লেবু-এর ২২টি উপকারিতা ও প্রয়োগ

লেবু (Lemon) একটি পরিচিত ও জনপ্রিয় ফল। ভাতের সাথে, সালাদ, শরবত, আচার ইত্যাদি হিসাবে খাওয়া যায়। রুচি বাড়াতে, সর্দি-কাশি, কণ্ঠের সমস্যায়, ত্বকের যত্ন নিতে এটা বেশ কার্যকর।

ঔষধি ব্যবহার

১. অরুচি, অগ্নিমান্দ্য ও পেটফাঁপায়: নানা কারণে খাদ্যে অরুচি আসতে পারে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, কোন না কোন কারণে হজম ক্ষমতা কমে গেলে তখন সবেতেই অরুচি, জোর করে কিছু খেলেই পেট ফেঁপে যায়। আবার গর্ভাবস্থায় অরুচি প্রভৃতিকে ঠিক রোগের পর্যায়ে না ফেললেও উপদ্রবের চিকিৎসা তো করতেই হবে। এসব ক্ষেত্রে প্রত্যহ সকালে খালি পেটে কাপ দুই ঠাণ্ডা কিংবা গরম জলে একটা পাতি লেবু কিংবা কাগজীর রস নিংড়ে সেটি খেয়ে নিতে হবে। অবশ্য ওতে সামান্য একটু লবণ প্রয়োজনে মেশানো যেতে পারে। প্রথম প্রথম একটা নেবুর রস খেতে অসুবিধা হলে সকালের দিকে আধখানা ও সন্ধ্যার দিকে আধখানার রস প্রত্যেক বারে কাপখানিক ঠাণ্ডা কিংবা হালকা গরম জলে মিশিয়ে সপ্তাহখানিক খাওয়ার পর একটা ক’রে খাওয়া আরম্ভ করতে হবে।

গর্ভাবস্থায় কেবল অরুচি দেখা দিলে কাগজী, পাতি কিংবা গোঁড়া নেবুর আচার অল্প মাত্রায় খেতে পারেন দু’বেলা ভাতের সঙ্গে। আর সমস্ত অসুবিধা দেখা দিলে জলের সঙ্গে নেবুর রস খাবেন ঠিকই, তবে প্রত্যহ সকালে আধখানা নেবুর রস এক কাপ জলে মিশিয়ে, একবারই। সহ্য হলে, খুব দাস্ত না হলে মাত্রা বাড়ানো যাবে। স্বাভাবিকতা ফিরে এলে মাঝে মাঝে খেলেই চলবে।

২. কোষ্ঠবদ্ধতায়: এটি সাময়িক কিংবা দীর্ঘদিনের যেমনই হোক না কেনো, তেমনি কোন না কোন রোগের জন্যও আসাটা স্বাভাবিক। এসব ক্ষেত্রে সব সময় মনে রাখা দরকার যে, কোষ্ঠবদ্ধতাটা কিভাবে এসেছে তা জেনে নেবুর রসের মাত্রা ঠিক করতে হবে।

সাময়িকভাবে দু’চার দিন দেখা দিলে বা দীর্ঘ রোগভোগের পর শারীরিক দুর্বল অবস্থায় কিংবা গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠবদ্ধতা হলে প্রত্যহ সকালে খালি পেটে এক গ্লাস (আন্দাজ ২ কাপ হালকা গরম জলে) একটা পাতি বা কাগজী নেবুর রস নিংড়ে পর পর সপ্তাহখানিক খেলেই স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে।

দীর্ঘদিনের কোষ্ঠবদ্ধতা হলে কিংবা অর্শ রোগীর বেলায় দেখা দিলে প্রত্যহ সকালে একসঙ্গে দু’টি পাতি লেবু-র রস উপরিউক্ত পদ্ধতিতে বেশ কিছুদিন ব্যবহার করার পর (আন্দাজ মাসখানিক) আরও মাস দুই একটা করে নেবুর রস খেলে উপকার পাবেন । তবে এক্ষেত্রে এই যোগটি একেবারে বন্ধ না করে মাঝে মাঝে খেলে চলবে ।

