বৈজ্ঞানিক নাম: Artocarpus chama Buch.-Ham. ex Wall. Cat. 4657 (1814).
বাংলা নাম: চাপালিশ, চাম্বল, চাম্বুল, চাম, কাঁঠালি চাম, টোপোনি (মগ), ছহ্রাম বা বলস্রাম (গারো)।
সমনাম: Artocarpus chaplasha Roxb. (1832).
ইংরেজি নাম: Monkey Jack.
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae – Plants
উপরাজ্য: Angiosperms
বিভাগ: Eudicots
শ্রেণী: Rosids
বর্গ: Rosales
পরিবার: Moraceae
গণ: Artocarpus
প্রজাতি: Artocarpus chama Buch.-Ham. ex Wall. Cat. 4657 (1814).
বর্ণনা: চাপালিশ মোরাসি বা তুঁত পরিবারের আর্টোকারপাস গণের একটি বৃহৎ, পত্রঝরা বৃক্ষ। এরা ৩০ মিটার পর্যন্ত উঁচু, দুগ্ধবৎ তরুক্ষীরবিশিষ্ট, কচি বিটপ লম্বা রোমাবৃত। পাতা সরল, একান্তর, বৃন্তক এবং অণুপর্ণী, উপপত্র বৃহৎ, কান্ডবেষ্টক, তরুণ পাতা (চারা, তরুণ বৃক্ষ এবং নতুন ডগার পাতা) অতি বৃহদাকার, ৯০ সেমি পর্যন্ত লম্বা, খন্ডিত বা বিভক্ত, বয়ষ্ক পাতা (পরিণত অংশের) উপবৃত্তাকার-ডিম্বাকার, ১৫২০ X ১২-১৬ সেমি, রোমশ, নিম্নপ্রান্ত উপহৃৎপিণ্ডাকার বা গোলাকার, শীর্ষ স্থূলাগ্র এবং কিনারা অখন্ড থেকে ক্ষুদ্রাকারে ক্রকচ। উদ্ভিদ সহবাসী, পুষ্পগুলো গোলকাকার পুষ্পধারে ঘনভাবে সমাকীর্ণ, পুষ্পধার বৃন্তক, একক এবং কাক্ষিক। ফল পুঞ্জীভূত ফল (syncarp), গোলকাকার, গুটিকাযুক্ত, আড়াআড়িভাবে ৭-১০ সেমি। বীজ দীর্ঘায়ত, ১.২ সেমি (প্রায়) লম্বা। ফুল ও ফল ধারণ এপ্রিল থেকে আগষ্ট।[১]
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ৫৬ (Kumar and Subramaniam, 1986).
আবাসস্থল: পত্রঝরা এবং চিরহরিৎ অরণ্য।
বিস্তার: ভারত (সিকিম, আসাম এবং আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ)। ভূটান, নেপাল, শ্রীলংকা, চীন, লাওস, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। বাংলাদেশে এই প্রজাতিটি মধুপুর, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেটের বনভূমি থেকে নথিভুক্ত হয়েছে (Das and Alam, 2001).
অর্থনৈতিক ব্যবহার/গুরুত্ব/ক্ষতিকর দিক: ফল খাওয়া যায়, তবে স্বাদে হালকা টক-মিস্টি। বীজ আগুনে পুড়িয়ে খাওয়া যায়, স্বাদে আনেকটা চীনা বাদামের মতো। ফল হাতির অতি প্রিয় খাদ্য। সার কাঠ মূল্যবান, হলুদাভ বাদামী, বেশ শক্ত, মজবুত এবং টেকসই। কাঠ ভাল মসৃণ হয়, আসবাবপত্র, দরজা-জানালা এবং রেল পথের স্লিপার তৈরির জন্য বেশী ব্যবহৃত হয়।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: জানা নেই।
প্রজনন ও বংশবিস্তার: বন এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে চাপালিশের বীজ থেকে চারা ও গাছ জন্মায়। জুন-জুলাই মাসে সংগৃহীত পরিপক্ক ফল স্তূপাকার করে ৫-৬ দিন রেখে দিলে পচে যায়। এ অবস্থায় পানিতে ধূয়ে বীজ বের করে পলিব্যাগে বপন করতে হয়। চারা গজানো বা অঙ্কুরোদগমের হার শতকরা ৭০-৮০ ভাগ। চারা গজাতে সময় লাগে ৭-১৫ দিন।
প্রজাতিটির সংকটের কারণ: আবাসস্থল ধ্বংস এবং মাত্রাতিরিক্ত আহরণ।
সংরক্ষণ ও বর্তমান অবস্থা: তথ্য সংগৃহিত হয়নি (NE), কিন্তু ধারণা করা হয় বিরল।
গৃহিত পদক্ষেপ: ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের ৩৫নং সেকশনে লাগানো চাপালিশের কিছু গাছ সংরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। বন বিভাগ ২০১১ ও ২০১২ সনে হাটহাজারী রেঞ্জের আওতায় ফটিকছড়ির সর্তা বিটে কয়েক হাজার চারা রোপণ করেছে। আরণ্যক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এর সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ২০১৩ সালে চাপালিশের চারা লাগিয়ে প্রজাতিটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে সংরক্ষণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
প্রস্তাবিত পদক্ষেপ: মূল বন্য আবাসস্থলে নুতন করে বনায়ন করা প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র:
১. এম এ হাসান, (আগস্ট ২০০৯)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”। আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ৯ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৯৭। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।