ভূমিকা: কুচিলা (বৈজ্ঞানিক নাম: Strychnos nux-vomica) Strychnos গণের এক প্রকারের বৃক্ষ। এই প্রজাতি বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় জন্মে।
কুচিলা গাছের বর্ণনা:
ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি আকৃতির বৃক্ষ, পল্লব বায়ুরন্ধ্র বিহীন, মসৃণ, কখনও কখনও কণ্টক বিদ্যমান। পত্র সরল, প্রতিমুখ, সবৃন্তক, পত্রবৃন্ত ০.৫-১.০ সেমি লম্বা, মসৃণ,
পত্রফলক উপবৃত্তাকার থেকে উপবর্তুলাকার, গোড়া গোলাকার থেকে অর্ধ-কর্তিতা, ৪.০-১০.৫ x ৩.০-৮.৬ সেমি, শীর্ষ প্রায় দীর্ঘাগ্র, প্রায়শই সূক্ষ্ম খর্বাগ্র, মসৃণ, ৩-৫ শিরাযুক্ত।
পুষ্পমঞ্জরী অক্ষীয় শাখার শীর্ষে অবস্থিত, অনেক পুষ্পবিশিষ্ট, কোমল লোমযুক্ত।
পাপড়ি ৫টি, নিচে যুক্ত হয়ে দল নল গঠন করে, সবুজাভ-সাদা, দল নল খণ্ড অপেক্ষা। প্রায় ৩ গুণ অধিক লম্বা, খণ্ড ঘন ভাবে কোমল দীর্ঘ রোমযুক্ত।
পুংকেশর ৫টি, অবৃন্তক, পরাগধানী ১.৫-১.৮ মিমি লম্বা, আয়তাকার, মসৃণ। গর্ভপত্র ২টি, যুক্ত, গর্ভাশয়। অধিগর্ভ, গর্ভদণ্ড খাটো, গর্ভমুণ্ড মুণ্ডাকার, কোমল দীর্ঘ রোমযুক্ত।
ফল বেরী, প্রস্থে ২.৫-৪.০ সেমি, সবুজ, পরিপক্ক অবস্থায় কমলা থেকে লাল, গোলকাকার, মসৃণ, পুরু প্রাচীর বিশিষ্ট, ১-৪ বীজ বিশিষ্ট। বীজ চাকতির ন্যায়, পুরু, অত্যন্ত শক্ত, সরিসিয়াস (আবরণ)।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২ = ২৪ (Fedorov, 1969)।
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
মিশ্র অথবা গর্জন বন, সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে নিচু উচ্চতায় জন্মাতে পারে। ফুল ও ফল ধারণ মার্চ-অক্টোবর মাস। নতুন চারা জন্মে বীজ দ্বারা, সাধারণতঃ বীজের অংকুরোদগমের জন্য এক বছর সময় লাগে।
কুচিলা গাছের বিস্তৃতি:
ভারত, শ্রীলংকা, ক্যাম্বোডিয়া, লাউস, ভিয়েতনাম ও মালয় পেনিনসুলা। বাংলাদেশে ইহা বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়, তবে অধিকাংশই আবাদিত।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
বীজ বিষাক্ত, এতে বিভিন্ন ধরনের ইনডোল অ্যালকালয়েড প্রধানতঃ স্ট্রিকনিন ও ব্রুসিন বিদ্যমান, আরো রয়েছে বমোসিন, নভিসিন।
কুচিনার ফলের বীজ পাকস্থলীর উপকার সাধক করে। এছাড়াও এটি বলবর্ধক, পেশীর উপকার সাধক, অল্প পরিমাণে ব্যবহার ক্ষতিকারক ।
বীজ বমি উদ্রেককারী ও কোষ্ঠ পরিষ্কারক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। _(Ghani, 2003)। এর বীজ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নাক্স-ভমিকা তৈরী করা হয়।
জাতিতাত্ত্বিক ব্যবহার: পাতা ক্ষত ও আলসারের ব্যথা উপশমের জন্য পুলটিশ হিসেবে প্রয়োগ করা হয়।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৮ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) কুচিলা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, মাতৃগাছের নিধন কারণে বাংলাদেশে এটি সংকটাপন্ন।
বাংলাদেশে কুচিলা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির চাষাবাদ বৃদ্ধি করা আবশ্যক।
তথ্যসূত্র:
১. এম এ হাসান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৮ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৯৮। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।