৩. সন্ধিবাতে: এটা মূলত গেঁটে বাত। এক্ষেত্রে প্রথম থেকে খাওয়া শুরু করলে যন্ত্রণার উপশম সত্বর হতে থাকবে। উপর্যুপরি যে যন্ত্রণা তা আর থাকবে না। ইউরিক এসিডের আধিক্যবশতঃ যে যন্ত্রণা হতে থাকে, তা কিছুদিনের মধ্যে প্রায় একেবারে চলে যায়। অন্যান্য কারণজাত সন্ধিবাতে বিধিবদ্ধ চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে নেবুর রসও খাবেন। প্রতিদিন একটা করে পাতি বা কাগজীর রস উপরিউক্ত পদ্ধতিতে সকালের দিকে একবারই খেলে চলবে, তবে প্রয়োজনে দু’বার।

৪. ক্রিমিতে: গোল সূতা কিংবা ফিতা ক্রিমি অথবা অদৃশ্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অস্ত্রজ দুষ্ট ক্রিমি যারই প্রাদুর্ভাব হোক না কেন, লেবুর রস এর অমোঘ ঔষধ। ৪ থেকে ৫ বছরের বাচ্চা হলে আধখানা, কিশোর হলে একখানা আর পরিণত বয়সে দুটো মাঝারি ধরনের পাতি বা কাগজী নেবুর রস প্রত্যহ সকালে খালি পেটে কাপ দুই হালকা গরম জলের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। গোল বা সূতা ক্রিমি হলে ৮। ১০ দিন এবং অন্য ক্রিমির বেলায় মাসখানিক নেবুর রস ব্যবহার করতে হয়। অম্ল হতে থাকলে মাত্রা আরও কমবে নতুবা ব্যবহার বন্ধ করা উচিত। এছাড়াও পাতি বা কাগজী নেবুর রস ছাড়াও গোঁড়া নেবু বা বেগপুরার রসও এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন। তখন পরিমাণ হবে ১-২ চা-চামচ থেকে ৪-৬ চা-চামচ রস। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অল্প মাত্রায় আরম্ভ করে ক্রমশঃ বাড়াতে হবে।

আরো পড়ুন:  ঝিঙ্গা বা ঝিংগা-র লতা, মূল, ফলের নানা ভেষজ গুণ

৫. রক্তাল্পতায়: অবশ্য এটা যদি বিশেষ কোনো রোগের জন্য না হয়ে থাকে, তাহলে জামীর বা গোঁড়া লেবুর রস ৪ চা-চামচ মাত্রায় দিনে ২ বার ক’রে কিছুদিন খেতে হবে। থ্যালাসিমিয়া রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে উল্লেখযোগ্য ফলের আশা করা সম্ভব নয়, কিন্তু অন্যান্য উপকার দেখা দেবে।

৬. হঠাৎ ঠাণ্ডা লাগা: যদি হঠাৎ সর্দি হয়, নাক দিয়ে জল ঝরছে, কিছুই ভাল লাগছে না, একটা ম্যাজম্যাজে ভাব সারা শরীর জুড়ে; এমতাবস্থায় কাপখানিক হালকা গরম জলে চা-চামচের ২ চামচ নেবুর রস (পাতি, কাগজী অথবা জামীর যেকোন একটির নাস) মিশিয়ে পান করুন। ঘণ্টাখানিক পরে আর একবার । এভাবে ২। ৩ বার খেলে অনেকটাই সামলে যাবে। এসময় নেবু দিয়ে চা প্রস্তুত করে খেলেও চলবে। আবার ঐ চায়ের সঙ্গে আধ থেকে এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে খেলে আরও ভাল । বার দুই খেতে হবে ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে, তাতেই উপশম আসবে ।

৭. শ্বাস-কাসে: হাঁপের টান, সেইসঙ্গে কাসি, এক-একসময় বড্ড বিপাকে ফেলে দেয়। অবশ্য শ্বাসরোগটা হৃদরোগজনিত হলে এ যোগটিতে কাজ দেবে না, তবে কাসি থাকলে তা কিন্তু কমবে। এক্ষেত্রে পাতি, কাগজী, জামীর, গোঁড়া প্রভৃতি যেকোন নেবু (পাকা কিংবা মাঝারি বয়সের) একটা নিয়ে মাঝ বরাবর কেটে কাটা অংশে ভালভাবে লবণ লাগিয়ে সেটিকে হালকা আগুনের উপর বসিয়ে গরম করতে হবে। নেবুটা গরম হলে লবণ নেবুর রসের সঙ্গে মিশে যাবে, তখন সেটা নামিয়ে সহ্যমত গরম রস ফোঁটা ফোঁটা ক’রে জিভে ছাড়তে হবে এবং তা ধীরে ধীরে খেতে করতে হবে। কিছুক্ষণের মধ্যে ওটাকে পুরো খাওয়া উচিত। এভাবে সারাদিনে ২। ৩ বার খাওয়া যেতে পারে।

