পরিচিতি: বাঁশপাতি বা বাঁশপাতা গাছ হচ্ছে পডোকারপাসি পরিবারের একটি নগ্নবীজি উদ্ভিদ। বাংলাদেশের একমাত্র নরম কাঠের বৃক্ষ। এটি উষ্ণমণ্ডলীয় এবং উপউষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের হালকা জলজ বনে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬৫০ থেকে ১৬০০ মিটার উচ্চতায় জন্মায়। এটির সত্যিকারের কোনো ফুল-ফল হয় না, বীজ নগ্নভাবে থাকে। পাতা লম্বাটে। সাধারণত ১২-২৫ সে.মি. পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এর পাতার প্রস্থ ৩-৪ সে.মি.। বাঁশপাতা গাছের উচ্চতা প্রায় ২৫ মিটার এবং বেড় ২ মিটার হয়ে থাকে। এর কাঠের রঙ হালকা বাদামী, মসৃণ ও নরম।
এই নগ্নবীজী উদ্ভিদটি বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে জন্মে। মেঘালয়, আসাম, সিকিম, জাভা, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ ও সুমাত্রাসহ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে। বাংলাদেশে মহাবিপন্ন এবং বৈশ্বিকভাবে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত প্রজাতি।
আমাদের দেশে এটি একটি দুর্লভ বৃক্ষ। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির হাজারিখিল অভয়ারণ্যে প্রাকৃতিক ভাবে জন্মানো বাঁশপাতা গাছ রয়েছে। এছাড়া মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে এ উদ্ভিদ আছে মাত্র দু’টি। এ দুটি উদ্ভিদই এখানে লাগানো হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বাগানে একটি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইন্সটিটিউট অব ফরেস্ট্রিতে বেশ কয়েকটি বাঁশপাতা গাছ রয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি গাছ আছে বলে জানা গেছে। এছাড়া ঢাকার বলধা গার্ডেনে একটি গাছ রয়েছে। অন্তত দুটি গাছ আছে মিরপুর উদ্ভিদ উদ্যানে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহের বোটানিক্যাল বাগানে আছে, সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে অস্তিত্বমূলক অবস্থা: বাংলাদেশে বাঁশপাতি গাছটি খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না। ২০১২ সালের প্রণীত বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে বাঁশপাতি গাছ রক্ষিত উদ্ভিদ (Protected Plant) হিসেবে অভিহিত।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স’ এর অনুসন্ধানে বাংলাদেশে এ প্রজাতির ১০৮টি গাছ রয়েছে বলে জানা যায়। সিলেট, বগুড়া, যশোর সহ ঢাকার অনেক নার্সারীতেই এ গাছের চারা সহজলভ্য। ফলে সহজেই এটির পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে।
ব্যবহার: পেন্সিল, স্কেল, ফ্রেম ও খেলনা তৈরীতে এ কাঠ ব্যবহৃত হয়। ঔষধি গুণও আছে এ উদ্ভিদে। এর পাতার রস বাতের ব্যাথার রোগে উপকারী। এটি আলংকারিক উদ্ভিদ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। শহরাঞ্চলে বাড়ির সামনে সারিবদ্ধ ভাবে লাগাতে এবং বনসাই শিল্পে এ গাছের বহুল ব্যাবহার লক্ষ্য করা যায়। আমাদের দেশে প্রধানত বনসাই শিল্পীদের কাছেই এ গাছের চাহিদা বেশী।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।