ভূমিকা: তোড়া চন্দ্রমল্লিকা বা তাজ চন্দ্রমল্লিকা (বৈজ্ঞানিক নাম: Chrysanthemum coronarium ইংরেজি নাম: Chrysanthemum, Crown Daisy) হচ্ছে এ্যাসটারাসি পরিবারের ক্রিসেনথিমাম গণের একটি সপুষ্পক বিরুৎ। এটিকে বাংলাদেশে আলংকারিক উদ্ভিদ হিসেবে বাগানে বা গৃহে চাষাবাদ করা হয়। বাড়ির টবে বা বাগানের শোভাবর্ধন করতে এই বিরুৎ লাগানো হয়।
বর্ণনা: তোড়া চন্দ্রমল্লিকা প্রজাতিটি দেখতে ঋজু, ঘন ক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত ও বহুবর্ষজীবী বীরুৎ। উচ্চতায় ৯০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয় বা অধিক লম্বা। পত্র পক্ষবৎ খন্ডিত বা ব্যবচ্ছেদিত। এদের ফুল থোকা থোকা হয়ে ডালের আগাতে ফুটে থাকে। একেকটি ফুল পৃথক পৃথক থাকে, অসম জননকোষী, ব্যাস ১.৫-৮.০ সেমি, পুষ্পদন্ডবিশিষ্ট, একল বা শিথিলভাবে সমভূমঞ্জরী, রে-যুক্ত বা চক্রাকার, পত্রাবরণ অর্ধগোলাকার।
মঞ্জরীপত্র ২-স্তরে সজ্জিত, সংনমিত, অধিকতর অন্তর্বর্তী প্রশস্ততরটি শুষ্ক ঝিল্লিসদৃশ শীর্ষ ও প্রান্ত বিশিষ্ট, পুষ্পধার উত্তল, উন্মুক্ত। বহির্দেশীয় পুষ্পিকা ১-স্তরে সজ্জিত, স্ত্রী। মধ্য পুষ্পিকা বহু-স্তরে সজ্জিত, উভলিঙ্গ। স্ত্রী পুস্পিকার দলমণ্ডল ২-৩ খন্ডিত দলফলক বিশিষ্ট, নলাকার বা রে-বিশিষ্ট, হলুদ। পরাগধানী উপাঙ্গ বিশিষ্ট, নিম্নাংশ বাণাকার। গর্ভদন্ডীয় বাহু কর্তিতগ্র, শীর্ষ রোমশ। ফল সিপসেলা, বহু-সভঙ্গ, প্রস্থচ্ছেদ অর্ধ-গোলাকার, বৃতিরোম অনুপস্থিত ।
ফুল ও ফল ধারণ: ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এই ফুল ফোটে। গাছে ফুল তাজা থাকে ২০ থেকে ২৫ দিন৷ ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ১৮, ৩৬ (Fedorov, 1969)।
আবাসস্থল ও চাষবাস: আলোযুক্ত বাগান হতে হবে, পানি দ্বারা মাটি ভিজে থাকবে তেমন ব্যবস্থা থাকতে হবে। বীজ, রাইজোম অথবা কাণ্ড কাটিং এর মাধ্যমে নতুন চারা জন্মে। এই টবে চাষ করার জন্য উপযোগী। অনেকে ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখে, মালা গাঁখা, বিভিন্ন উৎসবে ব্যবহার করে থাকে।
বিস্তৃতি: ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে স্থানীয়ভাবে জন্মে। বাংলাদেশের বাগান সমূহে এটি অতি সাধারণভাবে দেখা যায়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্বের দিক: চীনবাসীরা উদ্ভিদের তৃণমূল কাণ্ড টুনগাস নামে এবং মালয়েশিয়ায় চারা গাছ হিসেবে খাওয়া হয়।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৬ষ্ঠ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) তোরা চন্দ্রমল্লিকা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে তোরা চন্দ্রমল্লিকা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. এ বি এম এনায়েত হোসেন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩১৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Kolforn
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।