হাতিশুঁড় পৃথিবীর উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের ঔষধি অর্ধসরস বর্ষজীবী বীরুৎ। এরা সাধারণত একপ্রকার বর্ষজীবি আগাছা জাতীয় উদ্ভিদ। একে বিভিন্ন নামে ডাকা হয় যেমন- হাতিশুঁড়ি, হাতিশুণ্ডি, হস্তীশুণ্ডী, শ্রীহস্তিনী, মহাশুণ্ডী ইত্যাদি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Heliotropium indicum, এবং ইংরেজি নাম ‘Indian heliotrope’।
লোকায়তিক ব্যবহার
১. ফোলা: হঠাৎ ঠাণ্ডা লেগে হাতে পায়ের গাঁট ফুলে গেলে (এটা সাধারণতঃ কফের বিকারে হয়) এই হাতিশুঁড়ের পাতা বেটে অল্প গরম করে ঐ সব ফোলার জায়গায় লাগালে ওটা কমে যায়।
২. আঘাতের ফোলায়: হাতিশুঁড় উভদ্ভিটির পাতা বেটে গরম করে ঐ আঘাতের জায়গায় লাগালে ব্যথা ও ফোলা দুই চলে যায়।
৩. বাগীর ফোলায়: উরু ও তলপেটের সন্ধিস্থানে অর্থাৎ কুচকীতে যেটা হয় তার নামই বলা হয় বাগী, ডান বা বাম যে কোনো দিকেই হতে পারে। সাধারণতঃ এটা যৌন সংসর্গের সময় অস্বাভাবিক অবস্থানের জন্য অথবা মেহ বা ঔপসগিক মেহ (গণোরিয়া) রোগগ্রস্ত লোকগুলি এই রোগে বেশী আক্রান্ত হতে দেখা যায়। এক্ষেত্রেও ঐ পাতা বেটে অল্প গরম করে লাগালেও কমে যায়।
৪. রিউমেটিকে: এই বাতে ফোলা থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে। এগুলি সাধারণতঃ অস্থির সন্ধিস্থানে গাঁটে বেশী হয়। এ ক্ষেত্রে এরন্ডা তৈলের (রেড়ির তেল) সঙ্গে এই পাতার রস বা পাতা বাটা দিয়ে পাক করে, ছেকে নিয়ে সেই তৈল গাঁটে লাগাতে হয়।
৫. বিষাক্ত পোকার কামড়ে: জ্বালা করে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফুলেও যায়, সে সময় এই পাতার রস করে লাগালে ওটা কমে যায়।
৬. শ্লেষ্মা জ্বরে: সর্দিতে বুক ভার, সেক্ষেত্রে এই পাতার রস ২ চামচ একটু, গরম করে ছেকে নিয়ে খেতে দিতেন প্রাচীন বৈদ্যরা।
৭. টাইফয়েড জ্বরে: পিপাসা ও সঙ্গে মাথা চালাও প্রবল থাকে, এ ক্ষেত্রে ঐ পাতার রস গরম করে, ছেকে ঐ রস ১০ ফোঁটায় একটু, জল মিশিয়ে খেতে দিতে হয়। আধ ঘণ্টা অন্তর দুই/তিন বার খাওয়ালে এই উপসর্গটা প্রশমিত হয়, তবে দুই-তিন বারের বেশী খাওয়ানো উচিত নয়।
৮. ফেরিনজাইটিসে: অথবা লেরিনজাইটিস হলে পাতার রস ২ চামচ আধ কাপ অল্প গরম জলে মিশিয়ে গারগেল (gargle) করতে হয়। প্রত্যহ সকালে বিকালে দুই বার করতে পারলে ভাল। এমন কি গলার মধ্যে ক্ষত ভাব দেখা দিলে সেটাও সেরে যায়। তবে এসব ক্ষেত্রে এর সঙ্গে ২/৩ চামচ বাসক পাতার রস একটু গরম করে প্রত্যহ একবার করে খেতে পারলে কফের বিকারটা নষ্ট হয়।
৯. একজিমায়: এই পাতার রস লাগালে কমে যায়।
রাসায়নিক গঠন:
(a) Alkaloids. (b) Saponin. (c) Essential oil. (d) Fatty acids.
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা,২৮৯-২৮০।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।
nice post
Nice post and thanks a lot of owner