আফ্রিকা উত্তর-দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত আকারে ও জনসংখ্যায় পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ

আফ্রিকা (ইংরেজি: Africa) উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত আকারে ও জনসংখ্যায় পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ। আফ্রিকা মহাদেশ আয়তনে ইউরােপের তিন গুণ, কিন্তু এর জনসংখ্যা ইউরােপের চেয়ে প্রায় দেড় গুণ কম। স্মরণ করা যেতে পারে যে, আফ্রিকা ঔপনিবেশিকতার জোয়ালে বাঁধা পড়ার আগে এর জনসংখ্যা ইউরােপের চেয়ে বেশি ছিলো।

১৬শ শতকের গােড়ার দিকে আফ্রিকায় উপনিবেশবাদীদের হামলা শুরু হয়। হামলাকারীরা মহাদেশকে, মার্কসের ভাষায়, ব্যবসার জন্য ‘কৃষ্ণাঙ্গ শিকারের এক সংরক্ষিত অরণ্যে পরিণত করে’। দাসব্যবসায়ীদের হাতে নির্যাতিত ১০ কোটি আফ্রিকীয়দের মধ্যে ২ কোটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠান হয়। দাসব্যবসা, ঔপনিবেশিক যুদ্ধ এবং এই মহাদেশকে পদানত করার অনুষঙ্গ হিসাবে কয়েক শতক ধরে আফ্রিকায় গণহত্যা অব্যাহত থাকে। ফলত, আফ্রিকার জনসংখ্যা মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। আফ্রিকীয়দের অমানুষিক শােষণ এবং মহাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের নগ্ন লণ্ঠন থেকে দখলকারীরা অপরিমিত মুনাফা অর্জন করত।

কিছুকাল আগেও আফ্রিকা ছিল ঔপনিবেশিকদের পুঁজি সঞ্চয়ের একটি প্রধান উৎস, একটি নির্ভরযোগ্য অর্থনৈতিক পশ্চাদ ভূমি, একটি কৌশলগত স্থায়ী দুর্গ এবং রাজনৈতিকভাবে একটি ‘সুপ্ত মহাদেশ’। সােভিয়েত ইউনিয়নের সীমান্ত অতিক্রমকারী সমাজতন্ত্রের বিজয়ী অগ্রগতি আফ্রিকীয় জাতিগুলিকে সচেতন করে তুলেছে এবং তাদের মুক্তিযুগের সূচনা ঘটিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আফ্রিকার সকল দেশেই জাতীয় মুক্তি আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে এবং সেখানকার ঔপনিবেশিকতা ও সাম্রাজ্যবাদের অবস্থানকে টলায়মান করে তুলেছে। ফলত, আফ্রিকার রাজনৈতিক মানচিত্রের আমূল পরিবর্তন ঘটেছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে আফ্রিকার রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে মিশর, ইথিওপিয়া ও লাইবিরিয়ার নামই উল্লিখিত হত। অবশ্য কার্যত এগুলি ছিলো নামিক স্বাধীন রাষ্ট্র। বর্তমানে আফ্রিকায় জাতীয় রাষ্ট্রের সংখ্যা অর্ধ শতাধিক। এগুলি মহাদেশের ৯০ ভাগের বেশি ভূখণ্ড ও জনসংখ্যার অধিকারী। 

সদ্যস্বাধীন আফ্রিকীয় রাষ্ট্রগুলির সামনে একটি জাতীয় অর্থনীতি গঠন ও সাংস্কৃতিক মানােন্নয়নের কঠিন কর্মকাণ্ড সমুপস্থিত। এসব দেশের অনুন্নত শিল্প, স্থানীয় বাসিন্দাদের আদিম চাষাবাদ, দারিদ্র্য, প্রায় সার্বিক নিরক্ষরতা ও দেশে প্রশিক্ষিত কর্মীর অনুপস্থিতি তাদের জাতীয় উন্নয়নের পথে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। কিন্তু আফ্রিকীয় জনগণ আজ উন্নত ভবিষ্যতের জন্য সংগ্রামে অটল।

আরো পড়ুন:  বাংলাদেশের বন্যপ্রাণ বা জীববৈচিত্র্য এবং প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত জটিলতা

তথ্যসূত্র:

১. কনস্তানতিন স্পিদচেঙ্কো, অনুবাদ: দ্বিজেন শর্মা: বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভূগোল, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, বাংলা অনুবাদ ১৯৮২, পৃ: ২১-২২।

Leave a Comment

error: Content is protected !!