হঠাৎ করে খাবারে অরুচি দেখা দিলে সেটাকে কখনই অবহেলা করা উচিত নয়। কারণ এই অরুচি থেকেই মানুষের দেহে কোনো না কোনো জটিল রোগ বাসা বাঁধতে পারে। খাবারে অরুচি এলে শরীরের স্বাভাবিক আচরণে পরিবর্তন দেখা যায়। তাই মনোযোগ দিতে হবে শরীরের দিকে জন্ডিস হয়েছে কিনা, পাকস্থলীর বা অন্ত্রের কোনো সমস্যায় বা অম্লতা বেড়েছে কি না। এই অরুচি যদি সাময়িক হয় বা এর ফলে শরীরের বিশেষ কোনো পরিবর্তন দেখা না দেয় তাহলে কিছু ভেষজ উপায়ে অল্প কিছু দিনের মধ্যে এ-থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
অরুচি সারেতে ডালের ব্যবহার:
১. খেসারির ডাল: অনেক কারণেই অরুচি হয়, এটা যদি পিত্তরে প্রাবল্যে হয়ে থাকে তা হলে ৩ থেকে ৪ গ্রাম খেসারি গরমজলে ভিজিয়ে খেলে ঐ অরুচিটা সেরে যাবে, অনেক সময় এর সঙ্গে ক্রিমির উপদ্রবও দেখা যায়, এটাতে সেটাও চলে যায়।
২. অড়হরের ডাল: অরুচি যতই পুরানো হোক না কেন, অড়হরের ডালের জুস অল্প আদা মরিচ বাটা দিয়ে সাঁতলে তার সঙ্গে পরিমাণ মতো লবণ মিশিয়ে বারে বারে একটু একটু করে খেতে হবে। জুস এক বা দেড় কাপ সমস্ত দিনে খেতে হবে। তবে ৫০ গ্রাম আন্দাজ ডালের জুস করতে হবে।
অরুচি সারাতে ফল, সবজি, ভেষজ উদ্ভিদের ব্যবহার:
৩. আদা: অরুচিতে সিকি কাপ জলে ২ চা চামচ আন্দাজ আদার রস ও সামান্য লবণ মিশিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট মুখে পুরে রাখতে হবে, তারপর ফেলে দিতে হয়; এতে খাওয়ার রুচি ফিরে আসে। আর লবণ না দিয়ে ঐ জল মুখে রাখলে সান্নিপাতিক দোষজনিত দাঁতের মাড়ি ফোলা আরাম হয়।
৪. ডালিমের রস: অরুচি হলে অল্প ডালিম ফলের রস, বিট লবণ ও মধু একত্রে মিশিয়ে কুলিকুচা করে ফেলে দিলে অরুচি কমে যায়। এটি চক্তদত্তের অভিমত।
৫. নিমপাতা: অরুচির সমস্যা যদি কিছুতেই কমানো না যায়, সেক্ষেত্রে সুজির হালুয়ার সঙ্গে নিমপাতা চূর্ণ ২৫o থেকে ৩০০ মিলিগ্রাম মিশিয়ে খেলে কয়েক দিনের মধ্যেই ওটা উপশম হয়।
৬. নিসিন্দা পাতা: নালতে পাতার মতো নিসিন্দা পাতার সুপ্ত ঘিয়ে ভেজে খেলে পুরোনো অরুচির সমস্যা সারে। তবে একটি বোঁটায় ৩ থেকে ৪টি পাতা থাকে, সেই রকম একটি বা দুটি পাতা হলেই হবে। নিসিন্দার ফুলও একি ভাবে খেলে অরুচি সারে।
৭. আমড়া গাছের ছাল: যমের অরুচি বলে একটা কথা আছে; এ কথার অর্থ কিন্তু যমেরও ভক্ষ্য নয়; মানুষের ক্ষেত্রে কিন্তু ঠিক তারই উল্টো। যে কোনো স্বাদের জিনিসই হোক না কেন, সে কোনোটাই খেতে চায় না, অথচ ক্ষিধেয় পেট জ্বলে যায়। এক্ষেত্রে আমড়া গাছের মাঝের অংশের ছালের রস ১ চা চামচ আধা কাপ জলে মিশিয়ে এক টিপ লবণ ও মিষ্টি দিয়ে সরবতের মতো করে খেলে ঐ অরুচিটা সেরে যাবে।
৮. কাকমাচীর পাতা: স্বাদু কাকমাচীর পাতা অল্প সিদ্ধ করে, জল ফেলে দিয়ে সেই শাক ঘি দিয়ে সাঁতলে শাকের মতো করে ভাতের সঙ্গে খেলে রুচি ফিরে আসবে।
৯. কাঁকুড়: কয়েকদিন থেকে কিছুই মুখে রুচছে না, বমি আসে, মুখ দিয়ে তিতো বা তিক্ত জল বেরোয়; এক্ষেত্রে বুঝতে হবে, তাঁর রসবহ স্রোত বিকারগ্রস্ত। তাই সেক্ষেত্রে কচি কাঁকুড়ের রস ৩ থেকে ৪ চা চামচ একটু মিছরি মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে একবার খেতে হবে। এর দ্বারা ঐ অসুবিধাটা চলে যাবে।
১০. কাসুন্দের পাতা: যদি অরুচির ক্ষেত্রে থাকে পিত্ত শ্লেষ্মার দোষ, তাহলে প্রধান লক্ষণ থাকবে জিভটা ফাটা ফাটা এবং জিভের ধারটা লাল; কিছু খেলেই জ্বালা করে আর মুখে কিছুতেই যেন রুচি হয় না; এক্ষেত্রে কালো বা সাদা কাসুন্দের পাতা অল্প লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে তবে জল ফেলার দরকার নেই; তা ঘিয়ে সাঁতলে ৮ থেকে ১০ গ্রাম আন্দাজ শাকের মতো ভাতের সঙ্গে খেলে ২ থেকে ৩ দিনেই অরুচিটা সেরে যাবে; কিন্তু বেশি খেলে পেটে বায়ু হওয়ার ভয় থাকে, সুতরাং অল্প খাওয়াই ভালো।
১১. গুলঞ্চের পাতা: যাঁদের মুখে কিছু ভাল লাগে না, খেতে ইচ্ছে হয় না, তাঁরা গুলঞ্চের পাতা ভেজে খেয়ে দেখুন, তাহলে অরুচি চলে যাবে।
১২. তেলাকুচোর পাতা: যদি শ্লেষ্মাবিকারে আসে অর্থাৎ সর্দিতে মুখে অরুচি হলে তেলাকুচোর পাতা একটু সিদ্ধ করে, জলটা ফেলে দিয়ে শাকের মত রান্না করে খেলে অরুচি সেরে যাবে। অবশ্য ঘি দিয়ে সাঁতলে রান্না করে খেতে হবে।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্র:
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১ ও ২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা।
বি. দ্র. ছবি নেওয়া হয়েছে উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে SumanGNepal
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।