দেশি খেজুর বাংলাদেশের প্রচলিত জনপ্রিয় ফল

ফল

দেশি খেজুর

বৈজ্ঞানিক নাম: Phoenix sylvestris Roxb., Fl. Ind. 3: 787 (1832). সমনাম: Elate sylvestris L, Elate versicolor Salisb. ইংরেজি নাম: ওয়াইল্ড ডেট পাম, সিলভার ডেট পাম, ইন্ডিয়ান ওয়াইল্ড পাম। স্থানীয় নাম: খেজুর, দেশী খেজুর । জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Angiosperms অবিন্যাসিত: Monocots অবিন্যাসিত: Commelinids বর্গ: Arecales পরিবার: Arecaceae গণ: Phoenix প্রজাতির নাম: Phoenix sylvestris

ভূমিকা:  দেশি খেজুর বা খেজুর (বৈজ্ঞানিক নাম: Phoenix sylvestris ইংরেজি নাম: ওয়াইল্ড ডেট পাম, সিলভার ডেট পাম, ইন্ডিয়ান ওয়াইল্ড পাম)  হচ্ছে এরিকাসি পরিবারের ফোনিক্স গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। রাস্তার পাশে বা পুকুরের পারে লাগানো হয়ে থাকে।

বর্ণনা: দেশি খেজুর এক কান্ড বিশিষ্ট ঋজু পাম, দৈর্ঘ্য ১০ থেকে ১৪ মিটার ও প্রস্থ ৫০ সেমি, স্থায়ী পত্রাবরণের জন্য বহির্ভাগ ধূসর, অমসৃণ, শীর্ষ ভাগ ক্রমশ সরু, কান্ড চূড়া ঘন বৃদ্ধি সম্পন্ন পত্রগুচ্ছে সমাপ্ত।

পাতা পক্ষল যৌগিক, প্রতি গাছে ২০ থেকে ৩০ টি ঘন সন্নিবেশিত, সামান্য ধনুকাকৃতি, ধূসর-সবুজ বর্ণের, ২.৫-৩.৫ মিটার x ৭০ সেমি, বৃন্ত খাটো, প্রশস্ত, পুরু, ১৫০-২৫০ পত্রকে বিভাজিত, পত্রক একরূপ, ২০-৪০ x ৩ সেমি, মধ্যশিরা দৃঢ়, শীর্ষ কন্টকযুক্ত, প্রতিফলকে কন্টক ২০-৩০টি, অগ্রভাগ গাঢ় ধূসর, পত্রক অক্ষের সাথে ভাঁজ অবস্থায় সন্নিবেশিত, প্রান্ত উর্ধমূখী।

পুষ্পবিন্যাস আন্ত:পত্রীয়, সাধারণ ৩ একাধিক, মঞ্জরীদন্ড চ্যাপটা, ৬০-৯০ x ৫০ সেমি ১.৫ সেমি, ঋজু বা ফলোৎপাদনের পর ঝুলন্ত, সোনালী হলুদ, লম্বা হাতল যুক্ত ঝাড় সদৃশ, ৩০ x ২০ সেমি শাখা প্রশাখার সংখ্যা ৫০-১০০, পুষ্প অবৃন্তক, সর্পিলাকারে সন্নিবেশিত। চমসা ২টি, চর্মবৎ, নৌকাকৃতি, বহিরাংশ ঘন, গাঢ় ধূসর বর্ণের রোমশ শল্কে আবৃত।

পুংপুষ্প দীর্ঘায়ত, হলুদাভ-সাদা, বৃত্যংশ ৩ টি, পেয়ালাকার, ৩ দস্তুর, হলুদাভ, পাপড়ি ৩ টি, তির্যক ডিম্বাকার, প্রান্তস্পর্শী, পুংকেশর ৬ টি, পুংদন্ড পঁচ্যাকার, পরাগধানী ঋজু, পৃষ্ঠলগ্ন, বন্ধ্যা গর্ভপত্র ক্ষুদ্র বা অনুপস্থিত।

আরো পড়ুন:  তালিপট পাম পৃথিবীর বৃহত্তম পামের অন্যতম

স্ত্রী পুষ্প গোলাকার হলুদাভ-সবুজ, বৃত্যংশ ৩ টি, ক্ষুদ্র, বাড়ন্ত, পাপড়ি গোলাকার, প্রান্তআচ্ছাদী, বন্ধ্যা পুংকেশর ৬ টি, অথবা ৬ দপ্তর পেয়ালা সদৃশ, গর্ভপত্র, গর্ভমুণ্ড অবৃন্তক, অঙ্কুশযুক্ত, ডিম্বক ঋজু।

দেশি খেজুরের ফল ১ বীজি ড্রুপ, ২-৩ সেমি লম্বা, ১ সেমি পুরু, কমলা হলুদ, জলপাই আকার, ফলত্বক মাংসল, অন্তস্তৃক ঝিল্লিময়, শর্করা সমৃদ্ধ, আহার্য। বীজ পীপাকৃতি, ১.৫-২.০ সেমি লম্বা, অঙ্কীয় পৃষ্ঠ খাঁজ যুক্ত, সস্য সূষম, বা অর্ধ-চর্বণাকৃতি। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে ডিসেম্বর  থেকে জুলাই মাসে।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ৩৬ (Fedorov, 1969)।

চাষাবাদ:  প্রায় সব মাটিতেই জন্মে। বীজ থেকে বংশ বিস্তার হয়।

বিস্তৃতি: বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে আদি নিবাস। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে চাষাবাদ হচ্ছে।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

  • খেজুরের চিনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সামগ্রী। খেজুরের গুর থেকে এই চিনি উৎপাদন করা হয়। খেজুরের কাচা রস শীতকালে জনপ্রিয় পানীয়। রস থেকে তাড়ি ও মদ তৈরি হয়।
  • পাতা থেকে ঝুড়ি, থলে, ঝাড়, পাখা ইত্যাদি তৈরি হয়। পাতার অক্ষ পিটিয়ে নরম করে দড়ি হয়।
  • হৃদরোগ, জ্বর, উদরের সমস্যা ইত্যাদি ক্ষেত্রে এবং কাঠ ঘর তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়।
  • জাতিতাত্বিক ব্যবহার হিসেবে দেখা যায় পাতা ভিজানো পানি কৃমি রোগের ওষুধ রূপে প্রচলিত (Alam, 1992)।

অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১১তম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০)   দেশি খেজুর প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, শীঘ্র এদের সংকটের কারণ দেখা যায় না। বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে দেশি খেজুর সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে বাগানে ও বাসা বাড়িতে অধিক আবাদের উৎসাহ করা যেতে পারে।[১]

তথ্যসূত্র:

১. এম. জসিম উদ্দিন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১১ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৩৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

আরো পড়ুন:  হলদে পাম বাগানের শোভাবর্ধক গাছ

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Hari Prasad Nadig

Leave a Comment

error: Content is protected !!