ভূমিকা: পাতি কাঠগোলাপ, গুরু-চম্পা, চম্পা, গুলাচীন (বৈজ্ঞানিক নাম: Plumeria rubra, ইংরেজি নাম: Temple Tree, Frangipani) হচ্ছে এ্যাসপারাগাসি পরিবারের প্লুমেরিয়া গণের সপুষ্পক উদ্ভিদ। হলদেটে-লাল রঙের সুগন্ধি ফুল বিশিষ্ট ছোট বৃক্ষ এটি।
বর্ণনা: ছোট বৃক্ষ, বাকল অমসৃণ, শাখা পুরু, বেলনাকার, মসৃণ। পত্র অঙ্কীয় পৃষ্ঠে মসৃণ, পত্রবৃন্ত অনূর্ধ্ব ৮ সেমি লম্বা, মসৃণ, পত্রফলক ২৮-৩৪ x ৪.৩-১১.২ সেমি বিডিম্বাকার, শীর্ষ সূক্ষ্মাগ্র বা দীর্ঘা, দৃষ্টি আকর্ষক প্রান্তীয় শিরা বিশিষ্ট, উপরে কিছুমাত্রায় ফ্যাকাশে সবুজ বা স্বচ্ছ। সাইম প্রান্তীয়, পুষ্পদন্ড অনূর্ধ্ব ১৭ সেমি লম্বা। পুষ্প গাঢ় লাল। বৃতি ৫খন্ডিত। দলমণ্ডল ব্যাসে প্রায় ৫-৬ সেমি, অন্ততঃ নলের বাইরের দিকে গোলাপি আভাযুক্ত বা রক্তিম, খন্ডসমূহ বিষমাকারে ছড়ানো, হলুদ নিম্নাংশ বিশিষ্ট গোলাপি। পুংকেশর ৫টি। গর্ভকেশর ২টি। ফলিক্যাল অনূর্ধ্ব ২৫ x ৩ সেমি। ফুল ও ফল ধারণ: মে থেকে সেপ্টেম্বর।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: জানা নেই।
আবাসস্থল ও চাষাবাদ: পাতি কাঠগোলাপ বাগানে আবাদ করা হয়। শোভাবর্ধনকারী গাছ হিসেবে বাগানে চাষ করা হয়। এটি শক্ত মাটিতে জন্মে। গাছের কাণ্ড অঙ্গজ প্রজনন ও বীজ দ্বারাও বংশ বিস্তার ঘটে।
বিস্তৃতি: মেক্সিকো থেকে পানামা পর্যন্ত মধ্য আমেরিকার দেশজ। বাংলাদেশেও গ্রীষ্মমন্ডলের সর্বত্র সাধারণভাবে জন্মায়, মাঝে মাঝে আবাদের হতাবশেষ রূপে উপঅনাবাদী অঞ্চলে পাওয়া যায়। ভারত, মায়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলংকায় ও এটি জন্মে।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: সুগন্ধ ও সুন্দর ফুলের জন্য বাগানে ও মন্দিরের আশেপাশে ব্যাপকভাবে আবাদ করা হয়। বাকল, পত্র, তরুক্ষীর ও পুষ্প রোগ উপশমকারী এবং বিরেচক, উত্তেজক, রাজোদ্দীপক ও জ্বর নাশক ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাকল উদরাময় ও অর্শ্বরোগ উপশমে ব্যবহার করা হয় (Yusuf et al., 1994)।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: দুধ খেকো সাপ যাতে দুধ খেতে না পারে এই বিশ্বাসে উদ্ভিদটি গোয়াল ঘরের পিছনে লাগানো হয় (Rahman et al., 2000)। মারমা আদিবাসীরা এই গাছের বাকল জন্ডিস রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করে বলে জানা গেছে (Rahman et al., 2003)।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৬তম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) পাতি কাঠগোলাপ প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে পাতি কাঠগোলাপ সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।[১]
তথ্যসূত্র:
১. এম আতিকুর রহমান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ২০৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।