মাছ ধরার কারেন্ট জাল হত্যা করছে মাছ, পাখি, প্রকৃতির অন্যান্য জীবন্ত উপাদান

মাছচাষে প্রায়শই বড় আকারের জাল ব্যবহার করে যা দ্বারা নির্বিচারে সব কিছু ধরা হয় এবং জালের সাথে যা কিছু আসে তাই ধরা পড়ে; যেমন সমুদ্রের কচ্ছপ, ডলফিন বা হাঙ্গর। অনিচ্ছায় ধরা (ইংরেজি: Bycatch) সমুদ্রের কচ্ছপের মৃত্যুর ক্ষেত্রে বড় অবদান রাখে। মাছ ধরা জাল, সাধারণত প্লাস্টিকের তৈরি, জেলেদের দ্বারা সমুদ্রের মধ্যে ফেলে রাখার কারণে বা অন্য কারণে হারিয়ে যেতে পারে। ভূত জাল নামে পরিচিত, এই জাল মাছ, তিমি, ডলফিন, সামুদ্রিক কচ্ছপ, হাঙ্গর, ডগংস, কুমির, সামুদ্রিক পাখি, কাঁকড়াকে হত্যা করে। এই জাল প্রাণী চলাচলকে সীমাবদ্ধ করে, অনাহার ঘটায়, জীবাণু এবং অন্যান্য সংক্রমণ ঘটাচ্ছে এবং সেই ক্ষেত্রে বন্দি প্রাণীকে দমবন্ধ করে মারে, কেননা জালে আটকে গিয়ে শ্বাস নিতে জলের উপরে ফিরে যেতে পারে না।[১]

সারা দেশে কুল ও বরই চাষকালীন সময়ে কুল-বরই গাছের ওপরে কারেন্ট জাল টানানো হয় পাখিদের হাত থেকে কুল-বরই রক্ষা করার জন্য। রংপুরের বিভিন্ন উপজেলা, নওগাঁ ও দিনাজপুরের কয়েকটি উপজেলা এবং পাবনার ঈশ্বরদী এলাকায় এখন কুল বরই চাষের জন্য বরই ক্ষেতের উপরে কারেন্ট জাল ব্যবহার করে প্রতিদিন হাজার হাজার পাখি নিধন করা হচ্ছে। শুধু এই জেলাগুলোই নয়, সারা দেশেই এখন কুল বরই এমনকি বেগুন রক্ষা করার জন্য চাষিরা খেতে কারেন্ট জালের ফাঁদ পাতেন, আর এসব ফাঁদে আটকা পড়ে পাখি মারা যাচ্ছে।

শত শত বছর ধরে কুল পাখিরা খেলেও কৃষক কারেন্ট জাল ব্যবহার করতেন না। এখন কেন তারা এ-কাজ করছেন? এর জবাব হচ্ছে পাখিদের প্রাকৃতিক খাবার কমে যাওয়া। উত্তরবঙ্গসহ সারা দেশে প্রকৃতি বিধ্বংসী ইউক্যালিপটাস, মেহগনি, ইপিলইপিল, লম্বু ইত্যাদি ক্ষতিকর আগ্রাসি প্রজাতির গাছ গত ৩০ বছর লাগানো হয়েছে। এসব গাছে পাখির কোনো খাবার নেই। পাখির প্রাকৃতিক খাবার সরবরাহকারী দেশি গাছগুলো বিলুপ্ত করা হয়েছে। এই অবস্থায় আমাদের প্রকৃতির অনিবার্য অনুষঙ্গ এই পাখি মারা যাবেই। পাখি বাঁচাতে হলে দেশি গাছ রোপণ করতে হবে।

আরো পড়ুন:  বন্যপ্রাণ রক্ষায় অনুপ সাদি এবং 'জীববিচিত্রা' আন্দোলন

কারেন্ট জাল শুধু পাখিই হত্যা করছে না, কারেন্ট জাল মাছ ধ্বংসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা আমরা অনেকেই জানি। ফলে কারেন্ট জাল এখন গোটা পৃথিবীকে ধ্বংস করছে। ব্যবসাহীন, মুনাফাহীন একটি সমাজ পারে কেবল পৃথিবীকে বাঁচাতে।

তথ্যসূত্র:

১. “‘Ghost fishing’ killing seabirds”. বিবিসি নিউজ. ২৮ জুন ২০০৭, সংগ্রহের তারিখ ২০ আগস্ট ২০১৯.

রচনাকালঃ ২১ মার্চ, ২০১৪

Leave a Comment

error: Content is protected !!