৮. স্বরভঙ্গে: ঠাণ্ডা লেগে হঠাৎ সর্দি-কাসি হলে গলা বসে যেতে পারে, আবার অন্য কোন রোগের কারণেও হতে পারে, অন্যদিকে অধিক চিৎকার-চেঁচামেচি, যাত্রা-থিয়েটার বা অন্য কারণে রাত্রি জাগরণ, গানবাজনা প্রভৃতির জন্যও গলা বসে যায়। এসব ক্ষেত্রে উপরিউক্ত পদ্ধতিতে নেবু ও নুন গরম করে দিনে ২। ৩ বার খেলে এবং হালকা গরম জলে নেবুর রস ও নুন মিশিয়ে কমপক্ষে দিনে ২ বার গার্গল করলে ২। ৩ দিনের মধ্যেই উপকার পাবেন। তখন ব্যবহারের মাত্রা কমিয়ে ফেলতে পারেন। এক্ষেত্রেও পাতি, কাগজী, জামীর, গোঁড়া নেবু প্রভৃতি টক জাতীয় লেবুর যেকোন নেবু ব্যবহার করলে ক্ষতি নেই। যদি বিশেষ কোন রোগের জন্য হয়ে থাকে এবং কেবল এই যোগটি ব্যবহারে উপকার ঠিক ঠিক না হবার সম্ভাবনা থাকে, তখন সেই রোগের বিশেষ চিকিৎসা চলবে এবং সমস্যাটির উপশমের জন্য নেবুর ব্যবহার করবেন।

৯. পুরাতন জ্বরে: ম্যালেরিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রভৃতি জ্বর সেরে যাওয়ার পর অনেক ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে জ্বর আসে, সেটা যে খুব বেশি তা নয়, কিন্তু বহু প্রকারের ওষুধ খেয়েও কোন লাভ হয় না, বরং দুর্বলতা বাড়ে, ক্ষিধে কমে, মনমেজাজ হয়ে যায় খিটখিটে। সেই অবস্থায় সব ওষুধ বন্ধ করে প্রত্যহ সকালে ও বিকালে দু’বার নেবুর রস হালকা গরম অথবা ঠাণ্ডা জলে মিশিয়ে মাসখানিক খান। জল নিতে হবে আন্দাজ কাপ দুই, আর পাতি বা কাগজী নেবু একটা। অবশ্য প্রয়োজনে কিঞ্চিৎ লবণ ওর সঙ্গে মেশাতে পারেন। এসময় কমলা অথবা মৌসম্বীর রস প্রত্যহ কিছুটা করে খেলে ভাল উপকার পাবেন ।

আরো পড়ুন:  চালতা গাছ ও ফলের পাঁচটি ভেষজ গুণাগুণের বিবরণ

১০. যকৃতের ক্রিয়াহ্রাসে: একে যকৃৎ কাজ করতে চাইছে না, তার উপর উত্তেজক ওষুধ খাইয়ে চাবুক পিটিয়ে কাজ করিয়ে নিতে চাইলে সব সময় তা ফলপ্রসূ হয় না, বরং উল্টে কোথাও কোথাও খারাপ ফল দেখা দেয়। এক্ষেত্রে প্রথমের দিকে প্রত্যহ সকালে খালি পেটে কাপ দুই ঠাণ্ডা জলের সঙ্গে একটা পাতি কিংবা কাগজী নেবুর রস মিশিয়ে কিছুদিন খেতে পারেন। ৮। ১০ দিনের পর থেকে উপকার উপলব্ধি করতে পারবেন, তখন ওটি মাসখানিক লাগাতার ব্যবহার করার পর আরও ২। ৩ মাস মাঝে মাঝে খাবেন। এসময় সহজপাচ্য খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।

