স্বর্ণচাঁপা ফুল, ফল, গাছের ছালের নানাবিধ ভেষজ গুণাগুণ

শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট মাঝারি গাছ। ছাল ধূসর বর্ণ, কচি কাণ্ড রোমশ, পাতা ৮।১০ ইঞ্চি লম্বা, ১২-৪ ইঞ্চি চওড়া কিন্তু অগ্রভাগের দিকটা ক্রমশঃ সরু ও বোঁটা প্রায় ১ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে দেখা যায়। এর বোঁটা ও কচি কাণ্ডের মাঝখান থেকে ফুল আসে, অনেক সময় কচি কাণ্ডের অগ্রভাগেও ফুল ফুটতে দেখা যায়। এদের ব্যাস ১-২ ইঞ্চি, বোঁটা ছোট, পাপড়ির রং পীতাভ অথবা কমলালেবুর মত ও উগ্র গন্ধ বিশিষ্ট। ফল আকৃতিতে অনেকটা বিলেতি কুলের (Zizyphus jujuba Lam.) মত, তবে অতটা লম্বা নয়। বীজ ১-৪টি, ধূসর বর্ণ, কিন্তু পাকলে গোলাপী অথবা লাল রঙের হয়ে থাকে। গ্রীষ্মে ফুল, তারপরে ফল হয়, সেটা পাকে শীতের প্রারম্ভে।

এই গণের (genus) প্রায় ১২টি প্রজাতি ভারত, বাংলাদেশে জন্মে। এটা অনেকে বাগানে লাগিয়ে থাকে। এছাড়া এটি যে উচু জমিতে হয় না তা নয়, যেমন উত্তর-পশ্চিম হিমালয়ের প্রায় ৫০০০ ফুট উচুতে, নীলগিরি ও নেপাল প্রভৃতি অঞ্চলে জন্মে থাকে। এর সংস্কৃত নাম চম্পক, বাংলায় প্রচলিত নাম চাঁপা ও হিন্দীতে চাম্পা নামে পরিচিত। এর বোটানিক্যাল নাম Michelia champaca Linn., ও ফ্যামিলি Magnoliaceae. ঔষধার্থে ব্যবহার্য অংশ- ছাল, বীজ, পাতা ও মূল।

স্বর্ণচাঁপা-এর উপকারিতা

চাঁপার ফুলের এবং গাছের উপকারিতা একেবারে পাশাপাশি-

১. শূল ব্যথায়: যেকোন রকমের পেট ব্যথায় (অজীর্ণ জন্য নয়) স্বর্ণচাঁপা পাতার রস ১ চা-চামচ ২। ৫ ফোঁটা মধু মিশিয়ে জলসহ খেতে হবে। এর দ্বারা ব্যথাটা তৎক্ষণাৎ কমে যাবে।

২. মাথা ধরায়: যে মাথা ধরাটা শ্লেষ্মার বিকারজনিত সেই ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে। স্বর্ণচাঁপা গাছের ছাল চূর্ণ ৫০০ মিলিগ্রাম মাত্রায় ঈষদুষ্ণ জলসহ সকালে ও বৈকালে দু’বার খাওয়াতে হবে। এর দ্বারা ওই শ্লেষ্মাটা ঝরে গিয়ে মাথা ধরা সেরে যাবে।

৩. মাসিক ঋতুর স্বল্পতায়: মেয়েদের মাসিক ঋতু ভাল হয় না, একটু হ’য়ে বন্ধ হয়ে যায়; সেক্ষেত্রে চাঁপা গাছের ছাল চূর্ণ ৫০০ মিলিগ্রাম মাত্রায় সকালে ও বৈকালে ঈষদুষ্ণ গরম জলসহ দু’বার খেতে হবে। কয়েকদিন খেলে মাসিকের স্রাবটা ভাল হবে।।

আরো পড়ুন:  উচুন্টি উষ্ণমণ্ডলীয় দেশে জন্মানো ভেষজ বিরুৎ

৪. বমনেচ্ছয়: ভাল হজম না হ’লে অর্থাৎ অজীর্ণ হ’লে গা বমি বমি করে, সে সময় ২টি চাঁপাফুল বেটে সরবতের মত করে খেতে দিতে হবে। এর দ্বারা বমনেচ্ছা চলে যাবে।

৫. পেট ফাঁপায়: অগ্নিমান্দ্য হ’লে পেট ফাঁপে, সেক্ষেত্রে চাঁপাফুল দুটি বেটে আধ কাপ জলে গলে তাকে ছে’কে, সেই জলটা খেতে দিতে হবে। এর দ্বারা ওই পেট ফাঁপাটা সেরে যাবে।

৬. অগ্নিমান্দ্য: যে অগ্নিমান্দ্য অনেকদিন ধরে চলছে, যদি সেটাতে কফ প্রাধান্যের লক্ষণ, সেখানে ২টি চাঁপাফুল বেটে জলসহ খেতে হবে। এটা কয়েকদিন খেলে ওটা সেরে যাবে। অথবা চাঁপাফলের বীজ চূর্ণ করে, ছেকে ৫০০ মিলিগ্রাম করে জলসহ একবার অথবা দু’বার খেতে হবে।

৭. ফোড়ায়: যে ফোড়া দরকচা মেরে গিয়েছে অর্থাৎ পাকছেও না ব’সছেও না, সেক্ষেত্রে চাঁপা গাছের ছাল দুধ দিয়ে বেটে অল্প গরম করে প্রলেপ দিলে ফোড়াটা পাকিয়ে ফাটিয়ে দেবে।

৮. মাথার যন্ত্রণায়: বায়ু ও শ্লেষ্মার জন্য দীর্ঘদিন ধরে মাথার যন্ত্রণায় কষ্ট দিচ্ছে, এক্ষেত্রে চাঁপা ফলের মিহি চূর্ণ তিল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে আস্তে আস্তে মালিশ করতে হবে, এর দ্বারা ওই যন্ত্রণার উপশম হবে। কিছুদিন ব্যবহার করলে ওটা সেরে যাবে।

৯. পা ফাটায়: চাঁপার ফল (বীজ সমেত) বেটে কয়েকদিন পায়ে লাগালে ওটা সেরে যাবে। অথবা ওই ফলের মিহি চূর্ণ সমপরিমাণ সাদা ধুনোর সঙ্গে মিশিয়ে সেটাকে তিল তেল দিয়ে মেড়ে পেষ্টের (paste) মত করে, যাকে বলে মলমের মত ক’রে, পায়ের ফাটায় লাগাতে হবে। এর দ্বারাও ফাটা সেরে যাবে।

CHEMICAL COMPOSITION

Michelia Champaca Liriodenine (oxo-ushinsunine); Ushinsunine and norushinsunine; Carthenolide and Sitosterol.

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৫, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪০৩, পৃষ্ঠা, ২০০-২০১।

আরো পড়ুন:  তিন রঙা চন্দ্রমল্লিকা টবে বা বাগানের শোভাবর্ধনকারী বিরুৎ

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: P Jeganathan

Leave a Comment

error: Content is protected !!