গন্ধরাজ মৌসুমি ঋতুর ফুলের মধ্যে জনপ্রিয়: এর চাষ, পরিচর্যা ও ফুল সংগ্রহ পদ্ধতি

সুগন্ধি ফুলের মধ্যে গন্ধরাজ জাতীয় ফুলগুলি অন্যতম। ইহাদের মৃদুমন্দ সুমিষ্ট গন্ধের জন্য এই জাতীয় ফুলের কদর বেশি। গন্ধরাজ ফুলের পাপড়ি হতে সুগন্ধি তৈল নিষ্কাশন করে বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রীতে ব্যবহার করা হয়। সেই জন্য, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গন্ধরাজ ফুলের চাষ খুব লাভজনক। এক হেক্টর জমিতে গন্ধরাজ ফুল চাষের জন্য খরচ পড়ে প্রায় ১০,০০০ টাকা, কিন্তু নিট আয় হয় প্রায় ২০ হাজারের মতো। গন্ধরাজ ফুলের বিভিন্ন প্রজাতির চাষ করা হয়।

অবাধ সূর্যালোক পায় এমন উঁচু পলি-দো-আঁশ মাটি মল্লিকা ফুলের চাষের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট। যথাসময়ে সারপ্রয়োগ, জলসেচন ও গাছ ছাঁটাই -এর প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখলে লাভজনকভাবে এই ফুল উৎপাদন করা যায়। গন্ধরাজ ফুলের উল্লেখযোগ্যভাবে বেশিজাত দেখা যায় না, তবে জাতভেদে ফুল ছোট বা বড় আকারের হতে দেখা যায় ।

গন্ধরাজ চাষের জমি প্রস্তুত

১ কোদাল দ্বারা প্রাথমিক কর্ষণের পর জমি সমতল করে চারা রোপণের জন্য প্রস্তুত করতে হবে।

২ তারপর, সারি হতে ১৫০ সেঃ মিঃ ও গাছ হতে গাছের দূরত্ব ১০০ সেঃ মিঃ রেখে ৪৫× ৪৫X৩০ সেঃ মিঃ আকারের গর্ত খনন করতে হবে।

৩ প্রতি গর্তে ১০ থেকে ১৫ কেজি গোবর সার ও এক কেজি কাঠের ছাই প্রয়োগ করে মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে দিতে হবে।

গন্ধরাজ গুল্মের চারা রোপণ

সাধারণত জুলাই মাসে গন্ধরাজ ফুলের চারা রোপণ করা হয়। কাটিং বা শাখা-কলম, দাবা-কলম (দুটি) অথবা মাতৃ উদ্ভিদ হতে শিকড়সহ পৃথক চারা বংশ বিস্তারের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই চারা প্রতিটি গর্তে ৮-১০ সেঃ মিঃ গভীরতায় সােজাভাবে রােপণ করতে হবে।

পরিচর্যা

বর্ষাকালে জলসেচ বিশেষ প্রয়োজন হয় না। শুধু মাঝে মাঝে কোদাল দিয়ে। কোপাইয়া মাটি আলগা করে দিতে হবে এবং আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। শীতকালে ও গ্রীষ্মকালে নিয়মিত সেচ দিতে হবে।

গন্ধরাজ গাছ ছাঁটাই

জানুয়ারী মাসের মাঝামাঝি গাছ ছাঁটাই করতে হবে। ছাঁইয়ের ১৫ দিন আগে হতে জমিতে জলসেচ বন্ধ করতে হবে। মাটি হতে ৭৫-৯০ সেঃ মিঃ উচ্চতা পর্যন্ত রেখে অপ্রয়োজনীয় পুরাতন শাখাগুলির বাড়তি অংশ ঘাটিয়া দিতে হবে । তারপর, প্রতি গাছের পুরাতন পাতাগুলি ও টিয়া ফেলতে হবে। ছাঁটাইয়ের এক সপ্তাহ পরে প্রতিটি গাছের গোড়া হতে মাটি সরিয়ে সার প্রয়োগ করে সেচ দিতে হবে ।

গন্ধরাজ চাষে সার প্রয়োগ

গন্ধরাজ গাছের বর্ধনশীল নরম কান্ড ও শাখায় পুষ্প মুকুল আসে বলিয়া ইহাদের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট সার প্রয়োগ করা দরকার। গাছ ছাঁটাইয়ের পর জানুয়ারী মাসে একবার ও জুলাই মাসে আর একবার সার প্রয়োগ করতে হয়। প্রতিবারে গাছপিছু খামারের সার ১৫ কেজি অ্যামোনিয়াম সালফেট ৩০০ গ্রাম, সিঙ্গল সুপার ফসফেট ৭৫০ গ্রাম এবং মিউরিয়েট অফ পটাশ ২০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। গাছের চারিধারে অগভীর মাদায় এই সার প্রয়োগ করে মাটি চাপা দিতে হবে।।

জলসেচ

ফুলের বড় কুঁড়ি উৎপাদনের জন্য নিয়মিত সেচ আবশ্যক । জানুয়ারী মাসে সার প্রয়োগের পর হতে প্রতি ৪ দিন অন্তর সেচ দিলে বড় বড় কুঁড়ি হয় এবং ফুলের উৎপাদনও বেশি হয়।। সেচের অভাব হলে, কুঁড়ি ছোট হইয়া যায় অথবা শুকাইয়া নষ্ট হইয়া যায়।।

ফুল সংগ্রহ

বসন্তকালের শুরু হতে অর্থাৎ, ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি সময় হতে বিভিন্ন জাতের গন্ধরাজ ফুল ফুটিতে আরম্ভ করে এবং বর্ষার প্রারম্ভ পর্যন্ত ফুল ফোটা চলতে থাকে। বাজারে বিক্রয় করতে হলে, সন্ধ্যার আগে প্রস্ফুটিত পুষ্পগুচ্ছ চয়ন করে কলাপাতার মোড়কে স্থানীয় বাজারে পাঠানো হয়।

তথ্যসূত্র:

১. সিরাজুল করিম আধুনিক পদ্ধতিতে ফুলের চাষ প্রথম প্রকাশ ২০০১ ঢাকা, গতিধারা, পৃষ্ঠা ১৩৭-১৩৯। আইএসবিএন 984-461-128-7

আরো পড়ুন:  গোলাপ ফুলের জাতগুলো চাষের জন্য কলম চারা তৈরি ও পরিচর্যা পদ্ধতি

Leave a Comment

error: Content is protected !!