গাট্টা তুম্বা দক্ষিণ এশিয়ার ভেষজ বিরুৎ

গাট্টা তুম্বা

বৈজ্ঞানিক নাম:  Leucas zeylanica (L.) R. Br. in W. T. Ait., Hort. Kew. ed. 2(3): 409 (1811). সমনাম: Phlomis zeylanica L. (1753). ইংরেজি নাম: জানা নেই। স্থানীয় নাম: গাট্টা তুম্বা।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae – Plants উপরাজ্য: Tracheobionta – Vascular plants অধিবিভাগ: Spermatophyta – Seed plants বিভাগ: Magnoliophyta – Flowering plants শ্রেণী: Magnoliopsida – Dicotyledons উপশ্রেণি: Asteridae বর্গ: Lamiales পরিবার: Lamiaceae – Mint family উপপরিবার: গণ: Leucas R. Br. – leucas প্রজাতি: Leucas zeylanica.

ভূমিকা: গাট্টা তুম্বা (বৈজ্ঞানিক নাম: Leucas zeylanica) হচ্ছে বাংলাদেশের ভেষজ বীরুৎ। এটি সমতলে জন্মায়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশে পাওয়া যায়। তবে বনাঞ্চলের পরিবেশ এদের জন্য উপযুক্ত।

গাট্টা তুম্বা-এর বর্ণনা:

গাট্টা তুম্বা খাড়া, শক্ত, সুগন্ধিময় বর্ষজীবী বীরুৎ। এটা ৫০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়। এদের কাণ্ড রেশ শাখাযুক্ত, শাখা চতুষ্কোণাকার, খাঁজযুক্ত, বিক্ষিপ্ত ছড়ানো রোমসহ কণ্টক রোমাবৃত। পত্র সবৃন্তক, পত্রবৃন্ত ০.৩-১.০ সেমি লম্বা, পত্রফলক ৪-৮ × ০.৫-২.৫ সেমি, প্রশস্তভাবে উপবৃত্তাকার হতে উপবৃত্তাকার-বল্লমাকার, ব্যবধান বিশিষ্ট করাত দস্তুর, সূক্ষ্মাগ্র, বৈশিষ্ট্যগতভাবে অঙ্কীয় পৃষ্ঠ ফ্যাকাশে, উপরের পৃষ্ঠ ও নিম্নপৃষ্ঠের শিরা খররোমাবৃত।

পুষ্পমঞ্জরী প্রান্তীয় আবর্ত, কদাচিৎ অক্ষীয়। মঞ্জুরীপত্র প্রায় ০.৬ সেমি লম্বা, প্রায় বৃতির সমান দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট, রেখাকার, রোমাবৃত, হালকা মঞ্জরী পত্রাবরণ গঠন করে, প্রান্তীয় ক্ষুদ্র শক্ত লোম সাধারণতঃ ০.৫ মিমি অপেক্ষা ক্ষুদ্র। বৃতি প্রায় ০.৬ সেমি লম্বা, নলাকার, বক্র, নিচের দিকে সচরাচর মসৃণ ও রোমহীন, উপরের দিকে শিরাল ও খররোমাবৃত, মুখ চওড়া, অত্যন্ত তির্যক, উপরের দিকে উৎপন্ন হয়, ভেতরের দিক মসৃণ, দন্তক খাটো, ত্রিকোণাকার, কণ্টকযুক্ত, রোমশ, উপরের দন্তক সর্বাপেক্ষা দীর্ঘ।

দলমণ্ডল প্রায় ১.৮ সেমি লম্বা, সাদা, উপরের ওষ্ঠ অতিরোমশ, নিচের ওষ্ঠ স্পষ্টতঃ ৩-খণ্ডিত, উপরের ওষ্ঠ অপেক্ষা দীর্ঘতর, মধ্যখণ্ডক খাঁজাগ্র। পুংকেশর ৪টি, পুংদণ্ড সরু, ১.২ সেমি পর্যন্ত লম্বা, পরাগধানী পৃষ্ঠলগ্ন। গর্ভপত্র ২টি, গর্ভাশয় অধিগর্ভ, গর্ভদণ্ড সরল, গর্ভমূলী, গর্ভমুণ্ড দ্বিখণ্ডিত। নাটলেট প্রায় ০.২ × ০.১ সেমি, বিডিম্বাকার-আয়তাকার, ভেতরের পৃষ্ঠে কোণাকৃতি, বাইরে গোলাকার, মসৃণ, বাদামি-কালো।

আরো পড়ুন:  পরশপিপুল বৃক্ষ-টির ছয়টি ভেষজ গুণাগুণ

ক্রোমোসোম সংখ্যা: জানা নেই।

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার :

পতিত জমি। ফুল ও ফল ধারণ সময়কাল মে থেকে অক্টোবর মাস। বংশ বিস্তার হয় বীজ দ্বারা।

বিস্তৃতি :

শ্রীলংকা, ভারত (আসাম ও পেনিনসুলা), পূর্বদিকে মালয় পেনিনসুলা থেকে চীন পর্যন্ত বিস্তৃত। বাংলাদেশে এ প্রজাতিটি অধিকাংশ জেলায় পাওয়া যায়।

ব্যবহার:

এতে এক ধরনের উদ্বায়ী তৈল থাকে যার ব্যাকটেরিয়া-প্রতিরোধী গুণাগুণ রয়েছে। সমস্ত উদ্ভিদের রস খোস-পাঁচড়া, চর্মরোগ, মাথা ব্যথা ও সর্দিকাশিতে ব্যবহার করা হয় (Chopra et al., 1956)। সাপের কামড়ের চিকিৎসায় পাতার রসের শ্বাস নেয়া হয় (Caius, 1998)

জাতিতাত্ত্বিক ব্যবহার: পাতা সবজি হিসেবে তরকারীতে রান্না করে খাওয়া হয় (Watt, 1972)।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের  ৮ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) গাট্টা তুম্বা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে গাট্টা তুম্বা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই। 

তথ্যসূত্র:

১. মাহবুবা খানম (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ৩০০-০১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Renjusplace

Leave a Comment

error: Content is protected !!