বৈজ্ঞানিক নাম: Batagur baska;
সমনাম: Emys baska, Tetraonyx lessonii,
বাংলা নাম: বোদো বা বাটাগুড় কাইট্টা,
ইংরেজি নাম: Northern River Terrapin
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
শ্রেণী: Reptilia
বর্গ: Testudines
পরিবার: Geoemydidae
গণ: Batagur Gray, 1855
প্রজাতি: Batagur baska (Gray, 1831).
ভূমিকা: বাংলাদেশের কচ্ছপের তালিকায় মোট ২৯ প্রজাতির কচ্ছপ, কাইট্টা ও কাছিম আছে। এদের মধ্যে আমাদের আলোচ্য মুকুটি নদ-কাছিম হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সংকটাপন্ন প্রজাতি।
বর্ণনা: বোদো বা বাটাগুড় কাইট্টার দেহ অপেক্ষাকৃত বড়, দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০ সেমি এবং ওজন ১৮ কেজি। পুরুষ কাইট্টার কৃত্তিকাবর্ম বাদামী থেকে সবুজ; স্ত্রী কাইট্টার ক্ষেত্রে জল পাই-ধূসর রঙের; অপ্রাপ্তবয়স্ক কাইট্টার ক্ষেত্রে চোখ ধুসর থেকে বাদামী রঙের। মাথা ছোট, তুণ্ড উপরের দিকে বাঁকা ও সূচালো এবং বেশ প্রসারিত। কৃত্তিকাবর্ম নিচু, সম্মুখভাগ প্রায় শঙ্কু আকৃতির, পিছনের দিকের অংশ গোলাকৃতি এবং ১টি নুকাল, ৫টি মেরু, ৪ জোড়া বক্ষ (প্রতি পার্শ্বে ৪টি করে), ২২টি প্রান্তীয় (প্রতি পার্শ্বে ১১টি করে) এবং ১ জোড়া অধিলেজের শিল্ড থাকে। নুকাল শিল্ডের পিছনের অংশ দৈর্ঘ্যের তুলনায় কিছুটা বেশি প্রশস্ত। মেরু ২য় ও ৩য় শিল্ড প্রায় সমান এবং ৪র্থটি সবচেয়ে ছোট। মেরু শিল্ডের দৈর্ঘ্যের চেয়ে বেশি প্রশস্ত তবে প্রাপ্তবয়স্ক কাছিমের ক্ষেত্রে দৈর্ঘ্য ও প্রশস্ততা সমান।
স্বভাব ও আবাসস্থল: বোদো বা বাটাগুড় কাইট্টা উপকূলীয় মোহনার প্যারাবন, বড় ও ছোট নদীতে বিচরণ করে। তবে প্রজন ন ঋতুতে এরা ন দী থেকে দূরে চলে আসে। এদের প্রজন ন কাল সেপ্টেম্বর-নভেম্বর মাসে হয়। ডিসেম্বর-মার্চ মাস বাসায় থাকে। স্ত্রী কাছিম ডিম পাড়ার মৌসুমে ৫০-৬০টি ডিম পাড়ে এবং পরিস্ফুটনের সময় ৬০-৬৬ দিন। এটি মিঠা ও নোনা দুই ধরনের পানিতেই বাস করতে পারে। এই ক্ষমতা অন্য কোনো কচ্ছপের নেই।
বিস্তৃতি: বোদো বা বাটাগুড় কাইট্টা প্রজাতির বিস্তৃতি বাংলাদেশের সুন্দরবন অঞ্চল। এছাড়া ভারত, মায়ান মার মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যন্ড ও কম্বোডিয়ায় পাওয়া যেত। বর্তমানে কেবল বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
অবস্থা: বিশ্বব্যাপী এই প্রজাতির কাছিম মহাবিপন্ন। প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ে কাজ করা সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) মহাবিপন্ন প্রাণীর তালিকায় রয়েছে বোদো বা বাটাগুড় কাইট্টার নাম। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনানুসারে রক্ষিত বন্যপ্রাণীর তালিকায় তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বাংলাদেশে এর ইতিহাস: গত ৭ ও ৮ জুন, ২০১২ বাংলাদেশের গাজীপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্রে ডিম ফুটে বের হয়েছে বোদো বা বাটাগুড় কাইট্টার ২৫টি বাচ্চা। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের কচ্ছপ প্রজননকেন্দ্রের পুকুরে দুই বছর ১৪টি পুরুষ ও পাঁচটি নারী কচ্ছপকে একসঙ্গে রাখা হয়েছিল। উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানার পুকুর ও সুন্দরবন থেকে গত ২০০৮-২০১২ সালে কচ্ছপগুলো সংগ্রহ করা হয়। এত দিন ধারণা করা হতো, এই প্রজাতির কচ্ছপ প্রকৃতির মুক্ত পরিবেশ ছাড়া বাচ্চা দেবে না।
বাস্তুতান্ত্রিক ভূমিকা: কাইট্টা কচ্ছপ সুন্দরবন এলাকায় কেওড়াগাছের ফল খায় এবং এর বীজ ছড়িয়ে দেয়। এভাবে এরা সুন্দরবনের প্রতিবেশব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে ও কেওড়া বনের বিস্তারে সহায়তা করে।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব: এক সময় সাবানশিল্পে চর্বি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য এই কাইট্টা মাত্রাতিরিক্ত আহরণ করা হতো। বাংলাদেশে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক ও জেলেরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেও এটিকে বিলুপ্তির পথে নিয়ে গেছে।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।