যেমন লাগানো হয় তেমনি সীমানা নির্ধারনের জন্যও লাগাতে দেখা যায়। এছাড়া এই গুল্মে নানা ভেষজ গুণাগুণ আছে। স্বর্ণ ঝিন্টি-এর বর্ণনা: অনেক শাখাবিশিষ্ট গুল্ম, কাক্ষিক কণ্টকবিশিষ্ট, কণ্টক ধূসর-সাদা, ২-৪ শাখাবিশিষ্ট, কচি কাণ্ড গুলি রোমশ, পরবর্তীতে রোমশবিহীন হয়ে যায়। পাতা ৯ X ৩ সেমি পর্যন্ত হয়, উপবৃত্তাকার বা উপবৃত্ত-বল্লমাকার, বিরল ক্ষেত্রে অঙ্কীয় পৃষ্ঠ রোমশ, উপরের পৃষ্ঠ কর্কশ-সূক্ষ্ম রেখাবিশিষ্ট, ক্রমান্বয়ে সরু, অখন্ড, সিলিয়াযুক্ত, কুচযুক্ত দীর্ঘাগ্র। পুষ্প প্রান্তীয়ভাবে স্পাইকেট, সোনালী-হলুদাভ বর্ণের, মঞ্জরীপত্র ১-২ সেমি লম্বা, পত্রাকৃতি, সরুভাবে দীর্ঘায়ত-বল্লমাকার, শীর্ষ কণ্টকিত, মঞ্জরীপত্রিকা রৈখিক তুরপুন আকার, ০.৮-২.০ সেমি লম্বা, কণ্টকী। বৃতি খন্ড শীর্ষ কণ্টকিত। পাপড়ি ২.০-২.৫ সেমি লম্বা, সোনালী হলুদাভ। পুংকেশর ৪টি, দললগ্ন, উর্বর পুংকেশর ২টি, বহির্মুখী, ১.৩ সেমি লম্বা, পরাগধানী ২-৫ মিমি লম্বা, দীর্ঘায়ত, বন্ধ্যা পুংকেশর ২টি, পুংদন্ড খুব খাটো, নিম্নাংশে রোমশ। গর্ভাশয় প্রায় ৪ মিমি লম্বা, ২-ডিম্বকবাহী, গর্ভদণ্ড ৪.৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা, মসৃণ। ফল ক্যাপসিউল, ০.৮-১.৫ X১-২ সেমি, ২-বীজবিশিষ্ট, চক্ষুবিশিষ্ট। ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ৩০, ৩২, ৪০ (Kumar and Subramaniam, 1986). চাষাবাদ ও বংশ বিস্তার: গ্রামের চারপার্শ্বে এবং গুল্ম উদ্যানে, কখনও কখনও মাঠ, বাগান ইত্যাদির সীমানা নির্দেশক বেড়া হিসেবে লাগানো হয়। ফুল ও ফল ধারণ নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি। কাটিং এর মাধ্যমে সহজেই বংশ বিস্তার করা যায়। তাছাড়া বীজের মাধ্যমেও বংশ বিস্তার হয়। বিস্তৃতি: ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এশিয়া এবং আফ্রিকা। বাংলাদেশে ইহা সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং ঢাকা জেলায় পাওয়া যায়। অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: উদ্ভিদের মূল পেষ্ট করে ফোড়া এবং গ্রন্থি ফোলা রোগের প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়, দাঁত ব্যথায় পাতা চিবালে উপশম হয় এবং শুকনা বাকল কাশি এবং জণ্ডিসে ব্যবহার করা হয়। আরো পড়ুন: সাদা রঙ্গন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ার আলংকারিক গুল্মতাছাড়া এই উদ্ভিদের পাতা শিশুদের সর্দি রোগ সারাতে ব্যবহৃত হয় (Naskar, 1993)। এই উদ্ভিদ বাগানের শোভা বর্ধক হিসাবেও লাগানো হয়। জাতিতাত্বিক ব্যবহার: শোথ রোগ নিরাময়ের জন্য ভারতের মুণ্ডা উপজাতীয়রা সমস্ত উদ্ভিদের ক্বাথ দিয়ে শরীর ধৌত করে। শুকনা বাকল হুপিং কাশির জন্য দেয়া হয়। অতিরিক্ত গরম এবং ঠান্ডায়, শক্ত মাটিতে হাটার জন্য পা কে শক্তিশালী করা। এছাড়া পায়ের ঘা নির্মূলের জন্য গুজরাটের (ভারত) আদিবাসীরা পাতার নির্যাস ব্যবহার করে। মাড়ির অসুখ, দাঁত ব্যথা, কাশি এবং যক্ষ্মা রোগের জন্য রাজস্থানের (ভারত) আদিবাসীরা এই গাছের ক্বাথ ব্যবহার করে। অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৬ষ্ঠখণ্ডে (আগস্ট ২০১০) স্বর্ণ ঝিন্টি প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে স্বর্ণ ঝিন্টি সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই। তথ্যসূত্র: ১. মমতাজ বেগম (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৬ষ্ঠ, পৃষ্ঠা ১২-১৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0 বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke LikeShareTweetPinLinkedIn