হৃৎফলা উপকারী চির হরিৎ বৃক্ষ

চির হরিৎ বৃক্ষ, সাধারণত ২০-৩০ ফুট উঁচু হতে দেখা যায় । উত্তর-পশ্চিম হিমালয়ের সিন্দুনদীর অববাহিকা অঞ্চলে, কোয়েটা থেকে রভি অববাহিকা পর্যন্ত স্থানে ৬-৯ হাজার ফুট উচ্চতায় জন্মে । আফগানিস্থানে এটি একটি প্রিয় গাছ। সেখানে বিভিন্ন স্তূপের কাছে এটিকে লাগানো হয়ে থাকে। তাছাড়া গাছটির সুন্দর পাতা, ফুল এবং খাওয়ার উপযুক্ত জন্য এটিকে চাষ করা হয়। ইউরোপে উৎপন্ন বন সাংলী অপেক্ষা চিনাব উপত্যাকায় উৎপন্ন বনসাংলী অধিক সুস্বাদু। গাছের কাঠ মসৃণ, শক্ত এবং মজবুত । কুঠারের হাতল, হাতের ছড়ি এবং নকসা করা বাক্স তৈরীর কাজে ব্যবহৃত হয় ।

পাতাগুলি দেখতে সুন্দর, চেরা চেরা, ৮ থেকে ৯ ভাগে বিভক্ত, আকারে অনেকটা হাতের গাজার মতো। ছোট ছোট ফুল, ৫টি পাপড়ি বিশিষ্ট। পাতা ও ফুলের বাহারের জন্য লাগানো হলেও এটি সমতলভূমিতে বাঁচে না। ফল দেখতে অনেকটা গোল জামের মত, শুকিয়ে গেলে দুটো প্রায় একই রকমের মনে হয়। ফলের বীজ বাদ দিয়ে মোরব্বা, মাতার প্রভৃতি সুস্বাদু খাদ্য তৈরী হয় । এটি একদা ভারতের গাছ হলেও বর্তমানে পাকিস্থানের অন্তর্গত স্থানেই বেশি জন্মে। গাছের ছাল ও বীজ থেকে উৎকৃষ্ট পানীয় মত হয়ে থাকে। এগুলিতে Vitamin C প্রচুর পরিমাণে রয়েছে।

বিশ্বে এই গণের প্রায় ১৫০টি প্রজাতি থাকলেও, ভারত এবং ভারত-সংলগ্ন পাকিস্থানে মোট ৪টি প্রজাতি দেখা যায় । তন্মধ্যে আলোচ্য প্রজাতিটিই উৎকৃষ্ট । আর বোটানিক্যাল নাম Crataegus oxyacantha Linn., পাঞ্জাবের পাহাড়ী অঞ্চলে এটি ঘন সাংলী, বন সাঞ্জলী, রিং, ফিনডাক প্রভৃতি নামে পরিচিত। বাংলায় নতুন নামকরণ হৃৎফলা। ঔষধার্থে ব্যবহার্য অংশ : ফল ।

উপাদান

হৃৎফলা বা বন সাংলীর ফল খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফলের খোসার আচারে প্রচুর পরিমাণে Vitamin C থাকে। গাছের ছাল ও বীজ থেকে যে উত্তেজক পানীয় তৈরী হয়, তা চা অপেক্ষা কোন অংশে কম নয়। বরং এতে আরো বেশি ভিটামিন থাকে। ফলের ক্বাথ হৃদযন্ত্রের আভ্যন্তরীণ বিকারজনিত এবং ক্রিয়াবৈগুণ্যজাত ব্যাধিতে (Organic & functional heart diseases) ভাল কাজ করে ।

আরো পড়ুন:  পেস্তা বাদাম-এর আটটি ভেষজ গুণাগুণ ও ব্যবহার পদ্ধতি

এরপর যদি বলা হয় — ফলে Cyanogenetic glucoside (HCN-glucd.) আছে, যেটি খুবই বিষাক্ত । HCN-glucd. এমন একটি পদার্থ, যা অতি অল্প মাত্রায় মানুষের মৃত্যু ঘটাতে পারে। একবার বলা হচ্ছে এটি Functional এবং Organic heart disease সারাতে সক্ষম, আবার বলা হচ্ছে এটা Coronary Vessels ও bronchi কে সঙ্কুচিত করে। দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে যকৃতের মারাত্মক রোগ হবারও সম্ভাবনা থাকে । ফলে Vit-C প্রচুর পরিমাণে আছে, তার চেয়েও বেশি থাকে গাছের ছাল ও বীজ থেকে প্রস্তুত পানীয়তে । এজন্য লোকে খায়ও প্রচুর পরিমাণে। আধুনিক ভৈষজ্য-বিজ্ঞানের পুস্তক সমূহের মধ্যে যেসব তথ্য পরিবেশিত হয়েছে, তাতে কখনো মনে হবে ফলে HCN-glucd. আছে, আবার কখনো ভেবে নেওয়া যেতে পারে যে এতে তা নেই । তবে কচি ডালে যে (Young Shoots) HCN-glucd. আছে, সে সম্বন্ধে মোটামুটি ভাবে নিঃসন্দেহ হওয়া যায় ।

হৃৎফলা-এর লোকায়তিক ব্যবহার

দীর্ঘ দিন ধ’রে বিচার-বিশ্লেষণ করার পর হৃৎফলা হৃদ্দৌর্বল্যনাশক বলকর ভেষজের সঙ্গে অতি অল্প মাত্রায় হৃৎফলার ফলের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে ব্যবহার করার পর দেখেছি যে, পূর্বোক্ত কেবল হৃদ্দৌর্বল্য নাশক বলকর ভেষজগুলির দ্বারা যে উপকার পাওয়া যায়নি, এটিকে মেশানোর ফলে তা কিন্তু পাওয়া গেছে । দৌর্বল্য, শ্বাসকষ্ট, হৃৎশূল, হৃত্যন্ত্রের বিবৃদ্ধি (বড় হওয়া) প্রভৃতি ক্ষেত্রে ঔষধটি মাগার ক’রে আশানুরূপ ফল পাওয়া গেছে ।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্র:

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ৪৮-৪৯।

Leave a Comment

error: Content is protected !!