১১. অম্লপিত্তে: এই সমস্যায় অম্লনাশক ওষুধ মাঝে মাঝে খাওয়া আর কোন রকমে দিনযাপন করা অনেকেরই অভ্যেসে পরিণত হয়ে থাকে। বাড়াবাড়ি হলে তখনই ছুটোছুটি। উপশম পেতে চাইলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পাতি নেবুর রস ঠাণ্ডা জলে মিশিয়ে কিছুদিন খান। প্রয়োজনে দিনে ২ বার। এসময় মিষ্টি জাতীয় ও বেশি তেল-ঘি যুক্ত খাদ্য একেবারেই খাওয়া যাবে না। তবে তা বলে শুধু সিদ্ধ খাবেন না, তাতে অরুচি আসতে পারে এবং কাঁচা পেঁপে খুব বেশি খাবেন।

১২. পুরাতন অতিসার ও প্রবাহিকায়: বেশ কিছুদিন যাবৎ সারা দিনে ২। ৩ বার পাতলা দাস্ত হচ্ছে, মাঝে মধ্যে পেটব্যথা ও পেট ফাঁপা, খাদ্যে অরুচি; কারো কারো আবার আমাশা দেখা দেয়, এসব অবস্থায় ঠাণ্ডা জলে পাতি নেবুর রস পূর্বলিখিত পদ্ধতিতে কিছুদিন সকালে ও বিকালে খেতে পারলে উপকার পেতে পারেন। ওতে সামান্য লবণ মিশিয়ে নিতে হবে।

১৩. কামলা রোগে: যাকে আমরা খুব সহজভাবে জণ্ডিস হিসেবেই চিনি। এসময় সকালে ও সন্ধ্যায় দু’বার ঠাণ্ডা জলে পাতি বা কাগজী নেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া উপকার। প্রত্যহ সকালে ও বিকালের জলখাবারের মধ্যে বাতাবি নেবু খানিকটা ক’রে খেতে হবে । এছাড়া মৌসম্বী ও কমলা নেবু অল্প-বিস্তর খেতে পারলে আরও ভাল। এক্ষেত্রে নেবুর জলের সঙ্গে চিনি বা গ্লুকোজ মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। ওর সঙ্গে না মেশালে পৃথকভাবে সরবত যথেষ্ট পরিমাণে খাওয়া উচিত। মাস দেড়েক পূর্ণ বিশ্রাম ও সহজপাচ্য আহার গ্রহণ একান্তই প্রয়োজন।

১৪. অধিক রক্তস্রাবে: এক্ষেত্রে মাসিকের স্রাব কিংবা প্রসবের পর প্রসবাত্তিক স্রাব যেটিই বেশি হোক না কেন, নিয়মিতভাবে কিছুদিন সকালে ও বিকালে পাতি বা কাগজী লেবু-র রস জলের সঙ্গে মিশিয়ে পূর্ববর্ণিত উপায়ে খেলে উপকার পাবেন। মাসিক ঋতুচক্রের গোলমালের ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ রোগের আশঙ্কা থাকলে সেক্ষেত্রে কিন্তু কাজ হবে না।

১৫. রক্তার্শে: রক্ত পড়ছে, দাস্ত পরিষ্কার হচ্ছে না, এমতাবস্থায় পাতি বা কাগজী লেবু-র রস সকালে ও বিকালে কিংবা একবার করে কিছুদিন খেলে দাস্ত পরিষ্কার হবে, রক্তশ্রুতি থাকবে না। তবে অর্শের বলি বেশ বড় হলে তখন অস্ত্রোপচার করা ছাড়া পথ থাকে না ।

১৬. অপুষ্টিতে: যে বয়সেই অপুষ্টি হোক না কেন, এক্ষেত্রে পাকা বাতাবি, কমলা অথবা মৌসম্বী লেবুর রস প্রত্যহ কিছুটা করে খেতে পারলে এটা চলে যায়।

১৭. রোগান্তিক বা প্রসবান্তিক দুর্বলতায়: উপরিউক্ত পদ্ধতিতে বাতাবি, কমলা বা মৌসম্বী কিছুদিন খেতে হবে এবং প্রত্যহ সকালে ঠাণ্ডা জলে পাতি লেবু-র রস মিশিয়ে একবার করে খেতে হবে। মাসখানিকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপকার পাবেন।

১৮. ক্লান্তিতে: অত্যধিক দৌড়-ঝাঁপের ফলে, রোদ থেকে এলে, পরিশ্রম করলে, উত্তেজিত হলে যেকোন মুহূর্তে ক্লান্তি আসতে পারে। সেইসময় পাতি, কাগজী, গোঁড়া অথবা জামীর যেকোন নেবুর রস দিয়ে চিনি ও সামান্য লবণ সহযোগে সরবত বানিয়ে খেতে দিন। এক কিংবা দুই গ্লাস খেলেই কিছুক্ষণের মধ্যে ক্লান্তি চলে গিয়ে শরীরে বলের সঞ্চার হবে ।

