ভূমিকা: হাড়ভাঙ্গা লতা (বৈজ্ঞানিক নাম: Byttneria pilosa) এক প্রকারের ভেষজ লতা। বাংলাদেশ, ভারতসহ এশিয়ার অনেক দেশের ঘন সবুজ বনে জন্মে।
হাড়ভাঙ্গা লতা-এর বর্ণনা:
বৃহৎ কাষ্ঠল লতানো অথবা আরোহী গুল্ম, ছোট শাখা খাঁজবিশিষ্ট, বিস্তৃত লোমসহ কন্টকরোমী অথবা খুব কম তারকাকারভাবে লোমযুক্ত।
পত্র সরল, ১০-১৮ x ৬১৫ সেমি, অর্ধমন্ডলাকার, করতলাকারভাবে খন্ডিত, গোড়া হৃৎপিন্ডাকার, উভয় পৃষ্ঠ তারকাকার কোমল দীর্ঘ রোমযুক্ত, পত্রের গোড়া হতে ৫-৭টি প্রধান শিরাবিশিষ্ট, পত্রবৃন্তক ২-১৮ সেমি লম্বা, পশমে ঢাকা কোমল দীর্ঘ রোমযুক্ত।
পুষ্প ফ্যাকাশে হলুদ, অতি সূক্ষ্ম, আড়াআড়িভঅবে ৪-৬ মিমি, প্রচুর শাখান্বিত অক্ষীয় আম্বেলেট সাইমে বিন্যস্ত, পুষ্পবৃন্তি কা সরু, মঞ্জরীপত্র এবং মঞ্জরীপত্রিকা তরঙ্গিত।
বৃত্যংশ ৫টি, বৃতি পেয়ালাকৃতি, পাপড়ি হতে অপেক্ষাকৃত বৃহৎ, নীচে সংযুক্ত, কোমল দীর্ঘ রোমযুক্ত, প্রায় ৩ মিমি লম্বা। পাপড়ি ৫টি, ৪-৫ x ১-২ মিমি, হলুদ, বাঁকানো, দলবৃন্ত অবতল এবং লম্বা ফিতা দিয়ে বাঁধার ন্যায়, দলফলক ২খন্ডিত।
পেয়ালাকৃতি ঝিল্লী দ্বারা গোড়ায় পুংকেশর এবং বন্ধ্যা পুংকেশর সংযুক্ত, পরাগধানী ২-খন্ডক, খন্ডক বহির্মুখী। গর্ভাশয় অবৃন্তক, ৫-প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট, গর্ভদন্ড অখন্ড অথবা ৫-খন্ডিত, প্রতি প্রকোষ্ঠে ডিম্বক ২টি।
ফল একটি উপগোলাকার ক্যাপসিউল, আড়াআড়িভাবে ২.০-২.৫ সেমি, কন্টকিত, পটী বিদারী ৫-কপাটিকাযুক্ত, স্থায়ী কেন্দ্রিয় স্তম্ভযুক্ত। বীজ কাল, উপবৃত্তীয়, প্রায় ৫ x ২ মিমি, ত্রিকোণাকার।
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
ঘন সবুজ বনাঞ্চলে এই গুল্ম জন্মে। ফুল ও ফল ধারণ অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস। বংশ বিস্তার হয় বীজ দ্বারা
বিস্তৃতি:
ভারত এবং মায়ানমার। বাংলাদেশে ইহা দেশের প্রায় সব বনে পাওয়া যায়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: পত্রের নির্যাস ক্ষতের রক্ত বন্ধ করতে প্রয়োগ করা হয় (Sinha, 1996)।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার:
পত্রের নির্যাস অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ভাঙায় প্রয়োগ করা হয় এবং কোমল কান্ড অঙ্গপ্রত্যঙ্গের চারদিকে আরোগ্যের জন্য বেঁধে দেয়া হয়।
হাড়ভাঙ্গা লতা-এর অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১০ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) হাড়ভাঙ্গা লতা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশে হাড়ভাঙ্গা লতা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. এম আহসান হাবীব (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৩৭-৩৩৮। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি efloraofindia.com থেকে নেওয়া হয়েছে।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।