বড় ধলাকপাল রাজহাঁস বিশ্বে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত এবং বাংলাদেশের অনিয়মিত পাখি

[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Anser albifrons সমনাম: Branta albifrons Scopoli, 1769 বাংলা নাম: বড় ধলাকপাল রাজহাঁস, বড় সাদামুখো রাজহাঁস (আইন ২০১২) ইংরেজি নাম: Greater White-fronted Goose জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্যKingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Anatidae গণ/Genus: Anser, Brisson, 1760; প্রজাতি/Species: Anser albifrons (Scopoli 1769)[/otw_shortcode_info_box]

ভূমিকাঃ বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Anser গণে ৩টি প্রজাতি রয়েছে এবং পৃথিবীতে রয়েছে ১০টি প্রজাতি রয়েছে। বাংলাদেশের প্রজাতি তিনটি হচ্ছে ১. বড় ধলাকপাল রাজহাঁস, ২. মেটে রাজহাঁস, ৩. দাগি রাজহাঁস। আমাদের আলোচ্য পাখিটি হচ্ছে বড় ধলাকপাল রাজহাঁস।

বর্ণনা: বড় ধলাকপাল রাজহাঁস বা বড় সাদামুখো রাজহাঁস বড় আকারের জলচর পাখি (দৈর্ঘ্য ৭৬ সেমি, ওজন ২.৫ কেজি, ডানা ৪০ সেমি, ঠোঁট ৪.৬ সেমি, পা ৬.৫ সেমি, লেজ ১২ সেমি)। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা কালচে; মুখের সামনে ও ঠোঁটের চারদিক সাদা; গাঢ় ধূসরাভ-বাদামি পিঠে আঁইশের মত দাগ; ডানার পালকে সরু সাদা পাড়; পেটে কালো ডোরা; দেহতল বাদামি; লেজতল-ঢাকনি সাদা; চোখ বাদামি, ঠোঁট গোলাপি বা ফ্যাকাসে-কমলা ও হলুদে মেশানো; নখ হালকা খয়েরি; পা ও পায়ের পাতা কমলা হলুদ থেকে মেটে লাল এবং নখর সাদাটে। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মুখে সাদা রঙ ও পেটে ডোরা নেই। ৫টি উপ-প্রজাতির মধ্যে A. a. albifrons বাংলাদেশে পাওয়া গেছে।

স্বভাব: বড় ধলাকপাল রাজহাঁস মিঠাপানির জলাশয়, নলবন, বাদাবন, আর্দ্র তৃণভূমি ও শস্যখেতে বিচরণ করে; সাধারণত দলবদ্ধ হয়ে থাকতে দেখা যায়। ধীরে ধীরে হেঁটে অথবা সাঁতরে এরা আহার খুঁজে নেয়; খাদ্যতালিকায় রয়েছে ঘাস, কচি নল, জলজ উদ্ভিদ. শস্যদানা, পোকামাকড় ও শামুক। এক পায়ে দাঁড়িয়ে অথবা মাটিতে পেট ঠেকিয়ে বসে এরা বিশ্রাম নেয়। প্রয়োজনে এরা মাটি থেকে সোজা উপরের দিকে ওড়ে পালাতে পারে; এবং পরিযায়ন কালে দীর্ঘ পথ একবারে অতিক্রম করতে পারে। ওড়ার সময় এরা নাকি সুরে ডাকে: ইহ-ঈয়ি..; এদের গানের সুর: লিও-লিয়ক..। গ্রীষ্মকালে সাইবেরিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চলে এদের প্রজনন হয়; নরম উদ্ভিদ ও পালক দিয়ে বাসা তৈরী করে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো ফ্যাকাসে; সংখ্যায় ৩-৬টি। স্ত্রী রাজহাঁস একাই ডিমে তা দেয়,; ২২-২৮ দিনে ডিম ফোটে।

আরো পড়ুন:  দাগি রাজহাঁস বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের দুর্লভ পরিযায়ী পাখি

বিস্তৃতি: বড় ধলাকপাল রাজহাঁস বাংলাদেশের অনিয়মিত পাখি; শীতকালে ঢাকা বিভাগের নদীতে এর দেখা পাবার তথ্য রয়েছে। এশিয়া, ইউরোপ থেকে উত্তর আমেরিকা পর্যন্ত এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: বড় ধলাকপাল রাজহাঁস বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে শতকরা ১০ ভাগ, দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তবে এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৩]।

বিবিধ: বড় ধলাকপাল রাজহাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ সাদাকপাল রাজহাঁস (ল্যাটিন : anser = রাজহাঁস, albus = সাদা, frons = কপাল)।

তথ্যসূত্র:

১. মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও মো: শাহরিয়ার মাহমুদ, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা -১৩-১৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।

২. “Anser albifrons“, http://www.iucnredlist.org/details/22679881/0,  The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ২৩ আগস্ট ২০১৮।

৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৪৯।

Leave a Comment

error: Content is protected !!