জোড়া নারকেল-এর ছোবড়াযুক্ত অবস্থায় দীর্ঘদিন জলে ভাসতে ভাসতে যখন তীরে আসে, তখন হয়তো কয়েক মাস বা বৎসর পেরিয়ে যায়। কিন্তু বীজ নষ্ট হয় না। মাটিতে পুঁতলে তা থেকে নতুন গাছের সৃষ্টি হবে, তবে অঙ্কুরোদগম হতে প্রায় বছর তিনেক সময় লেগে যায়। ৩০ বছরের চেয়ে কম বয়স্ক গাছে ফুল আসে না। গাছ বহু বৎসর বেঁচে থাকে।
জোড়া নারকেল-এর পরিচিতি
জোড়া নারকেল বা দরিয়াই নারিয়লের আদি বাসস্থান সেচিলিস দীপপুঞ্জ। পাম (Palmae) পরিবারের সর্ব বৃহৎ প্রজাতি হচ্ছে দরিয়াই নারিয়ল। গাছ ৬০-১০০ ফুট উঁচু হয়। কাণ্ড সোজা ও মসৃণ। কাণ্ডের ব্যাস ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
চক্রাকার দাগ বিশিষ্ট কাণ্ডের মাথায় ১২-২০টি লম্বা লম্বা পাতা হয়। পাতা বেশ বড়, কখনো কখনো ১৮ থেকে ২০ ফুট লম্বা এবং ১০ থেকে ১২ ফুট চওড়া হতে দেখা যায়। নতুন পাতা যখন বেরোয়, তখন তা দেখতে বন্ধ করা হাত পাখার মতো মনে হয়। সম্পূর্ণ একটা পাতা যেন বৃহদাকৃতি নারকেল পাতা, মাঝখানে শির থাকে। পাতার খাঁজগুলি গভীরভাবে খাঁজকাটা, বিশেষভাবে ধারের দিকে। রঙ উজ্জ্বল হরিদ্রাভ সবুজ, চেহারা পাতলা ও শুষ্ক।
পুং পুষ্প ও স্ত্রী পুষ্প ভিন্ন ভিন্ন গাছে হয়। পুং পুষ্পদণ্ড পাতার গোড়া থেকে বেরোয়, ৪ ফুট লম্বা এবং ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি চওড়া, বেলনাকার, অগ্রভাগ অল্প সরু, দেখতে খুবই সুন্দর। স্ত্রীপুষ্পও পাতার গোড়া থেকে বেরোয়, ২ থেকে ৪ ফুট লম্বা, মোটা ও পশমের মত নরম।
ফলের পরিধি ৪ ফুট পর্যন্ত হতে দেখা যায় । ফুল হওয়া থেকে আরম্ভ করে ফল পাকা পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় ১০ বছর। ফলের বহিরাবরণ জলপাই-সবুজ রঙের। ওজন সাধারণত ১০/১২ কিলো গ্রাম হলেও সর্বাধিক ২৭.২ কিলোগ্রাম পর্যন্ত হতে দেখা গেছে। উপরের খোসা ছাড়ালে কুচকুচে কালো রঙের ফলটি বেরোয়, দ্বিধাবিভক্ত। ফলের উভয় দিকই দেখতে মেয়েদের কটিদেশের নিম্নভাগের (pelvis) মত। এই শক্ত আবরণের ভেতরে একটি শক্ত শাঁস থাকে।
অন্য প্রজাতি
এটির বোটানিক্যাল নাম Lodoicea maldivica (Poir) Pers., পূর্বে এটির নাম ছিল L. seychellarum Labill, ফ্যামিলী Palmae. ভারতীয় অনেক নামের তালিকা পূর্বেই দেওয়া হয়েছে ৷
অনেকটা লাটিমের মত আকার বিশিষ্ট এক প্রকার ছোট শক্ত ফল বাজারে বিক্রয়ের জন্য আসে। ভেতরটা ফাঁপা এবং তন্মধ্যে নারকেলের শাঁসের মত পাতলা শাঁস পাওয়া যায় । বর্ণ ও গন্ধ শুকনো নারকেলের মত। এটি Sterculiaceae পরিবারভুক্ত Pterygota alata R. Br. গাছের ফল, পূর্বে এই গাছের নাম ছিল Sterculia alata Roxb., বাংলায় বুদ্ধ নারিকেল নামে স্বল্প পরিচিত। বিশালকায় গাছ। ১০০ থেকে ১৫০ ফুট পর্যন্ত উঁচু এবং ৮ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত মোটা হতে দেখা যায়। পূর্ব হিমালয়ের অঞ্চল বিশেষে, আসামে, আন্দামান দীপপুঞ্জে এবং কনটিকের উত্তর থেকে দক্ষিণে এটি জন্মে। সৌন্দর্যবৃদ্ধির জন্য রাস্তার ধারে এবং বাগানে লাগানো হয়ে থাকে। গাছের ত্বক ধূসর বর্ণের। পাতা ৪-১০ ইঞ্চি লম্বা এবং ৩–৮ ইঞ্চি চওড়া, ডিম্বাকৃতি। ফুল বাদামী হলদে রঙের, ফল অনেক হয় । ভাজা বীজ আসাম ও বার্মার লোকেরা খেয়ে থাকে । শুকনো বীজে এক প্রকার তৈল আছে ।
জোড়া নারকেল-এর গুণাগুণ ও ব্যবহার
জোড়া নারকেল এর নাম বোম্বাই অঞ্চলে জেহারী নারিয়ল বলে। এর অর্থ বিষাক্ত নারিকেল । কিন্তু বম্বে অঞ্চলে এটির শাঁস বলকর ও জ্বরঘ্ন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া নাক্সভোমিকার মূলের সঙ্গে বাচ্চাদের পেটের বেদনায় দেওয়ার রীতি প্রচলিত আছে। এটি বিসমাথের মতো দ্রুত কাজ করে । হৃদ্দৌর্বল্যে জহরমোহরার সঙ্গে ব্যবহার করা হয়। নারিকেলের ছোবড়া সিদ্ধ জল মধুমেহ রোগীর মূত্র-শর্করা সাময়িকভাবে কমিয়ে দেয়। শাঁস একটি মূল্যবান কামোদ্দীপক ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত।
কাঁচা ফলের ভেতর জেলির মতো যে স্বচ্ছ পদার্থ থাকে, তা সুস্বাদু এবং এই নরম শাঁস ও জল যদি কিছু খাওয়ার পর খাওয়া যায়, তাহলে তা পিত্তবিকার ও অম্ল নষ্ট করে। ফল পাকলে শাঁস শক্ত হয় এবং তখন তা খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ে। এর গাছের গুঁড়ি দিয়ে জলের গামলা ও হাতের ছড়ি প্রস্তুত হয়। কচি পাতা রোদে শুকিয়ে লম্বা লম্বা করে কেটে ছেলেমেয়েরা টুপিতে লাগায়। ঘরের ছাউনিতেও পাতা ব্যবহার করে।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্র:
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ৬৯-৭০।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।