কচু Colocasia গণের একধরনের কন্দ জাতীয় উদ্ভিদ। মানুষ প্রাচীনকাল থেকে চাষ করে আসছে। বাংলাদেশ ও ভারতের প্রায় সব এলাকায় দেখা যায়। রাস্তার পাশে, পুকুরের পাড়ে, বাড়ির আনাচে কানাচে, স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে অনাদরে-অবহেলায় কচু জন্মে থাকে।
সুস্থ থাকতে কচু ও শাক :
১. পিত্তের প্রকোপ দূর করা:
কচি পাতার রসে অল্প জিরে মিশিয়ে খেলে পিত্তের প্রকোপ কমে। রক্তপিত্তের রোগীদের পক্ষে কচুপাতা ভাতে যা তরকারি হিসেবে খাওয়া ভাল।
২. স্তনের দুধ বাড়ানো:
কচুপাতা বা কচুর শাক খেলে স্তনের দুধ বাড়ে।
৩. পেটের রোগ দূর করতে:
অনেকে বলেন শাক সেদ্ধ করে, সেদ্ধ জল ফেলে দিয়ে একটু ঘি দিয়ে মেখে পর পর তিনদিন খেলে বায়ুগুল্ম (পেটের মধ্যে বায়ুর গোলক হওয়া) সেরে যায়।
৪. প্রস্রাবের সমস্যা দূর করতে:
এর পাতা সেদ্ধ করে তরকারি হিসেবে ভাতের সঙ্গে মেখে পর পর তিন দিন খেলে প্রস্রাবের জ্বালা দূর হয়ে যায়।
৫. ফোঁড়া সারাতে:
এর শাক পুড়িয়ে তার ছাই তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ফোড়ায় লাগালে ফোড়া ফেটে যায়।
৭. কাটা স্থানের রক্ত বন্ধে:
শরীরের কোনো স্থান কেটে গেলে সেখানে কচুর ডাঁটার আঠা লাগালে রক্তপড়া বন্ধ হয় এবং ক্ষতও সারে।
৮. আঘাতে:
কচুর ডাঁটা ছেচে নিয়ে তার প্রলেপ অর্শ বা যে জায়গায় আঘাতের জন্যে রক্ত জমে আছে সেইখানে লাগালে আরাম পাওয়া যায়।
৯. ফোলা কমাতে:
কচুর ডাঁটার রসে একটু নুন মিশিয়ে শরীরের যে জায়গা ফুলে আছে সেখানে লাগালে ফোলা তাড়াতাড়ি কমে।
যে অসুখে কচু খাওয়া বারণ:
কুষ্ঠ, দাদ, পেটের অসুখ, আমাশা, রক্তপিত্ত প্রভৃতি অসুখে কচু খাওয়া একেবারেই বারণ। অজীর্ণ রোগের ক্ষেত্রে খাওয়া উচিত নয়।
কচুর আরও প্রয়োগ, অনেকে বলেন কানে পুঁজ হলেও কচুর আঠা দিলে উপকার পাওয়া যায়।
বর্ষাকালে সুলভ তরকারি কচু :
দুর্গা পুজোর দুর্গামূর্তির পাশে যে নব প্রত্রিকা স্থাপন করা হয় সেই নব পত্রিকা হলো কলা, ডালিম, ধান, হলুদ, মানকচু, বেল, অশোক, জয়ন্তী ও কচু গাছের পাতা।
এইভাবে পাতাগুলি দেবীমূর্তির পাশে রাখার সঙ্গে মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষেও এগুলি উপকারী এই কথাই বুঝিয়ে দেওয়া
বর্ষাকালে সুলভ তরকারি কচুর কোনো অংশই বাঙালি বাড়িতে ফেলা যায়। কচু শাক বা ডাঁটা, পাতা, শেকড় বা লতি সবই তৃপ্তি করে খাওয়া হয়।
কচুর কোমল কচি পাতা কলা পাতায় জড়িয়ে আগুনে পুড়িয়ে পেঁয়াজ কুচি, তেল, লঙ্কা ও নুন মিশিয়ে ভাতের সঙ্গে খেতে খুবই রুচিকর।
কচুর ভাজা, ডালনা, শাকের ঘণ্ট, লতি সর্ষে বাটা কাঁচা লঙ্কা দিয়ে রান্না করা এসব তো আমাদের অতি প্রিয় ও সস্তা খাবার। কচু কয়েক দিন রোদে শুকিয়ে, তেঁতুল জলে সেদ্ধ করে নিলে আর গলা ধরার ভয় থাকে না।
কচু শাকের ঘন্ট বনাম পাতরেল:
এখন সময় সাশ্রয়ের যুগে নারকোল কোরা ও ভিজে ছোলা দিয়ে কচু শাকের ঘণ্ট রান্না করবার দিন ফুরিয়ে এসেছে- এই ঘন্ট খাওয়ার ইচ্ছে কিন্তু সকলের মনেই আছে ষোল আনা।
অবাঙালিরা কচু সেদ্ধ করে মশলা দিয়ে ভাজেন তাঁদের কাছে মশলাদার ‘অরবী’ অথাৎ কচু খুবই প্রিয়। গুজরাটিরা কচুর পাতায় বেসন ও তেঁতুলের প্রলেপ লাগিয়ে ভাপিয়ে সেদ্ধ করে কেটে কেটে ভাজেন। একে পাতরেল বলা হয়। এটি তাঁদের খুবই প্রিয় খাবার।
যে সময়ে যে তরকারি :
কচু খেলে গলা ধরা বা চুলকোনোর কষ্ট থাকলেও এবং কচুশাক রান্না করতে অনেক সময় লাগলেও এগুলো বষাকালে অন্তত এক আধ দিন রান্না করেও খাওয়া উচিত। কারণ যে সময় যে তরকারি জম্মায় সে তরকারি খাওয়ার কিছু না কিছু সার্থকতা অবশ্যই আছে।
তথ্যসূত্রঃ
১. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, নতুন সংস্করণ ২০০৯-২০১০, পৃষ্ঠা,১০৮-১১১।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।