কালাটুপি মাছরাঙা বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের সুলভ পরিযায়ী পাখি

[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]বৈজ্ঞানিক নাম/Scientific Name: Halcyon pileata সমনাম: Alcedo pileata, Boddeart, 1783 বাংলা নাম: কালাটুপি মাছরাঙা, ইংরেজি নাম/Common Name: Black-capped Kingfisher. জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্যKingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Dalcelonidae গণ/Genus: Halcyon, Swainson, 1821; প্রজাতি/Species: Halcyon pileata (Boddeart, 1783)[/otw_shortcode_info_box]

ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Halcyon গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ৩টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে ১১টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতি তিনটি হচ্ছে ১. লাল মাছরাঙা, ২. কালাটুপি মাছরাঙা ও ৩. ধলাগলা মাছরাঙা। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে কালাটুপি মাছরাঙা।

বর্ণনা: কালাটুপি মাছরাঙা বেগুনি পিঠের কালো টুপি ওয়ালা জলার পাখি (দৈর্ঘ্য ৩০ সেমি, ডানা ১৩ সেমি, ঠোঁট ৬ সেমি, পা ১.৫ সেমি, লেজ ৮.৫ সেমি)। পিঠ বেগুনে-নীল ও দেহতল ফ্যাকাসে মরচে রঙের। টুপি কালো, গলবন্ধ সাদা এবং ম্যান্টল, পাছা ও লেজ বেগুনে-নীল। ডানার কালো পালক-ঢাকনি নীল মাধ্যমিক পালককে আলাদা করেছে। থুতনি, গলা ও বুক সাদা এবং বগল ও পেট ফ্যাকাসে কমলা পীতাভ। ওড়ার সময় প্রাথমিক পালকের গোড়ার সাদা পট্টি স্পষ্ট নজরে আসে। ঠোঁট গাঢ় প্রবাল-লাল, চোখ কালচে বাদামি এবং পা ও পায়ের পাতা কালচে লাল। ছেলে ও মেয়েপাখি দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির গলবন্ধ ও বুক কৃষ্ণবর্ণের এবং ঢেউ খেলানো। তরুণ পাখির ঠোঁটের নিচের অংশ থেকে ঘাড় পর্যন্ত সরু নালার মত অসংখ্য কালো খাত থাকে ও কালো কিনারার পালক বুক অতিক্রম করে।

স্বভাব: কালাটুপি মাছরাঙা নদী, বেলাভূমি, জলাধার, জোয়ার-ভাটা সিক্ত খাঁড়ি ও মোহনায় বিচরণ করে; সাধারণত একা বা আলাদা জোড়ায় বিচরণ করে। পানির ওপর কোন জায়গা থেকে কাদায় শিকার পর্যবেক্ষণ করে এবং শিকার ধরার জন্য মাটিতে নেমে আসে; খাদ্যতালিকায় প্রধানত পোকামাকড়, কাঁকড়া, মাছ, ব্যাঙ, টিকটিকি ও অন্য খুদে প্রাণী রয়েছে। কদাচ শিকার ধরার জন্য পানিতে ঝাঁপ দেয়। অবিরাম ডানা চালিয়ে এরা দ্রুত উড়তে সক্ষম। অন্য মাছরাঙা থেকে এই প্রজাতির ব্যতিক্রম হল ওড়ার সময় সাধারণত নীরব থাকে; মাঝে মাঝে ডাকে: কিকিকিকিকিকি..। মে-জুলাই চীন ও ভারতের বনাঞ্চলে প্রজনন ঋতু । বনভূমির নদীর পাড়ে সমতল সুড়ঙ্গ তৈরি করে বাসা বানায় ও মেয়েপাখি ৪-৫টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, মাপ ২.৯ × ২.৬ সেমি।

আরো পড়ুন:  ঝুটিয়াল মাছরাঙা বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি

বিস্তৃতি: কালাটুপি মাছরাঙা বাংলাদেশের সুলভ পরিযায়ী পাখি। শীতে বরিশাল, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের প্যারাবন ও চিরসবুজ বনে বিচরণ করে; অতীত সিলেট বিভাগে দেখা গেছে এমন তথ্য আছে। সাম্প্রতিককালে ঢাকা বিভাগে পাওয়া গেছে। পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, মিয়ানমার, লাওস, চীন, কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনসহ এশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা: কালাটুপি মাছরাঙা বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সে কারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই কালাটুপি মাছরাঙাকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।[৩]

বিবিধ: কালাটুপি মাছরাঙার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ টুপিপড়া মাছরাঙা (গ্রীক: halkuon = মাছরাঙার সঙ্গে সম্পর্কিত পৌরাণিক পাখি; ল্যাটিন: pileatus = টুপিওয়ালা)।

তথ্যসূত্র:

১. এম. আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৭৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।

২. “Halcyon pileata“, http://www.iucnredlist.org/details/22683249/0,  The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮।

৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫৬।

Leave a Comment

error: Content is protected !!