বাউলাহরিনা উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলের গুল্ম

বাউলাহরিনা

বৈজ্ঞানিক নাম: Lepisanthes senegalensis (Poir.) Leenh., Blumea 17: 85 (1969). সমনাম: Sapindus senegalensis Juss. ex Poir. (1805), Scytalis danura Roxb. (1832), Otophora paucijuga Hiern (1875), Aphania danura (Roxb.) Radlk. (1878), Aphania senegalensis (Poir.) Radlk. (1878), Aphania spaerococcus Radlk. (1879), Aphania loheri Radlk. (1914). ইংরেজি নাম: জানা নেই। স্থানীয় নাম: গোটাহরিনা, আমজাম, দানুরা, বাউলাহরিনা, কাওয়াঝিঝি।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Tracheophytes. অবিন্যাসিত: Angiosperms. অবিন্যাসিত:  Eudicots. বর্গ: Sapindales. পরিবার: Sapindaceae. গণ: Lepisanthes, প্রজাতি: : Lepisanthes senegalensis.

ভূমিকা: বাউলাহরিনা (বৈজ্ঞানিক নাম: : Lepisanthes senegalensis) হচ্ছে বাংলাদেশের ভেষজ গুল্ম। এটি পূর্ব এশিয়ার দেশে পাওয়া যায়। তবে বনাঞ্চলের পরিবেশ এদের জন্য উপযুক্ত।

বাউলাহরিনা-এর বর্ণনা :

গুল্ম বা ছোট বৃক্ষ, ১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু, অপরিণত অংশ ঘনভাবে বা হালকা রোমশ, ছোট শাখা বেলনাকার, ধূসরাভ থেকে বাদামী বা কালো, মসৃণ বা ছোট, বর্তুলাকার লেন্টিসেলযুক্ত গুটিকাকার। পত্র সরল, পত্রক উপবৃত্তাকার থেকে বল্লমাকার, মধ্যভাগের উপরে প্রশস্ত, ৭-৩৫ × ২-১৫ সেমি, কাগজ সদৃশ থেকে অর্ধচর্মবৎ, উপরিতল ধূসর- সবুজ, নিম্নতল হলুদাভ-সবুজ থেকে হালকা বাদামী, গোড়া সূক্ষ্মাগ্র থেকে স্থূলাগ্র, বৃন্তহীন পত্রে অর্ধহৃৎপিন্ডাকার, শীর্ষ স্থূলাগ্র থেকে সূক্ষ্ম খর্বাগ্র, শিরা প্রত্যেক পার্শ্বে ৭-২০টি, ফাঁসযুক্ত এবং প্রান্ত থেকে কিছু দূরে যুক্ত।

পুষ্পবিন্যাস প্রায় রোমহীন, স্বল্প থেকে কিছু সংখ্যক গুচ্ছাকার, সরল বা হালকা শাখান্বিত রেসিম বা থাইরসেস, ৬০ সেমি পর্যন্ত লম্বা, সাইম প্রশস্ত, খাটো-বৃন্তক, ৩-পুষ্পক, পুষ্পবৃন্ত ১-৬ মিমি লম্বা। পুষ্প সুগন্ধি, স্ত্রী পুষ্প প্রথমে প্রকাশিত হয়। বৃত্যংশ ৫টি (কদাচিৎ ৪টি), গাঢ় লাল, অবতল, বাহিরের ২টি আয়তাকার-ডিম্বাকার থেকে বর্তুলাকার, শীর্ষ গোলাকার, ১-৩ × ১.০-১.২ মিমি, প্রান্ত গোলাকার দন্তর, অভ্যন্তরে ৩টি সর্বোচ্চ ৪ × ৩ মিমি, পাপড়ি সদৃশ। পাপড়ি ৫টি (কদাচিৎ ৪টি), সবুজাভ-সাদা, প্রান্ত-আচ্ছাদী, খাটো বৃন্তক থেকে বৃন্তহীন, দলফলক উপবৃত্তাকার থেকে আয়তাকার, ২.৫-৪.৫ x ১-২ মিমি, অখন্ডিত, গোলাকার, রোমহীন, শল্কপত্র ক্ষুদ্র থেকে দলফলকের পাঁচ ভাগের দুই ভাগ লম্বা, সরল থেকে গভীরভাবে দ্বিখন্ডিত। চাকতি অখন্ডিত, বলয়াকার থেকে পিরিচ-আকৃতির।

আরো পড়ুন:  ঝুমকা জবা উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলের আলঙ্কারিক গুল্ম

পুংকেশর (৫) ৭টি, পুংদন্ড চ্যাপ্টা, ১-৪ মিমি লম্বা, সাদা, পশমী, পরাগধানী উপবৃত্তাকার থেকে ডিম্বাকার, ১-২ মিমি লম্বা, হালকা হলুদ, পুরাতনটি রক্ত-বেগুনি, যোজক সূক্ষ্মাগ্র। গর্ভাশয় (২) ৩-খন্ডিত, শক্ত রোমশ, গর্ভদন্ড বেলনাকার, ১-২ মিমি লম্বা, সোজা বা বক্র, গর্ভমুন্ড গর্ভদন্ডের নিম্নদিকে পর্বলগ্ন। ফল ২-খন্ডিত, বৃন্তহীন বা ২ মিমি পর্যন্ত বৃন্তক, খন্ডক উপবৃত্তীয় থেকে গোলাকার, ৮-১৫ × ৫-১৫ মিমি, মসৃণ, পাকলে লাল থেকে কালো। বীজ ডিম্বাকার থেকে গোলাকার, ৭-৮ × ৬-৭ মিমি, বহিন্ত্রক চকচকে বাদামী থেকে কালো।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২৮ (Fedorov, 1969).

আবাসস্থল:

পর্যায়ক্রমিকভাবে শুষ্ক এবং আর্দ্র অবস্থায় জন্মে, অধিকাংশ নিম্ন উচ্চতায়, সর্বোচ্চ ৫০০ মিটার উচ্চতায়। ফুল ও ফল ধারণ সময়কাল জুলাই থেকে এপ্রিল মাস। বংশ বিস্তার হয় বীজ দ্বারা।

বিস্তৃতি :

উষ্ণমন্ডলীয় আফ্রিকা, মাদাগাস্কার, শ্রীলংকা, ভারত, মায়ানমার, ইন্দো-চীন এবং মালেশিয়া। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র ব্যাপক বিস্তৃত।

ব্যবহার: কাঠ শক্ত, মজবুত এবং টেকসই, এবং গৃহের খুটিতে ব্যবহৃত। ফল ভক্ষণীয়।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের  ১০ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) বাউলাহরিনা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে বাউলাহরিনা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই। 

তথ্যসূত্র:

১. এস নাসির উদ্দিন (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ১০, পৃষ্ঠা ৩১২-১৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি tropical.theferns.info থেকে নেওয়া হয়েছে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!