আম গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Mangifera indica Linn, পরিবার Anacardiaceae. আমের রয়েছে নানা ধরনের ভেষজ বা ঔষধি গুণাগুণ। নিচে আমের ফুল, ফল পাতা ও ছালের গুণাগুণ বর্ণনা করা হলো।
আয়ুর্বেদ গ্রন্থগুলোতে বিভিন্ন সময়ের আম যে বিভিন্ন গুণসম্পন্ন, সে কথা সুস্পষ্টই বলা হয়েছে। যেমন : কচি আম রক্তপিত্তকর, মধ্য বয়সের আম পিত্তকর এবং পাকা আম বর্ণ, মাংস, শুক্র এবং শক্তি প্রদানকারক। আমের সাথে দুধ মিশিয়ে খেলে বল এবং তেজ দুটিই বাড়ে। কিন্তু বলবৃদ্ধি করে বলে আপনি যদি আপনার হজমশক্তির চেয়ে বেশি আম খান, তাহলে কিন্তু উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হবে। মনে রাখতে হবে, রাত্রিবেলা শুধু আম কেন, কোনও ফলই খাওয়া উচিত নয়।
আম এমনিতেই ঠাণ্ডা। তবে বর্তমানে কৃত্রিমভাবে অর্থাৎ কার্বাইড দ্বারা সব রকম ফল পাকানো হয় বলে, ঠাণ্ডা কথাটা বলা চলে না। পাকা আম খেলে ফোঁড়া হয় না। কিন্তু আমরা বাজারে যে, আম দেখি সেটা নামেই পাকা, আসলে কাচা আমকেই জোর করে পাকানো হয়। সেজন্য যাদের দেহে পিত্তবাহুল্য, তারা এ আম খেলে খুব স্বাভাবিক কারণেই ফোঁড়া হবে দেহে। কিন্তু প্রকৃত পাকা আম খেলে তা হয় না। [১]
আম বাংলাদেশের জাতীয় এবং দুনিয়ার প্রধান ফল
১. আমাশায়: কাঁচ আমপাতা ও জামপাতার রস ২ থেকে ৩ চা চামচ একটু গরম করে খেলে আমাশা সেরে যাবে।
২. দাহ ও বমিভাবে: যাঁদের শরীরে দাহ বেশী এবং বমি বমি ভাব প্রায়ই ঘটে, তাঁরা আমপাতা ৩ থেকে ৪টি জলে সিদ্ধ করে সেই জল সমস্ত দিনে একটু একটু করে খেলে দাহ ও বমির ভাবটা চলে যাবে।
৩. অকালে দাঁত পড়ে যাওয়ায়: আমপাতা, যদি কচি হয় তাহলে ভাল হয়, চিবিয়ে তা দিয়ে দাঁত মাজলে অকালে দাঁত নড়বে না ও পড়েও না।
৪. পোড়া ঘায়ে বা দগ্ধ ব্রণে: আগুনে পুড়ে গিয়ে ঘা হলে আমপাতা মুষাবন্ধাবস্থায় পোড়াতে হবে, অর্থাৎ পাত্রের মুখ লেপে শুকিয়ে পোড়াতে হবে, সে পোড়া ছাই ঘিয়ে মিশিয়ে লাগালে পোড়া ঘা শুকিয়ে যায়।
৫. পা ফাটায়: যাঁদের পায়ের গোড়ালির অংশ ফেটে চৌচির হয়ে যায়, তাঁদের ফাটা আরম্ভ হলে প্রথম থেকেই ঐ ফাটায় আমগাছের আঠা লাগালে আর বাড়ে না; তবে আমের আঠার সঙ্গে কিছু ধুনোর গুড়ো মিশিয়ে দিলে আরও ভাল হয়।
৬. নখকুনিতে: যাঁরা নখকুনিতে কষ্ট পান, তাঁরাও আমগাছের নরম আঠার সঙ্গে একটু ধুনোর গুড়া মিশিয়ে নখের কোণে টিপে দিলে, এ থেকে রেহাই পাবেন।
৭. কেশ পতনে: আম গাছের কুশি অর্থাৎ কচি আমের আঁঠির শাঁস থেঁতো করে জলে ভিজিয়ে ছেঁকে নিয়ে সেই জল শুষ্ক চুলের গোড়ায় লাগালে কেশপতন বা চুল উঠে যাওয়া উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। সেসময় মাথায় তৈল ব্যবহার না করাই ভাল।
