বড়হরিনা ভেষজ গুণসম্পন্ন ম্যানগ্রোভ বৃক্ষ

বড়হরিনা

বৈজ্ঞানিক নাম: Lepisanthes rubiginosa (Roxb.) Leenh., Blumea 17: 82 (1969). সমনাম: Sapindus rubiginosus Roxb. (1796), Sapindus edulis Blume (1823), Erioglossum edule Blume (1825), Erioglossum rubiginosum Blume (1847), Lepisanthes hirta Ridley (1920). ইংরেজি নাম: জানা নেই। স্থানীয় নাম: বড়হরিনা।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Tracheophytes. অবিন্যাসিত: Angiosperms. অবিন্যাসিত:  Eudicots. বর্গ: Sapindales. পরিবার: Sapindaceae. গণ: Lepisanthes, প্রজাতি: Lepisanthes rubiginosa.

ভূমিকা: বড়হরিনা (বৈজ্ঞানিক নাম: Lepisanthes rubiginosa) হচ্ছে বাংলাদেশের ভেষজ গুল্ম। এটি পূর্ব এশিয়ার দেশে পাওয়া যায়। তবে বনাঞ্চলের পরিবেশ এদের জন্য উপযুক্ত।

বড়হরিনা-এর বর্ণনা:

বড়হরিনা গুল্ম বা ছোট বৃক্ষ। এটি ১৬ মিটার পর্যন্ত উঁচু, শাখাপ্রশাখা বেলনাকার, খাঁজযুক্ত, অপরিণত অবস্থায় ঘনভাবে রোমশ। পত্র ৩-৬ পত্রক, অপ্রকৃত শীর্ষক পত্রকযুক্ত, অপরিণত পর্যায়ে মখমলীয়, পত্রবৃন্ত বেলনাকার, ৭-১২ সেমি লম্বা, ঘনভাবে রোমশ, পরবর্তীতে রোমহীন, পত্রক বৃন্ত ১ সেমি লম্বা, পত্রক উপবৃত্তাকার থেকে বল্লমাকার, ৬-২০ × ৪-১১ সেমি, উপরিতল ধূসর-সবুজ, নিম্নতলগ হলুদাভ-সবুজ থেকে লালাভ-বাদামী, উভয় পার্শ্ব- মখমল সদৃশ, গোড়া গোলাকার থেকে কীলকাকার, শীর্ষ সূক্ষ্মাগ্র থেকে দীর্ঘাগ্র, সূক্ষ্ম খর্বাগ্র, শিরা উভয় পার্শ্বে ৮-১২ জোড়া।

পুষ্পবিন্যাস ২৫-৪০ সেমি লম্বা, ঘন ক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত, শাখাপ্রশাখা লম্বা, বৃন্তহীন থেকে খাটোবৃন্তক সাইম যাতে স্বল্প থেকে অনেক পুষ্পক দেখা যায়। পুষ্প মিষ্টি সুগন্ধি। বৃত্যংশ ৫টি, বর্তুলাকার-ডিম্বাকার, সামান্য অবতল, সবুজ, সিলিয়াযুক্ত, বাহিরের ২টি ১.২-২.২ × ১.২-২.০ মিমি, সূক্ষ্মাগ্র, অভ্যন্তরের ৩টি ১.৮-২.৮ × ২-৩ মিমি, স্থূলাগ্র। পাপড়ি ৪টি বা ৫টি, দন্ত ০.৫-১.০ মিমি লম্বা, দলফলক ২-৪ × ১.৫-২.২ মিমি, সাদা থেকে হলুদাভ, বৃন্তের উপরের অংশ লম্বা সিলিয়াযুক্ত, দলফলক হালকা রোমশ, শল্কপত্র চারকোণাকার, ১.৫-৩.০ মিমি লম্বা।

পুংদন্ড চ্যাপ্টা, সাদা, রোমশ, পরাগধানী আয়তাকার-ডিম্বাকার, রোমহীন, ০.৮ মিমি লম্বা। গর্ভাশয় ৩ খন্ডিত, ১.২-১.৮ × ২.০-২.২ মিমি, ঘনভাবে চাপা রোমশ, গর্ভদন্ড বেলনাকার, ২.২ মিমি লম্বা, অস্পষ্টভাবে ৩-খন্ডিত। ফল ১-৩ খন্ডিত, ৮-১৩ × ২.০-২.৩ মিমি, পাকলে গাঢ় রক্ত-বেগুনি থেকে প্রায় কালো, অর্ধরোমহীন, অন্তত্বক পাতলা কিন্তু শক্ত। বীজ আয়তাকার-উপবৃত্তীয়, ৯-১১ × ৪ মিমি।

আরো পড়ুন:  লাইজাবরি দক্ষিণ এশিয়ায় জন্মানো ভেষজ বিরুৎ

ক্রোমোসোম সংখ্যা : 2n = ২৬ (Kumar and Subramaniam, 1986).

আবাসস্থল:

শুষ্ক এবং আর্দ্র পত্রঝরা বনাঞ্চল, গৌণ বনাঞ্চল, গুল্মভূমি, রাস্তার ধার, নদীর তীর, ম্যানগ্রোভের অভ্যন্তরীণ পাশ বরাবর, ১২০০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায়। ফুল ও ফল ধারণ সময় নভেম্বর থেকে মে মাস। বংশ বিস্তার হয় বীজ দ্বারা।

বিস্তৃতি:

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া মহাদেশ, উত্তর ভারত থেকে ইন্দো-চীন এবং দক্ষিণ-পূর্ব চীন, মালেশিয়া এবং উত্তর পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশে সমগ্র প্রাকৃতিক বনে সাধারণত বিস্তৃত।

বড়হরিনা-এর ঔষধি ব্যবহার:

বয়স্ক বৃক্ষের কাঠ খুবই মূল্যবান, অন্যথা জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মূল এবং পাতার সিদ্ধ ক্বাথ জ্বরের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় এবং বীজ সিদ্ধ ক্বাথ হুপিং কাশি নির্মূলে ব্যবহৃত হয়। রোম মালয়ায় পাতা এবং মূল প্রলেপ দেয়ায় ব্যবহৃত হয় লম্বা (Chopra et al., 1996).

জাতিতাত্বিক ব্যবহার: অপরিণত বিটপ কদাচিৎ সবজি হিসেবে খাওয়া হয় এবং পাকা ফল খালি খাওয়া হয় (Kunkel, 1984).

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের  ১০ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) বড়হরিনা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বন উজার এবং জ্বালানি কাঠের জন্য মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কারনে সংকটে আছে। তবে বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে বড়হরিনা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই। 

তথ্যসূত্র:

১. এস নাসির উদ্দিন (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ১০, পৃষ্ঠা ৩১১-১২। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Anup Sadi

Leave a Comment

error: Content is protected !!