ভূমিকা: মাল্টা (বৈজ্ঞানিক নাম: Antidesma acidum) হচ্ছে এশিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশের ভেষজ উদ্ভিদ। এর পাতা, মূলে নানা ভেষজ গুণ আছে। ভারতের আদিবাসীরা ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করে।
মাল্টা-এর বর্ণনা:
বৃহৎ পর্ণমোচী গুল্ম বা ছোট বৃক্ষ, শাখা বিস্তৃত এবং তরুণ শাখা মরচে রোমশ। পত্র ৪-৮ সেমি লম্বা, ঝরে পড়ার পূর্বে গাঢ় লাল বর্ণে পরিণত, আকার আকৃতি পরিবর্তনশীল, দীর্ঘায়ত থেকে ভল্লাকার, সূক্ষ্মাগ্র বা দীর্ঘা, মূলীয় অংশ কীলকাকার, অখন্ড;
উপরের পৃষ্ঠ রোমশ বিহীন, চকচকে, নিচের পৃষ্ঠ মরচে রোমশ, পার্শ্বীয় শিরা প্রতিপার্শ্বে ৫-৮টি, বৃন্ত খাটো, রোমশ, উপপত্র রৈখিক ভল্লাকার, ৪-৫ মিমি লম্বা, সূক্ষ্মাগ্র, রোমশ। পুষ্প ভিন্নবাসী, সবৃন্তক, শীর্ষীয় ও পার্শ্বীয় রেসিম মঞ্জরীতে বিন্যস্ত।
পুংপুষ্প: বৃন্ত ১.০-১.৫ মিমি লম্বা, সরু, বৃতি খন্ড ৪টি, প্রশস্ত ডিম্বাকার, ০.৫ মিমি লম্বা, সূক্ষ্মাগ্র, বাহির রোমশ বিহীন, ভিতর অতিরোমশ, চাকতি ২-৩টি গ্রন্থিযুক্ত, পুংকেশর ২৩টি, পুংদন্ড ২ মিমি লম্বা, পরাগধানী ০.৫ মিমি লম্বা, বন্ধ্যা পুংকেশর অনুপস্থিত।
স্ত্রীপুষ্প: বৃন্ত ০.৩ মিমি লম্বা, শক্ত, বৃতি গভীর খন্ডিত, চাকতি বলয়াকার, গর্ভাশয় রোমশ বিহীন, উপবৃত্তাকার, ০.৮ x ০.৫ মিমি, মসৃণ, গর্ভদন্ড ২-খন্ডিত, ০.৫ মিমি লম্বা।
ফল অর্ধ-বর্তুলাকার, শুষ্ক অবস্থায় ডিম্বাকার, ৩.৫-৪.০ x ২.০-২.৫ মিমি, লাল, অন্তস্তৃক ৪ খাঁজযুক্ত, অমসৃণ জালিকাকার।
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
চিরহরিৎ এবং মিশ্র অরণ্য। ফুল ও ফল ধারণ প্রায় সারা বৎসর। বংশ বিস্তার হয় বীজ দ্বারা।
মাল্টা-এর বিস্তৃতি:
হিমালয়ের উষ্ণাঞ্চল, শ্রীলংকা, চীন ও মালয়েশিয়া। বাংলাদেশের বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও ঢাকা জেলায় জন্মে।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: ফল আহার্য। পত্র অতিশয় কটু, আহার্য, এবং আচার তৈরিতে ব্যবহার্য।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার:
ভারতের লোধা আদিবাসী সম্প্রদায়। বাকলের লেই মরিচের সাথে একত্র করে ফোড়া পাকানোর ভেষজ ওষুধরূপে ব্যবহার করে। তারা দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ব্যথা নিরসনের জন্য পাতার লেই প্রয়োগ করে।
সাঁওতাল আদিবাসীরা ফল থেকে তৈরি সিরাপ রক্ত আমাশয়ে ভেষজ ওষুধরূপে গ্রহণ করে, পাতার রস মাংসপেশীর ব্যথায় ব্যবহার করে (Jain, 1981)।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) মাল্টা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশে মাল্টা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. বুশরা খান (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৭ম, পৃষ্ঠা ৩৯৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Vinayaraj
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।