আরো পড়ুন:  চীনা মনোরম চাঁপা দক্ষিণ এশিয়ার ভেষজ গুল্ম

১৯. মেদবৃদ্ধিতে: প্রথমের দিকে চেষ্টা করলে ফল ভাল পাওয়া যায়। দেরি হলে সামলানো যায় না। এক্ষেত্রে যেকোন টক নেবুর রস সিকি কাপ মাত্রায় দিনে ২ বার করে দীর্ঘদিন খেতে হবে। কিন্তু প্রথম থেকে এতটা মাত্রায় ব্যবহার করা সম্ভব নয়, ভাই অল্প মাত্রায় আরম্ভ করা উচিত। এ সময় মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য, তেল ঘি জাতীয় খাদ্য এবং অধিক আহার, সেইসঙ্গে দিবানিদ্রা ত্যাগ করা উচিত।

১৯. খুসকিতে: হালকা গরম জলে যেকোন টক নেবুর রস, বিশেষতঃ জামীর বা গোঁড়া লেবু-র রস মিশিয়ে (যতটা রস তার চারগুণ জল) সেটিকে স্নানের পর চুল শুকিয়ে গেলে ধীরে ধীরে চুলের গোড়ায় একদিন ছাড়া একদিন এভাবে ৩। ৪ দিন লাগাতে হবে। তারপর ভালভাবে সাবান বা শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নিলে মাথা পরিষ্কার হয়ে যাবে । তবে যখন-তখন তেল জাবড়ে ব্যবহার করলে খুসকি নষ্ট হবে না ।

২০. দাদে: প্রথম থেকেই জামীর, গোঁড়া, পাতি বা কাগজী লেবু-র টুকরো নিয়ে প্রত্যহ ২ । ৩ বার করে ঘষতে থাকুন। ১৫। ২০ দিনেই উপকার পাওয়া যাবে।

২১. মুখের দাগে, মেচেতায় বা ছুলিতে: উপরিউক্ত পদ্ধতিতে নেবুর টুকরো কাজ হয়ে থাকে। ব্যথিতস্থানে ঘষে ঘষে প্রত্যহ ২ বার করে বেশ কিছুদিন লাগাতে হবে।

২২. মুখলাবণ্যে: সামান্য পাতি বা কাগজী নেবুর রসে ৪। ৬ ফোঁটা ও ১০। ১৫ ফোঁটা গোলাপ জল মিশিয়ে রাত্রে শোয়ার সময় হালকা করে মুখটা মুছে নিন এবং পরদিন সকালে ঠাণ্ডা জলে ভালভাবে মুখ ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে লাবণ্য বৃদ্ধি হয় ।

লেবু-র আচার:

নেবুর আচার তৈরী করা খুবই সহজ। পাতি, কাগজী, গোঁড়া—যেকোন নেবু পরিষ্কার জলে ধুয়ে গোটা কিংবা আধখানা ক’রে কেটে একটা কাচের জারে রাখতে হবে। অবশ্য কিছু কাটা ও কিছু গোটা নেবুও নিতে পারেন । তারপর পরিমাণমত লবণ দিয়ে জারের মুখটা ভালভাবে বন্ধ করে দিনের বেলায় রোদে বসিয়ে রাখবেন এবং রাত্রে ঘরের ভেতর রেখে দেবেন। এভাবে ১৫। ২০ দিন করলে নেবুগুলি গাঢ় বাদামী রঙের বর্ণ ধারণ করবে এবং খুবই নরম হয়ে যাবে। তখন রোদে না বসালেও চলবে। একজনের জন্য একটা নেবুর অংশ হলে যথেষ্ট, তবে গোঁড়া নেবু খুব বড় হলে তখন , বা অংশ নিলে চলবে ; এর চেয়ে অধিক মাত্রায় একেবারে না খাওয়া উচিত । আচারের চেয়ে নেবুর রস খাওয়াই ভাল। তবে যেক্ষেত্রে কেবলই অরুচি, সেখানে খেলে ক্ষতি নেই।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্র:

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ১৫৮-১৬২।

Leave a Comment

error: Content is protected !!