কাতলা দক্ষিণ এশিয়ার বিপদমুক্ত স্বাদুপানির মাছ

কাতলা

বৈজ্ঞানিক নাম: Catla catla (Hamilton, 1822) সমনাম: Cyprinus catla Hamilton, 1822, Fishes of the Ganges, p. 287; Cyprinus abraminoides Sykes, 1841, Trans. Zool. Soc. 2: 353; Catla buchanani Day, 1878, Fishes of India, p. 552; Catla catla Jhingran, 1966, FAO World Symposium on Warmwater pond Fish Culture, p. 18. ইংরেজি নাম: Catla, Katla. স্থানীয় নাম: কাতলা, কাতল।

কাতলা-এর বর্ণনা:

কাতলা মাছের দেহ খাটো এবং চাপা কিন্তু মাথা প্রশস্ত। মুখ প্রশস্ত । উপরের ঠোঁট পাতলা এবং তুন্ডের ন্যায় ত্বক দ্বারা আবৃত থাকে। নিচের ঠোঁট মধ্যম পুরু প্রশস্ত, পশ্চাৎ ওষ্ঠীয় খাজ নিরবচ্ছিন্ন। ঠোঁটের অভ্যন্তরে কোন তরুনাস্থি থাকে না।

এদের স্পর্শী অনুপস্থিত। পৃষ্ঠদেশ অংকীয় দেশ অপেক্ষা অধিক উত্তল। ফুলকা বন্ধ বৃত্তাকার, পৃষ্ঠীয় পাখনার গোড়ায় দেহ সর্বাধিক গভীর থাকে। পৃষ্ঠপাখনা পুচ্ছপাখনার তুলনায় তুন্ডের অধিক নিকটবর্তী। বক্ষপাখনা দৈর্ঘ্যে প্রায় শ্রোণীপাখনা পর্যন্ত বিস্তৃত, তবে পুরুষ মাছে শ্রোণীপাখনা দৈর্ঘ্যে পায়ুপাখনা পর্যন্ত বিস্তৃত। শ্রোণীপাখনা একটি কাক্ষিক আঁইশ বহন করে। পার্শ্বরেখা অঙ্গ সম্পূর্ণ। দেহের পৃষ্ঠভাগ গাঢ় ধূসর কিন্তু উদরীয় অংশ এবং পার্শ্বদিকে রূপালি বর্ণের। পেটের আঁইশ ব্যাতীত অবশিষ্ট আঁইশ। তাদের কেন্দ্রে গোলাপী বা তামাটে বর্ণ ধারন করে, বক্ষপাখনা কিছুটা ফ্যাকাসে হয় (Rahman, 2005)।

স্বভাব ও আবাসস্থল:

এদেরকে নদী, হ্রদ এবং চাষযোগ্য পুকুরে পাওয়া যায়। পানির উপরিভাগ ও মধ্যম স্তর উভয় স্থানেই বাস করে। মূলত সর্বভূক প্রকৃতির মাছ, তরুণ অবস্থায় এরা পোকামাকড়, উদ্ভিজ প্লাঙ্কটন এবং গলিত বা পচা খাবার খায়। তবে প্রধান খাদ্য তালিকায় শৈবাল, ক্রাস্টেশিয়ান এবং উন্নত উদ্ভিদ অন্তর্ভুক্ত। জুন থেকে জুলাই মাসে নদীতে নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় এদের প্রজনন ঘটে। এরা প্রায় ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে যৌন পরিপূর্ণতা লাভ করে। ৬৯ থেকে ৯৭ সেমি দৈর্ঘ্যের একটি মাছ প্রায় ১৫,৬৪,৮৭৫ থেকে ৩৬,৩০,৭০৮টি ডিম দেয়।

আরো পড়ুন:  থাই পাঙ্গাশ বাংলাদেশে আগ্রাসি প্রজাতির মাছ

বিস্তৃতি:

বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, এবং মায়ানমার। এছাড়া ভারতের সমুদ্র বেষ্টিত দ্বীপের। নদীসমূহ, শ্রীলংকা এবং চীনে ও এদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব:

এই প্রজাতির মাছ দ্রুত বর্ধনশীল, বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং সমগ্র বাংলাদেশেই চৌবাচ্চায় বা পুকুরে সনাতন পদ্ধতিতে চাষ করা হয়। কাতলা মাছ সারাবছরই অন্যান্য বড় কার্প প্রজাতির সাথে ধরা হয়। চট্টগ্রামের হালদা নদী কাতলা মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র। এই প্রজাতির মাছসহ অন্যান্য বড় কার্প মাছ বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত মাছের ২৩ ভাগ বা ৪,৭ ৫,০০০ মেট্রিক টন (FRSS, 2004-05)। পুকুর থেকে আহোরিত মাছে এদের অবদান প্রায় ১৮ ভাগেরও বেশী। বেসরকারী উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত মৎস্য খামারে এই মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন করা হয় যা পরিবর্তিতে পুকুরে চাষ করা হয়। বড়শী এবং টানা বড়শী দিয়ে এই মাছ শিকার বেশ আনন্দদায়ক। কাতলা মাছে ১৯.২ ভাগ প্রোটিন, ২.৫ ভাগ চর্বি এবং ৭০ ভাগ পানি থাকে।

বাস্তুতান্ত্রিক ভূমিকা:

এরা পানির উপরিতলে বাস করে এবং খাদ্য ও আবাসস্থলের জন্য অন্যান্য প্রজাতির মাছের সঙ্গে প্রতিযোগীতায় অবতীর্ন হয়।

বর্তমান অবস্থা এবং সংরক্ষণ: এই মাছ বাংলাদেশে খুব সহজেই পাওয়া যায় এবং সর্বত্রই ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। IUCN Bangladesh (2000) এর লাল তালিকায় এটি আশংকাজনক প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত নয়।

Leave a Comment

error: Content is protected !!