৮. অকাল পক্কতায়: থেঁতো করা আমের কুশি ৫ থেকে ৬ গ্রাম ও শুকনো আমলকী ২ থেকে ৩ টুকরো একসঙ্গে ১০ থেকে ১২ চা চামচ নিয়ে লোহার পাত্রে জলে ভিজিয়ে সেটা ছেঁকে নিয়ে চুলে লাগালে অকালপক্কতা রোধ হবে।
৯. খুসকিতে: আমের কুশি ও হরীতকী একসঙ্গে দুধে বেঁটে মাথায় লাগালে খুসকি কমে যাবে; তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে উচিত ওটি ছেঁকে নিয়ে মাথায় লাগানো।
১০. রক্ত পড়া: আঁঠির শাঁসের রসের বা গুঁড়োর নস্যি নিলে নাক দিয়ে রক্তপড়া বন্ধ হবে। তবে ব্লাডপ্রেসারের রক্তপড়া বন্ধ করা সমীচীন নয়।
১১. প্রদরে: বীজের শাঁসের গুড়া ১o থেকে ১২ গ্রেণ মাত্রায় জল দিয়ে খেলে শ্বেতপ্রদর কমে যায়। আমের ফুল অর্থাৎ মুকুল চায়ের মতো করে পান করলে প্রদর সেরে যায়।
১২. রক্ত আমাশয়: আম গাছের ছালের রস ১ থেকে ২ চা চামচ মাত্রায় আধা পোয়া ছাগলের দুধে মিশিয়ে খেলে রক্ত আমাশা সেরে যায়। তবে বৃদ্ধ বৈদ্যরা এর সঙ্গে একটু চিনি বা মধু মিশিয়ে খেতে বলেছেন।
১৩. অতিসারে: আমগাছের ছালের উপরের স্তরটা চেছে ফেলে দিয়ে সেই ছাল গাভীর দুধের সাথে বেঁটে খেলে পেট গুড় গুড় শব্দ ও পাতলা দাস্ত বন্ধ হবে এবং সেজন্য দাহ ও বেদন নষ্ট হয়। আমের কচি পাতা ও কাঁচা কদবেলের শাঁস সমভাবে বেঁটে চাল ধোঁয়া পানি দিয়ে খেলে পক্কাতিসারের উপশম হবে।
১৪. রক্তপিত্তে: এ রোগীর পক্ষে খুব মিষ্টি পাকা আম ঔষধ ও পথ্যরূপে ব্যবহার করার ব্যবস্থা রয়েছে আয়ুর্বেদের প্রামাণ্য গ্রন্থ চক্রদত্তে।
১৫. প্লীহাবৃদ্ধিতে: পাকা আমের মিষ্টি রস ৭ থেকে ৮ চা চামচ মাত্রায় ২ থেকে ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলে প্লীহাবৃদ্ধি ও তজ্জনিত উপসর্গের উপশম হবে। তবে বায়ু প্রধান প্লীহা রোগেই এই পদ্ধতি ব্যবহার্য।
১৬. অজীর্ণ: অতিরিক্ত মাছ খাওয়ার জন্য অজীর্ণ হলে সেজন্য কাঁচা আম সেব্য। অতিরিক্ত মাংস ভোজনে অজীর্ণ হলে আমের আঁঠির শাঁস সেব্য।
১৭. পাঁচড়ায়: আমের আঠা লেবুর রস অথবা তেলে মিশিয়ে পাঁচড়ায় ব্যবহার করতে হবে।
১৮. উদরাময়: আমের বীজের শাঁসের ক্বাথ আদার রস সহ সেব্য।
১৯. বহুমূত্রে: আমের নতুন পাতা শুকিয়ে গুড়া করে ব্যবহার করলে বহুমূত্র প্রশমিত হবে।
২০. গলা ব্যথায়: আমপাতার ধোঁয়া গলার বেদনা নিবারিত করে। [২]
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আঃ খালেক মোল্লা সম্পাদিত;লোকমান হেকিমের কবিরাজী চিকিৎসা; মণিহার বুক ডিপো, ঢাকা, অক্টোবর ২০০৯; পৃষ্ঠা ১৮৩-১৮৪।
২. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি‘ খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ১১১-১১৬।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।